somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিজ কানে শুনেছেন শেখ হাসিনাঃ ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাক্ষাত্কারে একাত্তরের বন্দিজীবন

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ২৭ মার্চ ’৭১ শেখ হাসিনা নিজ কানে শুনেছেন। আণবিক শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ড. মোজাম্মেল হোসেনের মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ঝিলপাড়ের বাড়িতে থেকে শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়া একসঙ্গে ওই ঘোষণা শুনেছিলেন। রেডিওতে প্রচারিত ঘোষণাটি শুনে সেদিন উজ্জীবিত হয়েছিলেন তারা।

১৯৯১ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা আণবিক শক্তি কমিশন অফিসে আমাকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. ওয়াজেদ মিয়া একথা জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা একাত্তরের বন্দিশিবিরে কীভাবে কাটিয়েছিলেন সে কাহিনী জানার জন্য ওই সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। ড. ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনার বন্দিশিবিরের জীবন ছাড়াও সেদিন তার লেখা ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ শীর্ষক প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায়ও আমাকে পড়ে শুনিয়েছিলেন। ফলে সাক্ষাত্কার সম্পন্ন করতে আমার বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছিল। এজন্য বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমাকে ড. ওয়াজেদ মিয়ার অফিসে কাটাতে হয়। অবশ্য মধ্যাহ্নের খাবার এবং কিছুক্ষণ পর পর চা-নাশতায় আপ্যায়ন করতে ভোলেননি ড. ওয়াজেদ মিয়া। পরে ওই পাণ্ডুলিপিটিই বই আকারে বের হয়।

একাত্তরে শেখ হাসিনার বন্দিজীবন নিয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়ার ওই সাক্ষাত্কারটি ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলার বিজয় দিবস সংখ্যায় ‘যেন এক দুঃস্বপ্ন’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ড. ওয়াজেদ মিয়ার এই সাক্ষাত্কার নেয়ার একটি নেপথ্য কাহিনী রয়েছে। দৈনিক বাংলার বিজয় দিবস সংখ্যার জন্য সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার একাত্তরের বন্দিজীবন নিয়ে দুটি নিবন্ধ লেখার সিদ্ধান্ত হয়। খালেদা জিয়ার বন্দিজীবন সম্পর্কে আমাকে এবং শেখ হাসিনার বন্দিজীবন সম্পর্কে লেখার দায়িত্ব দেয়া হয় দৈনিক বাংলার তত্কালীন সিনিয়র রিপোর্টার শওকত আনোয়ারকে। বার্তা সম্পাদক ফওজুল করিম (তারা ভাই) আমাদের লেখার জন্য ৭ দিন সময় দিয়েছিলেন। আমি যথারীতি ৭ দিনের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার একাত্তরের বন্দিজীবন লেখাটি তৈরি করে জমা দেই। কিন্তু শওকত ভাই দশদিন পর অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে ওই দায়িত্বটিও আমার ওপর বর্তায়।

চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর তেজস্ক্রিয় গুঁড়ো দুধ নিয়ে বাংলাদেশে বেশ হইচই পড়েছিল। চট্টগ্রামে তেজস্ক্রিয় গুঁড়ো দুধ ধরা পড়েছিল। আণবিক শক্তি কমিশনে এই দুধ পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই দুধের ওপর রিপোর্ট করতে গিয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তাই অফিস অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই ড. ওয়াজেদ মিয়ার চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তত্ক্ষণাত্ তাকে ফোন করে শেখ হাসিনার সাক্ষাত্কার নেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার অনুরোধ করি। তিনি বিষয়টি অবহিত হয়ে বললেন, ‘ওইসব ঘটনার সাক্ষী আমি নিজেই। আমিই আপনাকে সবকিছু জানাতে পারব’। ফলে পরদিনই তার কাছে ছুটে যাই এবং শেখ হাসিনার একাত্তরের বন্দিশিবিরের কাহিনী জেনে নিবন্ধ আকারে তা দৈনিক বাংলায় ছাপার জন্য জমা দেই। প্রকাশিত সেই নিবন্ধ এখানে তুলে ধরা হলোঃ

