somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন সিস্টেমে মরতে চান?

১৯ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম আল্লাহর রসূল, দোজাহানের সর্দার, বিশ্বশান্তির একমাত্র আদর্শ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। আমরা দোয়া করি আল্লাহতায়ালা লেখক ও পাঠক উভয়পক্ষকেই হেদায়াত দান করুন। আমাদের মধ্যে অনেকে অসুস্থ। অনেকের আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা, সহকর্মী, পাড়া-প্রতিবেশি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তাদের শেফা দান করুন। আমীন]

অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম, মরার সিস্টেম আছে দু'টা।
(১) তথাকথিত স্বাভাবিক মৃত্যু
(২) অস্বাভাবিক মৃত্যু

তথাকথিত স্বাভাবিক মৃত্যু খুবই ভয়াবহ ও কষ্টদায়ক একটি বিষয়। ধরে নেই এটা এরকমঃ মোটামুটি ৫০, ৬০, ৭০ বৎসর বাঁচব। এরপর স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হবে। কোন এক কারণে মহল্লার এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে গেলাম। খসখস করে কতগুলি টেস্ট লিখে দিল। "এত টেস্ট দেয়ার কি দরকার" মনে মনে গজগজ করতে করতে অনিচ্ছাসত্ত্বে টেস্টগুলো করানো হলো। বের হলো ডায়াবেটিস। আহ, চিরস্থায়ী রোগী হয়ে গেলাম। এখন আর ডাক্তার খারাপ লাগে না। ডাক্তার যা যা বলে তা তা করি। হালুয়া খাই না, মিষ্টি খাই না। সকাল বিকাল দুই মাইল হাঁটা। এভাবে চলতে লাগল। হঠাৎ একদিন হার্টের সমস্যা ধরা পড়ল। বাইপাস করানো হলো। রিং পড়ানো হলো। কিছুদিন যেতে না যেতে হল মাইল্ড স্ট্রোক। একপাশ গেল দুর্বল হয়ে। এখন ঘর থেকে একরকম বেরোনোই হওয়া হয় না। শুধু লাঠিতে ভর দিয়ে ঠুক ঠুক করে মসজিদে যাওয়া। আর গলির মোড়ে ফার্মেসিটায় বসে থাকা।

একদিন অচেতন হয়ে বাথরুমে পড়ে থাকা। ছোটাছুটি। আইসিইউ। ডাক্তার বলে হেমারেজিক স্ট্রোক। মগজের ভেতর রক্তপাত। ভেণ্টিলেটর মেশিন। দীর্ঘদিনের চিকিৎসার খরচ যোগাতে যেয়ে জমি বিক্রি। ধার-দেনা। একদিন এক ভোর রাতে আইসিইউ-র মেডিকেল অফিসার বলে, আমরাতো অনেক চেষ্টা করলাম, আপনারাও চেষ্টা করলেন। আমার মনে হয় আর মেশিনে রেখে লাভ নেই। আপনারা রোগী নিয়ে যান। হায়াত মওত আল্লাহর হাতে। আমরা ডাক্তাররা শুধু খেদমত করি। অতঃপর ছেলেমেয়েদের বিশাল অংকের ঋণের তলে রেখে আখিরাতের ট্রেনে যাত্রা।

তথাকথিত স্বাভাবিক মৃত্যুর আরেকটি উদাহরণ হতে পারে লিভার সিরোসিস। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে দাঁত মাজতে গেলেন। হঠাৎ শুরু হলো রক্তবমি। থামেই না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। রক্ত দেয়া হলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বের হলো HBsAg positive. লিভার সিরোসিস। ফাইনাল স্টেজ। ক্লিপ লাগানো হলো। রেডিওএব্লেশন করার কথা বলাবলি হলো। খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ। স্বাস্থ্য শুকাতে লাগল। পেট ফুলতে লাগল। লাখ লাখ টাকা অল্প কয়দিনে পানির মতো চলে গেল। শেষে তাবিজ কবচও করা হলো। রক্তবমি ও রক্তপায়খানা করতে করতে এক গভীর রাতে এই ধরাধাম ছেড়ে আখিরাতের পথে পা বাড়াল।

অথবা ধরুন COPD. সারাজীবন সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে লাংসের বায়ুথলিগুলো নষ্ট করে ফেলার নাম COPD. খুবই ভয়াবহ রোগ। রোগমুক্তির কোন সম্ভাবনা নাই। ক্ষণে ক্ষণে শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেনের অভাবে শরীর নীল হয়ে যাওয়া। আবার আইসিইউ। অক্সিজেনের স্যাচুরেশন কমে যাওয়া। চারদিকে এত অক্সিজেন। কিন্তু কোন লাভ নাই। একটু একটু করে অক্সিজেনের অভাবে দীর্ঘ কষ্টের পর ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যু।

