somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৬

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন ....... যথাকালে যুধিষ্ঠির যথাযথ ভাবে যজ্ঞ সমাপন করলেন.....ভীষ্মের পরামর্শে যুধিষ্ঠির সকলের শ্রেষ্ঠ কৃষ্ণের পূজা করতে গেলে চেদিরাজ শিশুপাল তীব্র প্রতিবাদ করে কৃষ্ণ নিন্দা করতে লাগল .....ভীষ্ম শিশুপালের কৃষ্ণ নিন্দার বিরোধ করলেন .....শিশুপাল ভীষ্মকেও অপমান করতে থাকে.. ... ভীষ্ম শিশুপালের জন্মকথা সবাইকে বলেন... কৃষ্ণ শিশুপালের মাকে তার একশত অন্যায় ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেন . ....... শিশুপাল কৃষ্ণকে অপমান শুরু করলে কৃষ্ণ সুদর্শন চক্রে তার প্রাণ হরণ করেন ..........]


দুর্যোধন

যজ্ঞান্তে দুর্যোধনের গৃহে গমনঃ

রাজসূয় যজ্ঞ সমাপ্ত হলে সকল রাজারা নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন।

দেব নারায়ণ কৃষ্ণ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের কাছে এসে বলেন –রাজা, আজ্ঞা দিন এবার দ্বারকায় ফিরি। আমি সৌভাগ্যবান যে আপনার যজ্ঞ সুসম্পন্ন হল তা চাক্ষুস করতে পারলাম। এবার অপ্রমাদে(ভয়শূণ্য হয়ে) রাজ্য শাসন করুন, প্রজা পালন করুন, সুহৃদ কুটুম্বদের আদর যত্ন করুন।
এত বলে দেব নারায়ণ ধর্মরাজের সাথে কুন্তীর কাছে উপস্থিত হলেন।

কুন্তীকে প্রণাম করে কৃষ্ণ বলেন –আপনার পুত্রদের সাম্রাজ্য লাভ সুসম্পন্ন হয়েছে, আজ্ঞা করুন এবার দ্বারকায় যাই।

কুন্তী বলেন –যাদের উপর অচ্যুত(যিনি নিজের পদ থেকে চ্যুত হন না) কৃষ্ণের কিঞ্চিৎ দয়া আছে তাদের কাছে এ আর এমন কি!
এই বলে তিনি কৃষ্ণের শির চুম্বন করলেন। হরি কুন্তীর চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করেন।

এরপর দ্রৌপদী ও সুভদ্রাকে সম্ভাষণ করে একে একে পাঁচ ভাইকে বিদায় আলিঙ্গন জানিয়ে শুভক্ষণে রথে চড়ে দ্বারাবতীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
কৃষ্ণের বিচ্ছেদে যুধিষ্ঠির বড়ই ব্যাথিত হলেন।

ধিরে ধিরে সকলে সে যার দেশে চলে গেল। তবে ইন্দ্রপ্রস্থে রয়ে গেল মামা-ভাগ্নে শকুনি-দুর্যোধন। তাদের বড় সাধ ভাল ভাবে ঘুরে ঘুরে ধর্মরাজের সভা দেখার। দুর্যোধন শকুনির সাথে নিত্য সভার মনোহর দিব্য অনুপম আলোক অবলোকন করে। নানা রত্নে খচিত এযেন দেবতার পুরী। দেখতে দেখতে কুরুরাজ দুর্যোধন বিস্ময়াপন্ন হয়। সকল গৃহ অমূল্য রত্নে মণ্ডিত। এদের এক গৃহের তুল্যও নয় সমগ্র হস্তিনাভুবন। এসব ভেবে ভেবে অন্তরে অন্তরে সে দগ্ধ হতে থাকে।
এর মধ্যে দৈবের লিখন এক অঘটন ঘটল। মাতুল শকুনির সাথে দুর্যোধন ঘুরছিল। সামনে এক স্ফটিকের বেদী দেখে তাকে সরোবর ভেবে সে জলে নামবে ভেবে পায়ের বসন গুটিয়ে বেদীর কাছে গিয়ে লজ্জিত হয়। দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করে এলেও লজ্জা মলিন মুখ থরথর কাঁপতে থাকে।
এবার স্ফটিকের বাপী(দীঘি) চিনতে না পেরে সবসনে ভুল করে বাপীতে পড়ে। তা দেখে সভার সকলে হাসতে লাগল। তাদের সাথে ভীমসেন, পার্থ, দুই মাদ্রীপুত্রও যোগ দিলেন।
ধর্মরাজ সঙ্গে সঙ্গে ভাইদের দুর্যোধনকে তোলার নির্দেশ দিলেন। পান্ডুপুত্রেরা দুর্যোধনের সোদক(ভেজা)বস্ত্র ছাড়িয়ে নতুন বস্ত্র পরালেন। ধর্মরাজ যত লোকজন হাসছিল তাদের সকলকে নিবৃত করতে লাগলেন।

