somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামীলীগের নির্যাতনের ইতিহাস-২ : জাতীয় সংসদের ২০শে মার্চ বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া ১০৩ মিনিটের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ।

২০ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় নবম সংসদের ১২তম অধিবেশনে ২০শে মার্চ বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রথম শাসন আমলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে করুণ মৃত্যুবরণ করেছিলো শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন, তিনি ক্ষুধা আর অভাবে শীর্ণকায় মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননা। তিনি বলেছেন, কেননা আমার এই চোখ আর কিছুই দেখতে পায়না। কেননা অন্য কিছু আমার অন্তরকে স্পর্শ করে না। ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষের খুবই করুণ চিত্র এঁকেছেন এদেশের দরদী লেখক-সাংবাদিকরা। আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এসেছে মর্মান্তিক বর্ণনা। সাংবাদিক জগলুল আলম ‘সাপ্তাহিক সংহতি’ পত্রিকার প্রথম বর্ষ বিশেষ সংখ্যায় ‘৭৪-এর দুর্ভিক্ষ: যে স্মৃতি অম্লান’ শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ আমলে খাদ্যাভাবজনিত কারণে দেশে লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয়েছে। রাজনীতি-অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী একশ্রেণীর অসাধু লোক নিজেদের গুদামে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য মজুদ রেখে দেশের অগণিত মানুষের মৃত্যু কিনে নিয়েছে। সাপ্তাহিক ‘অভিমত’ পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়: গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ দিনে বাংলাদেশে মন¦ন্তরে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৫ হাজারেরও বেশী। তার মধ্যে রংপুরের সদর টাউনে মারা গেছে ২৫ হাজারের মত। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ‘ঢাকা ডাইজেষ্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক মোবাশ্বের হাসানের একটি চিঠির একটি প্যারাগ্রাফ তুলে ধরছি: কমলাপুর ষ্টেশনে ভীড়। মানুষ কুকুর ভীড় করেছে একই সমতলে, এসেছে নরপিশাচ নারীলোলুপরা। হোসনা বানুর ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দশটি টাকার জন্যে কেমন করে স¦ামীর নীচু করে রাখা মাথার সামনে থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যায় তাও শুনতে হয়েছে। ‘চুয়াত্তরের গ্রাম’ শিরোনামে চুয়াত্তরের ১২ ডিসে¤¦র সংখ্যা ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রায়’ লেখা হয়: নায়েব আলী দিন মজুর ছিল। স্ত্রী ছিল, ছেলেমেয়ে ছিল, ভালবাসা ঘেরা ছোট্ট ঘর ছিল। কিন্তু দিন কয়েক আগে ছোট মেয়েটার ক্ষুধার্ত কান্না সহ্য করতে না পেরে ক্ষুধার অক্ষমতায় জর্জরিত নায়েব আলী ছোট মেয়েকে নদীতে ফেলে দিয়েছে, এক মাস পরে সেও মারা গেছে। রুটিগুলো দেখে ওগুলো আটা না ভূষি দিয়ে তৈরি ঠিক বোঝা গেল না। লঙ্গরখানায় হাজার হাজার মানুষ সেই রুটি সংগ্রহের জন্য সংগ্রাম করছিলো। রুটি দেখে শিশুদের মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল দুর্মূল্য হাসিতে। অনর্গল কথা বলছিলো কংকালসার শিশুগুলো। সব কথাই রুটিকে ঘিরে। কবে রুটি খেয়ে পেট ভরেছিলো, কবে বাবা রুটি এনেছিলো ইত্যাদি। রুটি ওদের কাছে কি এক রূপকথার রাজা হয়ে উঠেছিলো সে সময়।

আতিউর রহমান আওয়ামী লীগ সমর্থক। তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ স¤পর্কে আতিউর রহমান ’৭৮ সালের ১৬ নভে¤¦র সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যে নিবন্ধ লেখেন তার অংশবিশেষ তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন: প্রাকৃতিক কারণে যে সামান্য খাদ্য ঘাটতি হয়েছিল, তাকে অধিকতর ভয়াবহ করে তোলে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর কৃপাপুষ্ট চোরাচালানী, মজুতদার, ফড়িয়া প্রভৃতি সমাজবিরোধীরা। ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে কত লোকের মৃত্যু হয়েছিল? সরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা ২৬ হাজার। কিন্তু নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও মহিউদ্দিন আলমগীরের হিসাবে ঐ দুর্ভিক্ষে মুত্যুর সংখ্যা ১৫ লক্ষ।

