somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনজীবির পাত্রী-সঙ্কট

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পীড়াপীড়িতে হবু শশুরের-ই বাসায় যেতে হলো। অথচ ট্র্যাডিশন ঠিক উল্টো। ছেলে দেখতে ছেলের বাড়ি যেতে হয়। বাড়ি থেকে খাস করে জিয়াদাদা ঢাকা এলেন। আমার গার্জিয়ান । বুকের ধুকপুকানি নিয়ে অগত্যা রাজি হলাম। গত তিন মাস ইলিমঢিলিম করেছি। আগে বিয়ে করিনি, বিয়ের কথা শুনলেই অস্থির লাগে। “দেখাশুনাটা থাক। একবার এসো”। শাশুড়ির ওভার দা ফোন অনুরোধ। অবশেষে যেতেই হলো।
ওকালতির এক বছর ও হয়নি। জুনিওরশিপ করছি। ক'টাকা পাই আপনারা ভালো করেই জানেন। তাই ২৮ বছর বয়সেও বিয়ে করাটা ভীমরতি বৈকি। ওকালতির শুরুটা এমন একটা বয়সে করতে হয় যখন বিয়ের বয়সটাও নির্লজ্জ রকম সবার চোখে পড়ে। বাবা-মার পিড়াপীড়ি রীতিমত মার্কিনী হুকুম।
কথামতো দুপুরেই হাজির হলাম। ওখানে লাঞ্চ করতে হবে। দরজা খুললেন ভদ্রমহিলা। “তোমার হবু শাশুড়ি”, দাদা ইঙ্গিত করলেন। শশুর জুম্মা নামাজে গেছে । আমাকেও যেতে হলো।
খাবার পরিবেশন করলেন হবু শশুর। শালার মাইয়া, আড়চোখে দেখলাম, শুয়ে আছে। আর বাপরে লাগাইছে খাজিনদারিতে। “প্লিজ আপনিও বসেন” – ভদ্র বিড়ালের মতো করে বললাম। না, উনি পরে খাবেন।
খাওয়াদাওয়া শেষে ঘন্টা খানেক পর ড্রয়িংরুমে ডাক পড়লো । বুঝলাম ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ নিবেন শশুর। এক সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড। পড়িমরি করে হরি নাম জপলাম। আল্লাহর নাম নিয়ে বসলাম। আলির নাম নিতে ভুললাম না। আলি সাহেব আমার পেশাগত সিনিয়র। গুরুর আশীর্বাদ একান্ত কাম্য।
শাশুড়ি বসলেন না, অদূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। আড়ালে একটা ট্রান্সিস্টর রেডিও, আমার হবু বৌ। কান পেতে আমাদের সব কথা শুনছে।
“নিজের সম্পর্কে কিছু বলো”। ভাইবা বোর্ডের কমন প্রশ্ন। “ফার্স্ট ক্লাস পাইলা না কেন?” “মাত্র ১৭ জন পেয়েছে”। “হু, পড়াশুনা করো নাই। ৫৫% মার্ক্স্ মানে সিজিপিএ কত”? বললাম আমাদের অনার্সে গ্রেড ছিল না। কিন্তু উনি গ্রেড থেকে বেরোতেই পারলেন না। “সেকেন্ড ক্লাস ইজ সেকেন্ড ক্লাস”। মাস্টার্সে গ্রেড ছিল, ওটাই চালিয়ে দিলাম- ৩.২৫ । “তারমানে ফার্স্ট ক্লাস”-নিজেই বললেন। আউট অফ ফোরে ৩.৫ না হইলে কেউ ফার্স্ট ক্লাস গুনে না। সিজিপিএ ৩.০০ যে ফার্স্ট ক্লাস এটা নিশ্চয় উনার ফাঁকিবাজ ছেলে-মেয়েরা উনাকে বুঝাইছে।
“তো ইন্ডিয়া গেলা কেন? ডাবল মাস্টার্সের কি দরকার ছিল?” ভুঙভাঙ বুঝাইলাম, কিছু শিখছি ওখানে। আমারতো দিল্লি দেখার ইচ্ছাই প্রধান ছিল। যা শিখছি তা ফাউ। এক মুহূর্তে নীতিশার কথা ও মনে পড়লো।
“সরকারি চাকরি করবা না? জুডিশিয়ারি দাও। ওকালতি কোনো প্রফেশন হইলো, দিন নাই রাত নাই, পরিবারে টাইম দিতে পারবা না। সকাল হইলেই বোরকা লিয়া ছুটাছুটি”। বুঝলাম, উনি গাউনটারে মীন করলেন।দাঁতে দাঁত চাপলাম। “জামাই মাইয়া মানুষ না, বোরকা তোমার মাইয়ারে পরামু, খালি বিয়েটা দাও, মাইয়ার ডিস্কোগিরি ছুটামু”। রাগের মাথায় আপনি থাইকা তুমিতে নেমে পড়েছিলাম। অবশ্য মনে মনেই।
মেয়ে রাজউক থেকে পাস করে ঢাকা উনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
“আমার এক খালাতো ভাই, খালি হাতে ঢাকা আইলো, প্যান্ট শার্ট বানাই দিলাম, ২০০০ টাকা দিয়া কইলাম আব্বারে দিস । ৪০০ টাকা মাইরা দিয়া বাকিটা দিসে। ওই শালা পরে ল কলেজ থাইকা সার্টিফিকেট লৈছে, ওকালতি করে এখন। দেখলেন, উকিল হয় কারা? ছি ছি। ছেচড়া ছেচড়া”।
