somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুভুজেলা (কাফি কামালের মৌলিক গল্প)

২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুভুজেলা
কাফি কামাল

চারদিকে এত আর্তনাদ। মানুষের মুখে মুখে, ঠোঁটের ডগায়। বুক কাঁপে, মনে ভয় জাগে। কোথাও কি খারাপ কিছু ঘটলো? কেউ কি হারিয়ে গেলো? নাকি ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর দল নেমে এলো আমাদের নগরে। ঢুকে পড়লো মানব সন্তানের দেহ-মনে। অনবরত ভোঁ ভোঁ শব্দে কি ভয়ংকর তাদের আর্তনাদ! আর্তনাদের উচ্চস্বরে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বস্তি। বাচ্চাদের কৌতুহলময় আনন্দ। যারা নববর্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিল তারা কানে আঙুল দিয়ে হাঁটছে।
সেদিন সন্ধ্যায় বাল্যবন্ধু ডাকুয়ার অফিসে গিয়ে খোকনের চোখে পড়ে হলুদ রঙের একটি ভুভুজেলা। আলমিরার উপর যতœ করে রাখা। খোকনের একদম অপছন্দের জিনিষ। বাজে শব্দসৃষ্টিকারী একটি পরিযায়ী যন্ত্র। আফ্রিকার মানুষ যেমন বদখত, তাদের আবিস্কৃত যন্ত্রটির শব্দও তেমন উগ্র-বিশ্রী। লোকে বলে আফ্রিকানরা নাকি বোকা এবং রাগী হয়। তাই তারা এসব যন্ত্র ব্যবহার করে। ভুভুজেলাটি দেখিয়ে ডাকুয়াকে খোকন বলেÑ কি আজেবাজে জিনিষ রেখেছিস অফিসে। ডাকুয়া মুচকি হাসে। এরপর বহুবার ডাকুয়ার অফিসে গেছে খোকন। কখনো ওই ভুভুজেলা নিয়ে বাক্যব্যয়ের আগ্রহ হয়নি। ডাকুয়াও হয়তো ভুলে গেছে খোকনের ভুভুজেলা এলার্জির কথা।

রাতে বাসায় ফেরার সময় গলির মোড়ের টং দোকানে থেমেছিল খোকন। রুটি আর কলা দিয়ে রাতের খাবারটা সেখানেই সেরে নিয়েছে। পাশেই খোশমেজাজে গল্প করছিল কয়েকজন। খোকনের আজকাল গালগল্প ভালো লাগে না। নিজের জীবনটাই তো হঠাৎ একটি গল্পের করুণ কাহিনী হয়ে উঠেছে। তখনই কানে এলো, একজন বলছে- বিরোধীদলের কোন নেতা যেন হাওয়া হয়ে গেছে। প্রতিবাদে আগামীকাল হরতাল ডেকেছে তারা। দিনটা একেবারে মন্দা যাবে। তাই ভাবছি ইলিশ-খিচুড়ির গন্ধে বাসাতেই দিনটি কাটাবো। খোকনের মন কিছুটা কৌতুহলী হলেও শরীর তাকে টেনে নিয়ে যায় মেসে।
হরতালের কারণে রাজপথে গাড়ি নেই। সকালে বাসা থেকে বেরিয়েই একটু অবাক হয়েছিল খোকন। হঠাৎ করেই যেন রাজধানীর ক্লান্তিকর যানজট উধাও। এমন খোলামেলা পরিবেশ এক মুহুর্তের জন্য তার মন ভালো করে দিয়েছিল। কিন্তু একটি চাকুরির খোঁজে তাকে নানা জায়গায় ধর্ণা দিতে হবে। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া, গুলশানের অফিস পাড়া, কত জায়গায়। মোহাম্মদপুর থেকে এগুলো কাছে পিঠে না। এখন গাড়ি ছাড়া কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। কাছে কেবল ধানমণ্ডিতে ছোটবেলার বন্ধু ডাকুয়ার সেল্ফমেইড অফিস। কুরিয়ার সার্ভিসের এজেন্ট। চাকরি-বাকরি দেয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু সেখানে গেলে চা-সিঙ্গাড়া