আওয়ামী লীগ কখনই সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। স্বাধীনতার পরপরই তারা সংবাদ-মাধ্যমের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ শুরু করেছিল। বাংলাদেশ অবজাভার-এর সর্বজন শ্রদ্ধেয় স¤পাদক জনাব আব্দুস সালাম জাতীয় সরকার গঠনের দাবির সমর্থনে ‘দি সুপ্রিম টেষ্ট’ শিরোনামে একটি স¤পাদকীয় লেখেন যা ১৫ই মার্চ ১৯৭২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এই স¤পাদকীয় প্রকাশের দিনেই তাঁকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এভাবেই একজন সম¥ানিত স¤পাদককে তাঁর অভিমত প্রকাশের জন্য মূল্য দিতে হয়েছিল । ২৩ মে ১৯৭২ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সংবাদদাতা এস.এম. হাসানকে সাতক্ষীরায় রিলিফ দ্রব্য আত্মসাত স¤পর্কে রিপোর্ট করায় গ্রেফতার করা হয়। ভারত-বাংলাদেশ অসম স¤পর্কের উপর সমালোচনামুখর হওয়ার কারণে সাপ্তাহিক হক কথার স¤পাদক ইরফানুল বারীকে ২০ জুন ১৯৭২ ডিটেনশন দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক ‘মুখপাত্র’ ও ‘স্পোকসম্যান’ এর স¤পাদক ফয়জুর রহমানকে ৫ সেপ্টে¤¦র ১৯৭২ জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। একই বছর ৭ সেপ্টেমর ‘দেশবাংলা’ অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২২ সেপ্টে¤¦র ১৯৭২ ‘হক কথা’, ‘মুখপাত্র’, এবং ‘স্পোকস্ম্যান’ এর ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। ১লা জানুয়ারী ১৯৭৩ ঢাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনায় সেদিন বিকেলেই দৈনিক বাংলা একটি টেলিগ্রাম ইস্যু প্রকাশ করে। এতে সরকার ক্রুদ্ধ হয়। ফলে দৈনিক বাংলার স¤পাদনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মরহুম হাসান হাফিজুর রহমান এবং স¤পাদক আব্দুল তোয়াব খানকে তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারন করে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের ওএসডি করা হয়। ১৯৭৫ এর ২৭ জানুুয়ারি জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরআগে ১৭ মার্চ ১৯৭৪ স¦রাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ীর সামনে জাসদের মিছিলে রক্ষিবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে ছয় জন নিহত হয় বলে সরকারি ভাষ্যে দাবি করা হয়। কিন্তুু অন্যান্য সূত্রে দাবি করা হয় যে ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং একশজনের মত মানুষ আহত হয়েছে। সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় রক্ষিবাহিনী সেদিন রাতেই ‘গণকন্ঠ’ কার্যালয় দখল করে নেয়, এবং সব ধরনের কাগজপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে। ১৮ মার্চ ১৯৭৪ গণকন্ঠের স¤পাদক কবি আল মাহমুদ গ্রেফতার হন। ১১ আগষ্ট ১৯৭৩ পুলিশ চট্রগ্রামে দৈনিক দেশবাংলার কার্যালয় সীলগালা করে তালা বন্ধ করে দেয়। পত্রিকার দুজন সাংবাদিক এবং ৮ জন প্রেস কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়। ৬ই র্ফেরুয়ারি ১৯৭২ সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ এনায়েতউল্লাহ খান ঝরীঃু ঋরাব গরষষরড়হ ঈড়ষষধনড়ৎধঃড়ৎং শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতারা অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় বিষোদগার করেন। এই বিষোদগার থেকে তাঁর স্ত্রীও রেহাই পান নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলের সামনে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা চার তরুণকে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাটি মর্নিং নিউজের নারী বিষয়ক পাতা ফেমিনার স¤পাদিকা বিলকিস রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ষ্টাফ কোয়ার্টারে তাঁর বাসা থেকে দেখতে পান। এ ঘটনায় তিনি এতই মর্মাহত হন যে ঐ পাতায় তিনি কঠোর ভাষায় ‘ওহ সবসড়ৎু ড়ভ ড়ঁৎ সধৎঃুৎং’ শিরোনামে একটি লেখা ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ মর্নিং নিউজে প্রকাশ করেন। এরজন্য বিলকিস রহমান তার চাকরি হারান। ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ বিশেষ ক্ষমতা আইন নামে একটি নিবর্তনমূলক আইন পাশ করে। এই আইন পাশ হওয়ার ফলে একদিকে যেমন ব্যক্তি-স¦াধীনতা খর্ব করা হয়েছিল অন্যদিকে তেমনি সংবাদপত্রের স¦াধীনতাও মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার ২৮ ডিসে¤¦র ১৯৭৪ তারিখে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে এবং সকল মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয়। এরপর গণতন্ত্রের শেষ নিশানাটুকুও মুছে দেওয়া হয়। সব দল নিষিদ্ধ করে দেশে একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন চালু করা হয়। এরপর জন্য বিনা আলোচনায় সংসদে মাত্র কয়েক মিনিটে যে সংশোধনীটি পাশ হয় ইতিহাসে সেটি কুখ্যাত ‘৪র্থ সংশোধনী’ নামে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তার পদ হারান এবং তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি পদে এমনভাবে অধিষ্ঠিত করা হয় ‘যেন তিনি নির্বাচিত’। দুনিয়ার কোথাও অনির্বাচিত ব্যক্তিকে ‘যেন তিনি নির্বাচিত’ ঘোষণা করে পদে বসাবার কোনো নজির নেই। এটা গণতন্ত্র নয়। এই চরম স্বেচ্ছাচারি ব্যবস্থা প্রবর্তন কেবল আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের সব মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বের অধীনে ন্যস্ত করেছিল।দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশালে সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারদেরকেও বাধ্যতামূলকভাবে যোগদান করানো হয়। পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেন। সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা।

