somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাথরুম সিংগার ও প্রকৃতিবাদ

২৭ শে জুন, ২০০৬ ভোর ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তার উলঙ্গ পাগলকে দেখলে অনেকের মত আমারও মনে হয় ওকে একটা পোষাক দেয়া দরকার। উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই তার শরীরের সম্পদগুলোকে দৃষ্টির আড়াল করা। নিজ অভিজ্ঞতায় জানি কেন জানি পাগলরা শারীরিক দিক দিয়ে একটু বেশি সম্পদশালী হয়। সে সম্পদ লুকিয়ে সম্ভ্রম বজায় রাখতে চাই পোষাক। তবে নগ্নতা লুকানোই পোষাকের একমাত্র কাজ নয় তা রাসত্দার বাকী পথচারীদের দেখলেই বুঝা যায়। তাহলে মহাত্মা গান্ধীর লেঙুটিই শুধু বিক্রি করতো তাবৎ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি। তাতো নয়। রাজা-রাণীরা পোষাক পড়েন মণি-মাণিক্য দিয়ে, সে তাঁদের প্রাচুর্য, আর ক্ষমতার প্রকাশ। শক্তি প্রকাশ পায় বাহিনীর সদস্যদের ইউনিফর্মে। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে অনেকেই আশ্রয় নেন বিলাসী পরিচ্ছদের। ধর্ম পরিচয়টা যাতে বস্ত্রে ধরা পড়ে সেজন্য সতর্ক থাকে অনুসারী বিশ্বাসীরা। আর বেশিরভাগ মানুষ কাজটা চালায় আবহাওয়া ও সংস্কৃতি মেনেই। ইজ্জত-ঢাকার ইচ্ছাটাই এসব বিচিত্র ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ায় এমন কথা আমি বাজি ধরে বলতে পারবো না। পোষাকের বহুবিধ ব্যবহার লিখতেও আমি বসিনি। আমার বিষয় হচ্ছে পোষাক খুলে ফেলা।

বন্ধু আতিফকে বলেছিলাম, মানুষ বাহারি পোষাক পড়ে মূলত: পোষাক ছেড়ে নিরাভরণ হওয়ার ক্ষণকে মহত্তর করে তোলার জন্য। 'নিরাভরণ হওয়ার উদ্দেশ্যে পোষাক পড়া'? আতিফের চোখ বিস্ময়ে গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। ওর স্বভাব নম্র। সে আমার মাথায় বাড়ি দেয়নি শুধু অবাকই হয়েছে। আর জ্ঞানীর মত খোঁচা দিয়ে বলেছে এ তোমার ফ্যান্টাসি-কল্পনাজাত তত্ত্ব। আমি যুক্তি পেশ করলাম। শুনে টুনে সে নিমরাজি হয়েছে। সে তার উদারতা। যুক্তি শোনালে সে 'তালগাছ আমার' বলে গোয়াতর্ুমি করে না। সে যুক্তি আপনাদেরও শোনাই। রাজি বা নারাজি আপনাদের স্বাধীনতা। আমি হসত্দক্ষেপ করবো না। যুক্তি দেখাতে প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, বাঙালি তার জীবনে সবচে ভালো পোষাক পড়ে কোনদিন? আমার জবাব হলো, পুরম্নষ-নারী নির্বিশেষে সাধারণভাবে তার নিজের বিয়ের দিন। তা বিয়ের চূড়ানত্দ পর্ব কী? নিশ্চয়ই দু'জনের মিলনের বাসর রাত। না বললেও আমরা জানি বাসর রাতের মিলিত মানুষের পবিত্র কর্মটি হচ্ছে বস্ত্র ত্যাগ। তা ত্যাগই যখন করবে শেষে তা এতক্ষণ ধরে আসর জমিয়ে এই জমকালো বৈবাহিক পোষাক পড়ার তাৎপর্য কী? তাৎপর্য হলো, বাসর রাতের একানত্দে প্রিয়কে পেয়ে অসম্ভব মূল্যবান পরিধেয়ও বিসর্জন দেয়া। নয় কি? যুক্তি শুনে আতিফ উসখুস করে। এই উদাহরণটা সে মেনে নেয়, কিন্তু তার উপর ভিত্তি করে পুরো তত্ত্বটাকে মানতে সে নারাজ। আমি বুঝতে পারি শুধু বাসর রাত নয় তাকে জীবনের আরো অনেক রাতের গল্প শোনাতে হবে।

আমি বলস্নাম, বন্ধু, দামী দোকানে মেয়েদের যে অনত্দর্বাস বিক্রি হয়, তার মূল্য জানো? তোমার মাথার ক্যাপ থেকে পায়ের মোজা পর্যনত্দ যত সুতা আছে সবকিছুর মূল্য দিয়েও সেসব খন্ড বস্ত্র কিনতে পারবে না। ও সায় দেয়, হতেই পারে। "তা এত মূল্যের অনত্দর্বাস পড়ার পেছনে অনুপ্রেরণাটা কি?"। আতিফ লা-জবাব। উত্তর দেবেই বা কি করে। নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী শিল্পের বাইরে ও কখনও হাত বাড়ায় নি। ও বরং আমাকেই পাল্টা প্রশ্ন করে, তুমিই বলো, মতলব কি? আমি বলস্নাম, অনুপ্রেরণা প্রেমিকের মুগ্ধ দৃষ্টি। "তোমার সম্পদ কত দামী বস্ত্র খন্ডে ঢাকা, তা থেকেই বুঝা যাবে সে সম্পদ কত মূল্যবান"। পাটের ছিঁকার মধ্যে হীরকখন্ড থাকে না, থাকে মখমলের ঝুলিতে। আর বস্ত্রখন্ড দিয়ে ঢাকাঢাকি যে জীবদ্দশায় হয় তা নয়। যত দামী গিলাফে ঢাকা থাকবে মাজার তত বেশি আকুল হবে ভক্ত।

