এক গৃহস্থ পরিবারের গৃহকর্তার গল্প, যিনি স্ত্রী - সন্তানাদি নিয়ে এক গ্রামে বাস করেন । কিন্তু ইদানীং একটা সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করেছে । সেটা হলো গ্রামে চোর - ডাকাতের উপদ্রব বেজায় বেড়ে গিয়েছে । গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু - ছাগল, পুকুর ভরা মাছ । এতকিছু নিয়ে চিন্তায় সেই গৃহকর্তার কিছুতেই রাতে ঘুম অাসেনা । এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল । কিন্তু কোন সুরাহাই মিললো না । একদিন সকালে সে অাবিষ্কার করলো দক্ষিণের ঘরে, যেখানে পুরনো ও অব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হয় সেখানে তার পিতার রেখে যাওয়া একটা দোনালা বন্দুক অাছে । অনেক খোঁজাখুজি করার পর সেই বন্দুক পাওয়া গেলো কিন্তু হালকা মরিচা পড়া । গৃহকর্তা মনে মনে ভাবলো অনেকদিন ধরেই বড় অযতনে থাকার ফলে বন্দুকে যথেষ্ট মরিচা ধরেছে । তাই ঘঁষে ঘঁষে মরিচাগুলো উঠিয়ে তেল দিয়ে মুছে দিলে বন্দুক কাজ করতে পারে । যতই ঘঁষা যাবে ততই বন্দুক অাগের মতো কাজ করবে ।
তো গৃহকর্তা বন্দুকের উপর মরিচা উঠানোর যন্ত্র দিয়ে সারাদিন ধরে ঘঁষা শুরু করলো । ঘঁষতে ঘঁষতে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যে বন্দুকের নলদুটো অালতো স্পর্শ লাগায় ভেঙ্গে গেলো, ট্রিগারে চাপ দেয়ার অাগেই ট্রিগার ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে রইলো । অকেঁজো বন্দুক অকেঁজোই রয়ে গেল । বন্দুককে অাগের জায়গায় ছুঁড়ে ফেলা হলো ।
গল্প এখানেই শেষ । পরে সেই গৃহকর্তা কী দিয়ে চোর - ডাকাতের হাত থেকে তার গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু - ছাগল, পুকুর ভরা মাছ রক্ষা করেছিলো সেটা অার জানা হয় নি ।
বুদ্ধিমান প্রগতিবাদী, সংস্কারবাদীরা হয়তো এই গল্পের মূলভাবটা বুঝতে পেরেছেন । এটা যদি বুঝে থাকেন তাহলে কুসংস্কার, সংস্কার, অতিসংস্কার এর মধ্যে পরিণামগত ও সীমাগত পার্থক্যটাও বুঝে থাকবেন । অার এটা বুঝে থাকলে 'ধর্মীয় কুসংস্কার' থেকে পরিত্রাণের জন্য 'ধর্মহীনতা' বা 'নাস্তিকতা' প্রতিষ্ঠা করার লড়াই, কিংবা জোরপূর্বক নারীকে গৃহবন্দীর বিপরীতে নারীকে বাজারেরর পণ্য করার লড়াই কিংবা জোরপূর্বক অাপাদমস্তক হিজাবের বিপরীতে অর্ধনগ্ন বা নগ্ন পোষাকীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লড়াই কোনোক্রমেই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মনে করার কথা না । তাই 'কুসংস্কার' থেকে পরিত্রাণের জন্য মধ্যাপন্থা হিসেবে 'সংস্কার' বেছে নিন, ঐ বাস্তব জ্ঞানহীন, ভারসাম্যহীন গৃহকর্তার ন্যায় 'অতিসংস্কার' নয় । অবশ্যই স্বীকার করি, অাপনারা যথেষ্ট জ্ঞানী । 'ক' বললেই কলম বুঝে যান । তাই অাশা করি বিস্তারিত ভেঙ্গে বলার প্রয়োজন হবেনা ।
যদি ভেবে থাকেন অামি ক্ষুদ্র হয়েও জ্ঞান দিচ্ছি, তবে অাসলেই জ্ঞান দিচ্ছি । ছোটদের কাছে শেখার কিছুই নেই, এমনটিতো কোথাও লিখা নেই । বরং অাপনি যদি ক্ষুদ্র ভেবে তুচ্ছ - তাচ্ছিল্য করেন তবে বুঝতে হবে অাপনি জ্ঞানপাপী । কারণ একমাত্র জ্ঞানপাপীরাই তাদের জ্ঞান নিয়ে অহংকার করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৮