somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভিরিভিউঃ Moonrise kingdom-২০১২ সালের শ্রেষ্ঠ ছবি!!!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলিউডের যে কয়েকজন পরিচালক ভিন্নধারার চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অক্সিজেন যুগিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওয়েস অ্যান্ডারসন। হলিউডি ছবি যারা নিয়মিত দেখেন তাদের কাছে ওয়েসকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কোন মানেই হয় না। তার Rushmore, The Royal Tenenbaums এর মত ছবিগুলো এখনো সবার চোখে লেগে আছে। গুণী এই পরিচালকের সৃষ্টির ডালায় সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংযোজন হল Moonrise Kingdom । সবদিক বিচার বিবেচনা করে এটাকে সন্দেহাতীতভাবে ২০১২ সালের সেরা ছবির তকমাটা দিয়ে দেয়া যায়।



স্যাম শাকাউস্কি আর সুজি বিশপ-এই দুই ১২ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ছবির কাহিনী। দুজন ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠলেও তাদের ভেতরে এক সাংঘাতিক মিল রয়েছে আর তাহল দুজনেরই কাছের মানুষগুলো তাদের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পারে না। আর এই মিলই দুজনকে এক বিন্দুতে গেথে দিয়েছে আর সঙ্গী হয়েছে দূরের পথ চলার।

ষাটের দশকের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা এই ছবিটির প্রাণবিন্দু হল যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব কোণের আটলান্টিক মহাসাগরিস্থিত নিউ ইংল্যান্ড দ্বীপ। এই দ্বীপে সামার ক্যাম্পে আসা একদল খাকি স্কাউটের ঝাঁক থেকে উধাও হয়ে যায় দলের সবচেয়ে অজনপ্রিয় সদস্য স্যাম। ঠিক একই সময়ে দ্বীপের বিশপ দম্পতির একমাত্র মেয়ে সুজিও নিখোঁজ হয়ে যায়।


পরকীয়া সমস্যায় জর্জরিত মা-বাবার কাছে সুজি বেড়ে উঠলেও স্যামের সেই সৌভাগ্য হয় নি। এতিম স্যাম বেড়ে উঠেছে পালক মা-বাবার কাছে যারা কিনা তাকে সন্তানের চেয়ে বোঝা হিসেবেই বেশি দেখি। বয়ঃসন্ধিকালের এই অস্বস্তিকর সময়কালটি তাদের দুজনকেই বেশভালভাবেই জেঁকে ধরেছে। দুজনেই একরকম করতে গেলে হয়ে যায় আরেকরকম আর পরিণতিতে তাদের আশেপাশের লোকগুলো তাদেরকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করে। এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হওয়া সুজির মাঝে স্যাম দেখতে পায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে। দুজনের ভেতরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব যা চিঠি চালাচালিতে মোড় নেয়। এ সর্প্হক আর গাড় হয় এবং দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় চারপাশের শুত্রভাবাপন্ন পরিবেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নতুন এক স্বপ্নরাজ্যের দিকে রওনা দেয়ার। ঠিক পরিকল্পনামাফিক স্যামের সাথে সুজি পাড়ি জমায় তাদের মুনারাইজ কিংডমের উদ্দেশ্যে।
মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বিশপ দম্পতি দ্বীপের একমাত্র ভরসা ক্যাপ্টেন শার্পের দারস্ত হন যার সাথে কিনা মিসেস বিশপের পরকীয়া চলছে! ওদিকে স্কাউট মাস্টার ওয়ার্ড তার এক স্কাউটকে হারিয়ে দিশেহারা। তিনিও ক্যাপ্টেনের কাছে সাহায্যর জন্য হাত বাড়ান। ওয়ার্ডের নির্দেশে তার পুরো স্কাউট দল স্যাম আর সুজিকে খুজে বের করে আনতে বের হয় এবং তারা তাদের পেয়েও যায়। কিন্তু স্যাম আর সুজি যে চলছে এক মুনরাইজ কিংডমের উদ্দেশ্যে, তাদের যে থামার অবকাশ নেই। ওদের হাতেনাতে ধরে আনতে গিয়ে উল্টো বরং এক খাকি স্কাউট সুজির হাতে দারুণভাবে আহত হয়!

