ভাই অরণ্য, তোমার প্রশ্ন ছিল ফিলিস্তীনে মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলী হায়েনারা যে নিষ্ঠুর নির্যাতন করছে এবং অতঃপর বিশ্ববিবেক বলে খ্যাত পশ্চিমা ইউরো এমেরিকানরা একচক্ষু নীতি অবলম্বন করেছে, তথাপি তৃতীয় বিশ্বের গরীব মুসলিমরা যাদের আল্লাহ ছাড়া কথা শোনার আর কেউ নেই টুকটাক মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে ঐ নিষ্ঠুরতার সাধ্যমত প্রতিবাদ করছে, এমতাবস্থায় তবলিগ জামাত বরাবরের মত এখনও কোন বিবৃতি প্রদান বা প্রতিবাদের অন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি কেন?
ভাই অরণ্য, তোমার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। মাশা'আল্লাহ তুমি সুন্দর প্রশ্ন করেছ। দেখ পৃথিবী তার ইতিহাসের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। সারা বিশ্ব থেকে ইহুদীরা ইসরায়েল নামক একটা অবৈধ রাষ্ট্রে জমা হয়েছে। যে পবিত্রভূমি থেকে ইহুদীদের কৃত অপরাধের কারণে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তাদের ২০০০ বৎসর পূর্বে বের করে দিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে কৃত ভবিষ্যতবানী অনুযায়ী আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাদেরকে একটা মিশ্র জাতিরূপে পুনরায় ঐ ভূখন্ডে ফিরিয়ে এনেছেন।
এটা আসলে ইহুদীদের জন্য অশনিসংকেত। কিন্তু ইউরো এমেরিকানদের প্ররোচনা ও একচক্ষু নীতির কারণে তারা তা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তারা এক আত্মবিধ্বংসী ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। কারণ ঐ পবিত্রভূমিতে থাকার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একমাত্র মানদন্ড হল ঈমান ও নেক য়ামল। এ দুটোর কোনটিই ঐ ভন্ড ইসরায়েল রাষ্ট্রের নেই। তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অপরাধ থেকে ক্ষমা পাওয়ার একমাত্র উপায় বা শেষ সুযোগ ছিল আল্লাহর শেষ রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামকে মেনে নেয়া ও তার অনুসরণ করা। কিন্তু তা করতেও তারা অতীতের মত ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন কেবলা পরিবর্তন করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের ফিরে আসার শেষ পথটি রুদ্ধ করে দেন। ফলে তারা ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম আল্লাহ কর্তৃক শাস্তির কবলে পড়ে। সারা পৃথিবী থেকে আল্লাহ তাদেরকে পবিত্রভূমিতে একত্রিত করেন। ইউরো এমেরিকানদের প্ররোচনায় তারা এই ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা দেয়। কিন্তু পবিত্রভূমিতে থাকার জন্য ঈমান ও নেক য়ামল সংশ্লিষ্ট শর্ত তারা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু রাজনীতিতে শিরক ও অর্থনীতিতে সুদ গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা আল্লাহকে এক আত্মবিধ্বংসী যুদ্ধের দিকে আহবান করে।
যেহেতু তারা আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত তৌরাতকে নিজেদের মনমতো লিখে নিয়েছিল তাই ঐ সব নকল তৌরাত দ্বারা তারা এখন নিজেরাই প্রতারিত হতে শুরু করেছে। তারা মনে করছে নবী ও সম্রাট হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের সিংহাসন তথা জেরুজালেম থেকে তারা একসময় পৃথিবী শাসন করবে। এজন্য তারা মিশরের নদী থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত জমি দখল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এজন্য ফিলিস্তীনিদের নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে জেরুজালেমের প্রকৃত দাবীদারদের উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। একইসাথে সুদভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা পঙ্গু করে নিজেরা অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা আধ্যাত্মিক নির্জীবতার কারণে আল্লাহর পরিকল্পনা বুঝতে অক্ষম। তারা ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তারা বুঝতে অক্ষম আল্লাহ তায়ালাই মহা-পরিকল্পনাকারী।
