somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে পৃথিবীর ডজন ডজন দেশের

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে পৃথিবীর ডজন ডজন দেশের

রাজনৈতিক ভাষ্যকার : নিজের ফুলমন্ত্রীকে অনুসরণ করতে গিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রীও তার জ্ঞানের ‘বহর' সম্পর্কে জানান দিয়েছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলে এডভোকেট কামরুল ইসলাম টুকু বলে বসেছেন, বিশ্বের কোথাও নাকি ধর্মভিত্তিক কোনো রাষ্ট্র নেই! কোনো দেশেই নাকি রাষ্ট্রধর্ম বলে কিছু নেই! অথচ বেশ কয়েকটি ইসলামী রাষ্ট্র তো বটেই, রয়েছে বৌদ্ধ এবং হিন্দুরাষ্ট্রও। অনেক দেশে ক্যাথলিক খৃস্টান ও প্রোটেস্টান্ট খৃস্টান ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী নেপাল একটি হিন্দুরাষ্ট্র। ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল তো জন্মের পর থেকেই গোটা পৃথিবীকে তটস্থ রেখেছে। রাষ্ট্রধর্ম রোমান ক্যাথলিক এমন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, স্লোভাকিয়া, কোস্টারিকা, এল সালভেদর এবং মাল্টা। সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি ক্যান্টনেও খৃস্টান ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। সবার ওপরে রয়েছে ভ্যাটিকান সিটি- যেখানে ক্যাথলিক খৃস্টানদের ধর্মগুরু পোপই সকল ক্ষমতার মালিক। ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও নরওয়েতে নিজ নিজ দেশের লুথেরান চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। এদিকে বৃটেন হলো প্রোটেস্টান্টিজম বা অ্যাংলিকান চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম করার প্রধান উদাহরণ। বৃটেনের রাষ্ট্রধর্ম প্রোটেস্টান্টিজম। তাছাড়া ভুটান, ক্যাম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং রাশিয়ার অধীন ক্যালমিকিয়ার রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম। ইন্দোনেশিয়া ইসলামের পাশাপাশি প্রোটেস্টান্টিজম, ক্যাথলিসিজম তথা খৃস্টান ধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ও কনফুসিয়ানিজমকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। এদিকে ইসলাম কতগুলো দেশের রাষ্ট্রধর্ম সে তথ্য জানার পর আইন প্রতিমন্ত্রীকে লজ্জিত হতে হবে- যদিও লজ্জা আবার সবাই সমানভাবে পান না! সউদী আরব, বাহরাইন, ব্রুনেই, মিসর, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সোমালিয়া, তিউনিশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, কমোরস- কত দেশের নাম শুনতে চান আইন প্রতিমন্ত্রী? অর্থাৎ বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষ বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। কথা আরো আছে। এত যে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সে দেশটিতেও শপথ নেয়ার সময় প্রেসিডেন্টকে বাইবেল হাতে নিতে হয়। অন্যদিকে যে দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হওয়ায় আইন প্রতিমন্ত্রীরা কান্ডজ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের সে বাংলাদেশে কিন্তু রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী ও এমপিদের কাউকে পবিত্র কোরআন হাতে শপথ বাক্য পাঠ করতে হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন এই বিরোধিতা? সে শুধু ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করা হয়েছে বলেই?

উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক উপলক্ষে আইন প্রতিমন্ত্রীর ফুলমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ ধরনের কথা বলেছেন। বানোয়াট তথ্য-পরিসংখ্যান হাজির করেছেন। যেমন চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে লাগামহীন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, দেশের কওমী মাদরাসাগুলো নাকি জঙ্গিদের ‘প্রজনন কেন্দ্রে' পরিণত হয়েছে! এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয় তা নাকি কুপমন্ডুকতার সৃষ্টি করছে। তিনি ‘দুঃখের সঙ্গে' বলেছিলেন, মসজিদের ইমামরা নাকি কেবল ‘বেহেশতে যাওয়ার' শিক্ষা দেন! আইনমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। কোথাও এক মাইল হাঁটলেই একটি মাদরাসা পাবেন। এমন অবস্থা কেন হয়েছে- সেবারও তার কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন ফুলমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বলেছিলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ১৯৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাৎ করায় এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার ফলেই নাকি ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। মসজিদ-মাদরাসা সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর কোনো কথাই যে সত্য নয়, সে কথা প্রমাণ করার জন্য কালো কোট পরে কাউকে কোনো বিচারিক আদালতে দাঁড়াতে হয়নি। কারণ এদেশের মানুষই সাক্ষী যে তিনি অসত্য বলেছিলেন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইনমন্ত্রী সত্য এড়িয়ে ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন দুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল জনগণের দৃষ্টি ও মনোযোগ পিলখানা হত্যাকান্ড থেকে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। সেখানে vাছল নেত্রী শেখ হাসিনার ‘উপদেষ্টা' সজীব ওয়াজেদ জয় এবং জয়ের ইহুদী সঙ্গী কার্ল সিওভাক্কোর নির্দেশনা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া। পাঠকরা সজীব ওয়াজেদ জয় ও কার্ল সিওভাক্কোর মূলকথা ও নির্দেশনাগুলোর সঙ্গে আইনমন্ত্রীর কথাগুলো স্মরণ করে দেখতে পারেন। দেখা যাবে, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জয় ও সিওভাক্কোর কথাগুলোরই পুনরাবৃত্তি করেছিলেন মাত্র। তিনি আসলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনা তথা হুকুম তামিল করার পথে পা বাড়াতে চাচ্ছে। ওদিকে দ্বিতীয় উদ্দেশ্যও ছিল মারাত্মক। আইনমন্ত্রী আসলে পিলখানাকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহকে আড়াল করার জন্যই সেবার এত শব্দ তুলে অসত্য বলেছিলেন। সকল তথ্যও তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছিল। এরকম একটি তথ্য হলো, ২৪১টি মামলায় আটক ৫০৬ জন জঙ্গির পরিচিতির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদের মধ্যে মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ কওমী মাদরাসায় শিক্ষিত। বাকিরা আইনমন্ত্রী বর্ণিত ‘আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শিক্ষা' অর্জন করেছে। সে সময় জেএমবি সংক্রান্ত তথ্যেরও উল্লেখ করা হয়েছিল। ৬০৪ জনের পরিচিতিতে দেখা গেছে, ৮৫ ভাগেরও বেশি স্বল্প শিক্ষিত এবং ৭৫ ভাগেরও বেশি দরিদ্র। বড় কথা, তারা কওমী মাদরাসার ছাত্র নয়। এর অর্থ হলো, আইনমন্ত্রী ভুল বলেছিলেন।
সেবার ‘গুরু' ধরা পড়েছিলেন, এবার আইন প্রতিমন্ত্রীও নিজের উদ্দেশ্য ও কৌশল আড়াল করতে পারেননি। সেবার আশু প্রয়োজন ছিল পিলখানা হত্যাকান্ডের দিক থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দেয়া। এবারের প্রধান উদ্দেশ্য পুরনো ও মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন করে ঝামেলা পাকানো- যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং দেশে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে সংঘাতমুখী করে তোলা। কিন্তু কৌশল চাতুরিপূর্ণ হলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আইন প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশ্য খুব সহজে বাস্তবায়ন বা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারণ, জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার পূরণের ধারে-কাছে যাওয়ার পরিবর্তে এভাবে একের পর এক ইস্যু তৈরি করে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার একই কৌশল বারবার সফল হয় না। কথায় বলে, ঘুঘু বারবার এসে ধান খেয়ে যেতে পারে না। একবার না একবার ঘুঘুকে ফাঁদে পড়তেই হয়।
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×