somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০১: ভন্ড ( রুবেল,তামান্না,হুমায়ুন ফরিদী )

১৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি ৯০ দশকের ছেলে। ৮,১০ বছরে দেখা ফিল্মগুলো এখনো স্পষ্ট মনে না থাকলেও ধোয়া ধোয়া মনে আছে। ৯০ দশকের চলচিত্রগুলো তখন বিটিভি চালাচ্ছে। প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার মুভি দেখানো হতো।৯০ দশকের ফিল্মগুলো সত্যি ছিল দেখার মতো। কি ছিলনা তখনকার ফিল্মে, এক কথায় সব ছিল। টেকনিকাল ব্যাপার স্যাপার কম থাকায়,মুভির সাফল্য পুরোটা নির্ভর করতো পরিচালকের মেধা, গান এবং গল্পের উপরে। ওটা ছিল বাংলা ফিল্ম ইন্ড্রাস্টির সবথেকে রমরমা সময়,প্রচুর ফিল্ম বেড়োচ্ছে। পাবলিক গোগ্রাসে গিলছে। গুনি মানুষে গিজ গিজ করছে মিডিয়া। ছোট পর্দা ও বড় পর্দা দুই পর্দারই তখন কাপা কাপির সময়। যদিও যুদ্ধের পর থেকে আমাদের ফিল্মগুলো আকর্ষনিয় ও দর্শনিয় ছিল। অনেক অভিনেতা অভিনেত্রিদের অসংখ্য অসাধারন যতসব মুভি থাকা সত্তেও বাজার কিন্তু জমে ৯০ এর দশকে। ৮০ শেষের দিকে আর ঠিক ২০০০ পর্যন্ত এই অবস্থা যায়।

দুক্ষের ব্যপার হলো বাজারটা ধরে রাখতে পারা গেলনা। আশা হত হবার ইচ্ছু নেই। সময় প্রচুর বাকি। এবং যারা ঐসময়ের বাজারের পরিবর্তনটা দর্শন করেছিলেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি হচ্ছে। বাংলা ফিল্মে আসছে পরিবর্তন এবং বিজয়ের জোয়ার। আর এই জোয়ারের সময়টাতে নিজের ঘাটের পানিকেও বহমান নদিতে মিলিয়ে দেবার ইচ্ছায় জেগে উঠলো বাংলা ফিল্ম নিয়ে লেখালেখি করার প্রচন্ডতা। সুত্র ধরে আজকের এই লেখা।

অনেকদিন আগেও একবার দেখেছিলাম ছবিটা। সম্ভবত বিটিবিতে অথবা আমাদের ভিসিয়ার এ । ছোট বেলার কথা, প্রায় ভুলে বসে আছি। কিন্তু নামটা ভুলি নি। আর "মুরগী চুরির উপরে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা" এই সংলাপটাও ভুলি নি। গেধে ছিল স্মৃতিতে
যে চলচিত্রের কথা বলছি তার নাম ভন্ড। ৯০ দশকের শেষের দিকের মুভি। মুভিটি প্রচন্ড হিট করেছিল। যেমন হিট সিনেমা হলে সেরকম হিট করেছিল বিটিভি সম্প্রচারে। অনেক দর্শক চিঠি লিখে এই ছবি যাতে আরও দেখানো হয় সেজন্য অনুরোধ করে এবং অনুরোধ রাখা হয়। বেশ কয়েকটা ছবিকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে এটা অন্যতম।

নামঃ ভণ্ড
পরিচালক- শহীদুল ইসলাম খোকন
অভিনয়ে- রুবেল, তামান্না,রাজীব,হুমায়ন ফরিদী ও এ.টি.এম শামসুজ্জামান
গানের কথা- মিলটন খন্দকার
সুর ও সংগীত- আলম খান

এই ফিল্মের প্রান হলো এই ফিল্মের চরিত্রগুলো। চরিত্রগুলোকে নিয়ে কিছু বলি তার ভিতর থেকেই কাহিনি বের হয়ে যাবে।

