somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি খাদ্যঘটিত দুর্ঘটনা

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৭ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

..কির পোলা! হারাম..! দরজা খোল! পড়ে গেল, পড়ে গেল! বাপ তোর পায়ে পড়ি, তাড়াতাড়ি বাহির হ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের কথা। দ্বিতীয় বর্ষের ফিল্ডওয়ার্ক করতে এসেছি রাঙামাটি। অন্তঃসারশুন্য ফিল্ডওয়ার্ককে সার পূর্ণ পিকনিক বলাই ভাল। শিক্ষকদের হাতে-কলমে শিক্ষাাদানের ব্রতকে স্ব-উদ্যোগে পেটে-পায়খানায় পরিবর্তন করে ফেলার পদ্ধতিটুকু শিখে গেছি ততোদিনে! আমাদের আসার খবরটুকু যথাযথ কতৃপক্ষের গোচরে আনার দায়িত্বটুকু দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ডাকবিভাগকে। করিৎকর্মা ডাক বিভাগের করিৎকর্মটুকু আমরা টের পেলাম রাঙামাটি পৌছানোর পর! যে চিঠি এক মাস আগে পৌছানোর কথা, সে চিঠি পৌছার আগেই আমরা পৌছে গেলাম রাঙামাটি! ফলাফল-থাকার জায়গার কোন বন্দোবস্ত নাই!

প্রতি বছর ফিল্ডে আসার আগে বিভিন্ন ধরনের কমিটি গঠন করা হয় কাজ ভাগ করে দেয়ার জন্য। ফুড কমিটি, ট্রান্সপোর্ট কমিটি, মেডিক্যাল কমিটি, ইত্যাদি । আমি সোৎসাহে "চাঁদ দেখা কমিটিতে" নাম লিখালাম! ফুড কমিটি খাদ্য জোগায়, ট্রান্সপোর্ট কমিটি যাতায়াত, মেডিক্যাল দেয় ঔষধ, আর চাঁদ দেখা কমিটি জোগায় আশেপাশের তাবৎ সুন্দরীদের খোঁজ!

কমিটির সদস্যরা খেটেখুটে একটা থাকার জায়গা বের করলো। খাটাখাটুনির চোটেই কিনা কপালে খাট জুটলোনা! জুটলো রাঙামাটি টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের একটা পরিত্যাক্ত বাড়ি- সেখানেই খানা এবং পায়খানা! তিরিশ জন ছাত্রের জন্য একখানা পায়খানা! খানা-খাদ্যের কোন কমতি নেই! যত আপত্তি ছাড়তে গিয়ে- "খাও বেশী ছাড়ো কম" এই হচ্ছে মুলনীতি!

ইউরোপ-আমেরিকার যা থাকে আমাদের তা ছিল না! বাসের মধ্যে পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না। বাসে বসে খানা সম্ভব ছিল, কিন্তু পায়খানা সম্ভব ছিলনা কস্মিনকালেও! ঢাকা থেকে রাঙামাটির সুদীর্ঘ যাত্রাপথে দুটি বিরতিতে পেট ও মন ভরলেও, খালি করার ব্যাপারটা জনপ্রিয় ছিল না কারও কাছেই!

বাসস্থান নির্ধারিত হবার পর শুরু হল ধুন্ধুমার যুদ্ধ! কে কার আগে পায়খানায় যাবে তার প্রতিযোগিতা! ভাগ্যবান নজরুল সর্বপ্রথম গিয়ে ঢুকলো দুনিয়াবী স্বর্গে! দুনিয়ায় কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। কিমবা বলা যেতে পারে -কেউ কাউকে আগে ছাড়তে দেয়না! দুর্জনেরা নজরুলের স্বর্গপ্রাপ্তিটুকু মেনে নিতে পারলোনা। তাদের প্রতিবাদের পদাঘাত পায়খানার দরজায় আঘাত হয়ে পড়তে লাগলো। দরজা জিনিষটা অবলা নয় যে সয়ে যাবে-- ফলাফল পাওয়া গেল হাতেনাতে! কিছুক্ষন পর দেখা গেল দরজার নীচের অংশ স্ব-স্থান ত্যাগ করেছে! উৎসাহী দর্শকেরা দরজার পতিত স্থান দিয়ে নজরুলের পতিত বস্তু দেখায় মনযোগ দিল! বেচারা নজরুল লজ্জা সইতে না পেরে ঘুরে বসলো "সম্মুখ সমরের চাইতে পশ্চাৎপসারণ মঙ্গলময়"- উক্তিটি প্রমাণের স্বার্থে! দুষ্ট বালকেরা নজরুলের পশ্চাৎদেশে খোসপাঁচড়ার দাগ দেখা যায় কিনা তা নিয়ে বাজী ধরা শুরু করলো।

প্রতিদিন সকালবেলা এবং সন্ধ্যাবেলা ফিল্ড থেকে ফিরে আসার পর পরই যত গোলযোগ- বাকী সময়টুকু বেচারা পায়খানা অদ্ভুত এক একাকীত্বে ভোগে!

