somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৩

২৯ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - পঞ্চ পান্ডবের সঙ্গে দ্রৌপদীর বিবাহ হলে দুর্যোধনরা ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে....কিন্তু ভীষ্ম, বিদুর ও কৃপাচার্যের সৎ বুদ্ধিতে ধৃতরাষ্ট্র তাদের স্বিকার করতে বাধ্য হন...]


হস্তিনায় পান্ডব আনিতে বিদুরের পাঞ্চালে গমনঃ

রাজার অনুমতি পেয়ে বিদুর আর বিলম্ব করলেন না। বহু ধন-রত্ন নিয়ে পাঞ্চালের উদ্দেশ্যে চললেন।
একে একে সবার প্রতি সম্ভাষণ করলেন। কুন্তীসহ অন্তঃপুরনারীরাও সব শুনলেন। দ্রৌপদীকে অনেক অলঙ্কার দিয়ে আশীর্বাদ জানালেন। নানা রত্নে পঞ্চভাইকে তুষলেন।

বিদুরকে দেখে দ্রুপদ খুশি হলেন। যেন সূর্যের উদয়ে কোকনদ ফুটে উঠল।
পঞ্চভাইকে দেখে বিদুর আনন্দে নয়নজলে ভাসলেন। পঞ্চপান্ডব বিদুরকে প্রণাম করলেন, বন্ধুদের কুশলবার্তা নিলেন। বিদুর সবার কুশল সংবাদ দিলেন এবং বড়দের আশীর্বাদ জানালেন।
বিদুরকে নিয়ে গিয়ে দ্রুপদরাজা মিষ্টান্ন, পকান্ন ভোজন করালেন। ভোজনান্তে সবাই সভায় বসলেন।

বিদুর দ্রুপদরাজাকে বলেন – পান্ডবরা আপনার কন্যাকে বরণ করেছে শুনে রাজা ধৃতরাষ্ট্র বড়ই আনন্দিত হয়েছেন। আপনাকেও বন্ধুরূপে পেলেন, তাই তিনি আমায় এখানে পাঠালেন। গঙ্গাপুত্র ভীষ্মও আপনার সাথে কুরুকুলের সম্বন্ধ হওয়ায় খুশি হয়েছেন। আপনার প্রিয়সখা দ্রোণ আপনাকে আলিঙ্গন জানিয়েছেন। বহুদিন সবাই পঞ্চপান্ডবদের দেখেন নি বলে বড়ই উতলা। গান্ধারীসহ সকল কুরুনারী আপনার কন্যাকে দেখতে ব্যগ্র। পান্ডবরাও বন্ধুদের দেখতে চায়। রাজা ধৃতরাষ্ট্রও চান পান্ডবরা আমার সাথে তাদের নিজ দেশে ফিরে যান।

দ্রুপদ বলেন –আমি বড়ই ভাগ্যবান। কুরু মহাবংশে আমার কুটুম্ব হল। আপনি যা বললেন বিদুর আমারও তাই মত। পান্ডবদের এবার নিজগৃহে ফেরা উচিত। জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র পিতার সমান। তবু যদি দেখেন সেখানে বিপদ আছে তবে খান্ডবপ্রস্তে গিয়ে বসতি করতে পারে।

দ্রুপদের কথা শুনে পঞ্চপান্ডব মাকে নিয়ে রাজ্যে ফেরার জন্য প্রস্তুত হলেন।
রথে চড়ে দ্রৌপদীসহ পান্ডবরা বিদুরের সাথে হস্তিনানগরে ফিরে এলেন। পান্ডবরা হস্তিনায় ফিরছে শুনে প্রজারা আনন্দিত হল। বাল-বৃদ্ধ-যুবা দলে দলে তাদের দর্শনে আসতে লাগল। লজ্জা ভয় ত্যাগ করে যুবতীরা এলো, গর্ভবতী নারীরাও ঊর্দ্ধশ্বাসে তাদের দেখতে চললো। পান্ডবদের দেখতে হুড়াহুড়ি পরে গেল। যষ্টি ভর করে বুড়ীরাও চললো।

