somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যে মা

১৬ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোনা আমার,
তুই এখনো অনেক ছোট। এখনো বসতে শিখিস নি। সেই তোকেই লিখতে বসেছি।তুই কিছুই বুঝবি না এখন তবুও তোকে বলছি। কার কাকে বলব আমি? আমার কথা কে শুনবে এ দুনিয়ায়? এই যে, এ সংসারে আমি এখনো আছি সে শুধু তুই আছিস বলেই। শুধু তোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি মুখ বুজে সব সয়ে যাচ্ছি। তোর বাবা টাকার জন্য আমাকে যতই মারুক, কাটু্‌ক, চোখ গেলে দিক, এমন কি মেরে ফেলুক, আমাকে এসব মেনে নিতে হবে। কারণ, এখন যে তুই আমার কোলে চলে এসেছিস! অবশ্য তুই আমার কোলে না এলেও যে আমি এ সংসার ছেড়ে চলে যেতে পারতাম না নয়। তাতে নাকি লোকে আমাকেই ভ্রষ্টা বলবে। আচ্ছা, তুইই বল, লোকের কথা আমি কেন শুনতে যাব? তারা কি আমাকে খাওয়ায় পরায় না আমার কষ্টের ভাগিদার হয়? তবুও তাদের কথাকেই আমার আমল দিয়ে চলতে হয়। লোকের কথা বাদ দিলাম। তোর বাবার কথাই ধর। তোর বাবাই তো আমার খাওয়া পরার খরচ দেয় না। উলটো তার খরচ আমাকে যোগাতে হয়। ছোট একটা চাকরি করে ক’টা টাকাই বা পাই বল? সব তোর বাবার হাতে তুলে দিতে হয়। বাবার বাড়ি থেকেও এনে দিতে হয়। নাহলে কপালে লাথি। আমাকে এসব সহ্য করে যেতে হয়, যেতে হবে। এটাই নিয়ম। কারণ আমি যে মা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণটা কী সেটা আমি জানি। আমি একটা বোঝা। তোর বাবাকে ছেড়ে যদি চলে যাই তবে আমার বাবা, মা, ভাইয়েরাও আমাকে জায়গা দেবে না। এমন নয় তারা অভাবী, তবুও দেবে না। না হয় নাই দিল জায়গা, তুই কি ভাবিস আমি একা থাকতে পারতাম না? কিন্তু তাতে কথা উঠবে আমার চারিত্রিক শুদ্ধতা নিয়ে। আচ্ছা, আমি যদি তোর বাবাকে ছেড়ে চলে আসি, তুইও কি ওদের মতই ভাববি, ভালো মেয়েরা স্বামীকে ছেড়ে যায় না? তুইও কি বড় হলে ঐ লম্পট লোকটার পরিচয় নিয়েই চলতে চাইবি, আমাকে বাদ দিয়ে? তুইও কি আমার কষ্টটা বুঝবি না? তুইও কি তোর দাদি আর ফুফুর মত আমার দোষ ধরার জন্যই তৈরি থাকবি? অবশ্য আমি তোর দাদি আর ফুফুকে দোষ দিই না। তারাও তো কারো না কারো মা! তবুও ওরা কত নিষ্ঠুর, ভাবতে গেলে অবাক লাগে।

জানিস,সেদিন পাশের গলির একটা বাসা থেকে এক গৃহিনীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কারণটা হল, ঐ মহিলার গরম খুন্তি দগদগে ঘা বানিয়ে দিয়েছে কাজের মেয়ের পিঠে। এমন খবর পত্রিকাতেও প্রায় দেখি। আর যারা এভাবে কাজের লোকদের অত্যাচার করে তাদের শাপ শাপান্ত করে চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ি। কিন্তু ঐ পাশের গলির নারীটি আমাকে নতুন করে ভাবালো। একটু আধটু চেনা পরিচয় তো ছিল তার সাথে। সে সুবাদেই জানি, তারও একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। যে মায়ের এত মমতা, এত দরদ, এত ভালবাসা, এত সহ্যক্ষমতা, সেও এত নির্মম হয়ে গেল কীভাবে তুই ভাবতে পারিস? এই মহিলাটি বা তোর দাদি বা ফুপুরা এত নির্ষ্ঠুর কেন, তার উত্তরটা আমি জানি। এসবের পেছনে কলকাঠি কে নাড়ে সেটাও আমি জানি, কিন্তু এখন আমি তোকে বলব না। তুই নিজে এর উত্তর খুঁজে বের করে কী করিস আমি দেখতে চাই।

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করেও তুই কী করবি, তার উত্তরটাও হয়ত আমি জানি। মা দিবসে তুইও আমাকে অন্যদের মত সুন্দর সুন্দর কার্ড, শাড়ি, উপহার দিবি। বছরে একদিন বলবি, ‘’মোম, আললোওওওভিউ!’’ কিন্তু পারবি কি আমার চোখের জল মুছে দিতে? পারবি কি তোর বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে? পারবি ঐ কুৎসা রটানো বাজে লোকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে? তা যদি না পারিস, তবে তুই আমার কেমন ছেলেরে? কেন আমি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে এত অন্যায় মুখ বুজে নিরবে সয়ে যাবো? তার চেয়ে এই কি ভাল নয়, তোর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে বাকিটুকু নিজে পান করে নেওয়া? না হয়, আমাকে ‘’মা’’ ডেকে আমার দুঃখের ভার আর না বাড়ালি।

১৬ মে,২০১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×