ইসলাম একটি ভাবসমৃদ্ধ শব্দ, যার অর্থ আনুগত্য, অনুসরণ ও শান্তি। কেউ কেউ ইসলামকে শান্তি অর্থ বললেও কেবল একটি অর্থে ইসলামকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না, বরং এর অর্থ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
ইসলামের আভিধানিক অর্থঃ
‘ইসলাম’ শব্দটি আরবি। এটি বাবে ‘ইফয়াল’ এর মাসদার বা ক্রিয়ামূল। এটি ‘সিলমুন’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপে বলা হয়ে থাকে।
ক. Submission, Surrender বা আত্মসমর্পন করা।
যেহেতু মুসলমানগণ ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে। অর্থাৎ নিজের খেয়াল খুশিমতো জীবনযাপন না করে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করে এজন্য এটাকে ইসলাম বা আত্মসমর্পণ বলা হয়ে থাকে।
খ. ‘ইতায়াত’ বা আনুগত্য করা।
আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাঁর বাধ্যতা স্বীকার করা এ ধর্মের লক্ষ্য বলেই এর নাম ইসলাম।
ইব্রাহিমকে (আ) বলা হয়েছিল, أَسْلِـمْ
অর্থঃ ‘‘আনুগত্য কর।’’
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ ‘‘আমি বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলাম।’’ (সূরা আল-বাকারাহ্, ১৩১)
ইসলাম শব্দের আরেকটি অর্থ করা হয়ে থাকে তাহল শান্তি। ইসলামকে ‘শান্তি’ বলা হয় এ কারণে যে, ইসলাম অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ তার হৃদয়ে এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করে, আর সমাজে ইসলাম বিস্তার লাভ করলে সমাজের মধ্যেও শান্তি বিরাজ করে বলে এটাকে শান্তি বলা হয়ে থাকে।
‘সালমুন’ শব্দটির প্রয়োগ পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় লক্ষ্য করা যায়।
সূরা আল-বাকারায় বলা হয়েছে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
অর্থঃ ‘‘ হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ কর।’’ (সূরা আল-বাকারা ) (সংগৃহীত)
প্রথমেই আপনাকে (নাস্তিক ভাইকে) ইসলাম সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞান দিলাম । আপনি আসলে এ ব্যাপারে একেবারে অজ্ঞ বললেও অত্যুক্তি হবেনা ! একজন মানুষ যে নাকি তার নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে মহান স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করে সে-ই মুসলিম । মুসলিম মানে একজন আত্মসমর্পণকারী ! পবিত্র কুরআন-এ স্পষ্ট বলা হয়েছে- এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুই ইচ্ছায়/ অনিচ্ছায় আল্লাহ্'র কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছে ।
وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلالُهُم بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ
আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায়।
মানুষকে আল্লাহ্ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন । তাই সে চাইলে আল্লাহ্'র অবাধ্য হতে পারে । কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি অণু পরমানু আল্লাহ্'র আনুগত্য স্বীকার করে "আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে" - এখানে "সেজদা করে" বলতে এ কথাই বুঝানো হয়েছে । তাই ইসলাম আসলে মানুষের সহজাত ধর্ম । আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ------
প্রতিটি শিশুই ফিতরাত তথা ইসলাম গ্রহণের যোগ্যতাসহ জন্মগ্রহণ করে। তার পর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। (বুখারি ও মুসলিম)
প্রতিটি মানুষই সৃষ্টি গত ভাবে মুসলিম বা এক স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণকারী ।
নাস্তিকের প্রশ্ন:-- আস্তিক বলতে আপনি শুধু মুসলমানদের ধরবেন কেন? শুধুমাত্র মুসলমারাই আস্তিক? অন্য ধর্মাবল্বীরা আস্তিক নয়?
উত্তর : আমি আস্তিক বলতে মূলত এক স্রষ্টায় বিশ্বাস স্থাপন কারীদের প্রতি ইঙ্গিত করেছি । আর আমি তো আগেই উল্লেখ করেছি “মুসলিম” কাদেরকে বলা হয় । আপনি উপরের সংজ্ঞাটুকু ভালো মতো পড়লেই এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন ।
নাস্তিকের প্রশ্ন: --ধরেন দুই আস্তিক (খ্রষ্টান, মুসলিম) মৃত্যর পর বিচারের জন্য আপেক্ষা করতেছে, তারা কাকে দেখতে পাবে শেষ বিচারের দিন? জিসাস ক্রাইশ্ট অথবা মোহাম্মদকে?