পঞ্চভাই জেষ্ঠতাতের কাছে গেলেন। একে একে সকলে ধৃতরাষ্ট্রকে প্রণাম করলেন।
কুন্তীসহ যাজ্ঞসেনীকে কুরুকুলনারীরা অন্তপুরে নিয়ে গেল।

ধৃতরাষ্ট্র পান্ডবদের বলেন –হস্তিনায় তোমাদের থাকা সুশোভন নয়, তাই তোমরা খান্ডবপ্রস্তে যাও। অর্ধেক রাজ্য সেখানে ইন্দ্রের সোসর(মত) ভোগ কর।
শুনে যুধিষ্ঠির সম্মত হলেন। খান্ডবপ্রস্তের উদ্দেশ্যে সবাই রওনা দিলেন। পান্ডবদের আগমনবার্তা পেয়ে যদুবর কৃষ্ণ বলভদ্রকে নিয়ে হস্তিনানগরে এলেন। কৃষ্ণও পান্ডবদের খান্ডবপ্রস্তে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

বলভদ্রের সাহায্যে পঞ্চপান্ডব শুভক্ষণে নগর তৈরী শুরু করলেন। প্রাচীর হল আকাশের সমান উঁচু। চারদিকে সমুদ্রের সমান খাড়ি হল। উঁচু উঁচু মনোরম মন্দির তৈরী হল। সে অমরাবতী ভোগবতী সম হল। প্রাচীরের উপরে প্রচুর অস্ত্র পূর্ণ করা হল। ভক্ষ্য, ভোজ্য, পদাতিক, প্রজাদের স্থাপন করা হল। কুবের ভান্ডার থেকে যেন ধন পূর্ণ করা হল। শুক্লবর্ণে সব গৃহ বিচিত্র শোভায় সজ্জিত হল।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যরা নগরের মধ্যস্থলে বসতি করল।
পাঠক, লেখক, বৈদ্য, চিকিৎসক, সদগোপ, বণিক, শূদ্র সকলে নগরের ভিতর অবস্থান করল।
স্থানে স্থানে নগরে বৃক্ষরোপন করা হল। পিপ্পলী(পিপুঁল), কদম্ব, আম, পনস(কাঁঠাল) বাগান, জম্বীর(জামির/গোঁড়া লেবু), পলাশ, তাল, তমাল, বকুল, নাগেশ্বর, কেতকী, চম্পক রাজফুল, পাটলি(পারুল/গোলাপ), বদরী(কুল), বেল, করবী, খদির(খয়ের), পারিজাত, আমলকী, পর্কটি(পাকুড়), মিহির, কদলী, গুবাক(সুপারি), নারকেল, সখর্জ্জুর-নানাবর্ণের বৃক্ষ চারদিকে শোভে।
স্থানে স্থানে দীঘি পুষ্করিণী তৈরী হল। সেখানে জলচর পাখিরা সর্বদা কাকলি করতে থাকে।
চারদিক দেখে দ্বিতীয় ইন্দ্রপুরী মনে হতে লাগল। নারায়ণ এর নাম ইন্দ্রপ্রস্থ[বর্তমানে নতুন দিল্লীর দক্ষিণে অবস্থিত] রাখলেন।
সেখানে পান্ডবদের স্থাপিত করলেন হরি ও হলধর(বলরাম)। তারপর তারা দ্বারকানগরী ফিরে গেলেন।

পান্ডবদের রাজ্যপ্রাপ্তি শোনে যেই জন, স্থানভ্রষ্ট স্থান পায় দারিদ্র হয় খন্ডন।
আদিপর্ব ভারত ব্যাসের বিরচিত। পাঁচালী প্রবন্ধে কাশীরাম গায় গীত।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯২ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০৪
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×