এভাবে পৃথিবী এক শেষ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যে যুদ্ধের শেষ দৃশ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের নেতৃত্বে মুসলমানরা জেরুজালেম থেকে পৃথিবী শাসন করবে। তাহলে মুসলমানদের এখন করনীয় কি? বস্তুত যারা ঈমান এনেছে ও নেক য়ামল করেছে তারা কুরআন ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ করেন। তারা পরবর্তী প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে সচেতন। এ মুহূর্তে প্রয়োজন নিজের ঈমান ও য়ামালের হেফাজত। দাজ্জালের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকা। এদিকে পাথর কথা বলতে শুরু করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বারের মত ট্যাঙ্কের বিপরীতে পাথর দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধের তীব্রতা আরো বাড়বে। যা মানবসভ্যতাকে ইতিহাসের শেষ দৃশ্য মঞ্চায়নের দিকে নিয়ে যাবে।
অতএব কাফেররা তৈরী হচ্ছে। মুসলমানরাও তৈরী হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এ যুদ্ধে ট্যাঙ্ক ও জঙ্গীবিমান কোন কাজে আসবে না, এটম কোন কাজে আসবে না। কাজে আসবে একমাত্র ঈমান ও নেক য়ামাল। যদিও শেষ পর্যন্ত এক সামরিক সংগ্রামের মাধ্যমেই মুসলমানরা পবিত্রভূমি মুক্ত করবে। তবে মুসলমানদের সে দলে আল্লাহর সাথে শিরক করা মুসলমান ও সুদখোর, হারামখোর, বেনামাজী মুসলমান নিশ্চয়ই থাকবে না। যারা দ্বীনকে কেবল সামাজিকতা ও খেল-তামাশার বস্তু বানিয়েছে তারাও সে দলের অন্তর্ভুক্ত হবে না। যদি না তারা ইতিপূর্বেই তওবা করে। শেষ অধ্যায়ে শিরক, নগ্নতা ও সুদভিত্তিক অর্থনীতিতে ছেয়ে যাবে পৃথিবী। ছেয়ে গিয়েছেও। অন্যদিকে আল্লাহভীরু লোকদের সংখ্যাও বাড়বে। যারা হবে তওবাকারী। বাস্তবিকই আল্লাহর রহমতে মসজিদগুলোতে এখন দেখা যায় যুবকদের ভিড়। যা দশ বছর আগেও দেখা যেত না। ইসলাম নিয়ে যুবকদের চিন্তাভাবনা, মেহনত নিকট অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি।
আলহামদুলিল্লাহ। ইতিহাসের মোড় ঘুরানো ঈমান য়ামালে পূর্ণ জনশক্তি তৈরীর কাজটি পেছন থেকে করে চলেছে ক্বওমী মাদ্রাসাসমূহ, তবলিগ জামাতসহ প্রতিটি সত্যপন্থী ইসলামী সংগঠন। ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোতে জাগতিক বিষয়সমূহ পড়ানোর ব্যাপারে কেন এত গুরুত্ব দেয়া হয় না, এবং কেনইবা ওহী বিষয়ক শিক্ষাসমূহে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় তার অনেকগুলো ব্যাখ্যা ছাড়াও এভাবেও সম্ভবত তার একটি বিশেষ ব্যাখ্যা করা যায়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য অবশ্যপাঠ্য বইঃ
পবিত্র কুর'আনে জেরুজালেম
এ লেখাটি এ বইয়ের ওপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এক নিঃশ্বাসে পড়ে যাওয়ার মত একটা বই। বারবার পড়ার মত বই। নিজে পড়ুন এবং অপরকে পড়তে দিন। কমেন্ট করার পূর্বে বইটি একবার পড়ে নিন।
এ বই সম্পর্কে য়ালেম উলামাদের মতামত ইনশা'আল্লাহ খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করা হবে।
পড়ুনঃ
পাথরের শব্দ
রমজান পরবর্তী বার্তা
ইনশা'আল্লাহ আসিতেছেঃ
বাচ্চাদের জন্য "বর্ণে বর্ণে জ্ঞানশিক্ষা।"
আপনার ছেলে, মেয়ে, ছোট ভাইবোন, ভাতিজার জন্য। এটাচড থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




