somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৭

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অর্জ্জুন-অঙ্গারপর্ণ সংবাদঃ


ব্যাসদেব পঞ্চপান্ডবকে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের অদ্ভূত আয়োজনের কথা শোনান। দ্রুপদরাজের আমন্ত্রণে বহু রাজরাজেশ্বর এসেছেন পাঞ্চালনগরে। রাজা অদ্ভূত এক লক্ষ্য রচনা করেছেন, সেই লক্ষ্যভেদ শক্তি কারও নেই। অর্জুন গিয়ে সেই লক্ষ্য সভা মাঝে ভেদ করবেন। এভাবে পাঞ্চালকন্যা প্রাপ্ত হবে। মুনি তাদের শীঘ্র পাঞ্চাল যেতে বললেন এবং নিজস্থানে ফিরে গেলেন।

মা কুন্তীদেবীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডব উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। দিনরাত্রি তারা পথ চললেন। নানা দেশ, নদ-নদী, গ্রাম পেরলেন। বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের নেই। ঘোর রজণীতেও ধনঞ্জয় অর্জুন আগে আগে মশাল ধরে পথ দেখিয়ে চলেন। কয়েকদিন চলার পর তারা সন্ধ্যায় গঙ্গাতীরে পৌছলেন। সেখানে স্ত্রীসহ এক গন্ধর্ব বিহার করছিলেন।

পান্ডবদের শব্দ শুনে তাদের ডেকে তিনি বলেন – মানুষ হয়েও দেখি তোমাদের খুব অহঙ্কার! প্র্য়াগগঙ্গার মাঝে আমার বাস। প্রাতঃসন্ধ্যার পূর্বকাল পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি যক্ষ-গন্ধর্ব -রাক্ষসদের, অবশিষ্ট কাল মানুষের। রাত্রিতে কোন মানুষ, এমন কি সসৈন্য নৃপতিও যদি জলের কাছে আসে তবে ব্রহ্মজ্ঞরা নিন্দা করেন। আমি কুবেরের সখা গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ এই বন আমার, তোমরা এখান থেকে দূরে চলে যাও।


গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ

অর্জুন বলেন– সমুদ্র, হিমালয় পার্শ্বে এবং এই গঙ্গায় দিনে, রাত্রিতে বা সন্ধ্যায় কারও আসতে বাঁধা নেই। তোমার কথায় কেন আমরা গঙ্গার পবিত্র জল স্পর্শ করব না!

তখন অঙ্গারপর্ণ পান্ডবদের উদ্দেশ্যে অনেকগুলি বাণ ছুঁড়লেন। অর্জুন তার মশাল ও ঢাল ঘুরিয়ে সমস্ত বাণ নিরস্ত করে দ্রোণের থেকে পাওয়া প্রদীপ্ত আগ্নেয় অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। গন্ধর্বরাজের রথ পুড়ে গেল। তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে পালালেন। অর্জুন তাকে তাড়া করে তার চুলের মুঠি ধরলেন।

স্বামীর ঘোর বিপদ বুঝে গন্ধর্বের স্ত্রী কুম্ভীলসী যুধিষ্ঠিরের পায়ে পরে স্বামীর হয়ে ক্ষমা চাইলেন। তিনি বলেন- সাধু শ্রেষ্ঠ তুমি ধর্ম অবতার। তোমার আশ্রয়ে সবার দুঃখমোচন হয়। এই পরম সঙ্কটে আমাদের উদ্ধার কর। সহস্র সতীনের সাথে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও।

নারীর শোকাশ্রু দেখে যুধিষ্ঠিরের মন আদ্র হল। তিনি অর্জুনকে গন্ধর্বরাজকে ছেড়ে দিতে আজ্ঞা দিলেন। যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে অর্জুন তাকে ছেড়ে দিলেন।


যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে অর্জুন অঙ্গারপর্ণকে ছেড়ে দিলেন

গন্ধর্বরাজ জোড় হাতে বিনয়ের সাথে বলেন– আমায় আপনি প্রাণদান করলেন, আমিও আপনাকে কিছু দিতে চাই। অদ্ভূত চাক্ষুসী বিদ্যা আমি আপনাকে দান করতে চাই। আপনি ত্রিলোকের যা কিছু দেখতে ইচ্ছা করবেন, এই বিদ্যা বলে তাতে দেখতে পাবেন। মনু এ বিদ্যা চন্দ্রকে দিয়েছিলেন। পরে তিনি তা আমায় দান করেন। আজ তা আমি আপনাদের দেব। এছাড়া আপনাদের প্রতি ভাইকে একশত দিব্যবর্ণ বেগবান গন্ধর্বদেশীয় অশ্ব দিচ্ছি, এরা প্রভূর ইচ্ছানুসারে উপস্থিত হয়। পূর্বে ইন্দ্র বেত্রাসুরে বজ্র দিয়ে প্রহার করেছিলেন। অসুরের মুন্ডে বজ্র শতখান হল। স্থানে স্থানে সেই বজ্রকে নিয়োগ করা হল। সবার শ্রেষ্ঠ বজ্র ব্রাহ্মণের বচন। শূদ্ররা কাজ করে, বজ্র তাদের সেবা করে। বৈশ্যরা দান করেন- বজ্র তাদের ও বলে। ক্ষত্রিয় হয়ে আপনার সেই শক্তির বজ্রে আমার রথ আজ দগ্ধ হল। সে কারণে আপনাকে এই অশ্বদান করবো।
অর্জুন বলেন– গন্ধর্ব, আপনার প্রাণ সংশয়ে ভীত হয়ে যা আমাকে দিতে চাইছেন, তা নিতে আমার প্রবৃত্ত হচ্ছে না।


.....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×