এসব ঘটনায় দুর্যোধন অপমানে অভিমানে লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে সেখান থেকে চলে গেল। ক্রোধান্ধ গান্ধারীকুমার ভুল করে আবার দুয়ার খুঁজে পায় না। সকল স্থানের পাঁচিল স্ফটিকের ভেবে দুর্যোধন দিকে দিকে ফিরতে থাকে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে দেওয়ালে মাথা ঠুকে আবার আছাড় খেল। তা দেখে আবার সকলে হাসতে লাগল।
তা দেখে ধর্মরাজ দ্রুত নকুলকে পাঠান দ্বার দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। নকুল হাত ধরে তুললে অপমানে দুর্যোধনের শরীর কাঁপতে লাগল। কিছুমাত্র সময় নষ্ট না করে সে তখনই যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিয়ে হস্তিনাপুরে ফিরে চলল।

বিমনা দুর্যোধন হেঁট মাথায়, ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে মামা শকুনির সাথে বাড়ি চলল।

শকুনি অনেক কথা বলে চলল কিন্তু কোন উত্তর না পেয়ে অবাক হয়ে সে ভাগ্নেকে বলে –ভাগ্নে তোমার এমন মলিন বদন কেন, কেনই বা এত সঘন নিশ্বাস ফেলছ! এত চিন্তাই বা কিসের!

দুর্যোধন বলে –মামা, অপমানে আমার হৃদয় দগ্ধ হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবী আজ পাণ্ডবদের বশে। নিজের চোখে দেখে এলাম একলক্ষ নরপতি তাদের জন্য খাটছে। কুন্তীর পুত্রেরা আজ ইন্দ্রের বৈভব জয় করেছে। কুবের ভান্ডার জিতে নিজেদের ভান্ডার পূর্ণ করেছে। এসব দেখে শুনে আমার দেহ মন গ্রীষ্মের সরোবরের মন শুকিয়ে যাচ্ছে। কুন্তীপুত্রদের কর্মকাণ্ড দেখে আশ্চর্য হতে হয়। নারায়ণ শিশুপালকে বধ করলেন। কোন রাজা একটাও কথা বলল না! অথচ এরাই যুদ্ধ করতে এক হয়েছিল। শিশুপাল মরতেই সকলে লুকিয়ে পড়ল! পাণ্ডবদের তেজে আজ রাজারা ছত্রভঙ্গ। কোন ক্ষত্রিয় এসব সহ্য করবে! তুমিও মামা এদের সব কর্মকাণ্ড দেখে এলে। কত শত শত রত্ন নিয়ে রাজারা দ্বারে দাড়িয়ে, বৈশ্যরাও কর দানের জন্য দণ্ডায়মান। দ্বারে প্রবেশ না করতে পারলেও তারা সব দ্বারে রেখে আসছে। এসব দেখে আমার আর সহ্য হচ্ছে না। অভিমানে আমি শীর্ণ হচ্ছি। ভাই ভেবে এদের মোটেও ক্ষমা করতে পারছি না। এদের দেখলেই আমার অঙ্গ জ্বলে, মামা! চিন্তায় চিন্তায় আমি পাগল হচ্ছি। জলে ডুবি, নাকি আগুনে ঝাঁপাই অথবা বিষ খেয়ে মরে এ জ্বালা মেটাই! আর সহ্য হয় না! বৈরী/শত্রুর সম্পদ হীনলোক যদি দেখে তবে তা সে সহ্য করতে পারে না, নিত্য শোকে পোড়ে। আমিও এমন মানুষ হয়ে শত্রুর বাড়বাড়ন্ত চোখে দেখি কি করে! আজ যুধিষ্ঠিরের বল আমার অধিক, আমি হীনবল। সাগরান্ত ধরা আজ তার অধিন। হে মামা! কি আর বলি, সবই দৈববশ। কি বলি এদের রূপ গুণ, সৌভাগ্য, সাহস। পান্ডুর এই পাঁচ পুত্র বনে জন্মেছিল। যখন হস্তিনাপুরে প্রথম এসে দাঁড়াল-দেখে মনে হল বনবাসী জংলী। পিতৃহীনের দুঃখ এই আমার গৃহে এসেই ঘুচেছিল। কতবার যে কতভাবে এদের মারার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হায় আমার দুর্ভাগ্য। পদ্মবনের মত এদের দিনে দিনে শ্রীবৃদ্ধিই হয়ে চলেছে। মামা, দৈবের কারণেই আজ আমরা রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা হীনবল হয়েছি। পৃথার(কুন্তী) পুত্রেরা আজ আমায় দেখে হাসে-এ আমি কি করে সহ্য করি! আমার এসকল কথা তুমি পিতাকে জানিও। আমি আর গৃহে ফিরছি না, আজই পাবকে(আগুনে) প্রবেশ করব।

