somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছায়ার আড়াল, অথবা অভিমানী বৃষ্টির ছেলে - ২ (গল্প)

১৪ ই মে, ২০১১ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব এখানে

রুপক চলে যাবার পরদিনই আমি ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। আসলে আমি যেতে চাইনি, কি যেন আমাকে টেনে নিয়ে গেল। মনে হচ্ছিল যেতেই হবে। ভাবতে ভাবতেই ওদের বাড়ির দরজায় পা দিয়ে ফেলেছিলাম। ওর রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন ওর বাবা’ই। একদিনেই ভেঙ্গে পড়েছেন অসম্ভব। আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। আমি আবারো সেই ঘরের ভেতরে... শুধু রুপক নেই। বাকি সব কিছু যেমন ছিল তেমনি আছে। সাজানো, ছিমছাম, পরিপাটি। কি যেন ভাবতে ভাবতে আমি রুপকের ডায়েরীটা তুলে নিয়েছিলাম। খুলে পড়াও শুরু করেছিলাম।

২ জানুয়ারী
আসলেই কি যা দেখছি ওগুলো ঠিক নাকি আমার মস্তিস্কের অতিকল্পনা? বিশ্বাস করাও শক্ত। কাউকে বলতেও পারছিনা।

৫ জানুয়ারী
আমি নিশ্চিত, কিছু একটা ঘটছে আমার সাথে। রোদের ভেতর অত্তগুলো ছায়া আমার চারপাশে কি করছিল? রাস্তা তো ফাকাই ছিল। নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছি?

৯ জানুয়ারী
আমি এখন জানি ওই ছায়াগুলো কি! ওরা কেন এসেছে... কিন্তু ওরা যা চায় সেটা তো আমার কাছে নেই!

১০ জানুয়ারী
আজ ছায়াগুলোর সাথে একটুকরো মেঘও ছিল। পুরোটা সময় জুড়েই। বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেব নাকি?

১২ জানুয়ারী
মা বলেছিল, বৃষ্টির ভেতর নাকি তাকে খুজে পাবো আমি। যখনই বৃষ্টি হবে, মা নাকি আমাকে দেখতে আসবে। ভেবেছিলাম মা বুঝি প্রবোধ দিয়েছে আমাকে। কিন্তু না! মা সত্যি বলেছিল!

১৪ জানুয়ারী
এখন আমি জানি, আমি কি! আমি বৃষ্টির ছেলে, বৃষ্টি আমার মা! তাই যখনই আমার মন খারাপ হয়, তখনই বৃষ্টি নামে। মা আমায় দেখতে আসে। আমি মায়ের হাত ধরে হাটি। মন যখন ভাল থাকে তখন কেন মা আসেনা?

১৭ জানুয়ারী
রিআর সাথে ঝগড়া হল। মা’র পর সারা জীবনে আমার একটাই ভাল বন্ধু ছিল, একজনই ছিল যে আমাকে বুঝত! আসলে আমি ওভাবে বলতে চাইনি। ওই তো আমাকে পাগল বলল। আমার মা’কে অপমান করল। আমি ওকে কখনই ক্ষমা করব না।

২০ জানুয়ারী
ডায়েরী লেখা ছেড়ে দিতে হবে দেখছি। বাবা আজ চুরি করে আমার ডায়েরী পড়ে ফেলেছে। বাবার ধারণা আমার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে... আমাকে নিয়ে কাল সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবে বলল। যাব নাকি? ভাবছি যাব। মন বলছে যেতে হবে।


২১ জানুয়ারী
ডক্টর মানুষটা ভালই। আর যাই হোক সবার মত আমাকে পাগল ঠাউরে বসেনি। আমার কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনেছে। বিশ্বাস করেছে বলে মনে হয়না। অবশ্য বিশ্বাস করা শক্ত। আমার সাথে যা ঘটছে সেটা তো আর সবার সাথে ঘটেনা!

২৫ জানুয়ারী
আজ রিআ ডেকেছিল। গিয়েছিলাম। অনেক কথা বলল ও। ক্ষমা চাইল। কিন্তু আমি তো বাড়াবাড়ি রকম একগুয়ে। এত সহজে তো আমি ক্ষমা করি না। ওকেও করব না। সেদিন বিকেলের স্নিগ্ধতম হাসিটা তাকে উপহার দিয়েছিলাম আমি। তারপর ঘুরে দাড়িয়েছিলাম, ফেরার সময় হয়ে গ্যাছে। আমার শরীর জুড়ে বৃষ্টি খেলা করতে শুরু করেছে ততক্ষণে... আমি নিষ্ঠুর হয়ে গ্যাছি! আশ্চর্য্য লাগছে, ওর সাথে এত নিষ্ঠুর আচরণ আমি কিভাবে করছি!