কদম চোরাঃ এর কাজ মুরগী চুরি করা। ২০ বছর ধরে সে এই কাজ করে যখন শেষ ধরা খায় সে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে। বেশ ইন্ট্রাস্টিং একটা চরিত্র অভিনয় করেছে এ.টি.এম শামসুজ্জামান ।

দ্যি গ্রেট প্রিন্সঃ এইটা শহুরে ধান্দাবাজ। টাউট বাটপারের উপরে ধান্দাবাজ। দিনের পর দিন ধান্দাবাজি করে বেশ বিলাসীতায় জীবনযাপন করছে।এটা এই ফিল্মের সব থেকে আকর্ষনিয় চরিত্র। অভিনয় করেছেন হুমায়ন ফরিদী।

শহরে আসার পর কদম চোরার সাথে প্রিন্সের একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। চাচা-ভাতিজার এই সম্পর্ক ছবির শেষ পর্যন্ত আপনাকে আনন্দ দিয়ে যাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। কমেডির সাথে আবেগের একটা অপুর্ব মিশ্রন।

রাজিবঃ এর নাম ছিল রাজা শিকদার। ক্রাইম করে পালাবার সময় হুবহু তার মতো একজন বিবাহযাত্রিকে দেখলে, খুন করে তার পরিচয়ে মিথ্যে বিয়ে করেন তিনি। ক্রাইমের ঘাড়ে পা দিয়ে, অল্প দিনে হয়ে যায় শহরের সব থেকে সেরা ধনিদের একজন। অভিনয় করেছে রাজিব।

ম্যাডামঃ ইনি রাজীবের ২য় স্ত্রি। চাপে পরে রাজিব এই বিধবাকে বিয়ে করলেও তাকে কোন প্রকার সামাজিক মর্যাদা দেয় না। আলাদা বাসায় নিয়ে রাখে, আর নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। কিন্তু মহিলার তা ভালোলাগেনা সে চায় সামাজিক মর্যাদা।পাওয়ার জন্য তিনি একটা প্লান করেন।
আর এই প্লান পুরনের জন্য তিনি ধাতস্ত হন দুই চোরের কাছে। কদম চোরা আর প্রিন্সকে ব্লাকমেইল করে তিনি নিজের কাজে ব্যবহার করেন । ওদের একজন সাহসী,শিক্ষিত,বেকার যুবক খুজে দিতে হবে ।যাকে ঘিরেই মূল প্লান ।
কাঠ-খর পুড়িয়ে শেষ মেস পাওয়া একটা মনের মতো ছেলে।

ইমনঃ রগচটা,সাহসী,অন্যায় প্রতিবাদি এই ছেলেটা তার বাবার আদর্শ পেলেও সে এখনো বেকার। সে তার এলাকায় গাড়িতে দেখে এক নজরে এক মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে। সেই ভালোবাসা বুকে পুসে নিয়েই সে ম্যাডামের কাজে হাত দিল। অভিনয় করেছে রুবেল।

মউঃ রাজীব চৌধুরির মেয়ে। শহরের সব থেকে সুন্দরী। নাদুস নুদুস এই মেয়েকে তার বাবা জীবনের থেকেও ভালোবাসেন। অভিনয় করেছেন তামান্না।

ইমনের কাজ হবে, রাজিব চৌধুরির মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় করা। তার মন জয় করে রাজিব চৌধুরির সম্পদ হাত করা। যাতে করে রাজীব চৌধুরি ভিক্ষারিতে পরিনত হয়। আর সে ফিরে আসে পরিকল্পনাকারি ম্যাডামের কাছে।
মোটামুটি এই হলো, অর্ধ গল্প। বাকি্টা ফিল্মেই দেখবেন।


আবার আসি বিস্তারিত।

হুমায়ুন ফরিদীর অভিনয় ছিল সবথেকে ভালো। ৯০ দশকের সেরা ভিলেন হিসেবে হুমায়ুন ফরিদী বেশ নাম করা হলেও এই ফিল্মে তিনি সাধু পাট নিয়েছেন। এবং তাক লাগিয়ে দেওয়া অভিনয় করেছে। তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে অভিনয় করলো এ.টি.এম শামসুজ্জামান । দুজনের কত সাবলিল অভিনয়। এই ফিল্মের অনেক বড় একটা অংশ এই দুজন।