দুর্যোধনের এত কথা শুনে শকুনি বলে – হে ভাগ্নে, তোমার ক্রোধ নিবারণ কর। মনে মনেও কখনো যুধিষ্ঠিরকে হিংসা করো না। ধর্মপুত্র সর্বদা তোমার প্রীতি কামনা করেছেন। তোমরা বিচার বিবেচনা করে তাকে যা ভাগ করে দিলে তিনি তাতেই সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি তো তাদের মারতে কত চেষ্টা করলে। দেখ জতুগৃহ থেকে মুক্ত হয়ে তারা পাঞ্চালে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে পেলেন। এভাবে দ্রুপদ ও বীর ধৃষ্টদ্যুম্ন তাদের সহায় হল। এভাবে আজ যুধিষ্ঠির রাজ চক্রবর্তী হলেন। সসাগর পৃথিবী আজ তার ছত্রতলে। তারা সব কিছুই পেয়েছে নিজেদের শক্তিতে।
এতে তুমি কেন দুঃখ পাচ্ছ! তোমার অংশ থেকে তো তারা কিছু নেয়নি। অক্ষয় যুগল তূণ, গান্ডীব ধনুক এসবই তারা পাবক অগ্নিকে তৃপ্ত করে পেয়েছেন। আবার অগ্নির হাত থেকে ময়দানবকে রক্ষা করায় সে এই দিব্য সভা নির্মাণ করে দেয়। নিজেদের পরাক্রমে ক্রতু(যজ্ঞ)রাজ রাজসূয় যজ্ঞ করেছেন। সেই যজ্ঞের তাপ তুমি কেন হৃদয়ে ধারণ করছ! তুমিও এসব নিজের ক্ষমতায় আয়ত্ত কর!
আমায় বল তুমি কি এসব কর্মে নিজেকে অসমর্থ ভাব! তুমি বলছ তোমার অনুগত, তোমার সহায় কেউ নেই! তবে শোন তোমার সাথে কারা কারা আছে। একশত ভাই তোমার প্রচন্ড মহারথী। এই একশত ভাগ্নের প্রতাপের কথা আমি আর কি বলি! এছাড়া ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্যের মত মহাবীরেরা আছেন। ভূরিশ্রবা, সোমদত্ত-এরাও প্রতাপে মিহির(সূর্য)। জয়দ্রথ, বাহ্লীক, আমরা থাকতে তোমায় বধ করবে পৃথিবীতে কার এত সাহস। তুমিও এবার পৃথিবী শাসন করতে রত্ন সঞ্চয় কর। কোন কাজে নিজেকে হীন ভেব না।

দুর্যোধন বলে –আগে আমি পাণ্ডবদের জয় করব। এদের জিতলেই সব আমার বশ হবে।

শকুনি বলে –বাঃ! ভালই বিচার করলে। কিন্তু যুদ্ধ করে কে আর পাণ্ডবদের হারাবে! তাদের সাথে পুত্রসহ দ্রুপদরাজ আছেন, স্বয়ং নারায়ণ তাদের সহায়। ইন্দ্রও আজ পাণ্ডুদের জয় করতে পারবেন না।
তবে আমার কাছে আর এক বিদ্যা আছে, তার সাহায্যে পাণ্ডবদের জিততে পার। চাও তো সে বিদ্যা তোমায় দিতে পারি।

