এটা সত্য যে ,আমি অসুস্থ হয়েছি ।অনেক বেশি অসুস্থ হয়েছি । কিন্তু তুমি কেন বললে ,আমি আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি ?
তুমি কি বলতে চাচ্ছ ,আমি পাগল হয়ে গেছি ?
তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে আমার নিজের উপর আমার সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন রয়েছে । এবং এটাও নিশ্চিত যে আমি পাগল হয়নি ।
প্রকৃতপক্ষে এই অসুখটা আমার মানসিক শক্তি ,অনুভূতি এবং চেতনাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে । বিশেষ করে আমার শ্রবন শক্তি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে । আমি এরকম শব্দ শুনতে পাই যা আগে কখনো শুনিনি । আমি স্বর্গ এবং নরক থেকেও শব্দ শুনতে পাই । তুমি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছ ?
শুনতে চাও ? কিভাবে এসব সম্ভব হয়েছে ? শোন তাহলে , আমি তোমাকে সব খুলে বলব । তুমি দেখতে পাবে আমার মানসিক ক্ষমতা কত বেশি !
এটা আমার পক্ষে বলা যাচ্ছেনা কিভাবে প্রথম ধারনাটা আমার মাথায় ঢুকেছে । তেমন কোন কারন নেই ,যা আমি করেছি । আমি বৃদ্ধ লোকটিকে ঘৃণা করতাম না বরং পছন্দই করতাম । লোকটি কখনই আমাকে কোন রকমের আঘাত দেয়নি । আমি তার ধন-সম্পদের প্রতি লোভী ছিলাম না ।
আমার মনে হয় ,এই ঘটনার পিছনে দায়ী তার চোখ । তার চোখ যেন দেখতে ঠিক শকুনের চোখের মত । তুমি শকুনের চোখ দেখেছ ? কি তীক্ষ্ণ , কি ধারলো , একটা ভয়ংকর সোন্দর্যতা আছে যেন !
শকুন তার চোখ দিয়ে তার শিকারিকে পর্যবেক্ষন করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে এবং অপেক্ষা করে কখন তার শিকারি মারা যাবে । তারপর , মৃত দেহের উপর আঁচড়ে পড়ে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে খায় ।
যখন ,বৃদ্ধ লোকটি তার শকুনি চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকাত ,আমার মেরুদণ্ড দিয়ে যেন বরফ শীতল ঠাণ্ডা এক অনুভুতি প্রবাহিত হত ।আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যেত বরফের মত ।
তারপর ? তারপর আমি ঠিক করলাম বৃদ্ধ লোকটিকে আমি খুন করব এবং তার শকুনি চোখ চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিব ।
এখন তুমি কি ভাবছ আমি পাগল হয়ে গেছি ? ওহে ,তুমি তো জাননা মনে হয় পাগলেরা পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারেনা । কিন্তু তোমার আমকে দেখা উচিত ছিল ।পুরো সপ্তাহ জুড়ে বৃদ্ধ লোকটির প্রতি আমি কিরকম বন্ধুত্বপূর্ন , দয়াশীল এবং সহানুভূতিপূর্ন আচরন প্রদর্শন করেছিলাম ।
প্রতি রাতে যখন রাত কাটায় কাটায় ১২ টা বাজে ,আমি ধীরে ধীরে তার দরজা খুলি । যখন দরজা একটু ফাঁক হয় ,আমি আমার হাত দুটি ঢুকিয়ে দেই , পরে মাথা ঢুকাই । আমার হাতে একটা টর্চ লাইট কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে যাতে আলো অন্য কেউ দেখতে না পায় । তারপর আমি ধীরে ধীরে তার বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়াই । টর্চ লাইটের ওপর থেকে একটু কাপড় সরাই যাতে অল্প একটু আলো বের হয় । সেই আলো আমি তার চোখের দিকে তাক করি । গত সাত দিন ধরে আমি এই কাজ করে আসছি কিন্তু প্রতিদিনই তার চোখ বন্ধ থাকে । এই কারনে আর সামনে এগোতে পারিনি ,কারন বৃদ্ধ লোকটিকে খুন করার পিছনে ছিল একমাত্র তার শকুনি চোখ ।
এরপর প্রতি সকালে তার রুমে গিয়ে আমি তাকে খুব বন্ধুত্বপূর্নভাবে জিজ্ঞেস করতাম তার ঘুম কেমন হয়েছে । সে তখন কিছুই জানতনা ,প্রতি রাতে ১২ টার দিকে তাকে আমি খুন করার উদ্দেশ্যে তার রুমে যেতাম ।
অষ্টম রাতে আমি আরো বেশি সতর্ক হয়ে দরজা খুলছিলাম । তখন আমার হাতের তুলনায় হাতের ঘড়ি দ্রুত চলল , আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালি অনুভব করছিলাম ।আমি বুঝলাম আমি আজকে সফলতার খুব কাছাকাছি ।
বৃদ্ধ লোকটি তখন বিছানায় শুয়ে কল্পনাও করতে পারবেনা যে আমি তার দরজার দাঁড়িয়ে আছি তাকে খুন করার জন্য ।
হঠাৎ সে তার বিছানায় এপাশ ওপাশ করল । তুমি কি ভাবছ ,আমি ভয় পেয়েছিলাম ? তাহলে বলব ভুল ভাবছ । তার রুম অন্ধকারে ভর্তি ছিল । আমি জানতাম সে তার রুমের দরজা যে খোলা তা দেখতে পাবেনা । আমি দরজায় আস্তে আস্তে ধাক্কা দিতে থাকলাম । আমি আমার হাত ভিতরে ঢুকালাম ,হাতে কাপড় দিয়ে ঢাকা টর্চ লাইট ছিল ।এরপর মাথাও ঢুকালাম ।
ঠিক তখনই বৃদ্ধ লোকটা বিছানা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসল এবং কান্নারত স্বরে বলল , " কে, কে ওখানে ? "
(চলবে ......)
(সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