“উকিলরা কি মানুষ। ইচ্ছা মতো ফি নেয়, রুল নাই নীতি নাই। টাকাকামড়ি জাত। প্রফেশনটাই আমি ডিস্অনার করি”। মনে হলো উকিল শব্দটা গালি হিসেবে উচ্চারণ করছেন।
বিয়ে করতে বছর গেছে আব্দুস সামাদের। ছেলে ওকালতি করে বললেই ব্যাস। মেয়ের বাপ হাইকোর্ট দেখায়। অবশ্য সামাদের গত অক্টোবরে বিয়ে হয়েছে।
এই হবু শশুর উকিলদের ধুয়ে দিলেন অথচ কাঁইকুঁই করা ছাড়া কিচ্ছু করলাম না পাছে বদনাম হয়। জিয়া দাদা মাঝে মাঝে সেকেন্ড জজের মতো শুধু হু হু করে গেলেন।
ডেকে এনে অপমান করার কি দরকার ছিল? জানতেন তো ছেলে ওকালতি করে।
“বয়স থাকলে জুডিশিয়ারি দাও। জজের বাড়ির আশপাশ দিয়া ওসি হাঁটে না, ওই ওসি আবার উকিলের আইডি কার্ড পর্যন্ত চেক করে”। নিজেকে “বাঁয়ে প্লাস্টিক'র” মতো মনে হইলো। বলতে পারলাম না “আমি ছোট, আমাকে মারবেন না”।
“আমি প্যাচঁপুছ বুঝি না বাবা, বাট জজের জীবন নিশ্চিন্ত জীবন। এতদিন কষ্ট কইরা পড়ালেখা করলা, আবার সারাজীবন কষ্ট কইরা ওকালতি করবা কেন”? কথা সত্য। আমার বাপ ও চেয়েছিলো ছেলে জজ হোক। কিন্তু আমি অংকে পাশ করতে পারবো না।
“মাইয়া উকিলগুলা একেকটা কী, সারাদিন দৌড়াদৌড়ি। বাচ্চা সামলাই কখন? … “যাই বলো, জজ জজই”। সবশেষ কথা। একতরফা ডিক্রি।
বাবাজির হাঁটুর বুদ্ধি যথাস্থানে ফেরত এসেছে। ।তোমরা গল্প করো বলে উঠে গেলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
হবু শাশুড়ি আমার ইয়েকে নিয়ে বসলেন।
“মেয়েটা আমার খুব রোগা হয়ে গেছে”। শাশুড়ি আমাদের টয়াটিপা দেখে আগেই আত্মপক্ষ নিলেন।
“তোমার নামটা যেন কি?” জিয়া ভাই জিজ্ঞেস করলেন।
“ডাক নাম শিমু, আসল নাম অমুক ধমুক”।
“কোন সাবজেক্টে পড়ছো”?
“হোম ইকোনমিকস”।
ছোট ভাইয়ের ইয়ের সঙ্গে বেশিক্ষন কথা চলে না, জিয়া ভাই আমার দিকে তাকালেন।
“আপনি আমাদের কথাবার্তা শুনেছেন নিশ্চয়ই”? আমি বললাম। “বাবাতো উকিলদের পছন্দ করেন না, আপনি নিশ্চই সহ্য করতে পারেন না”?
“অনেস্ট হলে তো প্রব্লেম নাই” বলে মা'র দিকে তাকালো।
“মক্কেলরা আমার বদনাম করে না বাট ব্যক্তি হিসেবে হয়তো খুব একটা সুবিধার নই”। মেয়ে এমন করে তাকালো “দূরে গিয়া মরেন” টাইপের।
আলি সাহেবের কথা মনে পড়লো। “উকিলের জীবন কোর্ট টু চেম্বার, চেম্বার টু কোর্ট। দেয়ার ইজ নো পার্সোনাল লাইফ ইন বেটুইন”। “ঘর সামলাতে পারবেন তো”? প্রশ্ন করলাম। আলি সাহেবের বৌ বাজার করা থেকে রান্না করা, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা একাই করে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, মনে হলো মেয়ে এক্ষুনি যেতে রাজি।
বাচ্চকা ভালা বোলনা চোলনা বহুড়ীকা ভালা চুপ-জ্ঞানীদের কথা। মেয়ে যেন সাত চড়ে রা নাই-এমনটা হয়। মেডিটেশনের ধৈর্য্য নাই। রেগে গেলেই হেরে যাবো। হেরে গেলেই উকিলের বদনাম।
জিয়া ভাই ওকে ওর স্থায়ী ঠিকানা লিখতে বলেছিলো। লিখেছে: প্রথমে নাম, তারপর জেলাঃ চাঁপাই নবাবগঞ্জ, থানাঃ শিবগঞ্জ, গ্রামঃ ... এইভাবে। উল্টোদিক থেকে। ডাকঘর লিখতে ভুলে গেছে।
কপালে বিপদ আছে। মেয়ে উল্টো চলে নাকি?
গল্পের একটা বই সঙ্গে ছিল। সতর্কতার সঙ্গে ভেতরে কিছু টিপস রেখে দিয়ে বললাম বইটা তোমার জন্য।
ফেরার সময় খুব ইচ্ছে হলো ওকে চোখেচোখে কিছু বলি- পারলাম না। এক্সিট প্যারেডের প্রথম সারিতে আমরা দু'ভাই। তারপর ওর বাবা-মা। মেয়ে এক্কেবারে থার্ড লাইন। “ব্রোঞ্জপদক কোথাকার”-রাগ হলো।
উকিলরাও সত্য বলে বৈকি: গত রাতে একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি।
শশুরমশাই বরাবর একটা সাপ্প্লিমেন্টারি এফিডেভিট দেয়া যায় কিনা ভাবছি।
ঢাকা, ০৪.০৯.২০১৬

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×