somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'নামা শালাকে টেনে নামা' অথবা সূর্যের সঙ্গে শত্রুতা

২৯ শে জুন, ২০০৬ ভোর ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরশ্রীকাতরতা শব্দটি নাকি শুধু বাংলা ভাষাতেই আছে। বাঙালি পুরুষ নাকি পরস্ত্রীকাতরও। কার বউয়ের বয়স কম, রান্নার সাথে গানটাও ভালো করে সে আলোচনায় নাকি বাঙালি পুরুষের জুড়ি নেই। অন্য দেশে অন্য ভাষায় এরকম শব্দ না থাকুক আচরণ তো আছে নিশ্চয়ই। বাঙালি তো জাতিতে সংকর।

অস্ট্রেলিয়াতে একটি কথা আছে 'Tall Poppy Syndrome'। অজিরা গর্বের সাথে তাদের এই জাতীয় অভ্যাসের কথা বলে। বিভিন্ন দাগী আসামীর মানসিক চারিত্র নিয়ে গড়ে উঠা দেশ। অন্যের ভালো তারা বেশি সইতে পারে না। আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় গেছি তখন কাইলি মিনোগের গান গেয়ে বিশ্বজয় করছে। অজিরাও তাকে নিয়ে নাচছে। কাইলি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে ইউরোপে আস্তানা গাড়লো আরো খ্যাতি ও অর্থের জন্য। কিন্তু জাতির পুরনো অভ্যাস, তারা সইতে পারলো না। মিডিয়ারও মনে হলো কাইলি-কে অনেক উপরে তোলা হয়ে গেছে, এখন ফেলে দিতে হবে। শুরু হলো মিডিয়ায় কুৎসা রটানো। একজন গায়িকা তো আর চার্চের সিস্টার নয়। তার অনেক কেচ্ছা-কাহিনী থাকতেই পারে। পাপারাজ্জিরা পেছনে লাগলে কিনা করতে পারে। কাইলি এখনও পুরোদমে ইউরোপে গান গেয়ে যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতে কেউ ভুলেও তার নাম মুখে আনে না। মিডিয়ার কল্যাণে সে এমনই ঘৃণিত।

বাঙালিদেরও তেমন অভ্যাস থাকতেই পারে। বাঙালিদের দোযখে নাকি দারোয়ান লাগবে না। দেয়াল বেয়ে যখন একজন উঠে বের হয়ে যেতে চাইবে তখন নাকি নীচে থেকে অন্য একজন টেনে ধরবে। সুতরাং আলাদা পাহারাদারের দরকার নেই। একটা মন্ত্রই যথেষ্ট, ...নামা শালাকে টেনে নামা...।

অজি বা বাঙালিরাই যে এরকম তা না। সারা বিশ্বেই সফল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টেনে নামিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। মাইক্রোসফট যখন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের বদৌলতে একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়ালো তখন বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো। মামলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ভাঙার জন্য আদালত ও প্রেসিডেন্ট পরামর্শ দিয়েছেন। মাইক্রোসফটের সফলতায় খুব কম লোকই খুশি হয়েছেন বা শেষ পর্যন্ত খুশি থেকেছেন। বেশিরভাগেরই পরামর্শ ছিল 'cut it down to size'। তো এই সাইজ করে দেয়াটা বাংলাদেশেও হয়। সাইজের নানা রকম আছে। পাড়ার মাসত্দানরা সাইজ করে এলাকার সফল ব্যবসায়ীকে। আর মিডিয়ার মাসত্দানরা করেন প্রতিষ্ঠিত লেখক-গায়ক-নায়ককে। কেউ ক্ষুর হাতে, কেউ কলম বা মাইক্রোফোন হাতে।