১৬ জুন ১৯৭৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটি কালো দিন। ঐ দিন আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে নিউজ পেপারস ডিক্লারেশন্স (অসবহফসবহঃ) অর্ডিনেন্স পাশ করে। এই অর্ডিনেন্স বলে ২৯টি দৈনিক পত্রিকা এবং ১৩৮টি সাপ্তাহিক ও সাময়িকীর প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কেবল মাত্র দুটি ইংরেজী এবং দুটি বাংলা দৈনিক প্রত্যক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই সবই হলো আওয়ামী লীগের ইতিহাস। তাদের গণতন্ত্রের নমুনা।

এর ২১ বছর পর জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে শুধুমাত্র একটি বারের জন্য সুযোগ প্রার্থনা করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা দেশের কী অবস্থা করেছিলো, সে স্মৃতি এখনও অনেকে ভুলে নাই। আমি বিস্তারিত বলবো না। সংক্ষেপে কিছু তুলে ধরছি: ১৯৯৭ সালের ৩১ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে হত্যা-সন্ত্রাস, রাজনৈতিক নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ ও ইনকিলাব, ১ ফেব্র“য়ারি, ১৯৯৭)। ১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর ফেনীর আওয়ামী গডফাদার জয়নাল হাজারীর সশস্ত্র ঘাতকরা প্রথমে ড্রিলিং মেশিন দিয়ে বিমলচন্দ্র রায় নামের এক ব্যক্তির হাত-পা ছিদ্র ও ক্ষতবিক্ষত করে এবং তারপর ইট ও রডের আঘাতে মাথা ফাটিয়ে তাকে হত্যা করে। (দৈনিক আজকের কাগজ, ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৭)। ১৯৯৭ সালের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের মহাসমাবেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে সাতজন মানুষকে হত্যা করেছিল। (‘দৈনিক ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ ও ইনকিলাব, ১৩ নভেম্বর, ১৯৯৭)। ১৯৯৮ সালের ১৩ জানুয়ারি সকালে ফেনীর ট্রাংক রোডে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। (দৈনিক ইত্তেফাক, দিনকাল ও ইনকিলাব, ১৪ জানুয়ারি, ১৯৯৮)। ২০০০ সালের ২৫ মে আওয়ামী লীগের এমপি কামাল মজুমদারের পুত্র জুয়েল বনানীতে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ইফতেখার আহমেদ শিপুকে গুলি করে হত্যা করে। বিনা মূল্যে মোবাইল দিতে রাজি হননি বলে ব্যবসায়ীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। (দৈনিক প্রথম আলো, ইত্তেফাক, সংগ্রাম, যুগান্তর ও ইনকিলাব, ২৬ মে, ২০০০)। ২০০০ সালের ২০ আগস্ট বাগেরহাটে রাজনীতিক কালিদাস বড়ালকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর কোনো এক চাচাতো ভাইয়ের হাত ছিল বলে প্রচারণা রয়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, ইনকিলাব ও বাংলার বাণী, ২১ আগস্ট, ২০০০)। ২০০০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মহসিন ও সায়েম নামের দুই যুবককে হত্যা করার পর দু’জনের শরীরকে ১২ টুকরো করে সূত্রাপুর এলাকার একটি বক্স কালভার্টের ভেতরে ফেলে দেয়। প্রকাশিত খবওে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা রাহীদ হাসান সুমনের লালিত ঘাতকরা নৃশংস হত্যাকান্ড দুটি ঘটায়। (দৈনিক প্রথম আলো, ইনকিলাব, বাংলার বাণী ও আজকের কাগজ, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০০)। লক্ষ্মীপুরে এ্যাড. নুরুল ইসলামকে খুন করে তার লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছিল, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে খুন হচ্ছিল নয়জন।

