গণতন্ত্রে ‘জনগণের স্বাধীনতা’, ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’, ‘জনগণের তন্ত্র’ ইত্যাদি শব্দগুলো যতোটা মুখরোচক ও লোভনীয়ভাবে প্রকাশ করা হয় আদতে গণতন্ত্রে সরকার-প্রশাসন-আইন সবই পরিচালিত হয় পুঁজিপতি ও বুর্জোয়া শ্রেণিটির দ্বারা । তাদের খায়েশ পূরণের জন্য তৈরি করা হয় নতুন নতুন আইন-খসরা । সেই আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে জনগণের শ্রম বিক্রি হয় পানির দামে । অর্থ্যাৎ পুঁজিপতি ও বুর্জোয়া শ্রেণিটি খুব স্বল্পদামে শ্রম পেয়ে নীট মুনাফার পরিমাণটা দিনেদিনে বাড়িয়েই চলে । ভ্যাটের মাধ্যমে জনগণের পকেট খালি করে বাজেটের স্তুপ করা হয়, যা গণতন্ত্রের বাহকদের খরচ মেটাতেই সিংহভাগ ফুরিয়ে যায় । বাকি যা থাকে তা টেন্ডারবাজদের হয়ে শ্রমিক পর্যায়ে আসতে আসতেই মোট বাজেটের অবশিষ্ট মাইনাস হয়ে যায় । গণতন্ত্র এখানে আরেকটা দাবার গুটি বসায় । বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রজেক্ট সম্পন্ন করা । প্রজেক্ট কতটা সম্পূর্ণ হয় তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও বৈদেশিক ঋণের ভারটা কিন্তু জনগণের উপরই বর্তায় । গণতন্ত্রের সরকার তো আর জমিদার না, থাকলেও নিজের পকেট থেকে কে সে ঋণ শোধ করতে যাবে ! সমাধান তো করতেই হবে । যেহেতু গণতন্ত্র জনগণের তাই ঋণশোধটা জনগণকেই করতে হবে । হু হু করে বাড়িয়ে দেয়া হয় ভ্যাট । নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে পদে পদে হোঁচট খেতে হয় জনগণকে ।
জনগণ এমন এক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলো যে তন্ত্র জিইয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত রক্ত পানি করতে হচ্ছে । জনগণের নিমিত্তে যে সরকার-আইন-প্রশাসন তৈরি হলো সেটাই এককালে পুঁজিপতি-বুর্জোয়াদের খাদেম হিসেবে নিযুক্ত হলো । একজন পুঁজিপতি তার নিরাপত্তার জন্য বন্দুক-দেহরক্ষী রাখতে পারে, একজন মন্ত্রী তার নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী রাখতে পারে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ রাতের বেলা চোর-বাটপার-সন্ত্রাস-ছিনতাইকারী-খুনীর হাত থেকে রক্ষার তাগিদে নিরাপত্তাস্বরূপ হালকা গড়নের কোনো অস্ত্র রাখতে পারেনা । অথচ রাজনৈতিক ছাত্র সন্ত্রাস, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিদের হাতে দা-চাপাতি-চাইনিজ কুড়াল-হকিস্টিক-পাইপ গান রাখা আপাত চোখে অপরাধ হলেও তার অনুমতি মেলে রাজনৈতিক দাদাদের চোখের ইশারায় । যদিও ভুলক্রমে কখনো সেই হায়েনা-কুকুরদের হাত থেকে নিরাপত্তার কারণে একটা চাকু হাতে নেয়া হয়, তখন জনগণকে মুখোমুখি হতে হয় প্রশাসনের, যে প্রশাসন চলে তারই রক্ত করা পানি দিয়ে । ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’ - প্রশাসনীয় এ বাক্যের সৃষ্টিই হয়েছে জনগণকে আজীবন বেসামরিক বানিয়ে নিষ্পেশনের জন্য । অথচ দুর্নীতি-ঘুষের মাধ্যমে সন্ত্রাসী-খুনী-ধর্ষক-চোরবাটপারদের ছেড়ে দেয়ার বৃত্তান্ত সবার জ্ঞাত ।
অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণ প্রতিষ্ঠা করেছে আইন মন্ত্রণালয় । খোদ একটা ঠুনকো মামলার জন্য আইনব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে জনগণকে আবারো মাসুল দিতে হয় । এমনটি হরহামেশায় ঘটেছে যে, একবিঘা জমির সুরাহার জন্য দুইবিঘা সমমূল্যের টাকা-কড়ি খুইয়েছে জমির উপযুক্ত ভাগীদার । শেষ পর্যন্ত জমি চলে গেলো টাকাওয়ালা ব্যক্তির হাতে ।
সরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালগুলো চলে জনগণের টাকায় । এখানকার জাঁদরেল ডাক্তারগুলোকে তৈরি করা হয়েছে জনগণের খরচায় । ডাক্তারগুলোর বেতনও দেয়া হয় জনগণের টাকায় । অথচ যে লোকটি প্রতিনিয়ত গোপনে-প্রকাশ্যে ভ্যাটের শিকার হচ্ছে সেই কিনা উপযুক্ত চিকিৎসা পায় না তাদের কাছে । ভালো চিকিৎসা চাও? পয়সা খরচ করতে হবে । যেতে হবে প্রাইভেট চেম্বারে । ওষুধ কিনতে হবে দামি দামি । বেশ খরচা আছে । অর্থ্যাৎএখানেও পুঁজিপতি-বুর্জোয়াদের খাদেমগিরি । অথচ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই জনগণের রক্ত পানি করে গণতন্ত্রের প্লাটফর্মে দাঁড় করানো হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা ।
চোখ-কান খুলে বিবেকটাকে নাড়া দিয়ে দেখুন না একবার, গণতন্ত্র কতটা প্রতারণাময় ! ব্যক্তিবিশেষে দোষারোপ করে লাভ নেই । কারণ তারা প্রত্যেকেই গণতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের শিকার । আর কত পুঁজিপতি-বুর্জোয়া শ্রেণিটির গলা ভিজাবেন নিজের রক্ত দিয়ে, নিজের ঘাম দিয়ে ! আর কত প্রতারিত হবেন !
আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই ।