somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে হয়ে গেল ১০ দিন ছুটি।

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেশ কয়েক বছর ধরে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করছি। আসলে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনের কাছ থেকে আমি যে ইতিকাফের সুযোগ পেয়েছি, এর জন্য আমি নিজেই মাঝে মাঝে হতভম্ব ও অস্থির হয়ে যাই। আমাদের মসজিদের খতিব সাহেব বলেন, আল্লাহর জন্য একটা সিজদাও যদি কেউ দেয়, তবে তার জন্যও মালিকের পূর্বানুমতি লাগে। দুনিয়াতেও এর মেছাল আছে। কেউ কি ইচ্ছে করলেই প্রসিডেণ্টের খাস কামরায় ঢুকতে পার? এমনকি প্রেসিডেণ্ট ভবনে ঢুকতেও অনুমতি লাগে। যদি গায়ের জোরেই আল্লাহর ঘর মসজিদে ঢুকা যেত. তবে সেখানে হয়তো গরীবদের কোনই স্থান হতো না। মসজিদের সামনের কাতারগুলো ভরা থাকত দেশের ক্ষমতাবান ও ধনাঢ্য লোক, এমনকি নাস্তিকদের দ্বারা। যদিও মুনাফিকরা সব যুগেই থাকে। আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের একজন বিশিষ্ট সাহাবী, ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জেন হযরত বেলাল (রা) এজন্য আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনের প্রতি খুব খুশি ও সন্তুষ্ট থাকতেন যে হেদায়েত আল্লাহর হাতে। হেদায়েত আল্লাহর হাতে বলেই না তার মতো একজন কৃষ্ণবর্ণের গোলাম হেদায়েত পেয়েছে। হেদায়েত যদি আল্লাহতায়ালা মানুষের হাতে ছেড়ে দিতেন তাহলে হয়তো দুনিয়ার লাইনে মালওয়ালা, জ্ঞানওয়ালা, প্রভাব-প্রতিপত্তিওয়ালা আবু জাহেল, আবু লাহাবরাই হেদায়েত পেত। দুনিয়ার সম্পদ যেমন তারা ক্ষমতার দাপটে হস্তগত করে, আখিরাতের সম্পদও তারা ক্ষমতার জোরে হস্তগত করত।

যাহোক আল্লাহর কাছে অনেক বেশি শুকরিয়া আদায় করতে চাই যে, তিনি আমার মতো একজন নাদান, নালায়েককে তাঁর ঘর মসজিদে ঢুকতে দেন। "এক গোলাম মসজিদে ঢুকেছে। মসজিদের জানালা দিয়ে তার মালিক তাকে ডাকছে এই বলে, কে তোমাকে এতক্ষন মসজিদে বসিয়ে রেখেছে? গোলাম উত্তর দেয়, যে মালিক তোমাকে মসজিদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, ঐ মহামহিম বাদশাহ আমাকে ভিতরে বসিয়ে রেখেছেন।"

তো এবারও ইচ্ছা আছে ইতিকাফ করার। আলহামদুলিল্লাহ, নফল ইতিকাফতো প্রতিবার মসজিদে ঢুকার সময় নিয়্যত করলেই হয়। বছরের প্রতিদিনই করা যায়। যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ। কিন্তু রমজানের সুন্নত ইতিকাফের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। বিশ রমজান শেষে ইফতারের আগে আগে মদজিদে ঢুকতে হয়। তখন থেকে শুরু। একেবারে সমস্ত রোযা শেষ হওয়ার পর মাগরিব নামাজ পড়ে বের হতে হয়। খাওয়া দাওয়া সব মসজিদে। পায়খানা প্রস্রাবের জরূরত ছাড়া বের হওয়া যায় না। শুধু ফরজ গোসল করা যায়। কেবলমাত্র জামে মসজিদ যেখানে জুমার নামাজ হয় সেখানে ইতিকাফ করতে হয়। মহিলারা ঘরের এক কোণে করবে। আরো নিয়মকানুন জানার জন্য য়ালেম উলামাদের সাথে যোগাযোগ করুন। নিজে নিজে কেবল বই পড়ে জানলে জানা অপূর্ণ থাকবে। বইও পড়তে হবে, য়ালেমদের থেকে জিজ্ঞাসার মাধ্যমেও জানতে হবে।

আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিবছর ইতিকাফের জন্য এমন সব ঝামেলা থেকে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাকে মুক্ত করেন, যা আমার কল্পনায় বা মেধায় ধরে না। প্রতিবারই আমি ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা থেকে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাকে মুক্ত করেন। সেদিন স্যার বলছেন, জহির তোমার না রমজানের শেষ দশদিন ছুটি দরকার। আশরাফুলেরও সামনে পরীক্ষা আছে। ওরও ছুটি দরকার। তুমি ওর সাথে বসে ডিউটিগুলো ঠিক করে নিও। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনকে বললাম, হে পরওয়ারদেগার, এজন্যইতো তোমাকে আমি এত ভালোবাসি। আসলে তা নয় বোধহয়। তুমিই আমাকে বেশি ভালোবাস হে রব।

সিয়াম শুরু হচ্ছে। একদিকে সাওমের আনন্দ, অন্যদিকে ইতিকাফের অপেক্ষার আনন্দ। সুবহানাল্লাহ। মসজিদে কাটাব সিয়ামের শেষ ১০ টা দিন। অন্তত চোখের হেফাজত হবে, কানের হেফাজত হবে। জাহান্নামের উপযুক্ত যে চোখ ও কান, জান্নাতের শান্তির পরশে তা হবে শীতল। মসজিদতো জান্নাতের বাগান। জান্নাতের বাগানে থাকেনা কোন পেরেশানী। হয় দিলের হেফাজত। এজন্য বন্ধুরা আপনারা হয়তো অনুভব করেছেন মসজিদে যে যতক্ষণ অবস্থান করেন হৃদয় থাকে শান্ত, চিন্তামুক্ত। কারণ জান্নাতের বাগানেতো উদ্বিগ্নতা নেই। একবার আবেগের আতিশয্যে এক বুযুর্গ ব্যক্তি বলছিলেন, কেউ যদি মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে, আমি জান্নাতে আছি, তাহলে সে ঠিকই বলেছে। এছাড়া আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের একটা হাদীসও আছে এরূপ যে, "তোমরা যখন জান্নাতের বাগানসমূহের নিকট দিয়ে যাও তখন সেখানে খুব বিচরণ কর। কেহ আরজ করিল, ইয়া রসূলুল্লাহ! জান্নাতের বাগানসমূহ কি? তিনি বললেন, যিকিরের হালকাসমূহ।" মসজিদগুলোতেইতো জিকিরের হালকাসমূহ কায়েম থাকে।

আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যে আমরা যারা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করি রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে। তারা যদি ঐ দিনগুলোতে ইতিকাফে থাকে তাহলে ইনশা'আল্লাহ মিরাজের ফযিলত সে পুরোপুরিই পাবে। কারণ ইতিকাফে কেউ ঘুমিয়ে থাকলেও সে ইবাদত থেকে খালি নয়। ২৪ ঘণ্টাই সে ইবাদতে থাকে। সুবহানাল্লাহ।

পরিশেষে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাকে ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও অবসরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হাদীস শরীফে আছে, হুযুর সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাবও দূর করব না।’ [তিরমিযী: ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ: ৮৬৮১; ইবন মাজা: ৪১০৭]

এক্ষেত্রে খুব খেয়াল করেন আমার ভাই, বোন, বন্ধুরা। একথা কে বলেছেন? বলেছেন আল্লাহ তায়ালা এবং আমাদের শুনিয়েছেন আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম। বের হওয়া গুলি আবার বন্দুকে ফিরে যাওয়া কখনো সম্ভব হতেও পারে। কিন্তু আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের কথা ব্যতিক্রম হওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই আমরা যারা দারিদ্র ঘুচাতে চাই ও পেরেশানীমুক্ত জীবন চাই আমাদের ওষুধ হলো আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হওয়া। আর যদি তা না করি, আমরা হাজারো কাজে-অকাজে লিপ্ত থেকে পেরেশান হয়ে যাব, কিন্তু অভাব দূর হবে না।

সূরা ইনশিরাহ্-তে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের হুকুম দিয়েছন,

فَإِذَا فَرَغۡتَ فَٱنصَبۡ
وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَٱرۡغَب

অর্থাৎ, "সুতরাং তুমি যখনই অবসর পাও, তখনই ইবাদতে নিজে পরিশ্রান্ত কর। এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোযোগী হও।"

অতএব, আমার জ্ঞানী-গুনী ভাই, বোন, দোস্ত ও মুরব্বীবৃন্দ। আসুন না আমরা এ বৎসর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করি। জীবনে কত কিছুর টেস্টইতো নিলাম। এবার নাহয় ইতিকাফের টেস্ট নেই। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের কবুল করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×