২৫ মার্চের বিভীষিকাময় রাতে শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন সাত মসজিদ রোডের এক বাসায়। এই রাতেই পাক হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ সময় তার মা বেগম মুজিব শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে নিয়ে দেয়াল টপকে পাশের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। শেখ কামাল আগেই ৩২ নম্বর থেকে অন্যত্র পালিয়ে যান।
৭ মার্চের পরই শেখ মুজিব বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন। খাবার টেবিলে বসে একদিন তিনি বাড়ির সবাইকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে মানসিকভাবে তৈরি থাকতেও বলেছিলেন। তখন থেকেই তিনি নিয়ম করেছিলেন দুপুর ও রাতে দু’বেলা সবাই একসঙ্গে খাবেন।

১৮ মার্চের পর পরিস্থিতি যখন আরও জটিল হয়ে ওঠে, তখন তিনি শেখ হাসিনা ও ডক্টর ওয়াজেদকে পৃথক বাসা ভাড়া নিয়ে ৩২ নম্বর থেকে সরে যেতে বলেন। শেখ হাসিনা তখন অন্তঃসত্ত্বা।

ডক্টর ওয়াজেদ এ সময় হাতিরপুলে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন। ঠেলাগাড়ি দিয়ে ওই বাসায় মালামালও নিয়ে আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই বাসায় ওঠেননি শেখ হাসিনা। তারা ৩২ নম্বরেই রয়ে গেলেন। ২১ মার্চের পর শেখ মুজিব ডক্টর ওয়াজেদকে আবারও বাসা ভাড়া নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তোমরা ৩২ নম্বর থেকে সরে যাও। ডক্টর ওয়াজেদ এবার সাতমসজিদ রোডে একটি বাসা ভাড়া নেন।

২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তানি সৈন্যদের হামলার কিছুক্ষণ আগে শেখ হাসিনা চলে আসেন সাত মসজিদ রোডের ওই বাসায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন ছোট বোন শেখ রেহানা এবং শেখ শহীদের ছোট বোন শেখ জেলীকে। ডক্টর ওয়াজেদ এর আধা ঘণ্টা আগে কাজের ছেলে পাগলাকে নিয়ে ওই বাসায় আসেন।

২৫ মার্চ সারাদিন জমজমাট থাকার পর সন্ধ্যা থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করেছিল ৩২ নম্বরের বাড়ি। ততক্ষণে সবাই বুঝে গেছে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু কি হতে যাচ্ছে? কারও কাছেই তা স্পষ্ট ছিল না। রাত সাড়ে দশটায় পরিচিত একজন জরুরি খবর নিয়ে ছুটে আসেন শেখ সাহেবের কাছে। কিন্তু ফটক ছিল তখন বন্ধ। খবর পেয়ে ডক্টর ওয়াজেদ বেরিয়ে আসেন ফটক পর্যন্ত। তারপর তাকে নিয়ে যান শেখ সাহেবের কাছে। ওই ব্যক্তিই জানান পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনার কথা।

এ খবর পেয়েই শেখ সাহেব ডক্টর ওয়াজেদকে শেখ হাসিনাদের নিয়ে তখনি ভাড়া বাসায় চলে যেতে বললেন। ২৭ মার্চে কারফিউর বিরতি পর্যন্ত এ বাসাতেই থাকেন শেখ হাসিনা। কারফিউয়ের বিরতির সুযোগে ২৭ মার্চ সকালে ডক্টর ওয়াজেদ বেরিয়ে পড়েন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশ্য খোঁজখবর নিতে। বেরিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ আগে দেয়াল টপকিয়ে তার বাসায় এসে একটি ছেলে জানায়, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবুও অন্যদের কি অবস্থা তা জানতে ডক্টর ওয়াজেদ ৩২ নম্বরের কাছে যান। পথে এক বাসায় খবর পেলেন বেগম মুজিব তার সাতমসজিদের বাসার দিকে রওনা হয়েছেন। ডক্টর ওয়াজেদ সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসেন সাতমসজিদের বাসায়।

এখানে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে তিনি যোগাযোগ করেন মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় তার বন্ধু ড. মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। আণবিক শক্তি কমিশনে তারা একসঙ্গে চাকরি করতেন। কিন্তু বন্ধুর বাসায় একটি মাত্র কক্ষ খালি ছিল। তাই তারা দুটি ভাগে ভাগ হলেন। শেখ মুজিবের ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকা বেগম মুজিব, শেখ রেহানা, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে নিয়ে চলে যান ওয়ারীতে তার শ্বশুর বাড়িতে। ডক্টর ওয়াজেদ শেখ হাসিনা ও জেলীকে নিয়ে যান মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ঝিলের কাছে বন্ধুর বাসায়। সেদিন ছিল ২৭ মার্চ। বাসায় তারা অবস্থান করছেন। সন্ধ্যায় বন্ধু মোজাম্মেল হোসেন তাকে ডেকে বললেন, রেডিওতে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা শোনা যাচ্ছে। ডক্টর ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনা জিয়ার সেই ঘোষণা নিজ কানে শুনলেন এবং অভিভূত হলেন।