মিলে। আন্তরিকতার সুরে খোঁজ-খবর নেয়। এটাই বা কম কি। ঘোরের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে খোকনের চোখের পর্দায় সেলুলয়েডের ফিতার মতো ভেসে উঠছে দিনগুলো। সে একটি প্রাইভেট ফার্মে ভালো স্যালারীতে চাকরি করতো। অফিসে নিজের একটি ডেক্স, আরামদায়ক চেয়ার, এসির বাতাস আর মাস শেষে চেক কাটার ব্যাংক হিসাব। ভালোই কাটছিল দিনগুলো। স্ত্রী জিনাত বানু আর কন্যা ঊর্মিমালাকে নিয়ে শহর প্রান্তে একটি ছোট্ট সংসার।
একেবারেই আকস্মাৎ। বোশেখী হাওয়ার মতো সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গেছে খোকনের। সম্পর্কের ডালপালা ভেঙে, স্বচ্ছলতার লকলকে বেড়ে উঠা চারাগাছটি উপড়ে, দিনদিন চারিয়ে উঠা স্বপ্নটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দিয়েছে। সে এখন ভাসছে হতাশার ডিঙ্গি চড়ে দুঃস্বপ্নের অকুল পাথারে। অথচ কয়েক মাস আগেও সে ছিল স্বপ্নবান, আত্মবিশ্বাসী, স্বচ্ছল একজন পুরুষ।
অনেকদিন ধরেই চারপাশের মানুষগুলো পুঁজিপুকুরের গল্পে কানভারি করছিল। সেবার চাকরিতে তার প্রমোশন হওয়ার পরদিনই সে সিদ্ধান্ত নেয়। চারপাশের গুঞ্জন- পুঁজি পুকুরে নাকি ইলিশের ঝাঁক ঢুকে পড়েছে। জালের খোপ মারো আর তাজা তাজা ইলিশ ধরো। ব্যাংক হিসাবে তখন সাত বছরের চাকরি জীবনের জমানো ছয়লাখ টাকা অলস ঘুমোচ্ছে। খোকন কোন বিচার-বিশ্লেষন ছাড়াই দ্বিধা উড়িয়ে পুঁজি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। চোখে তার কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন, মন তার উড়–উড়–। তারপর দিন কাটে তো রাত কাটে না। শেয়ারের মূল্য চাঁন্দে উঠে বসে আছে। হেলেও না দোলেও না।
একদিন ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছিল সে। এমন সময় এলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া দুই তরুন। চা খেতে খেতেই তাদের সঙ্গে পরিচয়। ছেলে দুটোর অন্তর্জাল নির্ভর পিনকোডের ব্যবসা করে। তিনমাসের দ্বিগুন লাভের ব্যবসা। এমএলএমের মতো লেফট আর রাইট হ্যাণ্ড, ছকে বাঁধা পিরামিড কৌশলে শীর্ষবিন্দুতে পৌছার যক্কি নেই। তাদের চোখে মুখে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ঝিলিক দিচ্ছে। আত্মবিশ্বাসে টগবগে ছেলে দু’টো তাকে কথার জাদুজালে জড়িয়ে ফেললো। বলাবাহুল্য, তারই লোভাতুর মনটি জড়িয়ে পড়লো জালে। দেখতে দেখতেই সে জড়িয়ে গেলো দেহ-মনে। তারপর অফিসের কলিগ, আত্মীয়-স্বজন কাউকেই বাদ দিলো না তার নেটওর্য়াক থেকে। এরই মধ্যে দুইবার লাভ পেয়েছে সে। দ্রুত বড় লোক হওয়ার ঘোরে দুইবারেই পুনবিনিয়োগ করেছে। পিনকোড কেনা-বেচায় সে মেয়ের নামে এফডিআর, স্ত্রীর ডিপোজিট সবই ভেঙে ফেললো। ঢুকিয়ে দিলো পিনকোডের অদৃশ্য গহ্বরে। এ শর্টকার্টটুওয়েতে হাঁটা শুরু করলো অন্যরাও। টাকা দাও, গোপন পিনকোড কেনো আর ডলারের হিসাব-নিকাশ কষতে কষতে তর্জনীর ডগা ও ক্যালকুলেটরের বাটনগুলো নড়বড়ে করে ফেলো।