দীর্ঘভ্রমণের পর স্যাম আর সুজি তাদের স্বপ্নের মুনরাইজ কিংডমে পৌছে যাকে কিনা তারা নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় তারা আর আবিষ্কার করতে শুরু করে জীবনের নানা দিককে। কিন্তু ভাগ্যদেবতা তাদের এই মধুলগ্ন বেশিক্ষণ স্থায়ী করলেন না। স্যামের বাবা-মা আর স্কাউটদল ক্যাপ্টেন শার্পের সহায়তা দুজনকেই অবশেষে ধরতে সক্ষম হয়। শাস্তিও মিলল বটে, কেউই কারো সাথে আর দেখা করতে পারবে না।

কিন্তু এ ভালবাসা যে দমাবর নয়-এ যেন ঠিক এক অপ্রিতরোধ্য শক্তির সাথে দুর্জেয় এক বস্তুর ভালবাসা। স্যাম এবার তার স্কাউট বন্ধুদের সহায়তায় সুজিকে নিয়ে অভিনব কায়দায় আবার পালিয়ে যায়। এবার তারা আরো এক কাঠি সরেস করে ফেলে তাদের এ মিলনকে, সকল আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে একে অন্যকে বেছে নেয় জীবনসঙ্গী হিসেবে-স্যাম আর সুজি এখন আর শুধু প্রেমিক প্রেমিকা নয় তারা এখন স্বামী-স্ত্রীও!!!!!! এর পর আর বলব না-শেষটা আশা করি আপনারা দেখে নিবেন যেখানে অপেক্ষা করছে আরো রোমাঞ্ছ, আরো অ্যাডভেঞ্ছার...



কি কাস্টিং বলেন, কি সিনেমাটোগ্রাফি বলেন সবগুলো ডিপার্টমেন্টেই ওয়েস ফাটিয়ে দিয়েছেন। পরিচালক বয়ঃসন্ধিকালের এমন এমন বিষয়কে তুলে ধরেছেন যা কিনা আমরা সবাই পার করে এসেছি। আর ভালবাসাকে তিনি এমন ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন যা রোমাঞ্ছের এক নতুন মাইলফলক হিসেবে থাকবে। যেমন একটি দৃশ্যে সুজি বিকিনি পরিহিত অবস্থায় থাকে আর স্যাম তাকে খানিকটা ইতঃস্ততভাবে চুমো দেয়। আপাতদৃষ্টিতে একে অনেকে শিশু পর্ণোগ্রাফিতেও ফেলে দিতে পারতেন কিন্তু পরিচালকটি ওয়েস এন্ডারসন বলেই তিনি যৌনতার বাইরেও এমন এক সুপ্ত ভালবাসাকে, এক চিরায়িত মানব কৌতূহলকে তুলে এনেছেন যা দৃশ্যটিকে অন্য এক মাত্রাতে নিয়ে গেছে।

ছবিটিতে নানা ভূমিকায় ব্রুস উইলিস, বিল মারে, এডওয়ার্ড নর্টন, গিলমান, কারা হেইওয়ার্ড প্রমুখ অভিনয় করেছেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিলমান অভিনীত স্যাম চরিত্রটি লাইমলাইটে চলে এসেছে। যদিও আমি নিজে খুব একটা রেটিং এ বিশ্বাস করি না তারপরও বলছি IMDB থেকে শুরু করে Rotten Tomatoes, Meta Critics সবগুলো মুভি রিভিউ সাইটেই Moonrise Kingdom এর এভারেজ স্কোর ৯০ এর উপরে। আপনি যদি Moonrise Kingdom না দেখেন তাহলে মনে রাখবেন যে আপনি লাইফের একটা দারুণ মানেকে মিস করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৮
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×