somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা টেল-টেইল হার্ট (The Tell-Tale Heart) ;বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক "এডগার এলান পো"(Edgar Allan Poe) এর অনুবাদ গল্প ।(পার্ট-১)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটা সত্য যে ,আমি অসুস্থ হয়েছি ।অনেক বেশি অসুস্থ হয়েছি । কিন্তু তুমি কেন বললে ,আমি আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি ?

তুমি কি বলতে চাচ্ছ ,আমি পাগল হয়ে গেছি ?

তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে আমার নিজের উপর আমার সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন রয়েছে । এবং এটাও নিশ্চিত যে আমি পাগল হয়নি ।

প্রকৃতপক্ষে এই অসুখটা আমার মানসিক শক্তি ,অনুভূতি এবং চেতনাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে । বিশেষ করে আমার শ্রবন শক্তি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে । আমি এরকম শব্দ শুনতে পাই যা আগে কখনো শুনিনি । আমি স্বর্গ এবং নরক থেকেও শব্দ শুনতে পাই । তুমি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছ ?

শুনতে চাও ? কিভাবে এসব সম্ভব হয়েছে ? শোন তাহলে , আমি তোমাকে সব খুলে বলব । তুমি দেখতে পাবে আমার মানসিক ক্ষমতা কত বেশি !

এটা আমার পক্ষে বলা যাচ্ছেনা কিভাবে প্রথম ধারনাটা আমার মাথায় ঢুকেছে । তেমন কোন কারন নেই ,যা আমি করেছি । আমি বৃদ্ধ লোকটিকে ঘৃণা করতাম না বরং পছন্দই করতাম । লোকটি কখনই আমাকে কোন রকমের আঘাত দেয়নি । আমি তার ধন-সম্পদের প্রতি লোভী ছিলাম না ।
আমার মনে হয় ,এই ঘটনার পিছনে দায়ী তার চোখ । তার চোখ যেন দেখতে ঠিক শকুনের চোখের মত । তুমি শকুনের চোখ দেখেছ ? কি তীক্ষ্ণ , কি ধারলো , একটা ভয়ংকর সোন্দর্যতা আছে যেন !

শকুন তার চোখ দিয়ে তার শিকারিকে পর্যবেক্ষন করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে এবং অপেক্ষা করে কখন তার শিকারি মারা যাবে । তারপর , মৃত দেহের উপর আঁচড়ে পড়ে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে খায় ।

যখন ,বৃদ্ধ লোকটি তার শকুনি চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকাত ,আমার মেরুদণ্ড দিয়ে যেন বরফ শীতল ঠাণ্ডা এক অনুভুতি প্রবাহিত হত ।আমার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যেত বরফের মত ।
তারপর ? তারপর আমি ঠিক করলাম বৃদ্ধ লোকটিকে আমি খুন করব এবং তার শকুনি চোখ চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিব ।

এখন তুমি কি ভাবছ আমি পাগল হয়ে গেছি ? ওহে ,তুমি তো জাননা মনে হয় পাগলেরা পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারেনা । কিন্তু তোমার আমকে দেখা উচিত ছিল ।পুরো সপ্তাহ জুড়ে বৃদ্ধ লোকটির প্রতি আমি কিরকম বন্ধুত্বপূর্ন , দয়াশীল এবং সহানুভূতিপূর্ন আচরন প্রদর্শন করেছিলাম ।

প্রতি রাতে যখন রাত কাটায় কাটায় ১২ টা বাজে ,আমি ধীরে ধীরে তার দরজা খুলি । যখন দরজা একটু ফাঁক হয় ,আমি আমার হাত দুটি ঢুকিয়ে দেই , পরে মাথা ঢুকাই । আমার হাতে একটা টর্চ লাইট কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে যাতে আলো অন্য কেউ দেখতে না পায় । তারপর আমি ধীরে ধীরে তার বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়াই । টর্চ লাইটের ওপর থেকে একটু কাপড় সরাই যাতে অল্প একটু আলো বের হয় । সেই আলো আমি তার চোখের দিকে তাক করি । গত সাত দিন ধরে আমি এই কাজ করে আসছি কিন্তু প্রতিদিনই তার চোখ বন্ধ থাকে । এই কারনে আর সামনে এগোতে পারিনি ,কারন বৃদ্ধ লোকটিকে খুন করার পিছনে ছিল একমাত্র তার শকুনি চোখ ।

এরপর প্রতি সকালে তার রুমে গিয়ে আমি তাকে খুব বন্ধুত্বপূর্নভাবে জিজ্ঞেস করতাম তার ঘুম কেমন হয়েছে । সে তখন কিছুই জানতনা ,প্রতি রাতে ১২ টার দিকে তাকে আমি খুন করার উদ্দেশ্যে তার রুমে যেতাম ।




অষ্টম রাতে আমি আরো বেশি সতর্ক হয়ে দরজা খুলছিলাম । তখন আমার হাতের তুলনায় হাতের ঘড়ি দ্রুত চলল , আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালি অনুভব করছিলাম ।আমি বুঝলাম আমি আজকে সফলতার খুব কাছাকাছি ।
বৃদ্ধ লোকটি তখন বিছানায় শুয়ে কল্পনাও করতে পারবেনা যে আমি তার দরজার দাঁড়িয়ে আছি তাকে খুন করার জন্য ।
হঠাৎ সে তার বিছানায় এপাশ ওপাশ করল । তুমি কি ভাবছ ,আমি ভয় পেয়েছিলাম ? তাহলে বলব ভুল ভাবছ । তার রুম অন্ধকারে ভর্তি ছিল । আমি জানতাম সে তার রুমের দরজা যে খোলা তা দেখতে পাবেনা । আমি দরজায় আস্তে আস্তে ধাক্কা দিতে থাকলাম । আমি আমার হাত ভিতরে ঢুকালাম ,হাতে কাপড় দিয়ে ঢাকা টর্চ লাইট ছিল ।এরপর মাথাও ঢুকালাম ।

ঠিক তখনই বৃদ্ধ লোকটা বিছানা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসল এবং কান্নারত স্বরে বলল , " কে, কে ওখানে ? "


(চলবে ......)


(সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×