খোকন তখন দারুন ব্যস্ত। ব্যবসা সম্প্রসারণে ভোরে পরিচিত লোকজনের বাসায় বাসায় হানা, সকালে অফিসে ছুটা, দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারে পুঁজি পুকুরে লম্ফজম্ফ এবং সন্ধ্যায় গোপন পিনকোডের ব্যবসা, ডলারের হিসাব-নিকাশ। টাকার লেনদেন হচ্ছে, মালামাল হচ্ছে, পুকুরে সাতরাচ্ছে আর অন্তর্জালের গহ্বরে হারিয়ে যাচেছ। কিন্তু ব্যাংকের পেট স্ফিত হচ্ছে না। কেবলই হাতবদল হচ্ছে। খোকন ছিল সাধারন চাকরিজীবী। এখন সে ইলিশ পুকুরের দক্ষ জেলে আর অদৃশ্য পিনকোডের বিশ্বস্ত ইজারাদার। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকানোর সময় নেই। কন্যার অসুস্থতার দিকে খেয়াল নেই। এমনকি সামাজিক কর্মকাণ্ডের তো ফুরসৎই নেই। কিন্তু সে সারাদিন মানুষের সঙ্গেই থাকে। তার মতো লোভাতুর মানুষ নিয়ে কারবার।
সেদিন রোববার দুপুর বেলা। খোকন যথারীতি লাঞ্চ আওয়ারে অফিস থেকে বেরিয়ে সাতরাতে গেছে। কিন্তু ব্রোকারেজ হাউজে পৌছার আগেই দেখে মতিঝিলের পুকুর ঘাটে জটলা। লোকজন উত্তেজিত। খোকন কৌতুহলী হয়ে কাছে যায়। অবশ্য গতকাল দুপুরে শুনেছে পুকুরে নাকি কেউ কেউ বিষ দিয়ে মাছ শিকার করতে চায়। তাহলে কি সেটাই হচ্ছে। জটলায় গিয়ে তার মাথা ঘুরে যায়। পুকুরে হাঙ্গর ঢুকে পড়েছে। তারা ইলিশ তো খেয়েছেই উল্টো জেলেদের নৌকা উল্টো দিয়েছে। কারও হাত-পা খেয়ে পেলেছে। দুই জেলে নাকি সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। খোকন ব্রোকারেজ হাউজে ঢু মারে। কিন্তু সেখানে গিয়েই সে আকাশ থেকে সোজা পাতালে নেমে যায়। রাতারাতি তার সাড়ে বারো লাখ টাকার ইলিশ মাছ দুইলাখে ঠেকেছে। বলে কি! কিন্তু ব্রোকারেজ হাউজের লোকজন নির্বিকার। সে পুকুরঘাটে অন্যদের সঙ্গে রাগে-ক্ষোভে হৈ চৈ করে, স্লোগান দিয়ে অফিসে ফিরে।
রাতে বাসায় ফিরেই খোকন টিভি অন করে। পুঁজি পুকুরে বিক্ষোভের দৃশ্য দেখে। নিজেও দেখে স্লোগানরত অবস্থায় একপলক। অর্থমন্ত্রী তাদের বলেছে- ফটকাবাজ। সে রাগে রিমোটটি টিভিপর্দায় ছুড়ে মারতে গিয়েও হজম করে। সে রাতে খোকনের ঘুম হয় না। রাতে সে স্বপ্নে দেখে সাগরে ইলিশ শিকারে গেছে। গভীর সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ খেলা করছে। তারা হাত দিয়ে ইলিশ ধরছে। ঠিক তখনই একদল হাঙ্গর এসে সমস্ত ইলিশ গপাগপ গিলে ফেলে। তারা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদের চারপাশে হাঙ্গরের দল। এ হাঙ্গরের দলের মধ্যে সে ব্যাংকের লোন অফিসারকে দেখে, তার ছোট বেয়াইকে দেখে। যার কাছ থেকে খোকন দুইলাখ টাকা কর্জ নিয়েছেন। খোকনের ঘুম ভেঙে যায়।
এক ধরনের ঘোরের মধ্যেই সে অফিসে যাওয়া আসা করছে কয়েকদিন। অন্তর্জালের পিনকোড ব্যবসায়ীদের কপালে দুঃচিন্তার ভাঁজ। তার কয়েকজন গ্রাহক ফোন করেছে। তারা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেছে- পিনকোড ব্যবসার কারণেই নাকি শেয়ারবাজারে ধ্বস। কিন্তু পিনকোড ব্যবসায়ীরা সে ধরনের আতঙ্কের কথা উড়িয়ে দেয়। বাজারের অবস্থা এমন আদৌ সেখানে ইলিশের মওসুম আসবে কিনা নিশ্চয়তা নেই।
