কোনরকমের ভূমিকা ব্যতিরেকে দুটো ঐতিহাসিক এবং অবশ্যই জনপ্রিয় ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আমার এ লেখাটি শুরু করতে চাই।
প্রথম ঘটনাঃ- যতদূর জানা যায়, প্রাগৈতিহাসিক কাল হতেই ভারতীয় হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয়, তাদেরকে সব সময়ই সাদা শাড়ি পরিধান করতে হতো, সারা বছর নিরামিষ খেতে হতো। এমনকি পারিবারিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাঁদের অংশগ্রহণ ছিল নিষিদ্ধ । এক কথায় তাঁরা সামাজিকভাবে অপয়া হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। অনাদিকালের এই সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন আমাদের এই বাংলারই এক সন্তান। জন্মসূত্রে নাম তার ঈশ্বর চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় (১৮২১-১৮৯১)। কর্ম এবং সাধনা তাকে করেছিল ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ঈশ্বর চন্দ্র দয়াসাগর। বাঙ্গালীর হাজার বছরের অন্যতম এই শ্রেষ্ঠসন্তানের প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে ইংরেজ সরকার Widow Remarriage Act XV of 1856 প্রণয়ন করে। বিদ্যাসাগর শুধু দালিলিকভাবে এই আইন প্রণয়নে ভূমিকা রেখেই ক্ষান্ত হননি বরং একে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বপ্রথম নিজের বড় ছেলেকেই একজন বিধবার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত দৃষ্টান্তের কারণে প্রায় চতুষ্পদ প্রাণীর ন্যায় জীবনধারণ করা ভারতীয় হিন্দু বিধবা রমণীরা নতুন জীবন লাভ করেন।
দ্বিতীয় ঘটনাঃ একদা জনৈক ব্যক্তি নবী মুহম্মদের কাছে তার সন্তান-কে এই উপদেশ দিতে অনুরোধ করলেন যাতে করে সে মিষ্টি কম খায়। মুহম্মদ তাকে তার সন্তানসমেত কিছুদিন পর আসার জন্য বললেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিছুদিন পরে আসলে মুহম্মদ তাঁর সন্তানকে মিষ্টি কম খাওয়ার জন্য উপদেশ দিলেন। কৌতুহলবশত ঐ ব্যক্তি জানতে চান, নবী মুহম্মদ কেন সেদিন তাঁর সন্তানকে এ উপদেশটি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন। মুহম্মদ জানালেন ঠিক ঐ সময়টাতে তিনি নিজেও প্রচুর মিষ্টি খেতেন। কাজেই ঐ অবস্থায় তাঁকে মিষ্টি খেতে বারণ করাটা নৈতিক দিক দিয়ে সমীচীন হত না। মাঝখানের সময়টাতে তিনি মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসটা কমিয়েছেন এবং এর ফলে তাকে 'মিষ্টি কম খাওয়ার জন্য' বলার যোগ্য হয়েছেন।
ঘটনা দুটো বর্ণনার মাধ্যমে আমি এটাই অনুধাবন করার চেষ্টা করিয়েছি এবং করেছি যে সাধুপুরুষগণের চিন্তা, বলা এবং ব্যক্তি-আচরণের মাঝে কতোটা মিল এবং সামঞ্জস্য ছিল। তারা শুধু বলতেন না, করতেনও। তাদের মুখের উক্তি এবং আচরণের মাঝে কোন ফারাক ছিল না। কিন্তু আজকে যারা মাদ্রাসাশিক্ষার জন্য মায়াকান্না করছেন, এটিকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন, তারা কি নিজেরা মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত? তাদের সন্তানদের কি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষাদান করছেন? আমি জানি বেশিরভাগের উত্তরই হচ্ছে না। তারপরেও তাঁরা কেন তাঁরা এই শিক্ষাব্যবস্থাটা টিকিয়ে রাখতে চাইছেন? কার স্বার্থে?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




