somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৩

৩১ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শকুন্তলার উপাখ্যানঃ

এরপর মুনি বলেন -শুন পরীক্ষিত পুত্র, ভরত বংশের কথাও অদ্ভূত।

জগৎবিখ্যাত রাজা ছিলেন দুষ্মন্ত। তিনি সংসারে এসে যেমন বসুন্ধরাকে ভোগ করেন তেমনি ধর্মের সাথে প্রজাপালন করেন এবং দুষ্টের সংহার করেন। তিনি রূপবান সুপুরুষ-একছত্র অধিপতি, মৃগয়াপ্রিয়।

একদা তিনি বনে মৃগয়া করতে গেলেন। সসৈন্য মহারাজ এক মহাবন ঘিরে ফেললেন। অসংখ্য সিংহ, ব্যাঘ্র, ভল্লুক, বরাহ, মৃগ শিকার করলেন। সৈন্যরাও নির্বিচারে শিকার করল। কিছু রথে রাখা হল, কিছু কাধে নিয়ে যাওয়া হল-কেউ কেউ আবার সেখানেই পুড়িয়ে খেল।

হিরণ্য নামে এক অতি মনোরম বন-যেখানে কণ্বমুনির আশ্রম ছিল। নানাজাতির বৃক্ষ তাতে নানা ফুল-ফল, নানা শ্রেণীর পাখি সেথায় সদা গান গায়। গাছে গাছে যেন মধুচক্রের অবস্থান। বায়ুর তেজে সেথায় সদা পুষ্পবৃষ্টি হয়। সেই বনের পাশ দিয়ে বয়ে যায় মালিনী নদী। মুনিরা এই নদীর দু’তীরে বসে ধ্যান করেন।

সেই বনে মুনির আশ্রম আছে বুঝতে পেরে দুষ্মন্ত এগিয়ে গেলেন এবং সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন তিনি না ফেরা পর্যন্ত এই স্থানেই তারা অপেক্ষা করবে। এই বলে তিনি কণ্বমুনির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। কিন্তু আশ্রমে মুনি নেই দেখে তিনি বিষণ্ণ হলেন।


সে সময় মুনির পালিতা কন্যা শকুন্তলা এসে রাজাকে পাদ্য-অর্ঘ্য নিবেদন করলেন। শকুন্তলার রূপে রাজা মোহিত হলেন।

কামান্ধ রাজা শকুন্তলাকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কে, কি ভাবে এখানে এসেছেন।

শকুন্তলা বললেন –পিতা কণ্বমুনি ফলের সন্ধানে বেরিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে আসবেন।

রাজা পুনরায় প্রশ্ন করলেন দারাত্যাগী জিতেন্দ্রিয় মহা ব্রহ্মচারী কণ্বমুনির কন্যা তিনি হতেই পারেন না! সত্য পরিচয় জানতে তিনি উৎসুক।

তখন কন্যা তার জন্মরহস্য উদ্ঘাটন করলেন। তিনি প্রকৃতই মুনির কন্যা। তার পিতা বিখ্যাত বিশ্বামিত্র মুনি।

বিশ্বামিত্রের তপস্যার তেজে পুরন্দর কম্পমান হন। তার ভয় হয় এই মুনি তার ইন্দ্রত্ব হরণ করবেন। সব দেবতাদের সাথে অনেক পরামর্শ করে তিনি শেষ পর্যন্ত অপ্সরা মেনকাকে ডেকে পাঠান।

মেনকাকে তিনি বলেন রূপে, গুণে তার তুল্য ত্রিভূবনে কেউ নেই। নিজ গুণে মেনকা যেন ইন্দ্রের সাহায্য করেন। বিশ্বামিত্রের তপস্যা যে করে হোক মেনকাকে ভঙ্গ করতেই হবে।

একথা শুনে মেনকা কম্পিত হন।
যোড়হাতে বলেন -বিশ্বামিত্র মহাতেজা ঋষি। তার ক্রোধে বশিষ্ঠের শত পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার আজ্ঞাতে কৌশিকী নদীর উদ্ভব। যাকে দেবরাজ ইন্দ্র ভয় পান-তার তপস্যা নষ্ট করতে মেনকারও সাহস হয় না।


যদিও দেবরাজের আজ্ঞা কোন মতেই লঙ্ঘন সম্ভব নয়, তাই কামদেব ও বায়ুকে সঙ্গে নিয়ে মেনকা হেমন্ত পর্বতে যেখানে বিশ্বামিত্র মুনি তপস্যায় রত সেখানে উপস্থিত হলেন।

মুনিকে দেখে মেনকার অন্তর কম্পিত হল। তিনি মুনির সামনে মায়ার ক্রীড়া শুরু করলেন। এই সময় প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হয়ে মেনকার সকল বস্ত্র উড়িয়ে নিয়ে গেল। ধিরে ধিরে মেনকা বস্ত্র আনতে গেলেন এবং বায়ুর নিন্দা শুরু করলেন।

এইসব কৌতুক দেখতে দেখতে মুনির শরীরে কাম পঞ্চশর ভেদ করলেন। কামান্ধ মুনি মেনকাকে নিজের অবয়বে ধারণ করলেন। কামে মত্ত হয়ে শৃঙ্গার রসে তারা মত্ত হলেন। এভাবে বহুদিন ক্রীড়ারসে গেল। জপতপ ত্যাগ করে মুনি কামের বশ হলেন।


একদিন সন্ধ্যাকালে বিশ্বামিত্র সন্ধ্যা আহ্নিকের জন্য মেনকাকে জল আনতে বললেন।
শুনে মেনকা হেসে বললেন -ভাল, এতদিনে সন্ধ্যার কথা স্মরণ হল!

একথা শুনে মুনি অত্যন্ত কুপিত হলেন। তা দেখে মেনকা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।

তার গর্ভে মুনির ঔরসে সন্তানের উদ্ভব হয়। সে সন্তান তিনি অরণ্যে প্রসব করে আবার স্বর্গে ফিরে যান। সেই সন্তানই হলেন শকুন্তলা।


এভাবে মেনকা মুনির তপস্যা ভঙ্গ করে শকুন্তলাকে অরণ্যে ফেলে চলে যান। অদ্ভুতভাবে বাঘ, সিংহ-পশুরা কেউ শিশুকে হিংসা করল না। পাখিরা শিশুকে ঘিরে রাখল। সে সময় কণ্বমুনি তপস্যা করতে সে বনে উপস্থিত হন এবং দয়া বশত অনাথাকে নিজ কুটীরে এনে পালন করেন। সেই থেকে তিনি কণ্বমুনির কন্যা। শকুন তথা পক্ষীরা তাকে আগলে রাখে তাই তার নাম হয় শকুন্তলা।


এক মুনি কন্বকে শকুন্তলার জন্ম কথা জিজ্ঞাসা করলে শকুন্তলা সে কাহিনী জানেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২২
Click This Link
৩২টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×