
মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) ২০১২ তে দ্বায়ীর সিফাত সন্মন্ধে বলেন,
মেরে মোহতারাম দোস্ত বুযুর্গ
আল্লাহ তায়ালা নিজ দয়ায়, করমে আমাদেরকে এ বড়, উচুঁ আমানতের বাহক বানিয়েছেন এবং এটা নির্বাচন না বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আমরা যেন এটাকে নির্বাচন মনে না করি যে, আল্রাহ তায়ালা আমাদেরকে এই আমানতের জন্য নির্বাচন করেছেন। বরং আমাদের জন্য এটা একটা পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাকে নির্বাচন করা হবে।
এমন না যে কাজ করনেওয়ালা নির্বাচিত। বরং যে কাজ করছে সে তো পরীক্ষার সম্মুক্ষীন আল্রাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তায়ালা তাকে পরীক্ষার পর নির্বাচন করবেন যে, সে কাজের যোগ্য কিনা? অনেকে এ পরীক্ষায় ফেল হয়ে যায়। সুতরাং এ জিম্মাদারী বাহক বা উঠানেওয়ালারা সব সময় আল্লাহ পাকের কাছে নিজেকে কবুল করানোর ফিকিরে এবং কবুলিয়াতের শর্ত পূরণের ফিকরে মশগুল থাকাই বাঞ্জনীয়। এ জন্য খুব চিন্ত-ফিকির করি, আল্লাহর কাছে এ কাজের কবুলিয়াতের জন্য কি কি আসবাব রয়েছে? আল্লাহর কাছে কি কি আসবাব আছে এ কাজ থেকে সরে যাওয়ার? অর্থাৎ এমন আসবাব যার দ্বারা ভালো, পুরানো কাজ করনেওয়ালা বিতাড়িত হয় যায়? এটা বলা যায় না যে অমুক ব্যাক্তি বেশি কবুল এবং বেশি আগে বেড়ে আছে; সে আর ফিরবে না বা বঞ্চিত হবে না বা বিতাড়িত হবে না ।
ওহির কাতেব বা লেখক, যে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ওহির নুযুল দেখতেন, অপেক্ষা করতেন, কখন হুজুর (ছ) এর উপর ওহি নাযেল হওয়া শেষ হবে, আর সাথে সাথে লিখবে। কুরআন নাযিল হতেছেন দেখেছেন। এমন কাতেবে ওহিও যদি পরীক্ষায় ফেল হতে পারে, তবে তার চেয়ে বড় ওপরে আরো ভালো মর্তবা হতে পারে না, একিন করার জন্য যে ওহি নাযিল হওয়া দেখেছেন।
একবার ওহি নাযেল হওয়ার পর হুজুর আকদাস সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সাহাবীকে বললেন, লিখ, ওদিকে আল্লাহপাক এ মজমুন বা বিষয় ওহির ন্যায় ঐ সাহাবীর দিলে ঢেলে দিলেন। ঐ সাহাবী বললেন, “ ফাতা বা-রাকাল্লাহু আহছানুল খা লেকিন” আল্লাহ কত সুন্দর সৃষ্টিকারী ।
নবীজি সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এটাও লেখ। কারণ, এটা তার অন্তরে এসেছে, ওদিকে এটা ওহি হিসেবেও এসেছে। এত বড় নৈকট্য আর মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মুরতাদ হয়ে ইসলাম থেকে বের হ্ওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তাকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা করে ফেল। যদি তাকে বাইতুল্লাহর পর্দা ধরা অবস্থায়ও পাও তবেও তাকে কতল করে দাও। অথচ সে কাতিবে ওহি ছিল। হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ওহি নাযিল হতে দেখেছে।
বলার উদ্দেশ্য হলে আমাদের মধ্য হতে প্রত্যেকে ভয় হওয়া উচিৎ যে, আল্লাহর কাছে যোগ্যতা কবুলিয়াতের কোন বুনিয়াদ নয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে আমল হলো কবুলিয়াত; তার জন্য শর্ত হচ্ছে সিফাত বা গুনাবলী। এ জন্য নিজেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল করানোর শর্তাবলীর উপর চিন্তা করো। মনোযোগ দাও যে, আল্লাহ তায়ালা কাছে কবুলিয়াতের কি শর্ত ?
১ম শর্ত হলো, এ রাস্তায় অপছন্দীয় হালতের উপর ধৈর্য ধারণ করা। এটা নবীদের গুন, নবীদের ইজতেমায়ী সিফত। কেননা এ রাস্তার অপছন্দ অবস্থার উপর সবর করা তরবিয়তের ছবব বা মাধ্যম।
কতক্ষণ সবর করব?