দুর্যোধন বলে –হে মামা, যদি তেমন বিদ্যা তোমার জানা থাকে শীঘ্র সে সম্পর্কে বল। বিনা অস্ত্র প্রয়োগ করে কি করে পাণ্ডবদের জয় করতে পারি বল, শুনে আনন্দ লাভ করি।

শকুনি বলে –শুন দুর্যোধন, পাশা খেলায় ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির নিপুণ নয় তবু তার পাশা খেলার বড় সখ। তুমি যান সংসারে কেউ আমার সাথে পাশা খেলায় জিততে পারে না। ক্ষত্রনীতিতে বলা আছে যুদ্ধে বা দ্যূতে(পাশা খেলায়) কেউ আহ্বান জানালে বিমুখ হতে নেই। যুধিষ্ঠিরকে খেলতে ডাকলে সেও বিমুখ হবে না, ফলে তোমার জয় নিশ্চিত। এখন আমার আগে দ্রুত গিয়ে পিতাকে সব বলে সম্মতি আদায় কর। আমি তাকে এসব বলতে পারব না।

মামা ভাগ্নে এসব পরামর্শ করতে করতে হস্তিনগরে প্রবেশ করল। ধৃতরাষ্ট্রকে প্রণাম জানালে তিনি আশীর্বাদ করে সকলের কুশল সংবাদ নিতে লাগলেন। কিন্তু দুর্যোধন কোন কথা বলল না।

সুবলনন্দন শকুনি সব উত্তর দিল –হে রাজন আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র সর্বগুণবান, তার কথাই বলি অবধান করুন। দিন দিন সে ক্ষীণ হয়ে পরছে। দেহ তার জীর্ণ শীর্ণ। পিঙ্গ(অগ্নির মত) শরীর দেখে আজ মনে হয় তা যেন রক্তহীন হয়েছে। বুঝতে পারছিনা তার কিসের এত মনস্তাপ। সঘন নিশ্বাস ফেলে চলেছে, যেন সে দন্ডহত সাপ।

সব শুনে আকুল হয়ে ধৃতরাষ্ট্র বলেন – পুত্র দুর্যোধন বল কিসের কারণে তোমার অঙ্গ হীনবল হল। শকুনি কি বলল, তুমি শুনলে। তোমার কিসের দুঃখ আমায় বল, আমি যে তোমার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। কে তোমার শত্রু, কার এত বল! কোন সুখের অভাবে তুমি আজ দুর্বল! ধন-জন-সম্পদে কে আজ তোমার সমান পুত্র! কেইবা তোমার চেয়ে বীর আছে এ বসুধায়! সুন্দর বস্ত্র, সুস্বাদু খাদ্য, সুন্দরী নারী, মনোহর গৃহ সবই তোমায় রত্নে মণ্ডিত করে দিয়েছি। তোমার অসাধ্য তো কিছুই রাখিনি। তবু তুমি পুত্র কেন অনুশোচনা করছ!

এত শুনে দুর্যোধন বলে –এসব বৈভব যে কুপুরুষজনের সমান তা আমি প্রমাণ করতে পারি। আমার মনস্তাপের কারণ শুনুন পিতা। আমার কঠিন প্রাণ তাই এখনও মরি নি। পিতা শত্রুর সম্পদ এ নয়নে দেখে আমার শরীর পুষ্ট হচ্ছে না, ভোজনেও তৃপ্তি পাচ্ছি না। পাণ্ডবদের সম্পদ-লক্ষ্মী দিন দিন দীপ্ত দিনকরের মত বেড়ে চলেছে, সেই তাপদাহে আমার কলেবর/দেহ দগ্ধ হচ্ছে। পাণ্ডবদের যা সম্পদ দেখে এলাম তার তুল্য কখনো দেখিনি বা শুনিনি। তাদের সে সম্পদ কাহিনী আমি এখন বলতে পারব না। অষ্টাশী সহস্র দ্বিজ নিত্য তাদের গৃহে ভুঞ্জে(ভোজন করে)। সুবর্ণ পাত্রে সে ভোজন দেখে মন মোহিত হয়। পৃথিবীর রাজারা এমন কি বৈশ্যরাও নানা রত্ন নিয়ে পাণ্ডবদের দ্বারে দাড়িয়ে থাকে। শত শত রাজারা এই যজ্ঞে এসেছে। নাজানি কত শত দ্বিজকে ভোজন করিয়েছে। শুনেছি এক লক্ষ দ্বিজ ব্রাহ্মণের ভোজন হলে একবার শঙ্খ বাজে। আমি তো এক লক্ষবার শঙ্খ শুনেছি। মুহুর্মুহু সেই শঙ্খধ্বনি গুণে শেষ হয়না। সেই শঙ্খধ্বনি শুনে আমি চমকে চমকে উঠেছি। ধনসম্পদের বর্ণনা আর কি দেব, পিতা! সব দেখে বিস্মিত হতে হয়। আমি আর বলতে পারছি না পিতা। এর উপায় বার করুন আপনি। পাণ্ডবদের জয় না করে আমার মনে শান্তি নেই। বিনা যুদ্ধে তাদের হারাতে চাই। আপনি আজ্ঞা করুন। পাশাক্রীড়ায় মামা শকুনি পটু, সেই পাশা খেলায় পাণ্ডবদের লক্ষ্মী জয় করতে চাই।

