somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসুন শর্তহীনভাবে

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করেই মিষ্টি মেয়েটি কেমন জেদী হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করছে। মায়ের ভাষায় মেয়েটা হয়ে উঠছে একদম বেয়াদব! অথচ মেয়ের এই রকম ব্যবহার কিন্তু বেশ কিছু বার্তা বহন করছে। যা মায়ের চোখ একদম এড়িয়ে গেছে। এরকমই হয়। সন্তানের আচরণগুলো অনেক সময় আমরা বাবা-মা হওয়া স্বত্বেও বুঝতে পারি না। সন্তানের এমন দূর্ব্যবহার থেকে যে মেসেজগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো অনেকটা এই রকমঃ
• আপনার সন্তানটি বড় হচ্ছে।
• ও আরেকটু স্বাধীনতা চায়।
• বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত সময় বা সংগ সে পাচ্ছে না।
• একঘেঁয়েমি বা নিঃসঙ্গতায় ভুগছে।
• বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছে।
• বাবা-মায়ের সাথে কমুনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়েছে।
• হয়ত সে কোন কারণে খুব আবেগী হয়ে পড়েছে (ভয় বা রাগের কারণে)
• অসুস্থতার কারণে
• ক্লান্ত বা ক্ষুধার্ত হলে।
• অনেক সময় দেরিতে মানসিক বিকাশ হলেও এমনটা হয়ে থাকে।

এ সব কারণ ছাড়াও শিশুরা দুর্ব্যবহার করতে শেখে বড়দের দেখে। যখনি একটি শিশু বড়দেরকে বকা দিতে বা অন্যের সাথে দূর্ব্যবহার করতে দেখে, তখন তাদের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রভাবগুলো দেখা যায় —
• শিশুরা বকা দিতে শেখে
• অন্যকে আঘাত করতে শেখে।
• কীভাবে ত্রাস সৃষ্টি করতে হয় বা অন্যের মনে ভয় তৈরি করতে হয় তা শেখে।
• বড়দের প্রতি অশ্রদ্ধা তৈরি হয়ে যায়।
• শিশুরা মনে করে এমন ব্যবহার করলে ক্ষমতা বা শক্তি প্রকাশ পায়।

তাই সন্তানের এ ধরনের অনাকাঙ্খিত আচরণের জন্য, তাকে দোষারোপ না করে বাবা-মায়ের উচিত নিজের দিকে তাকানো। কেননা, সন্তানের আচরণগুলো প্রকৃতপক্ষে বাবা-মায়ের আচরণেরই একটা অংশ। অনেক সময় দেখা যায়, কোন কারণে বিরক্ত হলে সন্তানকে অভিভাবকেরা দোষারোপ করে থাকেন, ‘’তোমাকে অসহ্য লাগছে।‘’ অথবা এমনও বলে থাকেন ‘’কেন তুমি জন্মালে?’’ অথচ শিশুটি বুঝতেই পারছে না তার অপরাধটি কোথায়। এধরনের বাক্য শিশুর মনে শুধু অপরাধবোধই সৃষ্টি করে না, পরবর্তীতে তার মধ্যে আত্নহত্যা প্রবনতাও তৈরি করতে পারে। নিজেকে ভালবাসতে ওরা শেখে না।

এসব ক্ষেত্রে যা করা যাবে ও যাবে নাঃ

• ‘’কেন’’ দিয়ে প্রশ্ন না করে ‘’কীভাবে’’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। যেমনঃ তোমার জামাটা ময়লা হল কেন? কেন তুমি খেলনাটা ভেঙ্গেছ? কেন তুমি ওর সাথে মারামারি করলে? ‘কেন’ শব্দটি দ্বারা প্রশ্ন বিতর্কের জন্ম দেয়। শিশুও আরো ‘’কেন’ দিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তাই ‘’কেন’’ শব্দটি এড়িয়ে প্রশ্ন গুলো এভাবে করা যেতে পারে, তোমার জামাটা ময়লা হল কীভাবে? খেলনাটা কীভাবে ভেঙ্গে গেল? তোমাদের মধ্যে মারামারিটা কীভাবে শুরু হল? ‘’কীভাবে’’ দিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিশু ঘটনাটি বর্ণনা করতে পারে। আর শান্তভাবে শিশুকে তার ভুলগুলো সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা যায়।

• সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। প্রতিদিন রুটিন করে একটা নির্দিষ্ট সময় সন্তানকে দিন, যা তার কাছে অর্থবহ হয়ে উঠবে। সন্তান যেন বুঝতে পারে এই সময়টা বাবা-মা শুধু আমাকেই দিচ্ছে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে সবাই মিলে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। সন্তানকে সময় দেবার ধারণাটি অনেক বাবা-মায়ের কাছেই স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে গৃহিণী মায়েদের কাছে। তাঁরা সন্তানের জন্য খাবার তৈরি করছেন, তাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন, আসছেন, পড়া তৈরি করে দিচ্ছেন। সন্তানের পেছনে বেশির ভাগ সময় ব্যয় করলেও সন্তানের কাছে অর্থবহ হবে, এমন সময়টা তাঁরা দেন না। ফলে সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্কও গড়ে উঠে না। শুধু মা-ই নন, বাবারও উচিত সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেওয়া।

• অন্য কারো সাথে সন্তানকে তুলনা করবেন না। আপনার সন্তানটি যেমনই হোক, তাকে সেভাবে প্রথমে মেনে নিন। তারপরে ওর যে আচরণটি পরিবর্তন করতে চান সেটি নির্ধারণ করুন। মনে রাখতে হবে, একসাথে কয়েকটি আচরণ পরিবর্তন করার পদক্ষেপ কখনোই নেওয়া যাবে না। একটির পরে একটি আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। কোন কৌশল বা মিথ্যে কথা বলে সন্তানের আচরণ পরিবর্তন করা যাবে না। আর সেই সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করে নিতে হবে অনেক খানি।

• সব থেকে বড় যে কথাটি মনে রাখতে হবে, সন্তানটিকে ভালবাসুন নিঃশর্তভাবে। তার উপর আস্থা রাখুন। তাকে বিশ্বাস করুন সম্পূর্ণভাবে। তাহলেই আপনার সন্তান সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে।

২২ আগস্ট, ২০১১
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×