একটা প্রশ্ন আসে প্রত্যেক সাথীর দিলে।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন। আবুযর রদিয়াল্লহু আ’নহু মসজিদে শুয়ে ছিলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন। তিনি উঠলেন। নবীজি সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে শুয়ে আছ? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ , আমার কোনো ঘর নেই,আমি মসজিদে ঘুমাই। নবীজি সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন (তুমি আমাকে এটা বল), আমার পর মদিনার উমারা বা নেতৃস্থানীয় লোকেরা যদি তোমাকে বিরক্ত করে বা কষ্ট দেয় তুমি তখন কি করবে?
আবুযর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, আমি আবার শাম দেশে চলে যাব এব্ং সেখানে ঘর বানিয়ে থাকব। কেননা শাম দেশ নবীদের এলাকা।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুলকে শামের উমারা বা নেতৃস্থানীয় লোকেরা যখন তোমাকে বিরক্ত করবে বা কষ্ট দিবে তখন তুমি কি করবে? বারবার প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে চাচ্ছিলেন – আমার সাহাবদের মধ্যে সবরের যোগ্যতা কতটুকু? কতক্ষণ সবরের জন্য তৈরি?
আবুযর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, আমি আবার মদিনায় ফিরে আসব এবং এখানে ঘর বনিয়ে থেকে যাব।
হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মদিনার উমারা বা নেতৃস্থানীয় লোকেরা তোমাকে যদি পুনরায় কষ্ট দেয় বা বিরক্ত করে তখন কি করবে?
আবুযর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, আমি তাদের মোকাবিলা করব।
হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু যর, ক্ষমা করতে থেকো যে পর্যন্ত কেয়ামতে আমার সাথে সাক্ষাত না হবে।
মেরে মোহতারম দোস্ত,
তরবিয়ত ও তরক্কির জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম এ রাস্তায় সবর। যার অন্তরে প্রতিশোধের জযবা থাকবে সে নবীওয়ালা মেহনতের রাস্তায় চলতে পারবে না। কেননা, প্রতিশোধের জযবা আর উম্মতের তরবিয়তের জযবা এক অন্তরে জমা বা একত্রিত হতে পারে না। এই দুই জযবা এক দিলে কখনও জমা হতেই পারে না। কেননা, যারা উম্মতের তরবিয়ত, হেদায়েত ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক চাইবেন তারা এ চাহিদার কারনে সব কষ্টকে বরদাশ্ত করবেন, সহ্য করবেন। এ জন্যই প্রতিশোধ ও হেদায়েতের জযবা এক দিল জমা হতে পারে না। যদি কারো দিলে প্রতিশোধের জযবা পয়দা হয়, তাহল বুঝে নাও যে, সে এ কাজের জযবা থেকে দুরে সরে গেছে, এ কাজের জযবা থেকে তার দিল খালি হয়ে গেছে। যদি কখনও, কোনো নবীর দিলে মানবিক কারণে প্রতিশোধের খেয়ালও এসেছে, সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাম্বিহ বা সতর্ক করা হয়েছে।
হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কসম খেয়ে বলছি। হামযা রদিয়াল্লহু আ’নহু এর হত্যার মোকাবেলায় আমি ৭০ জন কাফেরকে কতল করব। তেমনি কতল করব, যেমনি হামযা রদিয়াল্লহু আ’নহু কে করা হয়েছে, যেভাবে মুছলা (হাত পা কাটা) করা হয়েছে, আমি ৭০ জন কাফের কে সেভাবে মুছালা করব। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাম্বিহ করা হলো, হে নবীজী! আপনি এটা কি করলেন? যদি আপনার বদল একান্ত নিতেই হয় কাফেরদের থেকে (আমি কাফেরদের কথা বলছি) নিজেদের মধ্যে বদলা নেয়ার কথা চিন্তাই করা যায় না। যদি কাফেরদের থেকে বদলা নিতেই হয়, তাহলে এতটুকু করতে পারেন যতটুকু আপনার সাথে করা হয়েছে। আপনি এক হামযার প্রতিশোধে ১জন কাফেরকে কতল করতে পারেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কসমে কাফ্ফারা দিলেন, কসম ভাংলেন।
বুনিয়াদি কথা হলো, প্রতিশোধের সাথে এ কাজের কোন জোড়-মিল নেই, কেননা সবর ও ইন্তিকাম একত্র হতে পারে না। উম্মতের হেদায়েতর আগ্রহ ও প্রতিশোধে এক দিলে জমা হতে পারে না। এজন্য সব নবী ও সাহাবাদের ইজেতমায়ী সিফত সবর।
চলবে >>>
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





