সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:০২
জলাশয় ভরাট, বায়ূ দুষণ ইত্যাদি পরিবেশ বিষয়ক অপরাধগুলো সামাজিকভাবে অপরাধ হিসাবে গণ্য না হওয়ায় ভবিষ্যত প্রজন্ম একদিন আমাদেরকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
জলাশয় ভরাট করা কি অপরাধ?
অথবা ইট ভাটা দিয়ে কার্বন নির্গমন?
অথবা গাছ কেটে বন উজার করা?
। আইনে এগুলো অপরাধ হলেও সামাজিকভাবে আমরা এগুলোকে কোন দোষের মনে করি না। ঢাকা থেকে নরসিংদী যেতে
এই যে দৃশ্য তা আমাদের কাছে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। আমাদের জনসংখ্যা বেশী, সুতরাং জমিত লাগবেই, আমাদের উন্নয়নের জন্য ইটভাটা না থাকলে কি দিয়ে তৈরী হবে ইমারত? গাছ লাগানোই হয কাটার জন্য। গাছের চাষ একটা সফল ব্যবসা। আর কল কারখানা না থাকলে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হবে কোথা থেকে? এসব প্রশ্নের মিমাংসা না হওয়ায় সমাজে ফৌজদারি অপরাধের মত পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপরাধগুলো নিন্দনীয় হিসাবে বিবেচিত হয় না। যে লোকটি নরসিংদী বা নারায়নগঞ্জের ইটভাটায় গাছ পুড়ায়, যার কারখানার ধোঁয়ায় প্রাণ যায় কোন নবজাতকের, সে নরসিংদীতে থাকেনা, সে থাকে হয়ত ঢাকার কোন অভিজাত অঞ্চলে এবং হয়ত ছুটি কাটায় কক্সবাজার, নৈনিতাল, দার্জিলিং, সিঙ্গাপুর, দুবাই অথবা পশ্চিমে। সে যেখানে বাস করে সেখানে থাকে নির্মল বাতাস। পরিবেশের ক্ষতি তাকে স্পর্শ করে না। করে না তার সন্তানদেরও। কারণ হয়ত দেথা যাবে নগদ টাকা জমা দিয়ে ব্যবাসায়ী কোটায় অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার ইমিগ্রেসন সে আগেই নিয়ে রেখেছে। আমাদেরও এসব বিষয় গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আজীবন আমরা জলাশয় ভর্তি করে বাড়ি করেছি, গাছের জ্বালানি দিয়ে ইট তৈরী করেছি, গাছ কেটে ঘর-নৌকা তৈরী করেছি এবং কলকারখানায় সস্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়ন সাধন করেছি। ফলে আমাদের সমাজে এসব কর্মকান্ড অপরাধ হিসাবে গন্য হয় না। এখন যদি আমরা জানতে পারতাম জলাশয়গুলো ভরাট করার দরুণ ক বছর পর পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় আমাদের টিউবওয়েলে পানি থাকবে না, পুকুর গুলো শুকিয়ে যাবে, গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে যাবে, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী লুপ্ত হয়ে যাওয়ার দরুণ আমাদের খাবার দাবারে আমিষের দারুণ ঘাটতি হবে। আমরা যদি জানতাম যে অঞ্চলে ইটভাটার পরিমাণ বেশি সে অঞ্চলে কাশ, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, যক্ষা ও ক্যান্সারের প্রকোপ বেশী, আমরা যদি জানতাম লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুনরুৎপাদন অব্যহাত রেখে গাছ কাটলে কোন ক্ষতি হয় না অথবা যদি জানতাম যে কারখানায় ধূয়া নির্গত হয়, সে কারাখানার শ্রমিকদের গড় আয়ূ অত্যন্ত কম, তাহলে আমরা কি একটু সচেতন হতাম না? পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির সবচেয়ে বড় শিকার হয় পরবর্তী প্রজন্ম। আমরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে জলাশয় ভর্তি করে, গাছ পুড়ে ইট বানিয়ে, বন উজার করে ধান চাষ বৃদ্ধি করে, নদীর পানি দূষিত করে দেশের পরিবেশ যে অবস্থায় রেখে যাব, পরবর্তী প্রজন্ম এসে তার কুফল সবেচেয়ে বেশী ভোগ করবে এবং তারা বলবে, আমাদের পিতা-পিতামহরা আমাদের জন্য কতইনা উদাসীন ছিলেন! ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেরো শহরে অনুষ্টিত জাতিসংঘের সন্মেলনে সেজন্যই ঘোষিত হযেছে যে বর্তমানের সম্পদে ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার আছে এবং সম্পদ ভোগ করার জন্য আমাদেরকে লাগসই উন্নয়ন পদ্ধতি (Sustainable Development - এর অন্যকোন জুতসই প্রতিশব্দ কি পাওয়া যায় না? সহায়তা করুন) প্রয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্ষতি না করে কোন সম্পদ উন্নয়ন ও ভোগ করার পদ্ধতিকেই তারা লাগসই উন্নয়ন বলছেন। জলাশয় ভরাট না করেও সেখানে ঘর বাড়ী তৈরী করা যায়। ছবি দেখুন 
। কয়লাকাঠ না পুড়িয়েও ইট তৈরী করা যায়। বাংলাদেশেই এ পদ্ধতি চালু আছে, যা গত পরিবেশ সন্মেলনে হয়েছে প্রশংসিত। লিংক ছবি দেখুন Click This Link আর গাছের বিকল্প ত এখন বাংলাদেশের সর্বত্র সহজলভ্য। সুতরাং আমাদের নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেও আমরা হার্ডকোর পরিবেশবাদী না হয়েও আমাদের ভোগের সময় লাগসই পদ্ধতির বিষয় অর্থাৎ ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা যদি মনে রাখি তাতেই বিশ্ব অনেক নিরাপদ থাকবে।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।