মুভির গল্পে ওই সময়ের জন্যে বেশ নতুনত্ত এবং আধুনিক। ভিন্নধর্মি গল্পের জোরেই আজ ভন্ডের এত নাম ডাক। একটা সাজানো গোছানো ফিল্ম দেখলেই বোঝা যাবে। সকলের নিস্বার্থ পরিশ্রমেই গড়ে ওঠে এরকম একটা ফিল্ম।

ভিলেন হিসেবে রাজীব আর সৎ পুলিশ হিসেবে খলিলের অভিনয়ও ছিল দেখার মতো। পাশাপাশি যারা ছিলেন তারাও খারাপ অভিনয় করেনি। সব মিলিয়ে একটা অস্থির ফিল্ম

রুবেলের কথা বলার দরকার নেই। হলিউডের যেমন ক্লাইন্ট ইষ্টুড এদেশের তেমন রুবেল। অভিনেতা টবিনেতা ব্যাপার না। ব্যাপার হলো রুবেল একটা হিরো বটে।নাচ , লিপ , একশন , ফাউটিং,কুংফু সব কিছুতেই ছিল পারদর্শী।

আর তামান্নার মতো সুন্দরী নাকিয়া বর্তমান বলিঊডেও আছে কিনা আমি জানিনা। তার কি কন্ঠ। উহ, ওই মায়াবী কন্ঠে যেকোন কথা শুনতেই ভালোলাগে।

এই ছবির গানগুলো অসাধারন।।
টাইটেল সংটা সত্যি অদ্ভুত একটা গান।
গানটা যে কতটা আধুনিক, শুনে দেখুন !!
ও সাথিরে গানটা বেশ রোমান্টিক, হুট হাট মাথায় বেজে উঠছে।
সঙ্গিত করেছেন আলম খান। ভালো আর হিট নাহয়ে উপায় আছে।

এবার আসি একটা আসল লোকের কথায়। এই ফিল্মের সব থেকে ক্রেডিট যাবে যার ঘরে সে হলেন পরিচালক মশাই। এই লোক প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। তিনি তার প্রতিটি ফিল্মে উপস্থিত থাকতেন। খুব অল্প সময়ের জন্য। এই কাজ, আলফ্রেড হিচকক,টারান্টিনো এবং হালের এম নাইট শ্যামলান করে থাকেন। মুভিতে যে ভুল ত্রুটিগুলো আপনার চোখে পড়বে এগুলো মোটেও বুদ্ধিহীনতা নয়। স্পষ্ট বোঝা যায় বাজেট সল্পতার জন্যই কিছু জিনিষ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এই ফিল্মে বেশ ভালো ইংলিশ ব্যবহার করেছেন। এবং সব দিক দিয়েই তা ছিল সঠিক। ফিল্মে প্রচুর ইনটেলেকচুয়ালিটি দেখা যায়। যা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে।তিনি চেষ্টা করেছেন মানুষের ভিতরের পশু সত্ত্বাটেকে প্রদর্শন করতে।সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের নাজে দিকগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। চোর,মধ্যবৃত্ত,ধনি,বিধবা,স্বামীহীন স্ত্রি যে স্বামির আদর পাবার জন্য জঘন্য সীধান্ত নিতে পারে, সব কিছুই তিনি এই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।


মুভিটি ইউটিউবে আপলোড করেছেন কবি ও কাব্য । সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

হলিঊডের অসংখ্য জামজকম মুভির ফাকে বাংলা মুভি দেখার স্বভাব আমার বহু দিনের। হঠাত করেই এই মুভিটা দেখে কিন্তু আমার প্রচন্ড ভালোলাগলো। তাই পোষ্ট করলাম। সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, একটু সময় করে বাংলা ফিল্ম দেখুন। মাসে একটা হলেও দেখুন।

আমার সিনেমা বিষয়ক পোষ্ট সমগ্র

৬০টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×