somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরাধিকার

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল গিয়েছিলাম ভূমি সাবরেজিষ্ট্রী অফিসে। দাদার আমলের সাড়ে চার গন্ডা ক্ষেত নাকি আছে। জীবনে দেখিনি, ঘ্রাণও শুঁকিনি। বাবা-কাকারাই এসব খবর রাখতেন। তাই বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এসব বিষয়ে আমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়েনি। কাকা-ফুফুরা সবাই থাকে ঢাকায়। চকের মধ্যে সাড়ে চার গন্ডা ক্ষেতের নজরদারী কে করে! যতটুকু না শাঁস, তার চেয়ে বেশী আঁশ। তাই সিদ্ধান্ত হল বেঁচে ফেলার। কাকারাই ক্রেতা ঠিক করলেন। জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার জন্য সবাই গেল। কাকারা, ফুফুরা, আমার মা, বোন, আমি যত উত্তরাধিকার আছে সবাই গেলাম। সবার সাক্ষর লাগবেতো তাই। সবার মনে আনন্দ। এ বাজারে পৈত্রিক কিছু সম্পত্তি পাওয়ায় সবাই বাপ-দাদাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই আল্লাহ তায়ালার প্রতি প্রশংসায় রত এ অধিকার আল্লাহ তায়ালা কিতাবের মাধ্যমে তাদেরকে দান করেছেন বলে। এমনকি ছেলের বৌ এসেছেন শ্বশুরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের দাবি নিয়ে। এ এক উৎসবমুখর পরিবেশ। বহুদিন পর রক্তের আত্মীয়া মাহরাম মহিলাদের কাছে পেলাম। বড় ফুফু আমার জন্য রুটি, গোস্ত, ডিম, আঙ্গুর নিয়ে এসেছে। আমার মা এনেছে কেক, আঙ্গুর। এক কাকা কলা নিয়ে আসছে। সরকারী অফিসের বারান্দায় বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকা রক্তের সম্পর্কগুলোতে মোচড় দিয়ে ওঠে। ঢেউ খেলে যায় সুদূরের স্মৃতি যখন ছোটবেলায় আমরা সবাই একসাথে ছিলাম। দাদা বেঁচে ছিলেন, দাদী বেঁচে ছিলেন, বাবা বেঁচে ছিলেন। আজকের প্রৌঢ়া মা-ফুফুরা ছিলেন তখনকার দিনের নতুন বৌ-ঝি। ছোট ফুফু বললেন, উনি নাকি স্কুল থেকে এলেই আমি এক দৌড়ে যেয়ে পেঁচিয়ে ধরতাম। হায়, যে দিন গেছে, সে দিনতো চলেই গেছে। কিন্তু মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যায়নি রক্তের সম্পর্ক। আনন্দ, ঝগড়া, ভালবাসা, খুনসুটির স্মৃতিগুলো এখনও হৃদয়গুলোকে অস্থির করে তুলে। এ কোমল ভালবাসা ও অস্থিরতার উৎস দুনিয়া নয়। এ অধিকারের ভিত্তি দুনিয়াবী কোন আইন নয়। সরকারতো আল্লাহ প্রদত্ত আমার কিছু অধিকারকে বাস্তবায়ন করছে মাত্র। বরং এ ভালবাসা, অস্থিরতা ও অধিকার আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তার কিতাবের মাধ্যমে আমাদের দান করেছেন। আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তাঁর কালাম কুরআন ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে আমাদের ইসলামী জীবন বিধান দান করেছেন। আমাদের আবেগ ও সম্পদের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আমাদের উত্তরাধিকার দান করেছেন। এ সুবিধা আমরা পেয়েছি আল্লাহ তায়ালার কিতাব থেকে। আমাদের অধিকারের দলিল আছে। আমরা দলিলশুন্য নই।

যে ব্যক্তি ইসলাম প্রদত্ত অধিকার ও নিরাপত্তা পেতে চায় তাকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে ইসলাম প্রদত্ত জাগতিক ও পারলৌকিক অধিকারে ভাগ বসানো আল্লাহ তায়ালার কিতাবেও জায়েয নেই। মানবিক বুদ্ধি বিবেচনাতেও গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিক এ কারণেই হিন্দু-খ্রীস্টান ও ইহুদীদের তথা অমুসলিমদের সম্পদ ইসলামী রীতিতে বণ্টন হয় না। আর মুসলমান হওয়ার কারণে ত্রিশ চল্লিশ বছর দখলদারিত্ব না থাকার পরও আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত অধিকারের কারণে কোন ব্যক্তির মিরাছের সম্পত্তিতে কিয়ামত পর্যন্ত যতদিন সে বেঁচে থাকে তার অধিকার বহাল থাকে। কিন্তু যে মুহূর্তে কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, সাথে সাথে সে ইসলাম প্রদত্ত সকল সুবিধা ও অধিকার হারায়।

অতএব উত্তরাধিকারের সম্পত্তি ভাগ করার সময় অবশ্যই দেখতে হবে এদের মধ্যে কেউ নাস্তিক আছে কিনা। এদের মধ্যে যদি কেউ নাস্তিক থাকে তাহলে সে মুসলমানদের সম্পত্তিতে অধিকার পেতে পারে না।

নাস্তিকরা যেহেতু মুসলমান নয়, বরং হিন্দু, খ্রীস্টান, ইহুদীদের মত অমুসলিম তাই মুসলমানদের মিরাসের আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাদের অবশ্যই অন্য কোন দলিল আনতে হবে। সে দলিল অনুযায়ী নাস্তিকদের সম্পত্তিতে নাস্তিকরা উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে। কিন্তু কোন মুসলমানের সম্পত্তিতে নয়।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে আবেদন, আপনাদের পরিবারে এরকম অমুসলমান, নাস্তিক যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে তাদের বাসা-বাড়ী থেকে বহিষ্কার করুন।

তাদের সাথে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুন। তাদেরকে ভুলে যান। সব মা-বাবাই সার্চ করুন আপনার ঘরে কোন নাস্তিক ঘাপটি মেরে আছে কিনা। যেসব ছেলে-মেয়েরা হলে থাকে, হোস্টেলে থাকে তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করুন, "তোমার ধর্ম কি।" কোন আত্মীয়ের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাকে একথা জিজ্ঞাসা করুন। কাফের নাস্তিক প্রমাণিত হলে রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করুন। সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করুন। তা না হলে অমুসলমান হয়েও এরা মুসলমানদের সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে। সাথে সাথে যেসব নারী-নেত্রী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তিবর্গ ও সমর্থকগণ নারী-পুরুষের সমান অধিকারের নামে উত্তরাধিকারের সম্পত্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কুরআনের আইনকে ভুল মনে করে (নাউযুবিল্লাহ) এবং মানব রচিত বিধান দ্বারা কুরআনের আইনকে প্রতিস্থাপন করতে চায়, তারা যেহেতু কুরআনের আইনকে অমান্য, অবজ্ঞা করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে, তাই মুসলমানদের উত্তরাধিকার যেন তারা দাবি না করে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে বিশেষ নজর রাখুন। তাদেরকে পরিবার থেকে পৃথক করে দিন ও মিরাসের সম্পত্তিতে তাদের কানাকড়ি পরিমাণ দাবিকে অস্বীকার করুন। যদি আপনি তা করতে ব্যর্থ হন, তবে মুসলমানরা আপনাকেও নাস্তিক ও কাফেরদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করতে বাধ্য হবে। আল্লাহ তায়ালা ব্যাপকভিত্তিতে মানুষজনকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×