স্বর্ণের প্রতি লোভ মানুষের চিরদিনেরই। আর এই লোভের বশবর্তী হয়ে কত মানুষ নিজের জীবন বিপন্ন করে ছুটে গেছে দূর-দূরান্তে, মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে সদর্পে এগিয়ে গেছে। তৈরী হয়েছে বহু কাহিনী। আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর অভিযানের কাহিনী হচ্ছে এলডোরাডো বা প্রাচীন স্বর্ণনগরী অভিযানের কাহিনী।
এলডোরাডো ম্যানিয়া শুরু হয় ১৫৩০ সালে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফ্রান্সিসকো পিজরোর মাধ্যমে। তিনি পানামা থেকে নৌবহরে করে পাড়ি জমান প্রাচীন ইনকা সভ্যতার পীঠস্থান পেরুতে। কিন্তু সফল হতে পারেননি তিনি। এরপর ১৫৩৫ সালে সেবাস্তিয়ান ডি বেলকাজার, ইকুয়েডর এর রাজধানী কুইটো নামের প্রবর্তক একজন ইন্ডিয়ানের সাথে পরিচিত হন, যে তাকে এলডোরাডো সম্পর্কে জ্ঞাত করে। সে সেবাস্তিয়ানকে বলে যে প্রাচীন ইনকা সভ্যতার রাজা গোসল করতেন সোনা ভর্তি এক হ্রদে। এই কথার মাধ্যমেই এলডোরাডো কথাটির মানে তিনি স্বর্ণশহর থেকে পরিবর্তন করে রাখেন স্বর্ণমানব। তবে এখন পর্যন্ত এই নিয়ে দন্দ্ব থেকেই গেছে এলডোরাডো শব্দের আসল অর্থের।
এর পরবর্তী এলডোরাডো অভিযানের কাহিনী ১৫৩৬ সালে ৯০০ নাবিকসহ গন্জালো জিমেনেজের। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত জিমেনেজের দল কলম্বিয়া থেকে সিবেহাস দ্বীপে পৌছালে সেখানকার স্প্যানিয়ার্ডরা তাকে একটি হ্রদের সন্ধান দেয় যেটির সাথে এলডোরাডোর হ্রদের অনেক খানি মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এরপর আর বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি তিনি। ম্যালেরিয়া এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার দলের বহু লোকের মৃত্যু হয়। ফলে অপর্যাপ্ত মানুষ ও রশিদের জন্য তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। ১৫৯১ সালে আবার অভিযান। এবারের প্রবর্তক বেরিও। কিন্তু তার আর কোন হদিস এরপর পাওয়া যায় নি।
শেষ স্প্যানিশ অভিযানের নায়ক ডিয়েজ ডি লা ফুয়েন্তি। তিনি ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করেন তার অভিযান। তিনি পারিমা হ্রদের সন্ধান পান। কিন্তু এরপর ইনডিয়ানদের আক্রমণে ভেস্তে যায় তার অভিযান। মাত্র কয়েকজন অভিযাত্রী নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু এর পরও থেমে থাকেনি এলডোরাডো অভিযান। ১৯১২ সালে একটি বৃটিশ কন্সট্রাক্টর কোম্পানি পারিমা হ্রদের আশেপাশে অভিযান চালিয়ে রূপা, বক্সাইট ও ম্যাঙ্গানিজের সন্ধান পায়। কিন্তু সোনা আর পাওয়া যায় নি।
এলডোরাডো সম্পর্কে শেষ খবর শোনা যায় ১৯৬৯ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বোগোতাতে। একটি গুহার পাশে কিছু শ্রমিক কাজ করছিল। হঠাৎ একজন চিৎকার করে উঠে, "এলডোরাডো", "এলডোরাডো"। খেঁাজ নিয়ে জানা যায় সেই শ্রমিকটি একটি খঁাটি সোনার মডেল পেয়েছে, যেটায় দেখা যাচ্ছে এক লোক তার রক্ষীবাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত এবং সে গোসল করছে। এরপর এলডোরাডো সম্পর্কে আর কোন কাহিনী শোনা যায় নি। কিন্তু মানুষকে এখনও ভাবিয়ে তোলে এই এলডোরাডো। সত্যিই কি ছিল এই স্বর্ণশহর বা স্বর্ণমানব? এ এক সোনালি মিথ।
এলডোরাডো সম্পর্কে আরো জানতে ব্যারোনেস ওর্কজির 'এলডোরাডো' বইটি পড়ুন।
(লেখাটি কিছুটা এডিট করে ২৫ জুন যায় যায় দিনে ছোটদের পাতায় প্রকাশিত হয়েছে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