ওই বাসায় শেখ হাসিনা ও ডক্টর ওয়াজেদ মিয়ার পাঁচদিন কেটে যায়। ১ এপ্রিল মোমিনুল হক খোকা ওয়ারী থেকে এসে ডক্টর ওয়াজেদের নামে মালিবাগের একটি বাড়ির উপরতলা ভাড়া নেন। সেখানে বেগম মুজিব, শেখ রেহানা, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও খোকা এসে ওঠেন এবং ডক্টর ওয়াজেদকে খবর দেয়া হয়। ডক্টর ওয়াজেদ শেখ হাসিনা ও জেলীকে নিয়ে ওই বাসায় গিয়ে ওঠেন। শেখ কামালও ওই বাসায় এসে বেগম মুজিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। এভাবে সপ্তাহ খানেক থাকার পর বেগম মুজিব হঠাত্ জানতে পারেন যে, বাড়িওয়ালা তাদের পরিচয় জানতে পেরেছে এবং গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন তাদের সতর্ক করে দিয়ে গেছে। এ কথা জানার পর ডক্টর ওয়াজেদ মগবাজারে প্রধান সড়কের ওপর বেগম বদরুন্নেসার স্বামী আহমদ সাহেবের বাসা ভাড়া নেন। কিছুদিন সবাই ওই বাসায় থাকার পর দেখা গেল পাকবাহিনীর লোকজন সিভিল ড্রেসে সেখানে ঘোরাফেরা করছে। তাই নিরাপদ নয় ভেবে ডক্টর ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনা মগবাজারের ভেতরে একটি বাসা ভাড়া নেন।

এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে শেখ হাসিনার কথা হয়। তারা কোনো এক সুবিধাজনক সময়ে শেখ হাসিনাদের ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। একদিন সন্ধ্যায় শেখ হাসিনাসহ সবাই ঢাকার বাইরে পালিয়ে যাবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় ওইদিন সকালে দেখা গেল পাকবাহিনীর লোকজন বাড়িটি ঘিরে ফেলেছে। জনৈক মেজর হোসেন ও জালাল নামে দুজন অফিসার এসে বলল, শেখ মুজিবের পরিবারকে আমরা গ্রেফতার করতে এসেছি। ডক্টর ওয়াজেদ তাদের কাগজ দেখাতে বললে ওই অফিসার ধমক দিয়ে বলল, দেশে এখন সামরিক আইন। আমরা সেনাবাহিনীর লোক।

আমাদের কাগজ লাগবে না। এখনি যেতে হবে বলে ওই অফিসার ফোন করে আরেকটি আর্মি ইউনিটকে নিয়ে এলো। এরপর কর্ডন করে বেগম মুজিব, শেখ হাসিনাসহ সবাইকে নিয়ে গেল ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাসায়।

বাড়িটি ছিল একতলা। ধানমন্ডি স্কুলের কাছাকাছি। বাড়িতে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। পরিবেশ ছিল দমবন্ধ। আবর্জনায় ভরা। প্রধান দরজাটি ছিল ভাঙা। জানালার কাচও ছিল ভাঙাচোরা। ডক্টর ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনাসহ মুজিব পরিবারের সবাইকে ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে থাকতে হলো। দুদিন তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। ২০ জন সৈন্য বাসাটি পাহারা দেয়। মেজর হোসেন বাসা থেকে যাওয়ার সময় বলে যায়, ঘরের ভেতর থেকে কেউ বের হতে পারবে না।

হানাদার বাহিনীর মেজর হোসেন একদিন ওই বাসায় এসে জানায়, মুজিব পরিবারের খাওয়া-দাওয়ার জন্য সরকার টাকা দেবে। কিন্তু বেগম মুজিব ও শেখ হাসিনা বললেন, সরকারের টাকা দরকার নেই। ড. ওয়াজেদকে বেতন দিলেই চলবে। পরে এ ব্যবস্থাই হলো। ডক্টর ওয়াজেদ অফিস করতেন। তার বেতন দিয়ে খরচ চলত। বাসায় একটি কাজের ছেলে ছিল। সে বাজার করত। এমনিভাবে মে-জুন কেটে যায়।