এভাবে আর কত হত্যাকান্ডের পরিসংখ্যান শোনাবো? শুনতে গেলে যে কাউকে ভীত-সন্ত্রস্ত হতে হবে। ২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত পুলিশের হিসাবে দেখা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরে মোট খুন হয়েছিল ১৯ হাজার ২৮৫ জন। বেসরকারি হিসাবে খুনের সংখ্যা ২৫ হাজারের উপরে ছিল। এতো খুন খারাবির কারণ সন্ত্রাসীরা উৎসাহ পেয়েছে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর কাছ থেকে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘একটার বদলে দশটা লাশ’ ফেলার। এতটা ভয়ংকর যাদের নিকট অতীত তারা যে ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। বেপরোয়া হয়েছেও তারা। এজন্যই ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত খুনের পাশাপাশি গুমেরও ধুম পড়ে গেছে সারাদেশে। এপর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। আমি সময়ের অভাবে বিশদ বিবরণ আজ দেব না। নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছে। তারা এখন ক্ষমাপ্রাপ্ত। এ্যাড. নুরুল ইসলামের খুনী আবু তাহের ও তার পুত্র বিপ্লব এখন মুক্ত। জয়নাল হাজারীও এখন সদর্পে বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্ট এবং এ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বর্তমান মেয়াদে আওয়ামী লীগের তিন বছরের শাসনামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও আতঙ্ক বহাল রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের উলে¬খযোগ্য প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ দেশের কমপক্ষে ৩৫টি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ হয়ে যায়। তিন বছরে শুধু ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘর্ষ হয়েছে কমপক্ষে ৩৫০ বার। সশস্ত্র সংঘর্ষে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়েছে ছাত্রলীগের ২০ জনের বেশি নেতাকর্মী। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব সংঘর্ষের পেছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল দখল, যৌন উৎপীড়ন-ধর্ষণ, দলীয় কোন্দল, নতুন কমিটিতে পদ না পাওয়া, ফ্রি খাওয়াসহ একাধিক ঘটনা।

বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা বা পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার না করার মতো বিষয়গুলোর উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কারণ, আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে রয়েছি যখন সারাদেশে গুম আর গুপ্তহত্যার রীতিমতো ধুম পড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিন মৃত্যু ঘটছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মিদের। ধরে নিয়ে যাচ্ছে সাদা পোশাকধারীরা। অবস্থা এমন হয়েছে যে, জনগণের মধ্যে প্রবলভাবে ভীতি-আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এবং নিরীহ মানুষেরাও আজকাল সহজে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, কাকে কখন গুম করা হবে তা জানা নেই কারো। বড়কথা, একবার গুম হলে আর রেহাই নেইÑ তাকে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে নদী বা নালা-ডোবায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তার লাশও শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। কারণ লাশে পচন ধরে যাবে।