বৃহস্পতিবার খোকনের মাথায় বজ্রাঘাত পড়ে। অফিস থেকে বেরিয়ে আগে-বাগে সে অন্তর্জালের পিনকোড ব্যবসার খবর নিতে হাতিরপুল ছুটে যায়। কিন্তু অফিসে নতুন তালা। খোকন ভেবে পায় না। আজ তো বৃহস্পতিবার অফিস তালাবদ্ধ হবে কেন? মোবাইলে রিং দিতে গিয়ে দেখে মোবাইল বন্ধ। তার মতো আরো কয়েকজন সেখানে জড়ো হয়েছে। সবার চোখে মুখে হতাশা। নানা আশঙ্কা খোকনের মনে উথাল-পাতাল করতে থাকে। কয়েকজন তার কাছে জানতে চাইছে- বিষয় কি? সে কোন উত্তর দিতে পারে না।
তিন সপ্তাহ ধরে পাওনাদার ও গ্রাহকরা অনাবরত ফোন দিচ্ছে খোকনের মোবাইলে। কিন্তু সে রিসিভ করছে না। দু’একটা ফোন ধরলেও কোন উত্তর দিতে পারছে না। বাসায় স্ত্রীর ঘেন ঘেনানির মাত্রা বেড়ে গেছে। মেয়েটি জ্বরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাশি হয়েছে। ডাক্তারের কাছে নেয়ার মতো টাকা নেই হাতে। এখনও বেতনের বাকি এক সপ্তাহ। বহুদিন পর সে জুমার নামাজ পড়েছে। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে কান্নাকাটি করেছে। এখন সে পাক্কা বিশলাখ টাকার দেনায় পড়ে গেছে। চোখে মুখে দেখছে ঘন অন্ধকার।
শুক্রবার টিভিতে নাটক দেখে মনটা হালকা করতে চেয়েছিল খোকন। বেনসন বাদ দিয়ে সে দু’টো গোল্ডলিফ নিয়ে বাসায় ফিরেছে। সেখান থেকে একটি টানতে টানতে টিভির সামনে গিয়ে বসে। তার স্ত্রী জিনাত বানু তখন মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে বৈকালিক বিশ্রামে। খোকন খেয়াল করে বেচারী দিনরাত গাধার খাটুনি খাটে। টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে একটিতে তার চোখ আটকে যায়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে টকশো হচ্ছে। সেখানে বিরোধী পক্ষের লোকটি যেভাবে বলছে এককথায় এক্সিলেন্ট। শেয়ারবাজার ও ইউনিপেটু নিয়ে তার বক্তব্য শুনে ইচ্ছে করছে লোকটার পায়ে ধরে সালাম করে আসে। কিন্তু পরক্ষণেই সরকার পক্ষের লোকটির কথা শুনে তার কান গরম হতে থাকে। মেজাজ বিগড়াতে শুরু করে। শালা জ্ঞান দিচ্ছে আর স্বপ্নের জগতে দৌড়াচ্ছে। যেভাবে কয়েকসপ্তাহ আগেও দৌড়েছে খোকন। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যখন অর্থমন্ত্রী পাগলের মতো মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললেন- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে চাঙ্গা, পরিস্থিতি যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো। খোকন একটি শব্দই উচ্চারণ করে- শালা টাল।
সে রাতেই খোকন বেদনাভারাতুর কণ্ঠে জিনাতকে কাছে ডাকে। জিনাত খানিকটা হতাশ ও ভয়ার্ত চেহেরায় কাছে এসে চুপচাপ বসে। দুইজনই চুপচাপ।
জিনাত অস্ফুষ্ট স্বরে বলে- কিছু বলবেন?
