somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীঠাকুরের "ইচ্ছাপূরণ" এর আধুনিক ভার্ষণ ..... রস+আলো থেকে নেওয়া

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুবলচন্দ্রের ছেলে সুশীলচন্দ্রের কথা খেয়াল আছে? ওই যে, যে ছেলে পাড়াময় সবাইকে অস্থির করিয়া রাখিত। বাপ মাঝে মাঝে শাসন করিতে ছুটিতেন কিন্তু বাপের পায়ে ছিল বাত, আর সুশীল হরিণের মতো দৌড়াইতে পারিত; কাজেই কিল চড়-চাপড় সকল সময় ঠিক জায়গায় গিয়া পড়িত না।

এভাবেই নানান যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সুশীল একদিন ভাবল, আহা, আমি যদি বাবার মতো হতে পারতাম! অন্যদিকে সুবলচন্দ্র ভাবল, আহা! আমি যদি আবার ছেলের বয়সে ফিরে যেতে পারতাম! একদিন ইচ্ছাঠাকরুন তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করল। সুবল হয়ে গেল সুশীল আর সুশীল হলো সুবল। তারপর তো কত কাহিনি! সব তো বলা সম্ভব না। পড়া না থাকলে পড়ে নেবেন।

এর প্রায় কয়েক যুগ পরের ঘটনা। মেঘে মেঘে বেলাও যেমন বেড়েছে, ইচ্ছাঠাকরুনের বয়সও তেমনি কম হয়নি। রবিঠাকুরের সেই সুশীলচন্দ্রেরই ছেলের ঘরের নাতির নাতির নাতি বসবাস করে এখন ঢাকা শহরে। নাম ধ্রুব। চাকরি করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। একেবারে গাধার খাটনি খাটিয়ে নেয় তারা। তবে বেতনও সে রকমই। তাই বিয়ের বাজারে ধ্রুব বেশ দামি পাত্র হয়ে উঠল। তো, এমন হলে যা হয় আর কি! একদিন আত্মীয়স্বজনেরা মিলে ধ্রুবকে বিয়ে দিয়ে দিল। মেয়েটিও ভারি লক্ষ্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে অনার্স পাস করে বেরিয়েছে। নাম সুস্মিতা। ভালোই চলছিল সংসার। দেখতে দেখতে কয়েক বছর পার হয়ে গেল। এর মধ্যে তাদের সংসারে দুটি ফুটফুটে কন্যারও আগমন ঘটল। এমনই এক সুখের দিনে হঠাৎ ধ্রুবর মাথা বিগড়ে গেল। আমি সারা দিন অফিসে খেটে মরি আর সুস্মিতা সারা দিন বাসায় থেকে পায়ের ওপর পা তুলে খাবে, তা হবে না। সংসারে আর কী কাজ! সে নিয়ে সুস্মিতার সঙ্গে তুমুল ঝগড়াঝাটি। সেদিনই সন্ধ্যায় ধ্রুব মনে মনে ভাবল, আহা, যদি এমন হতো আমার শরীরে সুস্মিতা চলে এল আর আমি চলে গেলাম সুস্মিতার শরীরে! তাহলে সে বুঝত আমি অফিসে কী পরিশ্রমটাই না করি, আর সে বাসায় থেকে কী আরামটাই না করে!

ইচ্ছাঠাকুরন তখন সেই বাসার ছাদে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। ধ্রুবর মনের ইচ্ছা জানতে পেরে অনেক দিন পর আবার মুচকি হাসলেন।

পরদিন সকালে ধ্রুব ঘুম ভেঙে দেখে সে সুস্মিতা হয়ে গেছে। তখনই সে বিছানা ছেড়ে রান্নাঘরে গেল। সকালের নাশতা তৈরি করল, বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করল। তাদের নাশতা খাওয়াল। টিফিন বক্সে টিফিন ভরল। তাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবার বাসায় এসে স্বামীর (সুস্মিতা) জন্য চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে টেবিলে নাশতা দিল। তাকে তৈরি হতে সাহায্য করল।
স্বামী অফিসে চলে যাওয়ার একটু পরেই ফ্রিজ খুলে দেখে কোনো বাজার নেই বাসায়। প্রথমে গেল ব্যাংকে। এ মাসের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়নি। সেখানের লম্বা লাইন পেরিয়ে গেল বাজারে। মাছ বাজারের নোংরা কাদা পেরিয়ে বাজারটাজার করে সে যখন বাসায় এল তখন অলরেডি দুপুর একটা। তরকারি-মাছ কুটে দ্রুত সে দুপুরের খাবার চড়াল চুলায়। দেখতে দেখতে আড়াইটা। সে ছুটল বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে। বাসায় এনে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে দেখে বাথরুমে একগাদা কাপড় পড়ে আছে। সেগুলো ধুয়ে ছাদে নাড়তে গেল। ততক্ষণে তার শরীর আর চলছে না। কিন্তু রান্নাঘরসহ পুরো বাড়িই যে এখনো নোংরা হয়ে আছে। সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে কোন দিক দিয়ে বিকেল হয়ে গেল টেরই পেল না। বিকেলে বাচ্চাদের জন্য একটু সবজি নুডলস বানিয়ে তাদের দিতে দিতেই স্বামী এসে হাজির। তার জন্য আবার তখনই চুলায় চায়ের পানি চড়াল। আবার রাতের খাবার রেডি করে তাদের সবাইকে খাইয়ে বিছানায় যখন এল তখন রাত এগারোটা। শরীর আর একটুও চলছে না। কোনো রকমে শরীরটা বিছানায় ছেড়ে দিল। স্বামীরূপী সুস্মিতা এইচবিওতে (ইটস নট টিভি, ইটস এইচবিও) একটা মুভি দেখছিল তখন। ধ্রুবর এই অবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। মুভি দেখা বাদ দিয়ে পরম মমতায় কাছে টেনে নিল তাকে।

পরদিন সকাল। ঘুম থেকে উঠেই আবার এত কাজের কথা মনে হতেই ধ্রুবর শরীরে জ্বর চলে এল। সে মনে মনে প্রার্থনা করা শুরু করল, যা ভেবেছিলাম ভুল ভেবেছিলাম। হে ইচ্ছাঠাকরুন, আমাকে আজই এক্ষুনি আবার আগের মতোই বানিয়ে দাও। একদিনেই আমার ভুল ভেঙে গেছে।

ইচ্ছাঠাকরুন তখন মুচকি হেসে ধ্রুবকে বললেন, ‘আমি খুব খুশি যে তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ। এবং তুমি যা চাও তা-ই হবে। তোমাকে আমি আবার আগের ধ্রুবই বানিয়ে দেব। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে। আজ এক্ষুনি তো তোমাকে আমি আবার আগের ধ্রুব বানাতে পারছি না। কালকে রাত এগারোটার আগে বললেও হতো। তোমাকে এখন দশ মাস দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে যে।


source
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×