এত শুনে অন্ধ রাজা বলেন –বিদুরের সাথে তবে পরামর্শ করি। বুদ্ধিদাতা বিদুর মন্ত্রী চূড়ামণি। সে আমার হিতের জন্য অবশ্যই পরামর্শ দেবে। তার বুদ্ধি না নিয়ে আমি অনুমতি দিতে পারি না।

দুর্যোধন বলে –বিদুরকে একথা বললে সে অবশ্যই আপনাকে নিষেধ করবে। তার কথা শুনলে আমার মরণ আপনি নিশ্চিত করবেন। আমি মরলে আপনি সুখে বিদুরের সাথে পরামর্শ করবেন।

পুত্রের এত নিষ্ঠুর বচনে অন্ধ রাজা বড়ই দুঃখ পেলেন।
দুর্যোধনের মন বুঝে তাকে আশ্বাস দিতে রাজা বলেন – তোমরা পাশা খেলার ব্যবস্থা কর। বহু স্তম্ভে বহু রত্নে এক মনোরম সভা নির্মাণ কর। গোটা চারেক দ্বার কর পরিসর। সে সভা নির্মাণ হলে আমায় জানিও।

এত বলে রাজা পুত্রকে শান্ত করলেন। বিচক্ষণ বিদুর সব জানতে পেরে অন্ধ রাজার কাছে দ্রুত গেলেন।

বিদুর রাজাকে বলেন – রাজন এ আপনি কি সিদ্ধান্ত নিলেন! শুনে পর্যন্ত আমার চিত্ত অসন্তুষ্ট। রাজন, পুত্রে পুত্রে ভেদাভেদ করা উচিত নয়, এতে সর্বনাশ নিশ্চিত।

অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র বলেন ¬– আমায় কিছু বলো না। দৈবের লিখন কে খন্ডাতে পারে। তুমি চিন্তা করো না। ভীষ্ম আর আমি ক্রীড়াস্থলে থেকে ন্যায় বিচার করব। সেখানে পুত্রে পুত্রে কখনই দ্বন্ধ হতে দেব না। বিদুর, দৈব যদি প্রতিকূল না হয় তবে কলহ আমাকে দুঃখ দেবে না। বিধাতা সর্ব জগৎ দৈবের বশে রেখেছেন। এখন তুমি দ্রুত ইন্দ্রপ্রস্তে গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে এখানে ডেকে আনো। ধর্মরাজকে এসব বিবরণ বিস্তারিত বলতে হবে না।

এত কথা শুনে ক্ষত্তা(দাসীপুত্র বিদুরের উপাধি)বিষণ্ণ হলেন।
বিদুর বলেন – রাজা উচিত কথা বললেন না। আজ থেকে জানলাম কূলের সর্বনাশ শুরু হল।

এত বলে বিষণ্ণ ও ক্ষুব্ধ বিদুর দ্রুত ভীষ্মের কাছে সব জানাতে গেলেন।

সভা পর্বের সুধারস পাশা অনুবন্ধ(প্রসঙ্গ), কাশীরামদাস কহেন পাঁচালি প্রবন্ধ।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৫ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১২
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×