খোকন- হ্যাঁ।
জিনাত অপেক্ষা করে।
খোকন বলে- ভাবছি তোমাদের কিছুদিনের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেব।
জিনাত নিরুত্তর।
খোকন বলে- বাসাটি ছেড়ে দিয়ে আমি মেসে গিয়ে উঠব। আর পারছি না। বলেই সে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় ঘাড় এলিয়ে দেয়।
জিনাত সবই বুঝে। তাই কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
ত্রিশ তারিখ সকালে বাসা থেকে বেরুনোর সময় কপালে ধাক্কা লেগেছে খোকনের। স্ত্রী-কন্যার বাসের টিকেট কাটা হয়েছে। বাসার কিছু মালামালও বন্ধুদের বাসায় সরিয়ে নিয়েছে। আজ রাতের মধ্যেই বাসা খালি করতে হবে। এতদিনের সাজানো বাসাটি তছনছ হয়ে আসে। কাল এ বাসায় উঠবে আরেক ভাড়াটিয়া। জিনাতের চোখ অশ্রুসজল। খোকনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। ফলে মাথায় হাত ঘষে ধাক্কাটি হজম করে সে। পেছন থেকে জিনাত ডাক দিয়ে বলছে- আজ দ্রুত ফিরবেন। জিনিষপত্র গোছগাছ করেই আমাদের বাস ধরতে হবে।

পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার পর হোটেলে খেয়ে না খেয়ে একমাস অফিস করেছে খোকন। কিন্তু দিনগুলো যেন কাটছেই না। একদিন অফিসে ঢুকতেই ফ্রন্ট ডেক্সের জুনিয়র কর্মকর্তাটি তেতো হাসি হেসে নোটিশ বোর্ডের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে। খোকন খেয়াল করে দেখে ছাটাই নোটিশ ঝুলছে। সেখানে তার নামটিও জ্বলজ্বল করছে। কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দোহাই তুলে চৌদ্দজনকে ছাটাই করেছে। চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে তাদের পাওনা বুঝে নিতে বলা হয়েছে। মুহুর্তে চোখে সর্ষে ফুল দেখে সে। ততক্ষণে ফ্রন্ট ডেক্সের অফিসারের তেতো হাসিও মিইয়ে গেছে। বুকে যন্ত্রনা, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে অফিসের শেষ কয়েকটি দিন কাটাতে হবে।
পুঁজিপুকুরে হাঙরের তান্ডবের পরপরই শর্টকার্টওয়েটু’র পিনকোডও হঠাৎ হ্যাং হয়ে গেল। চোখে মুখে অন্ধকার নেমে এলো খোকনের। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করেছিল পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে কিছু খরচ কমানো গেলে পাওনাদারদের চাপ কমবে। বাজার ঘুরে দাঁড়ালে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে। কিন্তু একমাসের মাথায় চাকরিটা যাওয়ার পর সত্যিই অকুল পাথারে পড়েছে খোকন। পাওনাদারদের ভয়ে লুকিয়ে চলতে হয় আবার চাকরির খোঁজে চারদিকে ঢু মারতে হয়। এ এক অদ্ভুত জীবনযাপন। অথচ তার চারপাশের মানুষগুলোকে কত সহজ স্বাভাবিক দেখাচেছ। খোকনের মনে প্রশ্ন জাগে- এরা কি সত্যিই স্বাভাবিক আছে নাকি সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে?
খোকন লুকিয়ে চুরিয়ে হাটে। পাওনাদার ও গ্রাহকদের ফোনের জবাবে ধৈর্য্য ধরতে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। গোপনে এদিক-ওদিক যোগাযোগ করে। কিন্তু কোন আশার আলো দেখতে পায় না। পুঁজি বাজারের দিকে যাওয়া সে ছেড়েই দিয়েছে। সেদিকে গেলে কান্না আসে। খোকনের দিন কাটে না। সেদিন সেভ করতে গিয়ে খেয়াল করে চিপে পাক ধরেছে। কয়েকটি দাড়ি আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে।
খোকন মতিঝিলের ব্যাংক পাড়ায় ঘুরে, পুঁজিপুকুরের আশপাশে যায়। লোকজনের কাছে খবরাখবর জানতে চায়। কোন সুসংবাদ আছে কিনা। কিন্তু লোকে নানা কথা বলে। একবুড়ো কেরানী পানের পিক ঝেড়ে তাচ্ছিল্য করে- কি দিন এলো বাপ। আজকালের পোলাপানরা বুড়োদের কথাই মানতে চায় না। বলি কি- দরগায় যাও। দরবেশের কাছে হাত পাতো। দরবেশদের আর্শিবাদে দেশটি টিকে আছে। কিন্তু কেউ শুনে না। বুড়োদের কথা কিন্তু আখেরে ফলে।
দরবেশ আর কালো বিড়ালের গল্প শুনতে শুনতে খোকনের কান ঝালাপালা হয়ে উঠে। সে গোল্ডলিফের বদলে কয়েকটি স্টার সিগারেট নেয়। একটিতে টান দিয়েই সেখান থেকে সরে যায়। যেতে যেতে শুনে কে একজন বলছে- দক্ষিণা ব্যাংকটি নাকি কোন আরব যুবরাজ কিনে নিচ্ছে।
পল্টন মনি সিং ভবনের সামনে আসতেই কলেজ জীবনের বন্ধু বশির পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল খোকনের। গত সরকারের সময়ে দেদারসে আদম ব্যবসা করেছে। দুহাতে কামিয়ে নিয়েছে কাচা পয়সা। এখন পুরান ঢাকায় নাকি কিসের আমদানী-রপ্তানী ব্যবসা করে। খোকন কখনো আগবাড়িয়ে জানতে যায়নি। পাটোয়ারী তাকে দেখেই হাক দেয়- কিন্তু বন্ধু কি খবর?