আমি আর পড়তে পারছিলাম না! রোগটা দেখি ওর মধ্যে বেশ ভালভাবেই শেকড় গেড়েছিল। আমিই বুঝতে পারিনি কিছু। আমার ই ব্যার্থতা... ডায়েরীটা বন্ধ করে বাইরে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা নেমেছে। চলে এসেছিলাম আমি রুপকদের ওখান থেকে।


তারপর কেটে গেল বেশ কিছুদিন। কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাত একরাতে দেখলাম স্বপ্নটা...

জলে ভেজা কাদা জড়ানো পায়ে সবুজে ছাওয়া পথে ছুটে চলেছে একটা ছেলে। তার চোখের তারায় জোনাকের আলোর মত ঝিকমিক করছে স্বাধীন আকাশের প্রতিচ্ছবি। মাঠ পেরিয়ে, ফসলের ক্ষেত পেরিয়ে পথের আরো গভীরে ছুটে চলছিল সে। শেষ বিকেলের এক মুঠো আলোকে সঙ্গী করে সে ছুটে চলছিল, আশ্চর্য, তার পথচলায় কোন ক্লান্তি ছিলনা! সূর্য্য হেলে পড়েছে। ছুটতে ছুটতে দিগন্তের দিকে ফিরে চাইল ছেলেটা, হঠাত থেমে দাঁড়াল। ঠোটের কোণে ফুটেছে এক টুকরো অপার্থিব হাসি...


ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়ি দেখলাম চারটা বত্রিশ। বাকি রাতে আর ভাল ঘুম এলনা।

পরের দিন থেকে প্রতি রাতেই দেখতে থাকলাম স্বপ্নটা। বারে বারে। একই স্বপ্ন, একই সময়ে। কেন? এটা তো কাকতালীয় হতে পারেনা! অনেক ব্যখ্যা দেয়া যেতে পারে, কিন্তু কোন ব্যখ্যাই আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছিল না! তবে এটা কি কোন ধরণের সংকেত? কিসের? কি বুঝব আমি এখান থেকে? রোজ রাতে একই স্বপ্ন দেখছিলাম আমি। ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুমাতে পারছিলাম না অজানা আশঙ্কায়। আচ্ছা এটা কি টেলিপ্যাথি? রুপক কি আমাকে কিছু বলতে চায়? তাই যদি হবে তাহলে সে নিজে বলল না কেন? চলে গেল কেন? উফফ! আমি আর ভাবতেও পারছি না।

আজ সকাল থেকে চেম্বারে বসে আছি। ভাবার চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুই ভাবতে পারছি না। এভাবে আর কতদিন? আর কত রাত আমি এভাবে স্বপ্ন দেখব? নিজের ভেতরেই ভয় দানা বেধে উঠছে। এভাবে আর কিছুদিন চললে আমার নিজেরই সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে।

লাঞ্চ আওয়ার পার হয়ে যাচ্ছে। আজ রোগী নেই তেমন। লাঞ্চ করতে যাবার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠতেই জমে গেলাম। আমার চেম্বারের দরজা দিয়ে শান্ত পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে একজন। রুপক!!!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। রুপক কাছে এসে চেয়ার টেনে বসল।
-আপনি!
~কেমন আছেন ডক্টর?
-কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি?
~কোথায় আবার! বৃষ্টির দেশে! আমি এখন বৃষ্টি নামাতে শিখে গ্যাছি!

রুপক হাসছে। ওর হাসিটা স্নিগতায় ভরা না। অন্যরকম। এটা আমার চেনা সেই রুপক না! অন্য রুপক!

রুপক উঠে এসে আমার পাশে দাড়াল। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল- ডক্টর, বৃষ্টি নামানো শিখবেন? আমি কিন্তু চাইলেই আপনাকে শিখিয়ে দিতে পারি...

নাহ! ওইতো রুপক চেয়ারে বসে আছে। হাসছে। ওর হাসিটা স্নিগতায় ভরা না। অন্যরকম... আমার মাথার ভেতরটা দুলে উঠল। কেমন যেন বোধ হচ্ছে। চারদিকে অনেক শব্দ... চিৎকার, মানুষের কথা। এখন বোধহয় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ও শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার সামনে তো রুপক বসে আছে। আমার সামনে পেছনে, সব জায়গায় রুপক। আস্তে আস্তে তাদের সংখ্যা বাড়ছে... আরে! এত রুপক আসল কোত্থেকে......?



(শেষ?)


ছবিঃ ডেভিয়ান্ট আর্ট থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×