উত্তর : ঈসা (আ) আমাদের নবী (সা) এর পূর্বে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন । আমরা মুসলমানেরা তাকে একজন নবী হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করি । বাইবেলেও এই কথার সত্যতা আছে । হাজার বিকৃতি সত্ত্বেও এখনো এই কথার সত্যতা বাইবেলে পাওয়া যায় । আলহামদুলিল্লাহ্ । আপনি চাইলে আমি এই ব্যাপারে প্রচুর সূত্র উল্লেখ করতে পারি । যেখানে ঈসা (আ) নিজেই বলেছেন তাঁর পরে আরেক জন নবী আসবেন । যার নাম আহমাদ । ঈসা (আ) পৃথিবীতে আবার আসবেন । এবং তখন তিনি নবীর (সা) আনিত দ্বীনের-ই অনুসরণ করবেন । অতএব আপনি যেটা বললেন যে ---ধরেন এক খ্রষ্টান মৃত্যুর পর জানল জিসাস ক্রাইশ্ট নয়, মুহাম্মদই আসল নবী আবার এমনও হতে পারে এক মুসলিম মৃত্যুর পর জানল মুহাম্মদই নয়, জিসাস ক্রাইশ্টই আসল নবী! এর পর আপনি আরো জিজ্ঞেস করলেন- আপনার কি মত? আপনি্ও কি এই ধরনের আতংকে ভুগেন? আপনি এক কাজ করেন...আস্তিক হিসাবে এক মাস করে করে সব ধর্ম পালন করেন, যাতে বেহেশত কনফার্ম হয়।
উত্তর : এই ধারণা আসলে সঠিক নয় । আমারা মুসলমানরা ঠিক যে ভাবে মুহাম্মাদ (সা) কে নবী হিসেবে স্বীকার করি ঠিক সেভাবেই ঈসা (আ) অর্থাৎ জিসাসকে ও নবী হিসেবে স্বীকার এবং বিশ্বাস করি । আমারা যদি ঈসা (আ) কে নবী হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করি তাহলে তো আমরা প্রকৃত মুসলমানই হতে পারবো না । তাঁকে অর্থাৎ ঈসা (আ) কে বিশ্বাস করা আমাদের ঈমানের একটি অংশ । আমার তো মনে হয় এই আধুনিক যুগে এমন লোক সে হতে পারে অমুসলিম, সেও একথা জানেন যে মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্'র নবী এবং সর্বশেষ রাসুল । সারা বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ এই সত্যের স্বীকৃতি দিয়ে ইসলাম কবুল করে নিচ্ছেন । একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে মহানবী (সা) ই সর্বশেষ নবী ও রাসুল । অতএব তাঁর আনিত দ্বীন অনুসরণের মাধ্যমেই মানবতার মুক্তি । সুতরাং আতংকে ভুগার কি আছে ? আর সব ধর্ম এক মাস এক মাস করে পালন করারই বা কি আছে ? সত্য তো আমার হাতের মুঠোয় । সত্য তো একটাই , হাজারটা তো না !!
নাস্তিকের প্রশ্ন : --আপনি বলেছেন বিজ্ঞান পরম নয়, ভাই ধর্ম কি পরম জিনিষ? পৃথিবীতে এত ধর্ম, ধর্মের ভিতরেও কয়েকশ ভাগ- সিয়া, সুন্নি, আহমদিয়া, রোমান ক্যথলিক.
উত্তরঃ আপনি আগে আল্লাহ্'র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন তার পর এই বিষয়ে আলোচনায় আসবো । আগে ওয়ান –টু পাশ করেন প্রাইমারী ছাড়েন তার পর হাই স্কুলে ঢুকেন !! তার মানে এই না আমি এই প্রশ্নটি এড়িয়ে যাচ্ছি । মোটেও না ।এরপরও এতোটুকুই শুধু বলবো এই মতপার্থক্য কিছু ছোট –খাট বিষয়ে । মৌলিক বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই । আমাদের কাছে মানদণ্ড হিসেবে কুরআন , সুন্নাহ তো আছেই । অতএব আগে আপনি স্রষ্টার অস্তিতের স্বীকৃতি দিন । তারপর না হয় তাঁর ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা যাবে । কিন্তু তার আগে তাঁকে স্বীকার তো করুন !!
