somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ, বিজ্ঞান, নাস্তিক এবং বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞান আমাদের এক সভ্যতা উপহার দিয়েছে যার দ্বারা আমরা প্রমান করতে পারি আমরা সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি। অবশ্য এক শ্রেণীর ধর্মান্ধরা বলে থাকেন ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিবাদ চিরন্তন। কিন্তু এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। মহামহিমান্বিত গ্রন্থ আল কুরআন নিজেকে দাবী করেছে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ হিসেবে তাই বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা আর নিজের বিশ্বাসকেই অবিশ্বাস করা সমান কথা। এখন কথা থেকে যায় বিজ্ঞানের সব কথা কি সত্য বলে মেনে নেয়া যাবে। এটা বোঝার আগে বুঝতে হবে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান হলো এক ধরণের জ্ঞান। বিশেষ জ্ঞান, তাই একে আমরা বলছি বিজ্ঞান। পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত সত্যকেই বলা হয় সাইন্স বা বিজ্ঞান। যে জিনিস পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা হয়নি তাকে কখনোই বিজ্ঞান বলে মেনে নেয়া যাবে না। Science (from Latin scientia, meaning "knowledge") is a systematic enterprise that builds and organizes knowledge in the form of testable explanations and predictions about the universe সত্যের কাছাকাছি মনে হলেও সেটাকে বলা হবে হাইপোথিসিস বা তত্ব। তত্ব হয় একটি মতবাদ, যা সত্য বা মিথ্যা উভয়ই হতে পারে। বিজ্ঞানকে মহাসভ্যতার দিকে এগিয়ে দিতে নাম জানা না জানা হাজারো বিজ্ঞানী আছেন। এরিস্টটল, নিউটন, ইবনে সিনা, নোবেল, আব্দুল কাদির, এপিজে কালাম, জগদীশ চন্দ্র বসু, কুদরত ই খুদা। এদের মধ্যে কেউ বিশ্বাস করেছেন আল্লাহ কে , কেউ ঈশ্বরকে, কেউ গডকে। কেউ বা প্রকৃতিবাদী। কেউ সৃষ্টিকর্তা বলে যে কেউ আছেন এটাই মানে না। তাই আপাতঃ দৃষ্টিতে বলা যায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ আস্তিক কেউ নাস্তিক। তাই সব বিজ্ঞানীকে আস্তিক বলা মুর্খতা, সব বিজ্ঞানীকে নাস্তিক বলা ভন্ডামী। কিছু সত্য থাকে সে আপনি মানুন আর নাই মানুন তাতে সত্যের কিছু আসে যাবে না।



আমাদের বাংলাদেশে সম্প্রতি এক কালচার শুরু হয়েছে। ব্লগারদের ইচ্ছেমত গালি দেয়া হচ্ছে। মীর জাফর যেমন বিশ্বাস ঘাতকের সমার্থক শব্দ হিসেবে বিবেচিত হয় তেমনি নাস্তিকের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্লগার। ব্লগারদের মধ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ আক্রোশ দেখা যাচ্ছে। অনেকের আবার নাস্তিকদের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করেছেন। আপনি প্রকৃতিবাদী হলে আপনি তাদের পক্ষ নিতেই পারেন, কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসী হয়ে আপনি কিভাবে নাস্তিকদের পক্ষ নেন! আমি আবার বলে নিতে চাই নাস্তিক বিজ্ঞানী হতে পারেন তার মানে এই না যে সব বিজ্ঞানী নাস্তিক। একই ভাবে ব্লগার নাস্তিক হতে পারে তাই বলে সব ব্লগার নাস্তিক না। যারা এই বিষয়ে আন্দোলন করছেন তাদের উচিত ব্লগার সমন্ধে পূর্ণাঙ্গ জেনে আন্দোলনে নামা। অল্প বিদ্যে ভয়ংকরি সেটা আমরা সবাইই জানি।

নাস্তিকতা নিয়ে খুব একটা কথা বলিনা। কারন তাহলে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে হয়। ধর্ম বিশাল এক জিনিস। কয়েক হাজার বছর ধরে নানা রূপে তার বিস্তৃতি। ধর্ম হলো বিশ্বাস। যুক্তি দিয়ে পৃথিবী বদলে দেওয়া গেলেও মানুষের বিশ্বাস বদলে দেয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। মানুষের বিশ্বাস বদলে দিতে হলে আবেগের জায়গায় হাত দিতে হবে। সেটা খুব কম মানুষই পারে। যে কয়জন মানুষ পেরেছেন পৃথিবী আজো তাদের মনে রেখেছে। তাদের পতাকাতলে সামিল হয়েছে। ধর্মকে ঘিরে মানুষের মনে হাজারো প্রশ্ন জেগেছে। কেউ উত্তর খুঁজেছে, কেউ নিজের মত করে উত্তর সাজিয়ে নিয়েছ, কেউবা অন্যের দেয়া ব্যাখায় আস্থা রেখেছে। কেউ কোনটাই মানতে পারেনি। তারা স্বধর্মের বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে। উত্থাপণ করেছে হাজারো প্রশ্ন। কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছে। আরজ আলী মাতুব্বর আছেন তাদের একজন। তসলিমা নাসরীন আছেন। সে নারী পুরুষের সমতা খুঁজতে চেয়েছেন। ভাগ্যিস তিনি এটা চান নাই যে নারীদের মত পুরুষকেও গর্ভে সন্তান নিতে হবে। সাম্যবাদ বলে কথা ভাইরে।