গুপ্তহত্যার শিকারদের তালিকায় অনেকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকার নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলম ও ঝিকরগাছা বিএনপির সভাপতি ও যশোর জেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক নাজমুল ইসলামের নামও। নাজমুলকে ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে তাকে মোহাম্মদপুর থানার সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরদিন তার লাশ পাওয়া গেছে গাজীপুরের সালনায়। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে চৌধুরী আলমকে গ্রেফতার করা হলেও আজও তার কোনো হদিস মেলেনি। দেশের ভেতরে সাধারণ মানুষের মধ্যে কেবল নয়, বিদেশেওÑ এমনকি সরকারি পর্যায়েও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটতে এবং গুপ্তহত্যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। যেমন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এমনকি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে ব্রিটেন ইতস্তত করবে না। এসব গেল মানবাধিকার ও আইন-শৃঙ্খলার সামান্য বিবরণ। অন্য কোন দিকে সরকার সামান্য সাফল্য দেখাতে পেরেছে?

কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতি তিনদিনে একজনকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। নজীর বিহীন যানজট নগর জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিসহ। তার প্রতিকার না করে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা নগরীকে কেটে করা হল দুইভাগ, কারো সম্মতি ছাড়াই।অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতিতে অর্থনীতি বিপন্ন। অথচ প্রধানমন্ত্রী মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। আমাদের আমলে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ২১-এ উঠেছিল। বর্তমানে এই মুদ্রাস্ফীতির হার সাড়ে ১১ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম কমেছে। অথচ একমাত্র বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়েছে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে। সবাই জানে, লুঠ করা অর্থ বিদেশে পাচার ও দুর্নীতির কারণেই ডলারের দাম বাড়ছে। দুর্নীতি, অনাচার, দখল-দলীয়করণে দেশ আজ ছেয়ে গেছে। জনপ্রশাসন দলীয়করণের কারণে হয়ে পড়ছে দুর্নীতিপরায়ণ, মেধাহীন ও গতিহীন। এ সরকারের আমলে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৮ শতাধিক কর্মকর্তাকে সংযুক্ত, ন্যাস্ত ও ওএসডি করা হয়েছে। পদোন্নতি থেকে বঞ্ছিত করা হয়েছে প্রায় এক হাজার কর্মকর্তাকে।

সরকারি দলের নেতাদের কাছ থেকে এখন আবার শোনা যাচ্ছে জঙ্গী আতংকের কথা। অথচ এই জঙ্গীদের আমরা সফলভাবে দমন করতে পেরেছিলাম। আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলেই দেশে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি হয়। সে সময় রাজনৈতিক দলের সভা, যশোরে উদীচির সম্মেলন, রমনার বটমূলে বর্ষবরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোমাবাজি করে অনেক মানুষকে হতাহত করা হয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছিল। আমাদের দলের সিনিয়র রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলামকে পর্যন্ত তারা জেলে পাঠায়। আমরা সরকার গঠন করার পরে জঙ্গীদের সব শীর্ষ নেতাকে আটক করে তাদের বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে সক্ষম হই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মেয়েদের উপর অত্যাচার শুরু হয়। স্বাধীনতার পর একুশে ফেব্র“য়ারি রাতে তারা শহীদ মিনারে মেয়েদের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। গতবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সম্মান নষ্ট করে সেঞ্চুরি উৎসব করেছে। এবার ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরকে কিভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা সকলেই জানেন। সাংবাদিকদের উপরও একইভাবে হামলা হচ্ছে।

