somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৫

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - পারিজাত হরণের কথা...নারদ পারিজাতপুষ্প কৃষ্ণকে দিলে তিনি তা স্ত্রী রুক্মিণীকে পরিয়ে দেন... সে কথা শুনে সত্যভামার অভিমান হয়...তিনি আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন, কৃষ্ণ এসে তার মানভঞ্জন করেন এবং পারিজাত বৃক্ষ উপহারের আঙ্গিকার করেন...শ্রীকৃষ্ণের সাথে ইন্দ্রের সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়...মহাদেবের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ ইন্দ্রকে সম্মান দেখালে ইন্দ্র পারিজাত কৃষ্ণকে দান করেন ...কিন্তু শচীর হাসি সত্যভামাকে ক্রোধী করে...কৃষ্ণ পুনরায় ইন্দ্রের সাথে যুদ্ধ করতে চান... গড়ুরের ইন্দ্রকে সত্যভামার কাছে নিয়ে আসেন... ইন্দ্রের স্তবে সত্যভামা খুশি হন...কৃষ্ণকে নিজের করে পাওয়ার জন্য নারদ মুনির কথা মত সত্যভামা ব্রত পালন করেন... নারদ কৃষ্ণকে দান পেয়ে তাকে সাথে নিয়ে যেতে চান...সত্যভামা নিজের ভুল বোঝেন... উদ্ধবের প্রচেষ্টায় তুলসিপত্রে কৃষ্ণনাম দান পেয়ে নারদ সন্তুষ্ট হন...এবার সুভদ্রা হরণের কথা]

সুভদ্রার গান্ধর্ব্ব-বিবাহঃ



রাজা জন্মেজয় বৈশম্পায়ন মুনিকে পুনরায় তার পিতামহ অর্জুনের কথা বলতে বলেন।

মুনি বলেন –শুনুন মহারাজ, সুভদ্রা ও পার্থের স্বয়ম্বর কেমন হল।
দ্রৌপদীর নিন্দা শুনে অর্জুন যখন সত্যভামাকে তার স্বামী কৃষ্ণবশের ওষুধ সম্পর্কে জানতে চান,
তখন অর্জুনের কথা শুনে সত্যভামা হেসে বলেন –স্ত্রীরা স্বামীর উপর ওষুধ প্রয়োগ করে, এই বিধি। কিন্তু পুরুষ হয়ে তুমি কি ঔষধি করলে! ভন্ডতা করে ব্রহ্মচারী হলে, এদিকে নারীকে ভোলাতে মহৌষধিও শিখে রেখেছ!

অর্জুন বলেন –দেবী সত্যভামা, আমি আপনার স্তুতি করছি। রাত্রি শেষ হতে চলেছে। আমি নিদ্রা যেতে চাই, আজ আমায় ক্ষমা করুন। আমি জিতেন্দ্রিয়, সত্যবাদী, ব্রহ্মচারী মানুষ। দেশ দেশান্তরে তীর্থযাত্রা করে ভ্রমণ করছি। আমার নামে কেন মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন, সংসারে আমার নিন্দা হবে।
পার্থের মন বুঝে ভারতী সত্যভামা উঠে পরলেন।

সুভদ্রা বলেন –সতী কোথায় যাচ্ছ!

সত্যভামা বলেন –আমার সাথে এস। উপায় বার করি।

এই বলে সুভদ্রাকে নিজের প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। মায়াবতী কামপ্রিয়া, যিনি নানা মায়ায় পারদর্শী। সত্যভামা দ্রুত তাকে ডেকে পাঠান। গোপনে তাকে সুভদ্রার মনের কামনার কথা সব জানান।

রতি বলে –ঠাকুরাণি, এআর এমন কি! জিতেন্দ্রিয় ব্রহ্মচারী বলে পার্থ গর্ব করছেন তো! এই অস্থিচর্মী অনাহারীকে আমি মোহিত করতে সক্ষম।
এই বলে সে সুভদ্রাকে সাজাতে বসল। কপালে সুন্দর করে সিঁদুর পরাল, মন্ত্রপূত কাজল দুই চক্ষে পরাল।
সজ্জা করিয়ে হেসে সুভদ্রাকে বলে -দেবী এবার গেলে পথ পাবেন। আপনার হাতের স্পর্শে দ্বারের কপাট খুলে যাবে।