কিন্তু এই যে মানুষকে টেনে নামানো এটি এখন রীতিমত শিল্প। আমাদের পত্রিকাগুলো লোক নিয়োগ করে যাদের প্রধান কাজ হলো পৃথিবীর সমস্যা কোথায় এ নিয়ে রচনা লেখা। যারা এই টেনে নামানোর চর্চা করেন তারা খুঁজেন কোথায় নোংরা আর বিশ্রী জিনিসগুলো আছে। তারপর জনসম্মুখে সেগুলো টেনে এনে আলোচনা। যাকে বলে নোংরা চাদর রাসত্দায় ধোলাই করা। তারা শুধু ধনী, ক্ষমতাশালী, সফল মানুষের পেছনে লাগে তা নয়। তারা লাগে যেকোনো কিছুর বা যেকোনো মানুষের পিছে। অনেকসময় সফলতাকেও তাদের সফলতা মনে হয় না। তারা বলে, ভালো তবে ততোটা ভালো না। রাজ্যের পরশ্রীকাতর আর নিন্দুকদের অতি সুস্বাদু ভোজ দেয়ার পর রাজা নিন্দা করতে বলেছিলেন। অনেকেই এত ভালোর নিন্দা করতে পারছিলো না। তবে চতুর যে সে পেরেছিলো, সে রাজাকে বললো, "ওতো ভালো, ভালো না"। পরশ্রীকাতরতা আর নিন্দা এখন এরকমই শিল্প।

আবার অনেক ক্ষেত্রে যে যা করে না তার সমালোচনা করে তাকে টেনে নামানো হয়। কারণ একই। বেড়ে গেছে।কেউ হয়তো ভালো স্পিন বোলার, তার ক্ষেত্রে তাদের সমালোচনা হয়, ও মুর্খ, এক বাক্যও ইংরেজি বলতে পারে না। কোথায় ক্রিকেট খেলা আর কোথায় ভাষা জ্ঞান। বাঙালি আবার দুদিকেই সমান কাটে। এজন্য প্রবাদেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে:

"অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে ভেঙে যাবে
অতি ছোট হয়ো না, ছাগলে খেয়ে নেবে"।

এই সিদ্ধান্ত নেয়া নিশ্চয়ই কঠিন ছাগলকে মাথা দেবেন নাকি ঝড়কে।

পরশ্রীকাতরতা আবার অনেক সময় নিজের বাজার তৈরি করে। সাইফুর রহমানকে হটিয়ে ইলিয়াস আলী। মাসত্দানিতে দ্রুত নাম করতে হলে প্রথমে পাড়ার বড় মাস্তানের পেটে ক্ষুর চালাতে হয়। সুনামটা তাহলে তাড়াতাড়ি ফাটে। উঠতি নায়িকারা যেমন নাম্বার ওয়ান নায়কের নাম ধরে চিত্রালীর পাতায় ঘোষণা দেন, "কোটি টাকা দিলেও আমি অমুক নায়কের সাথে ছবি করবো না"। আসলে হয়তো পপুলার নায়কটাই উঠতি কারো সাথে ছবি করে নিজের বাজার ডুবাতে চায়নি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আওয়াজ দেয়, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় কই, সব তো রাজনীতি আর চাঁদাবাজি"। বড়, বিখ্যাত আর খ্যাতনামার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করতে সমস্যা হতে পারে শত্রুতা করতে অসুবিধা কোথায়? তসলিমা নাসরিনকে বিয়ের প্রসত্দাব দিয়েই খ্যাত হন বুলবুলি মাওলানা। আমাদের বড় কবি কবিতা করে এই প্রবণতার কথা বলেছিলেন (হুবহু মনে নেই হয়তো):

"পেঁচা রাষ্ট্র করে দেয় পেলে কোন ছুঁতা
জাননা সূর্য্যের সঙ্গে আমার শত্রুতা"।

একদা সূর্যের সঙ্গে শত্রুতা ঘোষণা করেছিলো, সেজন্য দিনে বের হয় না, এ ছাড়া আর কি কারণে পেঁচাকে মনে রাখবে অন্য পাখ-পাখালি। সূর্য খুব বেশি হয় না, এক সৌরজগতে একটাই, পেঁচা হয় অসংখ্য। তবে সৌভাগ্যের কথা দু'জনের কার কাজটি শুভ আর কোনটি অশুভ তা পেঁচার অমঙ্গল চিৎকার দিয়ে কেউ বিচার করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০০৬ ভোর ৫:৩৫
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×