গত তিন বছরের এইসব ব্যর্থতা ও অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আজ শূন্যের কোঠায়। তারা জানে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার কোনো সম্ভবনাই নেই। তাই তারা ছলে-বলে, কলে-কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আজ এই সংসদে দাঁড়িয়ে সকল বিরোধীদল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বিদ্যমান বাস্তবতায় আমরা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। নির্বাচন কমিশনও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম মেশিনের ব্যবহার আমরা মেনে নেবো না। জার্মানীতে এই পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য নয় বলে এর ব্যবহার সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে না। আয়ারল্যান্ড ২০০৬ সাল থেকে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। মার্চ, ২০০৯ সাল থেকে জার্মানী ইভিএম এর ব্যবহারকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত ২০০৯ সালে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম-এর ফলাফল ইনভ্যালিড ঘোষণা করেছে। এপ্রিল, ২০০৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইভিএম এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটের ফলাফল পাল্টানো সম্ভব। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, ইভিএম ‘হ্যাক’ করে অনায়াসে ভোট চুরি করা যায়। এই বিতর্কিত মেশিনে ভোট করার ব্যাপারে অতি আগ্রহ দেখেই মানুষ বুঝতে পারে তাদের আসল মতলব কী?

আমার কথা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হবে। গণতন্ত্র হচ্ছে গায়ের জোরের নয়, সমঝোতার শাসন।সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে বর্তমান সরকার গায়ের জোরে সবকিছু করতে চাইছে। এতে গণতন্ত্র টিকবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনের নামে অনেক নৈরাজ্য করেছে। বন্দর অচল করা হয়েছে। জনগণের উপর গণকারফিউ জারি করেছিল তারা। বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে আহত করা হয়েছে। জনগণের ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল ক্ষতিসাধন করেছে তারা। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কত যুক্তি যে দিয়েছে তার কোনো হিসাব নাই। আমরা অনেক বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। তারা শুনেনি। বিদেশী বন্ধুরাও মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছেন। সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারা কিছুই মানেনি। তারা দলীয় সরকারের বিরুদ্ধে এবং তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে কী কী বলেছিলেন তা অনেকেরই মনে আছে। পত্র-পত্রিকাতেও তাদের কথা ছাপা হয়েছে। আর আজ তারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই। দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নিবে না।

জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী তারা ব্র“ট মেজরিটির জোরে পাশ করেছেন। কিন্তু জনগণ এই সংশোধনী গ্রহণ করেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন চায়। এটা শুধু বিরোধী দলের নয়, আজ এটা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।কাজেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আদালতের যে অসম্পূর্ণ রায়ের কথা আপনারা বলছেন, তাতেও আরো দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। কাজেই ছল-চাতুরী করে কোনো লাভ হবে না। আমরা রাজপথে মহাসমাবেশ করে এই জনদাবি তুলে ধরেছি। এরজন্য সরকারকে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছি। আজ সংসদেও আমরা একই দাবি তুলে ধরলাম। আমি আশা করি, সরকার সমঝোতার পথে সমস্যার সুরাহা করবে। আমাদেরকে আন্দোলনের পথে ঠেলে দেবে না। আর আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবো। বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি না।

আমি দুঃখিত রাষ্ট্রপতির ভাষণে আমি ধন্যবাদ দিতে পারছি না বলে। তার ভাষণে দেশের ছবি উঠে আসেনি। এ ভাষণ একটি সরকারি ইশতেহার মাত্র। রাষ্ট্রপতি দলীয় লোক হলেও ঐ পদে বসার পর তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন বলে সবাই আশা করেছিল। সে আশা পূরণ হয়নি। তিনি খুনী, সন্ত্রাসীদেরও আজ দলীয় বিবেচনায় ক্ষমা করে দিচ্ছেন। আমরা আশা করি আগামীতে তিনি দলের ঊর্ধ্বে উঠবেন। যেন আমরা সে দিন তাকে ধন্যবাদ দিতে পারি। তবে আমি আজও ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি সব সময় বলেছি সরকারের ভালো কাজকে সমর্থন করবো, মন্দ কাজের সমালোচনা করবো। সমুদ্রসীমার মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। এরজন্য আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ দিচ্ছি। সরকার প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকেও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। সরকার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এরজন্য পৃথক সেল গঠন, যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়ায় সফলতা এসেছে। আমি আশা করবো, সকল ক্ষেত্রেই সরকার অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে। আমরা কেউ ভুল-ত্র“ুটির ঊর্ধ্বে নই। সকলে এক হয়ে কাজ করলে দেশ-জাতির সমস্যা ও সংকট নিরসন সহজ হয়। এর জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংযম ও সহনশীলতা প্রয়োজন। আশা করি সরকারী দলের নেতারা বিষয়টি মনে রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×