অন্যদিকে ক্যন্সারের কথা আর কী বলব। ক্যান্সারের যন্ত্রণায় মানুষ অস্থির। ফুসফুসের ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, বোন মেটাসটাসিস, ব্রেস্ট ক্যান্সার। আরো কতরকম যে ক্যান্সার! ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু। ডাক্তারের এক কথায় ব্রেস্ট কেটে ফেলতে রাজি। ফুসফুসতো আর কেটে ফেলা যায় না। পাকস্থলী কাটলেও ব্যাপক সমস্যা। রেডিওথেরাপী, কেমোথেরাপী। মৃত্যুর পূর্বেই যেন মৃত্যু।

তাহলে ভাবছেন কিডনি ডিজিজের কথা(CKD)? ওটাতো আরো ভয়াবহ। শরীর থেকে প্রস্রাব বের হতে পারছেনা। দূষিত পদার্থগুলো জমে যাচ্ছে শরীরের ভিতর। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাও ঠিক থাকছে না। কষ্টে যন্ত্রণায় রোগী অচেতনের মতো হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বলল ডায়ালাইসিস করতে হবে। প্রতি সপ্তায় কমপক্ষে একবার ডায়ালাইসিস। যে টাকা লাগে একবার ডায়ালাইসিস করতে তা দিয়ে একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত ফ্যমেলির একমাস চলে যাওয়ার কথা। একবার প্রস্রাব করানোতে এত টাকা! এ কথা শুনে এক রোগী কাঁদতেছে। বলছে এতদিন যে আমার আল্লাহ প্রতিদিন চার পাঁচবার করে ফ্রী ফ্রী প্রস্রাব করাল এর শুকরিয়া আমি কিভাবে আদায় করব? তথাকথিত নাস্তিক ভাইদের কাছে এর থেকে একটি মেসেজ আছে। আপনারাতো আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে অনেক চিন্তা ফিকির করেন মাশা'আল্লাহ। তো আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করার পূর্বে আল্লাহ যে আপনার প্রস্রাব তৈরী করার জন্য এত আধুনিক একটা যন্ত্র আপনার কোমরে ফিট করে দিল আগে ঐ যন্ত্রের হাকীকত চিন্তা করেন। হাজার হাজার বছরের আপনাদের ভাষায় বিবর্তিত মানব সভ্যতার জ্ঞানতো পারল না ওরকম একটা যন্ত্র তৈয়ার করতে! আল্লাহর একটা সৃষ্টির হাকীকত আপনার বুঝে আসে না, তো স্রষ্টা আল্লাহর হাকীকত কিভাবে বুঝে আসবে!

তো উপরের আলোচনা থেকে ইনশা'আল্লাহ আপনারা বুঝতে পারলেন তথাকথিত স্বাভাবিক মৃত্যু কতটা স্বাভাবিক। এখন আমাদের মধ্যে এরকম লোক আছে না যারা মনে করে এখনোতো আল্লাহর রহমতে শরীরে শক্তি আছে। এখনোতো চেহারায় গ্লেস দেয়। আগে বুড়ো হই। চামড়া ঝুলে পড়ুক, তারপর না হয় দাড়ি রাখবনে, মসজিদে যাবনে, পর্দা করবনে। তারা কী আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের ঐ বানী ভুলে গেছেন, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতার কদর কর। তারা কী জানেন না আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনের নিকট দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় সবল ঈমানদার বেশি প্রিয়। আর অসুস্থ হলে আপনি ইবাদত করবেন কিভাবে? সামান্য জ্বর হলেইতো দুনিয়াটা আর ভালো লাগে না। আর ওসব মৃত্যুরোগে পতিত হলে আপনার কি অবস্থা হবে। মনে রাখবেন, যে সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর হুকুম মানল না, আল্লাহর রাসূলের আদর্শ পরিত্যাগ করল সে অসুস্থ অবস্থায় কখনোই তা পারবে না। আর তাছাড়া য়ামালের পূর্বে দরকার সঠিক আকীদা। আকীদা শিখতেইতো সুস্থ অবস্থায় কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর লাগতে পারে। তাও যদি কেউ নিবিড়ভাবে আল্লাহওয়ালা লোকদের সংস্পর্শে থাকে। আর যদি কেউ সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর হুকুম মানে, নবীজীর আদর্শে চলে সে অসুস্থ হওয়ার কারণে যদি য়ামাল করতে নাও পারে তবু আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তাকে সুস্থ অবস্থার মতো সওয়াব দিতে থাকবেন। যেভাবে মানুষ পেনশন পায়। সুবহানাল্লাহ।

তো ভাই আমাকে মাফ করবেন। আপনাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমরা যেন অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থ অবস্থা্র এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের কদর করতে পারি এই অনুভূতি জাগিয়ে তোলাই আমার উদ্দেশ্য। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ইনশা'আল্লাহ দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×