somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজন্ম, আমাদের লেভেলটা-তো এত নীচু না, এটা তোমরা কি করলা ?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে মার্ক জুকারবার্গ ও তার স্ত্রীর ছবিতে গালাগালি কমেন্ট করে আমরা আসলে কি প্রমাণ করতে চাইছি? জানিনা শুরুটা কে করসিল । আর একবার শুরু হইলে বাঙালি থামবার চায় না। ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি একটিভ হয়তো বাঙ্গালিরাই থাকে । উদাহরণ, আমার দু’জন বিদেশী মেয়ে বন্ধু আছে, একজন রুমানিয়ার আর আরেকজন ব্রাজিলের। দু’জনই দেখতে বেশ । তাদের কথা এ জন্যই আসল যে আমি তাদের কোন ছবিতেও এত লাইক আর কমেন্ট দেখিনা, যতটা না আমি কোন বাঙালি ললনার ছবি বা পোস্টে দেখি।

সেরকম গালাগালি কমেন্টেরও রেকর্ড করে আমরা বিশ্বকে কি বুঝাইলাম? ঐ সব গালাগালি কমেন্ট দেখে জাস্ট দু’জন বিদেশীর করা কমেন্ট তুলে ধরলাম - “বাংলাদেশ কোন দেশ? এরা কি শিক্ষিত?” আরেকজন লিখেছে “ধন্যবাদ ঈশ্বরকে যে এই রকম একটা বাজে দেশে আমি জন্মাই নাই”

আমাদের নিয়া আলোচনা হবে কিনতু তাই বলে এভাবে? বিশ্ব আমাদের নিয়ে আলোচনা করবে এভাবে, এরা হল সেই জাতি যারা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাইতে রাইফেলের বুলেট দিয়া বুকটা ঝাঁঝরা কইরা ফেলে । যখন কমেন্টকারী প্রশ্ন করব “বাংলাদেশ কোন দেশ?” উত্তরটা হইব “এটা সেই দেশ যার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ৩০ লক্ষ বীর শহীদ হইয়া শুইয়া রইসে”

একটা ঘটনা বলি --

১৯৭১ এ, শহীদ জননী সাফিয়া বেগম শেষবার যখন ছেলে আজাদকে থানায় দেখতে যান, আজাদ বলসিল, “মা এরা খুব মারে, আমিতো আর সহ্য করতে পারিনা” আয়রন লেডি সাফিয়া বলসিলেন “শক্ত হয়ে থাকরে বাবা । কোন কিছু স্বীকার করিস না” কোন দেশের কয়টা মা এই কথাটা কইতে পারব? আজাদ বলসিল, “মা কতদিন ভাত খাই না। আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো ।” মা পরদিন ভাত নিয়ে যান থানায়। গিয়ে দেখেন ছেলে নাই। এই ছেলে আর কোনদিনও ফিরে আসে নি। যতদিন বেঁচে ছিলেন, এই মা আর কোনদিন ভাত খান নাই। বিশ্ব আমাদের বীর আজাদ আর তার মায়ের আত্মত্যাগ নিয়া গল্প করবে কিনতু আপনারা কি করলেন? গালিগালাজকারী ঐ সব অবালদের কানের নিচে থাপ্পড় দিয়া বলতে মন চায়, হে ড্যুড! ডু ইউ নো হু ওয়াজ আজাদ? ডু ইউ নো এট ইউর এইজ, হোয়াট হি ডিড ফর আস?

৪৩ বছর আগের ঘটনা বাদ দেন, ২০১৪ সালের একটা ঘটনা বলি—

ঘটনাটি গত সপ্তাহের রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার যাদবপুর গ্রামের। এই তো আগের রাতেই মেয়েটাকে কিছু মানুষরূপী জানোয়ার রেপ করসে । বয়স কত এই তেরো কি চোদ্দ। মেয়েটার বাবা রাগে-দুঃখে অপমানে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করসে কয়েকবার । সকালে মেয়েকে আবার মেডিকেল টেস্ট নামক মানসিক ধর্ষণ এর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে । মেয়েটা কি করসে জানেন? মেডিকেল টেস্ট দিয়াই হাসপাতাল থেকে ডাইরেক্ট জেএসসি পরীক্ষা দিতে চইলা গেসে। সে পুরো পরীক্ষা শেষ করেই হল থেকে বের হইসে । একটা বাচ্চা মেয়ে , যে কিনা আগের রাতে জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দুস্বপ্নের ভেতর দিয়ে গেছে সে মেয়েটাই সকালে পরীক্ষা দিয়ে বিজয়ীর মত বাড়িতে ফিরল। স্যালুট বোনরে আমার, স্যালুট তোরে । বোনরে তুই মানবী নারে, তুই ঈশ্বরের অবতার, তুই হইলি পরম সত্ত্বা । তুই-ই আসল আশরাফুল মাখলুকাত । এই হইল বাঙালি জাতি, এই রকম আয়রন লেডির দেশ আমাদের এই দেশ ।

মজা করবি কর তাই বইলা দেশের ইজ্জত মারবি? ঐ সব গালাগালির সাথে যারা জড়িত আর এটাকে spam এ রূপ দিসে আমি তাদের বলব, হু দ্যা হেল আর ইউ টু এক্সপ্লোয়েট দ্যা নেইম এন্ড ফেইম অফ আওয়ার কান্ট্রি? অফ যা তোরা...

প্রজন্ম মনে রাইখ, আমাদের উপরে ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ বীরাঙ্গনার ইজ্জতের ছায়া আছে, আমাদের শরীরের শিরায় শিরায় সালাম, বরকতের রক্ত আছে, শহীদ আজাদের মত ভাই আর সাফিয়া বেগমের মত মা আছে আমাদের, পীরগঞ্জের সেই আয়রন লেডির মত বোন আছে, পৃথিবীটাকে জানান দাও। কাঁপায়া দাও বিশ্বটারে ।

সাকিব-আল হাসান বা জুকারবার্গের বউকে গালাগালি করার জন্য আমাদের জন্ম হয় নাই, সেটা আমাদের কাজ নয়রে ম্যান । আমাদের লেভেলটা অনেক উপরে । অনেক বেশি উপরে। আমাদের আসল লেভেলটা তাদের দেখায়া দে তোরা

(দ্বীন মুহাম্মদ সুমন -- ১৭ নভেম্বর, ২০১৪)
আমার ফেসবুক প্রোফাইল : https://www.facebook.com/dinmuhammadsumon
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
৩০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×