শামসুর রহমানে নাম অবিশ্বাসীদের খাতায় ফেলা যায় কিনা আমি জানিনা। তার কবিতাগুলো আমাকে ছূঁয়ে ছূয়ে যায়। শামসুর রহমানের বিরুদ্ধবাদীরা বলে থাকেন তিনি তার কোন এক কবিতায় আজানের সুরকে বাইজী বাড়ীর নুপুরের ঝংকারের সাথে তুলনা করেছেন। আমার এখানে কোন বিদগ্ধ পাঠক যদি সত্যি সেরকম কোন কবিতা সম্পর্কে কোন তথ্য জানেন তাহলে দয়া করে জানাবেন প্লিজ। বাধিত থাকব।

হুমায়ুন আজাদ। লোকটার লেখার হাত ভালো। কয়েকটি কবিতা সেইরাম ভালো। কিন্তু তার পাক সার জমিন সাদ বাদ পড়তে গেলে মনে হয় চটি পড়ছি। পায়ে গলানো বাটার চটি স্যান্ডেল নয় ভাইজান। চটি কি জিনিস তা নিশ্চয় শিক্ষিত বাঙালীকে বলে দিতে হবে না। আমার হৃদয়ে লাল পতাকা সেভাবে আন্দোলিত হয়না, তাই ধর্মকে কেন্দ্র করে যারা রাজনীতি করে তাদের নিয়ে আমার আজাদীয় ভাবনা কাজ করে না। সেজন্যই আমার কাছে চটির স্বাদ আসে। সবাই যে এক ক্ষুরে মাথা কামাবে তার তো কোন মানে নেই। আমি তৃতীয় মত পছন্দ করি। তৃতীয় মত বলা যায় নিরপেক্ষ মত। কিন্তু মানুষ কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে না। আমি শুরু থেকে বিজ্ঞানের আবিষ্কার নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। চলে এসেছি ধর্মে। তারপরও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি বলে মনে হয় না। মানুষ স্বভাবগতভাবেই পক্ষপাত দুষ্ট প্রানী। ছোট বেলায় পক্ষপাত থাকে নিজের বাবা মায়ের প্রতি। আমার বাবা মা পৃথিবীর সেরা বাবা মা। বড়বেলায় পক্ষপাত আসে প্রিয় কোন মা্নুষের প্রতি। আমি দুনিয়ার একজন বিশেষ মানুষের সেরা ভালোবাসা পেয়েছি।

চটির গল্প মনে পড়ায়। আরেকজনের কথা মনে এলো। আসিফ মহিউদ্দিন। ২০১০ সালের পর থেকে বলা যায় নিয়মিতভাবে অন্তর্জালের পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়াই। মাঝে মাঝে লেখালেখির চেষ্টা করি। মাথায় কিছু থাকলে তো লেখা হবে ভাইরে। তাই আবার লেখা বাদ দিয়ে পাঠকের ভুমিকায় চলে যাই। আমি আসিফের কিছু লেখা পড়েছি। আসিফ সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলো সে আমাদের সময়ের একজন নাস্তিক। সে নাস্তিক হলে আমার মাথাব্যাথা ছিলো না। একজন হিন্দু যেমন তার পূজো পার্বণ করে একজন নাস্তিক তার নিজের বিশ্বাস নিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আসিফের ফেসবুকের পাতায় কিছু প্যারোডি গল্প পড়ার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিলো। যার মূল থিম ছিলো মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনীকে নিয়ে প্যারোডি রচনা, সেটা পড়ে আসিফকে আমার চটি সম্রাট সম্মাণে ভূষিত করতে ইচ্ছে হয়েছিলো। তারপর পারোতপক্ষে আমি আসিফের লেখা পড়িনা। ধর্ম নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নাই। আমি পাঢ় ধার্মিক কেউ নই। আসিফের লেখা নিয়ে প্রতিবাদ করার আগ্রহ আমার কখনো হয়নি। এখনো হচ্ছে না। আসিফ সম্পর্কে আমি এটুকু বলতে চাই লোকটা নাস্তিক এবং ধর্মবিদ্বেষী। এক কথায় ইসলাম বিদ্বেষী। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে একজন ধর্মবিদ্বেষী লেখালেখি করতে দেয়া আর আগুনে ঘি ঢেলে দেয়া সমান কথা।

যারা দেশ চালান তারা ভালো করেই জানেন শুধু মায়ের শাসন দিয়ে দেশ চালানো যায় না, দেশ চালাতে হলে পিতার শাসনেরও দরকার আছে। যে সকল বুদ্ধিজীবী আসিফকে গ্রেফতার করায় মত প্রকাশের অধিকার খর্বিত হয়েছে বলে দাবী করছেন তাদের উপেক্ষা করুন। তারা যদি মত প্রকাশে সত্যি বিশ্বাস করত তাহলে আমার দেশ, আমার ব্লগ, সোনার বাংলা ব্লগ সহ যত মিডিয়া এবং অন্তর্জাল সরকারী বাধার শিকার হয়েছে তার প্রতিবাদ করা। হোক তারা ভিন্ন মতের ভিন্ন পথের, গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। এই বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু সেটা চাচ্ছেন না। কয়েকজন নাস্তিককে সরকার যখন গ্রেফতার করলো তখনি তাদের মনে হলো দেশে মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার খর্বিত হয়েছে। ২০১১ সালে আসিফ কে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে মুচলেকা দিয়েছিলো যে তিনি আর লেখালেখি করতে পারবেন না। তখন কোথায় ছিলো আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতা। বুদ্ধিজীবিদের এখন অনেক ধারা। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, জাতীয়তাবাদী বুদ্দিজীবী, ব্লগার বুদ্ধিজীবী............। আফসোস! বুদ্ধিজীবী হতে কোন ডিগ্রি লাগেনা।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×