খোকন এড়িয়ে যেতে চায়- না কি আর খবর।
কি শেয়ার বাজারে ধরা খেলি নাকি?
খোকন সম্মতিসুচক উত্তরহীন।
পাটোয়ারী বলে- সরকার তো প্রনোদনা দিচ্ছে।
খোকনের সংক্ষিপ্ত উত্তর- শুনেছি।
পাটোয়ারী উচ্চসিত কণ্ঠে বলে- আরে চিন্তা করিস না। আমাদের সরকার বাজার আবার দাঁড় করাবে। তোরা মালামাল হয়ে যাবি।
খোকন এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে মনে মনে ভাবে- পাটোয়ারী তো বিগত সরকারের সময়ে দুহাতে কামিয়েছে। তাহলে এটা তাদের সরকার হয় কি করে?
পাটোয়ারী হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে। আহারে দশ মিনিট দেরি হয়ে গেল। সে খোকনের পিঠ চাপড়ে দিয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে চলে গেলো।

ঘোরের মধ্যেই ডাকুয়ার অফিসে গিয়ে ঢুকলো খোকন। ডাকুয়া তখন অন্যদিনের মতোই টেবিলে মাথাগুঁজে শুকনো মুড়ি চিবুচ্ছিল। সে পত্রিকা পড়ে না, টেলিভিশনে খবর দেখে না, সিগারেট খায় না। বলে পত্রিকা আর টেলিভিশনের খবর কেবলই মন খারাপ করে দেয়। চোখে ভাসতে থাকে নানা ঘটনা দূর্ঘটনার দৃশ্য, কানে বাজতে থাকে তার বর্ণনা। আর সিগারেট মানেই অপচয়। ঘামে ভেজা নোটগুলো আগুনে পোড়ানো। তাই এগুলো থেকে দুরে থাকে সে।
খোকনকে দেখেই ডাকুয়া মিস্টি একটি হাসি দেয়। এটা তার পুরো স্বভাব। এসেছিস বন্ধু- নে মুড়ি খা। বলেই টোঙাটি এগিয়ে দেয়। পাশেই বাসার ফোটানো পানির বোতল। খোকন কপালের ঘাম মুছে ধপ করে ডাকুয়ার সামনের চেয়ারে বসে পড়ে। তারপর বিনা বাক্যব্যয়ে মুড়ি চিবুতে থাকে। ডাকুয়া কথা তুলে- কোথাও যাচ্ছিলি?
