somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধৈর্যের ফল

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

♦অপেক্ষার ফল নাকি সুমিষ্ট হয়।সেই আশায় পথ চলা।চলতে গিয়ে কত ধকল শত বাধা,নানান গুঞ্জন,পরিবারের চাপ নিয়ে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যেতে হয়েছে নিরব ভূমিকায়।সকল মানুষিক যন্ত্রণা মেনে নিয়ে ৮ বছর ধরে নিরবে এগিয়ে চলছে ওরা;পরিকল্পনা একটাই পরিবারের অনুমিতক্রমে ঘটা পরিবেশে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করা।

♦বাপ মা মরা ছেলে মইনুল।ভায়ের সংসারে মাস্টার্স পাশ করে বেকার।চাকুরী হয় হয় করে হচ্ছে না।আর এই কারনে তৃনা কে বিয়ে করতে পারছে না।অবশ্য মইনুল ও তৃনার সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারের সকলেই জানে।বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মইনুলের পক্ষ্য থেকে।তৃনার পরিবারের সকলেই মেনেছিল শুধু পরিবারের কর্তা বাবা বাদে।তার এককথা মইনুল কে তার মেয়ে জামাই করে কখনো সে মেনে নিতে পারবেনা।

♦তৃনা সাহসী এক টা মেয়ে।ভাল ভাল প্রস্তাব এড়িয়ে গেছে বাবার অবাধ্য হয়ে।সোজা বলে দিয়েছে, মাস্টার্সের রেজাল্ট এর আগে বিয়ের কথা যেন তাকে কেউ না বলে।তাছাড়া নতুন চাকুরী পেয়েছি,প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকদের কত ট্রেনিং থাকে বিয়ে করলে এখন সামলে উঠতে পারবো না।এই কথা শুনে তৃনার বাবা রাগ ভরা গলায় কইলো এই জানুয়ারি তেই তোর কাবিন হবে.....সাথে মইনুল কে উদ্দেশ্য করে গালাগালি।

♦সারা রাত কথা বলে মইনুল ও তৃনা দৃঢ়- প্রতিজ্ঞ ২৬/০১/১৬ তারিখ বিয়ে করবে।তৃনা; মইনুল কে বলেছিল তুমি শুধু বগুড়া থেকে রংপুর যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে।বাকিটা আমি দেখবো; আমার জমানো টাকা আছে তা দিয়ে শপিং, বিয়ে,সপ্তা খানেক রংপুরে থাকা হয়ে যাবে।এর পর ফিরে তোমার বাসায় উঠবো। মইনুল তৃনার ধ্বনি শুনে ভালবাসার সুখে কেঁদেছিল।বলেছিল এই কথাটা আমি তোমাকে কত আগে বলেছিলাম, এখন কি পালিয়ে বিয়ে করার বয়স আছে?আমি বেকার।তোমাকে নিয়ে স্কুলে কথা উঠবে কত কি বলবে।তৃনা শিক্ষক সুলভ ভঙ্গি তে কইল স্কুল, কলিগ, আমি সামলে নিব,আর তখন আমারা কেউ উপার্জন করতে পারতাম না।বিয়ের টাকাই জোগাড় কারাই অসাধ্য ছিল।এখন আমার হয়েছে বিয়ের পর তোমার ও হবে।কোথাও না হলে অন্তত বীমা কম্পানি তে জব হবেই হবে।আমি তোমার ঘরেরলক্ষ্মী হয়ে এলে জব তোমার না হলে আমার ই বদনাম হু হু হুহুম।

♦শীতের প্রতাপে কুয়াশা ভেঙে ২৬ তারিখ সকাল সব কিছু ঠিক চলছিল সামান্য চিন্তা আর উড়ু উড়ু উত্তেজনা ছাড়া।বাস ছুটছে বগুড়া থেকে রংপুরের দিকে।তৃনা জানালার পাশে বসেছে।জানালার কাচ শিশিরে ভেজা,হাত দিলে ছাপ কাটে।বেশী দূর চোখ যায় না।মইনুল ;তৃনার কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে কইল 'ঠোট শুকিয়ে যাচ্ছে....। কিছুক্ষণ পর কইল তৃনা তোমার ব্যাগে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট আছে?তৃনা কইল না,মনু ;তোমার পেট একদম খালি?কিছু খাওনি।আমার বেগে চকোলেট, চিপস আছে; খাও, পানি পান কর ভালোলাগবে।ব্যাগে হাত দিতে দিতে মইনুল কইল তৃনা আমাকে জানালার পাশে দাও,খারাব লাগছে।বমি করবো।জানালা খুলতেই ঠাণ্ডা বাতাসের দলা বাসে ঢুকল।পেছন থেকে এক মহিলা কর্কশ কন্ঠে কইল জানালা লাগান আমার শ্বাস কস্ট হয়।তৃনা ;মইনুলের মাথায় হাত বুলায় সাথে মহিলাকে বুঝিয়ে অন্য হাত ঘাড়ে রেখে কয় তোমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মনু?

♦সূর্য নৈঋত কোনে কুয়াশা ভেদ করে কিরন লাগছে গায়ে।বাস গন্তব্যে চলে এসেছে।মইনুলের অবস্থা খাবাপ দেখে আগেই নামতে চেয়েছিল তৃনা।মইনুল নামবে না।অনেক বার বমি করেছে লালা ছাড়া আর কিছুই পড়েনি।খুব কষ্টে বাস থেকে নামলো মইনুল, একটু সামনে এগোতেই জ্ঞান হারিয়ে পরে ভাঙা কংক্রিট পীচ রাস্তায়।তৃনার চিৎকার।জ্ঞান নেই মইনুলের।চারপাশে ভীর।একটি তরুন উষ্কখুষ্ক ছেলে সিএনজি ডেকে নিয়ে এলো।

♦সিএনজি চলছে; উষ্কখুষ্ক ছেলেটা ড্রাইভারের পাশে বসেছে।তৃনার উরুতে মইনুলের মাথা।নাকে মুখে ফেনা।কালো হয়ে গেছে মইনুলেরর মুখটা।তৃনার কাজল চোখের তল থেকে সারা মুখে ছড়ায়ছে,শরীর কেপে কেপে উঠছে,অশ্রুজল থেমে থেমে পরছে।তৃনা প্রলাপ করে বলছে কিছু হয়নি মনু।মনু দেখো চলে এসেছি।মনু............

♦জরুরী বিভাগে ঘুমিয়ে আছে মইনুল।ডাঃ জানিয়েছে স্ট্রকে মইনুলের মৃত্যু হয়েছে মিনিট ২০আগে।তৃনার কাছে সব অন্ধকার লাগছে।কিসের চাপে যেন সবকিছু থমকে আবছা হয়ে আছে।আগুন্তুক উষ্কখুষ্ক ছেলেটি বলছে আপু ধৈর্য ধরেন শক্ত হন।
তৃনা অসার মূর্তির মতো চেয়ে রইছে শূন্যে,মিনমিন করে বলছে কেন আমাকে বললে না মনু তুমি আর পারছনা.....।কেন আমাকে এতো বছর ধৈর্যে রেখে একা চলে গেলে কিছু না বলে হাজার প্রশ্নের সমুদ্রে।
কি করলে মনু........

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×