বাসায় ডিউটিরত পাক সেনারা রাতে জানালার পাশে বেয়নেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। গুলির আওয়াজ পেলেই দেখা যেত ডিউটিরত হাবিলদার স্টেনগান নিয়ে ঘরের ভেতর এসে ঢুকত। ভয়ে কারও ঘুম আসত না। শেখ হাসিনা বেগম মুজিবের কাছে ঘুমাতেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছিলেন তিনি।

স্মৃতিচারণ করে ডক্টর ওয়াজেদ বলেন, এমনিভাবে জুলাই মাস এসে যায়। শেখ হাসিনার সন্তান জন্মের সময় ঘনিয়ে আসে। কিন্তু পাক সেনারা কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যেতে দেবে না। অনেক অনুরোধের পর শেষে ডাক্তার ওদুদকে দেখানোর অনুমতি পাওয়া গেল। কিন্তু কড়া আর্মি গার্ড দিয়ে ডাক্তার ওদুদের বাসায় যেতে হতো। ২০ জুলাই শেখ হাসিনাকে ঢাকা মেডিকেলের একটি কেবিনে ভর্তি করা হলো। ২৭ জুলাই রাত ৮টায় তাকে লেবার ওয়ার্ডে নেয়া হল। নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই আমাদের সন্তান জন্ম নেয়। হাসপাতালে রাতে আমি থাকতাম। খবর পেয়ে অনেক আত্মীয়স্বজন দেখতে আসতেন। শেখ হাসিনাকে দেখাশোনার জন্য বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন লিলি ফুফু আম্মা হাসপাতালে থাকলেন। কিন্তু এরই মধ্যে একদিন পাক সেনারা এসে সব আত্মীয়স্বজনকে ধমকিয়ে বের করে দেয়। তারা লিলি ফুফু আম্মাকেও বের করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা কেঁদে ফেলায় তাকে থাকার অনুমতি দেয়।

হাসপাতাল থেকে শেখ হাসিনা ও ছেলেকে নিয়ে ডক্টর ওয়াজেদ ধানমন্ডির ১৮ নম্বর বাসায় গেলে ছেলে দেখে বেগম মুজিব খুশি হলেন। তিনি বললেন—‘আমার তো ভাই নেই, ওর নাম তাই রাখলাম ‘সজিব।’ আর মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মেছে, তাই ডাক নাম রাখলাম ‘জয়।’ মুজিবের সঙ্গে মানাবে ভালো।

শেখ হাসিনার সন্তানের নাম ‘জয়’ রাখা হলো কেন এ নিয়েও পাক সেনারা কটাক্ষ করেছে। নভেম্বরের দিকে ডক্টর ওয়াজেদ দেখেন ওরা বাংকার খুঁড়ছে। শেখ হাসিনা তাকে বললেন, সম্ভবত ওরা আমাদের মেরে ওখানে পুঁতে রেখে যেতে পারে। এ অবস্থায় কি করা যায়? ডক্টর ওয়াজেদ পিজি হাসপাতালে চলে গেলেন ডাক্তার নূরুল ইসলামের পরামর্শে অসুখের কথা বলে। কারণ ডক্টর ওয়াজেদ বাইরে থাকলে হয়তো খান সেনারা মুজিব পরিবারকে হত্যা করতে সাহস করবে না এই মনে করে।

৩ ডিসেম্বর থেকে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পিজি হাসপাতালকে মিলিটারি হাসপাতাল করা হয়। এ অবস্থায় ১৪ ডিসেম্বর ডক্টর ওয়াজেদ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের কাছে এক বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং ১৮ নম্বরের বাসা সম্পর্কে খেয়াল রাখেন। ওইদিনই পাকবাহিনীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের চরমপত্র দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। ১৭ ডিসেম্বর সম্মিলিত বাহিনী এসে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। মুক্তি পান বেগম মুজিব। মুক্তি পান শেখ হাসিনা ও পরিবারের অন্যরা।

সৈয়দ আবদাল আহমদ এর লেখা থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৪৭
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×