somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন পকেটমার ও একটি চিঠি

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে বিরামহীনভাবে। রেইনকোটটা গায়ে চাপিয়ে বৃষ্টির মধ্যে জলন্ত সিগারেটটা থেকে ধোয়া উড়াতে উড়াতে প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দিকে হাঁটছিলাম। উদ্দেশ্য একটা মানুষকে খুজে বের করা যাকে আমি চিনি না। এমনকি নামটা প্রর্যন্ত জানিনা। লোকটার সাথে আজকেই খুব ভোরে আমার দেখা হয়েছিল শাহবাগ মোড়ে। এক পলক দেখছিলাম শুধু। শুধুমাত্র স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে আবার যাচ্ছি তাকে খুজতে। অবশ্য আমার স্মৃতিশক্তির উপর আমার বিশ্বাস আছে।

দুপুর প্রর্যন্ত ব্যর্থ খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না লোকটাকে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কেন যে কাজটা করতে গেলাম! নিজের উপরই এখন বিরক্তি লাগছে। অবশ্য আমার দোষটাই বা কি? এখন মানুষের বাইরেটা দেখে ভিতরটা বোঝা যায়না। এই লোকটাই যেমন কত সুন্দর পরিপাটি জামা কাপড় পড়ে অপিসে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে ছিল। তার মানিব্যাগটাও যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান মনে হচ্ছিল। যখন তার পকেট থেকে মানিব্যাগটা আমার হাতে চলে আসলো তখন দেখলাম আমার অনুমানটাও ভুল ছিল না। ভেতরে বেশ কতগুলা কড়করে এক হাজার টাকার নোট। অন্যসময় হলে টাকা গুলা নিয়েই মানিব্যাগটা ছুড়ে দিতাম ডাস্টবিনের দিকে। কিন্তু কি মনে করে যেন আজ ভিতরটা খুজলাম। গোটা গোটা হাতে লেখা একটা ছোট চিঠি।
“আব্বু, মা বলে আমি নতুন জামা চেয়েছি বলে তুমি বাড়িতে আসো না। আব্বু আমার নতুন জামার দরকার নেই। আমি তো ঈদের দিন কোথাও যাব না। তুমি তারতারি বাড়িতে চলে আসো।’’

এতটুকু পড়েছি আর পড়তে পারলাম না। চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা ছোট্ট শিশুর মুখ যে কিনা পথ চেয়ে বসে আছে তার বাবার আশায়। ও জানে যতই নিষেধ করুক ওর বাবা ওর জন্য নতুন জামা না নিয়ে আসবে না। ভেসে উঠছে ঘামে ভেজা সেই বাবাটির মুখ যে তার সন্তানের এই চিঠি পড়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে “পাগল ছেলে আমার। তোর জন্য নতুন জামা না নিয়ে কি আমি বাড়ি আসতে পারি?” আর আমি কি করলাম? সেই জামাটা কেনার টাকাটা কেড়ে নিলাম!

সারাদিন অনেক ঘুরলাম। পকেটে আরও দু চারটে মানিব্যাগ এল। কিন্তু সকালের ঐ লোকটা আর তার চিঠিটা মাথা থেকে নামাতে পারছিলাম না। যতবারই ভেবেছি যে আমাদের এত আবেগি হলে চলবে না ততবারই মনে পড়ে যাচ্ছিল।

শেষমেশ সন্ধ্যার পড়ে আবার শাহবাগের মোড়ে গেলাম না পেরে। কোথায় যেন শুনছিলাম বিশেষ মানুষদের মধ্যে নাকি মনের টান থাকে। এই যেমন ধরেন প্রেমিক প্রেমিকা। আমার সাথেও ঐ লোকটার একটা মনের টান বোধহয় ছিল। হয়ত দুইজনেরই মন খারাপ ছিল তাই। কি জানি হয়ত তার বাচ্চাটা আর তার চিঠিটাও হতে পারে। ঠিক আমার মন যেটা বলছিল তাই। লোকটা দাড়িয়ে আছে ওভারব্রিজের উপরে। উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ছুটে যাওয়া ব্যস্ত ট্র্যাফিকগুলোর দিকে। পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম নিঃশব্দে। মন খারাপের সময়ে সম্ভবত খুব সহজেই মানুষের আপন হওয়া যায়।দু চারটে কথাতেই লোকটার অনেক আপন হয়ে গেলাম। গড়গড় করে বলে দিল তার দুঃখের কথাগুলা, সকালে মানিব্যাগের সাথে হারানো তার বেতন আর ঈদ বোনাসের টাকাগুলার কথা। এরপর আজ সারাদিনে পকেটমারের সব টাকা আর তার কাছ থেকে নেয়া সব টাকা তার হাতে তুলে দিলাম। শুধু বললাম আমার তো ফিরে যাওয়ার মত বাড়ি নেই আপনি যান এই টাকাগুলো নিয়ে। এরপর তাকে একটা কথা বলারও সুযোগ না দিয়ে হাটা শুরু করলাম। পিছন ফিরে তাকালে হয়ত দেখতে পেতাম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা একটা চেহারায় ভাসছে কৃতজ্ঞতা, সম্মানবোধ আর ভালবাসা যার কোনটি পাবারই যোগ্যতা আমার নেই। আমার জন্য থাকতে পারে ঘৃণা শুধুই ঘৃণা।


৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×