প্রথমদিন ফিল্ড থেকে ফিরে গোলযোগ শুরু হয়ে গেছে। "ছোটখাট শ্যামল" ভাবলো, মারামারিতে গিয়ে কাজ নেই! বরং কাপ্তাই লেকে কিছু সার দিয়ে এলেই হয়। যেই ভাবা সেই কাজ- একটা হারিকেন সাথে নিয়ে শ্যামল চললো "কাপ্তাই লেক বধ কাব্য" রচনা করতে। কিয়ৎকাল বাদে শ্যামলের প্রলয়ংকরী চিৎকার ও চার/পাঁচ জনের ছুটে যাওয়া! মুখে পানি ছিটিয়ে শ্যামলের জ্ঞান ফিরিয়ে আনার পর সে যা বললো, সেটাকে ভদ্রভাষায় ভাষান্তরিত করলে দাড়ায়, "হারিকেনের আবছা আলোয় বসে ছাড়ার সময় সে দেখলো তার নিক্ষিপ্ত প্রথম গোলাটা ছোট ছোট লাফ দিচ্ছে!" এটা দেখেই সে বাক্যহারা- সেই সাথে জ্ঞানও! সাহসীরা টর্চের আলো ফেলে যা বুঝলো সেটা হচ্ছে- আবছা অন্ধকারে শ্যামল কাপ্তাই লেকের ঢালে যে কাব্য নিক্ষেপ করেছে সেটা গিয়ে পড়েছে কাপ্তাইবাসী এক ব্যাঙের ঘাড়ে।

আমাদের সাথে পড়তো কার্জন হলের প্রাণ "প্রেম কিশোর"। সে এতই বিখ্যাত যে ভোরের কাগজ আধাপৃষ্ঠা ব্যয় করে তার হাস্যকর কার্যকলাপ নিয়ে একটা ফিচার বের করেছিল- সাথে ছিল তার দন্তবিকশিত ছবি! কার্জন হলের তাবৎ মেয়ে এক ডাকে "কামাল" ওরফে "প্রেম কিশোর" কে চিনে। না চিনলেও- ডাক শুনে চিনে নিতে দেরি হয়না মোটেই! তাকে নিয়ে অন্য কোনদিন গল্প হবে। আগে গল্পে ফিরে যাই। সেই কামাল ওরফে প্রেম কিশোর খায় যেমন - ছাড়েও তেমন! মহাজ্ঞানী-মহাজন যে পথে করে গমন, সবাই সেই পথে যেতে চায় কিন্তু আমাদের কামাল একবার যে পথে গমন করে সেই সুবাসিত পথে গমনের ইচ্ছা আর কারোরই থাকেনা। সুতারাং আইন করে দেয়া হয়েছে- কামাল সবার পরে গমন করবে।

দ্বিতীয়দিন সকাল বেলায় আবিষ্কার করা হলো কামাল ওয়ের্ষ্টান গল্পের নায়কদের মতো আইন ভেঙ্গেছে! শুধু ভাঙ্গলেও একটা কথা ছিল। এক্কেবারে ভেঙ্গে আঁটকে আছে- বার বার ফ্লাশ করেও দুর করা যাচ্ছেনা কিছুতেই! জিনিষটা দেখতে অনেকটা চানখারপুলের মিতালী হোটেলের কাবাবের মতো। সমস্যা হচ্ছে প্রেম কিশোরের প্রকৃয়াজাত কাবাব এতই শক্ত যে পানির ছুরি দিয়ে টুকরো করা যাচ্ছেনা। ফরমালিন দেয়া মাছের মতোই তার অবস্থা!

অবশেষে শামীম একটা বুদ্ধি বের করলো। বুদ্ধি অবশ্য বের হবারই কথা! সুবাসিত কাবাবের গন্ধ এতই তীব্র যে তা ভেতর থেকে সবকিছু টেনে আনা শুরু করছিল। বুদ্ধির অবস্থান স্বভাবতই সেসব জিনিষের উপরে - তাই আগে বের হবে এটাই স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার। শামীম দৌড়ে গিয়ে কোথা থেকে একটা লাঠি জোগাড় করে আনলো। তারপর একজন বালতিতে করে পানি ঢাললো এবং শামীম লাঠি দিয়ে গুঁতিয়ে সেই কাবাব টুকরো করলো।

এভাবে কোনকিছু বেশীদিন চলতে পারে না, আর তাই ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে যথাযথ কতৃপক্ষের গোচরে আনা হল। সেইদিন সন্ধ্যায় ফিল্ড থেকে ফিরে আবিষ্কার করলাম। বিল্ডিং এর পেছনে একটা গর্ত করে তার উপর কাঠের একটা পাটাতন দেয়া হয়েছে। এবং চারপাশে মুলিবাঁশের বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে রান্নাবান্না করা হয়- জায়গাটা তার খুব কাছেই। যেন খেয়ে উঠেই দৌড় দেয়া যায়- সে চিন্তা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে বলে ভ্রম হয়।

তারপর বাকী পাঁচ দিন আর সমস্যা হয়নি। "খানায় বসে পায়খানা" কিমবা "পায়খানার অদুরে খানা" দুটোই চলতে লাগলো।
--------
[গাঢ়]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১০:৫৮
৫৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×