রতির বাক্য শুনে সুভদ্রা আনন্দিত হয়ে পুনরায় অর্জুনের গৃহে গেলেন। হাত বারাতেই দরজা খুলে গেল। তিনি অর্জুনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাকে দেখে মনে হয় চিত্রকর যেন কনক প্রতিমা নির্মাণ করেছেন। সুভদ্রা যেন বত্রিশ কলাতে শোভিত এক চন্দ্রমা।

অর্জুন তাকে ভাল করে নিরীক্ষণ না করেই ক্রোধে বলে ওঠেন –কে তুমি! স্ত্রীলোক না হলে এখনি খড়্গে তোমায় কাটতাম। শীঘ্র প্রাণ নিয়ে পালাও নইলে নাক, কান কেটে নেব।
এই বলে হাতে ছুরি নিয়ে তেড়ে এলেন। দেখে সুভদ্রা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন।
কিন্তু ফাল্গুনি(অর্জুন) কাছে এসে সুভদ্রার সিঁথার সিঁদুর, চোখের কাজল ও মোহময় রূপ দেখে বিহ্বল হয়ে গেলেন। কাম এসে পার্থের জ্ঞান হরণ করল। তিনি হিল্লোলিত হলেন। সুভদ্রা পরে যাচ্ছেন ভেবে পার্থ তাকে কোলে তুলে নিলেন।

কামে পীড়িত পার্থ বলেন –এস, এস, বস ওহে আমার প্রাণসখি! তোমার পূর্ণ চন্দ্রমার মত সুন্দর বদন একটু নিরীক্ষণ করি, এস।

সুভদ্রা ‘না, না’ বলে মুখ বস্ত্রে ঢাকেন। ভয়ে সুভদ্রা বলে ওঠেন –আমার জাতিনাশ কেন কর! ছাড় পার্থ, ছাড়! অনূঢ়া কন্যাকে বলাৎকার করতে চাও! এ তোমার কেমন ব্যবহার!

ঘরের বাইরে থেকে সত্রাজিত-কন্যা সত্যভামা বলেন –হে পার্থ এখানে কে গণ্ডগোল করছে!

সুভদ্রা বলে ওঠেন –সখি এসে দেখ অর্জুনবীর আমায় জোর করে ধরে রেখেছেন।

সত্যভামা বলেন –পার্থ, এযে অনূঢ়া নারী! তুমি ব্রহ্মচারী হয়ে তাকে বলপ্রয়োগ করে কেন ধরেছ! বসুদেবের কন্যা ইনি, কৃষ্ণের ভগিনী। ধার্মিক হয়ে এর সাথে আপনি এমন কর্ম করলেন!

হতবিহ্বল পার্থ হাতজোড় করে বিনয় বাক্যে বলেন –অনন্ত নারীর মায়া, নরের বোধের বাইরে। তোমার অশেষ মায়া বিধির অগোচর। দামোদর কৃষ্ণ আপনাকে বুঝলেন না, আমি কি বুঝব! না জেনে আপনার আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছিলাম তাই এমন হল। আমায় ক্ষমা করুন, আমি আপনার শরণ নিচ্ছি।

অর্জুনের স্তবে তুষ্ট হলেন ভারতী সত্যভামা। হেসে বলেন –হে মহামতি, ভীত হয়ো না। যা কাজ করলেন এখন ক্ষত্রধর্ম অনুসারে গন্ধর্ব বিবাহ করে নিন।

পাচঁ-সাতজন সখি উলুধ্বনি দিতে লাগল। সত্যভামার তত্ত্বাবধানে পার্থ ও সুভদ্রা পরস্পরের গলায় মালা পরালেন।

এভাবে অর্জুন ও ভদ্রার বিবাহ দিয়ে সত্যভামা গোবিন্দের কাছে গিয়ে সব বলেন –তুমি যে আজ্ঞা দিলে সেই মত গান্ধর্ব বিবাহ দিয়ে এলাম। কাল সকালে তুমি সুভদ্রার বিবাহের ব্যবস্থা কর। দূত পাঠিয়ে কুটুম্বদের এন।

গোবিন্দ বলেন –সতী আমারও তাই মত। কিন্তু বলভদ্র অর্জুনের উপর বিশেষ প্রীত নন। সুভদ্রাকেও তিনি পার্থের হাতে দিতে চাইবেন না।

সত্যভামা বলেন –তা হলে কি উপায়!

শ্রীহরি হেসে বলেন –উপায় আমি বার করব।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহেন সদা সাধুরা করেন পান।
..................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১০৪ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×