ডাকুয়ার ছোট্ট এ প্রশ্নের ভেতর যেন অজস্র জিজ্ঞাসা কিলবিল করছে। সে হয়তো জানতে চাইছে- চাকরির খোঁজ মিললো কিনা, কিংবা বাজারের কি অবস্থা কিংবা গ্রামে ভাবি-বাচ্চারা কেমন আছে... ইত্যাদি কতকিছু। ডাকুয়ার এ ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে খোকনের মনের অর্গল খুলে যায়, জবানের আড়ষ্টতা কেটে যায়। সে সকালের ফাঁকা রাস্তায় গাড়ির না পাওয়া দিয়েই শুরু করে। খানিকটা বিরক্তি মিশিয়ে বলে- বলিস না দোস্ত। সকালে রাস্তায় বেরুলাম গুলশান যাব, কিন্তু রাস্তা দেখি বাস নেই। কি করব ভাবছি এমন সময় ফোন করল তোর ভাবি। মেয়েটির আবারও জ্বর বেড়েছে। আগামী সপ্তাহে চাচাতো বোনের বিয়ে। টাকার দরকার। পারিবারিক সমস্যার কথা বলতে গিয়ে চাকুরির সন্ধান সামনে চলে আসে। কতজনের কাছে ধর্ণা দিলাম। কদিন ঘুরিয়ে বলে- চেষ্টা করেছি কিন্তু এখন সুযোগ নেই। খোকন এক মুহুর্ত চুপ মেরে থাকে। তারপর আবার শুরু করে- কি করব বল দোস্ত মাথায় কাজ করছে না। ক’দিন ধরেই পাওনাদাররা ঘন ঘন ফোন করছে। ফোন ধরলেই ঘ্যান ঘ্যান করছে। পরশুদিন তো একজন মা-বোন তুলে গালাগাল দিল।
ডাকুয়া কিছু বলে না- কেবল মাথা নাড়ে।
খোকন বলেই চলে। পুঁজিবাজার নাকি দাঁড় করাবে সরকার নাকি কি কি উদ্যোগ নিচ্ছে, শুনি কিন্তু দেখি না। সেদিন প্রেসক্লাবের সামনে শুনলাম বিরোধীদল বলছে- ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু কিছুই তো বিশ্বাস করতে পারি না।
ডাকুয়ার চেহেরায় সহানুভূতির ছাপ।
নতুন মদ্যপের মতো অবস্থা খোকনের। জ্বালা-যন্ত্রনা, দুঃখ-বেদনা সবকিছু উগলে দিচ্ছে। দেখ দোস্তÑ সকালে আদাবর থেকে ধানম-ি হেঁটে আসতে গিয়ে কত অভিজ্ঞতা হলো। পুলিশের ধাওয়া খেলাম দুইবার। পথিমধ্যে মিছিলে নিখোঁজ, হাওয়া, গুম, লুকিয়ে রাখা, ব্লেম গেম নানারকম শব্দ শুনেছি। বউয়ের চাহিদা, পাওনাদারের গালি- কান দু’টো ঝালাপালা হয়ে গেল। কথা শেষ করেই সে ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি গলাধকরণ করে। একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বলে- দোস্ত আর পারছি না।
খোকনের কথা শুনতে শুনতে ডাকুয়ার মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠে। ডাকুয়া আলমিরার উপর থেকে ভুভুজেলাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করে। দেখেই খোকনের বিরক্তি জাগে। হঠাৎ করেই ডাকুয়া সামনে ঝুকে খোকনের কানের পাশে একটি ফুঁ দিলো ভুভুজেলায়। বিকট একটি আর্তনাদ খোকনের কানের পর্দা ভেদ করে, মনের অলিন্দে কাঁপন ধরিয়ে; কানে তালা লাগিয়ে দিল। সারাদিন ধরে তার কানে জমে ওঠা সমস্ত তাগাদা, গালাগাল, বাখোয়াজ, গুজব, সুখ-দুখের কাহিনী সবই যেন মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। সে বয়রার মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে দেখে ডাকুয়া পরিতৃপ্তির হাসি হাসে। বেশ খানিকক্ষণ পর ধীরে ধীরে কানের তালা খুললে খোকন বিস্ময় আর বিরক্তি নিয়েই ডাকুয়াকে বলে- কি ব্যাপার?
ডাকুয়ার মুখে হাসির রেখা। সে হাত বাড়িয়ে বলে- তাড়াতাড়ি ফি-টা দে।
খোকন অবাক হয়- কিসের ফি?
কেন চিকিৎসা ফি।
চিকিৎসা ফি মানে!
ডাকুয়া মুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বলে- কেন তোর কান দু’টো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে না?
হ্যাঁ, লাগছে।
এই যে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, কর্ণকুহরে জমে ওঠা সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গেছে এটাকে বলে ভুভুজেলা চিকিৎসা। সকালে বাসা থেকে বেরুনোর সময় একবার নিবি, সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে একবার নিবি। সারাদিনই কান দু’টো ফাঁকা ফাঁকা থাকবে। উল্টোপাল্টা কিছুই আর কানে ঢুকবে না।
ডাকুয়ার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি দেখে খোকন গভীর ভাবনায় ডুবে যায়। সে উপলব্ধি করে জীবনযাত্রায় পিছিয়ে পড়া আফ্রিকায় কেন ভুভুজেলা এত জনপ্রিয়। কেনই বা বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের ভুভুজেলা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সে মনে মনে আফ্রিকানদের স্যালুট দেয়।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×