লজ্জা নিবারণটাই তাহলে পোষাকের একমাত্র কর্ম নয়, একথা পাঠকরা এখন কিছুটা মানবেন আশা করছি। তবে আগেই বলেছি পোষাক পরা নয় খুলে ফেলাই ছিলো আমার রচনার বিষয়।

অনেক মানুষই আর সব জীবের মত পোষাকহীন জীবনের পক্ষে। এসব উটকো আবরণ ও আভরণ ত্যাগ করে তারা মিশে যেতে চায় প্রকৃতির সাথে। তাদের বক্তব্য সৃষ্টিকর্তা এই সুন্দর শরীর দিয়েছেন আর আর মানুষ তৈরি করেছে কুৎসিত পোষাক। ঈশ্বরের মহান সৃষ্টিকে তারা মানুষের তৈরি বস্ত্রে ঢাকতে নারাজ। কারা এরা? নিন্দুকরা তাদের নগ্নবাদী বললেও নিজেদের তারা পরিচয় দেয় প্রকৃতিবাদী বলে। তবে রাসত্দার পাগলটির মত তারা তো আর নিগৃহীত হওয়ার সাহস দেখাতে পারেন না, তাদের তাই রয়েছে সমমনাদের ক্লাব। ব্রিটেনের কথাই ধরি। দশ লাখ লোক আছেন প্রকৃতিবাদী আর তাদের মোটমাট 150 ক্লাব আছে। পথ অবশ্য দেখিয়েছে ফ্রেঞ্চ আর জার্মানরা। আজকাল এমন বৃটিশ প্রকৃতিবাদীরা উদোম গায়ে সাধারণ টিভি-চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানেও আসছেন। সেই সুবাদে তাদের কিছু কথা জানলাম সমপ্রতি।

বছর পঞ্চাশ বয়সের একজোড়া দম্পতি আছেন। তারাই প্রকৃতিবাদীর উদাহরণ হিসেবে মিডিয়ার প্রিয়। কেন তারা কাপড় ছাড়াই থাকতে ভালবাসেন সে জবাব শোনা যাক। তারা বলছেন, "আমরা শুধু কাপড়টাই ছাড়ি না। সেইসাথে ছাড়ি একটা অদৃশ্য ত্বক, আমাদের মনের যত দ্বিধা, সংশয় আর উদ্বিগ্নতা"। মনোবিজ্ঞানীরাও একমত। এক মনোবিজ্ঞানী বলছেন, "কাপড় ছাড়ার মাধ্যমে আমরা জীবন ও পৃথিবীর নানা ছলনাকেও ছুঁড়ে ফেলি। ছাড়ি যে পোষাক শক্তির প্রকাশক, শ্রেণী চরিত্রের প্রকাশক। স্কুলে সব ছাত্র-ছাত্রীদের যে একরকম পোষাক পড়ানো হয় তার সাথে এই প্রকৃতিবাদের দর্শনের মৌল পার্থক্য নেই। সবাইকে সমান দেখতে চাওয়াটাই উদ্দেশ্য"।

তবে শীতের দেশে উদোম গায়ে রৌদ্রস্পর্শ পাওয়াটাকেও অনেকে দেখছেন বাড়তি সুযোগ হিসেবে। এরকম দেশে নানারকম ক্যান্সার হয়। সূর্যের আলো থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি সেৰেত্রে উপকারী। সাধারণ মানুষ যতটা প্রয়োজন ততটা সূর্যালোক পায় না। অফিস আর নিরাপদ বাড়ির কৃত্রিম আলো আর এয়ারকন্ডিশনের হাওয়ায় তাদের বসবাস। ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মাঝারি পরিমাণের সূর্যালোক আর মুক্ত বাতাস খুবই দরকার। তবে এ যুক্তিতেই অনেকে কাপড় ছাড়তে উৎসাহী হয়ে উঠবেন তা ভাবার কোনো কারণ নেই। 25 বছর আগে স্পেনে একটিও প্রকৃতিবাদী সৈকত ছিল না। এখন সেরকম সৈকতের সংখ্যা সেখানে 700। মাত্র 25 বছরে, অর্থাৎ এক প্রজন্মে এতটা বদল, অনেকই মনে হয়।

প্রকৃতিবাদীরা কাপড় ছাড়ার পক্ষে নানা সাফাই দিয়ে যাচ্ছেন। তার একটি হলো, মানুষ অনেকটা সময়ই বস্ত্রহীন হয়ে থাকে। নিজের একানত্দ সময়ে, সঙ্গীর সাথে, বাথরম্নমে। আর সে সময়গুলোই যে মানুষের ভাবনাহীন আনন্দের সময় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকাকালে নিজ অভিজ্ঞতায় জেনেছি। লাইন দেয়া বাথরম্নম থাকে এরকম হল-হোস্টেলে। সেখানে ঢুকে দরজা লাগানোর পর মুখে কথা ফুটে না এরকম বন্ধুদের গলাও শুনেছি দরাজ হয়ে যেতে। কত সুরে কত গান। আনন্দ কণ্ঠ দিয়ে ঠিকরে বেরোয়।

পাঠকদের মধ্যে এরকম কেউ আছেন নাকি? বাথরম্নমে ঢুকলেই যিনি সঙ্গীতশিল্পী হয়ে উঠেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০০৬ ভোর ৬:৩৩
৩০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×