নাস্তিকের প্রশ্ন : --একটা নবজাতক শিশুকে একটি বন্দি ঘরে রেখে বড় হতে দিলে সে নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে- দেব, দেবী, খোদা, জিন ভুত আবিষ্কার করবে আর তাকে যদি একটি মুক্ত পরিবেশে বড় হতে দিলে সে বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে নিজের পাশাপাশি দেশের উন্নায়ন করবে।
এই থেকে বুঝা যায় ধর্মের উৎপত্তি অনধকার গুহায়, দিনের আলতে নয়।/
উত্তরঃ একজন মানুষ সব কিছু বাদ দিয়ে যদি জঙ্গলেও চলে যায় এরপরও সে স্রষ্টার চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারবেনা । স্রষ্টার ধারণা মানুষের সহজাত । তার আত্মার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে এই ভাবনাটি । কেন সে এই পৃথিবীতে আসলো ? কে তাকে সৃষ্টি করলো ? কি উদ্দেশে সৃষ্টি করলো ? এই প্রশ্ন গুলো প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জাগে এবং জাগতেই হবে । এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানার উপরেই তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করা সম্ভব হয় । নাস্তিকতাবাদ তো জীবনের কোন উদ্দেশই স্বীকার করে না ! এই জীবন কি উদ্দেশ্য বিহিন ? ফাইজলামি !!?
নাস্তিকের প্রশ্ন : --আপনি বলেছেন বিজ্ঞান পরম নয়, ভাই ধর্ম কি পরম জিনিষ?
উত্তরঃ আমি বলবো সত্যই পরম । আর সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে স্রষ্টা । স্রষ্টার অস্তিত্ব সত্য !
নাস্তিকের প্রশ্ন : সৃষ্টিকর্তা যদি সত্যই ধর্ম নিয়ে এতো চিন্তিত আথবা আগ্রহী হতেন তাহলে কেবল আস্তিকরাই ভাত খেতে পেত আর নাস্তিকরা না খেয়ে থাকত।সয়ং সৃষ্টিকর্তা যখন ধর্ম নিয়ে লাফালাফি করে না তখন আমাদের মত তুচ্ছদের লাফালাফি করে কি লাভ (যদি না ধর্ম নিয়ে ব্যবসার লক্ষ থাকে)
উত্তরঃ সৃষ্টিকর্তা তো আস্তিক নাস্তিক সবার সৃষ্টিকর্তা । তিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণ করেন । হোক সে আস্তিক কিংবা নাস্তিক । এই পৃথিবীটা একটা পরীক্ষার স্থান । এখানে সবাইকে পরিক্ষা করা হচ্ছে । তাই সঠিক ভাবে পরিক্ষা দেওয়ার জন্য যার যা উপকরণ দরকার তার সবই মহান স্রষ্টা মানুষকে দেন । আর এর পর বিচার দিবস তো আছেই । সেখানেই মানুষকে তার কাজের প্রকৃত ফল বা প্রতিদান দেওয়া হবে । অতএব এতো তাড়াহুড়া কিসের !!??
নাস্তিকের প্রশ্ন :--আসুন সৃষ্টিকর্তা চিন্তি বাদ দিয়ে দেশ মানুশকে নিয়ে চিন্তা করি, নিজের উপকার হবে, দেশের উপকার হবে আর সৃষ্টিকর্তা যদি থেকেও খাকে উনিও খুশি হবেন।
উত্তরঃ সৃষ্টিকর্তা কে বাদ দিয়ে দেশ , মানুষ কে নিয়ে চিন্তা করতে ? আমি বলবো যেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে সৃষ্টি না করলে মানুষ কি ? দেশ কি ? এসব কিছুই জানতাম না তাকে বাদ দিয়ে চিন্তা করাটা অযৌক্তিক এবং ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই না । সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে চিন্তা করা মানে নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা বলে আমি মনে করি ।
আপনার প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আরও বিস্তারিত উত্তর দেওয়ার দরকার ছিল । আমি বিশ্বাস করি জ্ঞানী’র জন্য ইশারাই যথেষ্ট । আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন । আমিন !!
(এই লেখাটি একজন নাস্তিকের তাৎক্ষণিক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমার তড়িৎ জবাব প্রদানের প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। তাই আমি দাবি করছি না যে, এই সব প্রশ্নগুলোর জবাবে আমি যে যুক্তি গুলো তাৎক্ষণিক ভাবে দিতে সক্ষম হয়েছি তা-ই চূড়ান্ত বা পরিপূর্ণ! আমি চেষ্টা করেছি আমার সল্প জ্ঞানের ভিত্তিতে তাদের প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে! কতটুকু সফল হয়েছি তা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন )
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৫০