মালালা নোবেল পাওয়ায় বাংলার মুসলিম সমাজ চমৎকৃত। ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে মালালা কি তবে তসলিমা নাসরীন ও সালমান রুশদীর চেয়েও বেশি ইসলামবিদ্বেষী! আবার কেউ বলছেন মালালারাইতো নোবেল পাবে। আয়েশা সিদ্দীকারাতো পাবে না। তা সে যতবড় মুহাদ্দীসাই হোন না কেন। যত লক্ষ হাদীসই মুখস্থ করুন না কেন। যত বড় চরিত্রবান হোন না কেন। যত বীর মুজাহিদ জন্ম দিন না কেন।
ইসলামের ইতিহাসে নারীশিক্ষা নাম দিয়ে নারীদেরকে কখনো ছোট করা হয়নি। ইসলাম সবার জন্য শিক্ষায় বিশ্বাসী। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে বিশ্বে ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি দাড়িয়ে আছে অজস্র সাহাবা রাযিআল্লাহু তায়ালা য়ানহুমদের পাশাপাশি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিআল্লাহু তায়ালা য়ানহা থেকে বর্ণিত হাদীসের ওপর। আজ পর্যন্ত তার জ্ঞান ও শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করার মত জ্ঞানী পুরুষ এ বিশ্বে খুঁজে পাওয়া গেল না।
নারীশিক্ষা বলতে বুঝায় নারীদের সে শিক্ষা যে শিক্ষা দ্বারা সে ইসলামের দুশমনে পরিণত হতে পারবে। নারীশিক্ষা নারীদের সে শিক্ষা দেয় যে শিক্ষা দ্বারা সে কাফের ও মুনাফিক পুরুষদের আজ্ঞাবহ দাসীতে পরিণত হবে। নারীশিক্ষা নারীদের আব্রুকে ধীরে ধীরে উন্মোচন করে ও তাকে ঘর থেকে বের করে আনে। ব্যস, এটাই হচ্ছে নারীশিক্ষা। অতঃপর সে দূষিত করতে থাকে সমাজ ও পরিবেশ। তার কাছে এখন রক্তের আত্মীয়দের কোন মূল্য নেই, স্বামী ও সন্তানের কোন মূল্য নেই। বরং সে তার শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন এক খড়কুটোতে পরিণত হয়। মানুষ তাকে এখন চলতে ফিরতে মাড়ায়। লক্ষ টাকায় যাকে কেনা সম্ভব ছিল না তার মূল্য বর্তমানে দু-দশ হাজারে নেমে আসে। আর সে মনে করে এতেই তার সাফল্য। এরই নাম নারীশিক্ষা, এরই নাম নারী উন্নয়ন।
আমরা মুসলমানরা চাই না আমাদের পরিবার থেকে একজন মালালা বের হোক, একজন তসলিমা নাসরীন বের হোক, একজন নারীবাদী বের হোক। আমরা চাই আমাদের সমাজ থেকে অজস্র আয়েশা সিদ্দীকা বের হোক, রাবেয়া বসরী বের হোক, ইমাম বুখারী বের হোক, ইমাম মুসলিম বের হোক। আমাদের বাবাদের কেউ হোক ইমাম গাজ্জালীর বাবা, আমাদের মাদের কেউ হোক আব্দুল কাদের জিলানীর মাতা। আমাদের ভাই হোক বখতিয়ার, আর আমীরুল মুমেনীন উমর ইবনুল খাত্তাবের বোনের মত কেউ হোক আমাদের বোন।
যদি আমরা ইহুদী খ্রীস্টান প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও আনুগত্য রাখি, যদি আমরা ইহুদী খ্রীস্টান ও তাদের দোসর মুনাফিকদের পরিচালিত মিডিয়ার প্রতি আস্থা রাখি তাহলে আমাদের সমাজ থেকে নর্দমার কীটের মত অধিক পরিমাণে ইসলামের দুশমন বের হতে থাকবে। সেদিন নামাজ থাকবে, আযানও হবে, কিন্তু সে নামাজের জামাত দেখে ও আযানের তাকবীরধ্বনিতে কাফির, মুশরিকদের কলিজা কেঁপে উঠবে না। বরং আমাদেরই পা টিপে টিপে মসজিদে যেতে হবে যেন রাস্তার কুকুররাও টের না পায়। কুকুরদের ঘেউ ঘেউ শব্দে আশেপাশের বাড়ির মালিকদের ঘুম যেন না ভাঙ্গে। এতই অপমানিত হতে হবে তোমাকে হে মুসলমান।
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সুদভিত্তিক অর্থনীতিকে সমাজের ক্ষুদ্রতম ইউনিট পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। যার ফলে বিষ একেবারে কোষে কোষে চলে গেছে। তাই ওষুধও পৌঁছাতে হবে কোষে কোষে। সঠিক ঔষধ পেয়ে মৃতপ্রায় ইসলামী সমাজব্যবস্থা যেন পুনরায় জাগ্রত হয়। আবার যেন গা মোচড় দিয়ে উঠে বসে।
এজন্য প্রতিটি ঘরে ঘরে দ্বীনী শিক্ষা পৌঁছিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি নবজাতক শিশু কুরআন হাদীসের আলোয় তার পথচলা শিখবে। সুদভিত্তিক প্রতিটি ঘর পরিবর্তিত হবে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের সে সোনার মদিনার এক একটি মানবিক ঘরে। প্রতিটি সকাল হবে সালাত আর কুরআন তিলাওয়াতে। মধ্যরাতে টকশোর টিভির আলোর ঝলসানির পরিবর্তে প্রতিটি বাড়িতে জ্বলবে তাহাজ্জুদের টিমটিমে আলো। আল্লাহর গোলামদের ঘরে ঘরে নাযিল হবে আল্লাহর রহমত।
তো এজন্য ভাই, আসুন, আমরা দ্বীনশিক্ষা করি। ঘরে ঘরে দ্বীনশিক্ষার ব্যবস্থা করি। আমাদের উপার্জনের একটা অনেক বড় অংশ দ্বীনশিক্ষার পেছনে ব্যয় করি। যে কাজে মানুষের শক্তি, মেধা ও অর্থ ব্যয় হয় সে কাজে সফলতা আসে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। এজন্য দ্বীনের প্রয়োজনে আমরা আমাদের শক্তি, মেধা ও অর্থ ব্যয় করি। আমাদের প্রতিটি ব্যয় আমাদেরই কাজে লাগবে। যদি আমরা ইসলামের কাজে আমাদের সম্পদ ব্যয় না করি তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ব্যবহৃত হবে ইসলামের দুশমনদের স্বার্থে। তাই প্রতিটি ঘরকে আমরা ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্ররূপে গড়ে তুলি। থিয়েটার নয়, প্রতিটি ঘরকে মাদ্রাসায় পরিণত করি।
আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের বুঝার ও য়ামল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:০৪