somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোয়েটিক গদ্য | শাদা বাড়ি

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন পর দেখলাম স্বপ্নটা। একটা ধবধবে শাদারঙা বাড়ির সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি। ভিতর থেকে খুব পরিচিত গলায় কেউ ডাকছে। নইমুল, চলে আসো। অযথা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার কি মানে? অথচ কন্ঠটা যে কার, ধরতে পারিনা।

শাদা বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আমি আসলেই কোনো মানে খুজে পাইনা। কারণ বাড়িটার কোনো দরজা নেই। কোনো জানালা নেই। ভিতরে আমি ঢুকবো কিভাবে? দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অস্থিরতা বাড়ে আমার। চলেও যেতে পারিনা কোথাও, অথচ ভিতরে ঢোকারও কোনো পথ পাইনা। ঠিক তখন আসে শব্দটা। একটা খসখসে মোটা কন্ঠের কান্নার শব্দ। নারীকন্ঠ নাকি পুরুষ, স্বপ্নের মাঝে আমি আলাদা করতে পারিনা। কান্নার শব্দটা দ্রুতোই কাছে এগিয়ে আসতে থাকে।

অস্থিরতার চরম সীমায় পৌছে ঘুম ভাঙে আমার। আজও ভাঙলো। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে চারপাশের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করলাম। জানালার ওপাশে শীতের ঘোলাটে রোদ। রাস্তায় রিকশার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাইরে লোকজনের হইহল্লাও চরমে। ফোনের ডায়ালে তাকিয়ে প্রতিদিনের মতো বিষণ্ণ একটা হাই তুললাম। দুপুর নামছে নগরীর বুকে। আজও ঘুম ভাঙলো পৌনে একটায়! তার আগে অবশ্য খেয়াল করা হয়ে গেছে, সাতটা মিসকল। লিস্ট চেক করে দেখলাম চারজন মিলে আমাকে সাতবার ধরতে চেষ্টা করেছে ফোনে। তখন আমি কোথায় ছিলাম?

ইদানিং এমন হয়েছে। রাত জেগে লিখবো কিংবা বই পড়বো কিংবা সিনেমা দেখবো। ঘুমুতে ঘুমুতে বেজে যাবে ভোর পাঁচটা। এলাকার মসজিদে মসজিদে ফজরের আজান পড়ে যাবে। নানাভাই অথবা নানী নড়ে চড়ে ডাইনিং এ এসে পানির জগ ভরবেন, তার শব্দ পাবো।

ঠিক তারপরেই আমার ঘুমের পালা শুরু হয়। এমনটা ঠিক নিয়ম নয়। তবু আমার নিয়ম এমনি দাঁড়িয়েছে। রাতে যাদের কাজ করতে হয়, তাদের জন্য এমনি হয়তো সাধারণ ঘটোনা। আমি এ্যাবনরমালি এইসবের মধ্যদিয়ে যাই। যে ই ব্যাপারটা জানতে পারে, আমার সম্পর্কে একটা তাৎক্ষণিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এইভাবে চললে জীবনে কিছু করতে পারবে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। বেলা একটা, দেড়টা পর্যন্ত ঘুম? অমানুষ! অমানুষ!

হিসেব করে দেখেছি সাত/আট ঘন্টার বেশি আমি ঘুমাই না মোট ২৪ ঘন্টায়। আদতে হয়তো আমার চিন্তা ভাবনাও সমাজ বিচ্ছিন্ন রকমের হয়ে গেছে। আর সমবয়সি মানব-মানবীরা যখন ক্যারিয়ার নিয়ে দৌড়ুচ্ছে এই ভেবে- বিশ্ববিদ্যালয় গর্বের সাথে পাশ দিতে হবে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী নতুবা অন্তত ব্যাংকে ভালো চাকুরি করতে হবে, আমি তখন দিন পার করছি দুঃস্বপ্নের অর্থ বের করে।

আমার চোখের সামনে দুবোন আছে, ছোটো। ওদের নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা কি? বয়স বাড়তে থাকা জয়িফ পিতার সাথে এক দীর্ঘ সংগ্রামের জীবন কাটানো স্বপ্নগ্রস্থা মা বসে আছেন দুরের কোনো গাঁয়ে। ইদানিং সেলাইমেশিনে বসলে কিংবা বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে হলেও যার নাকের ডগায় চড়ে বসে ভারি পাওয়ারের চশমা। তার ব্যাপারে আমার কি করণীয়?

এইসব অনেক ভেবে দেখেছি। ‘নিয়তি চায় আমাকে শেকল মেকল পরিয়ে কুঁজো, ভুঁড়িয়াল, চোখের নিচে কালিওয়ালা কেরানী বানাতে। যাকে ঘিরে থাকবে নিত্য চিন্তা। এ মাসটা কেমন যাবে?’ যে দেশে বসবাস চলছে, তার প্রতিটা পথ আজকে কতোটা ভয়াবহ জানলে এক অবষাদ হাতে-পায়ে-মগজে এসে ভর করে। ওই কেরানী হওয়াটাই তো এখন সবার লক্ষ্য। ব্যাংকে চাকরি? ডিগ্রী ব্যাপার না। পাশ দিয়েছো, সাথে করে লাখ আষ্টেক টাকা নিয়ে আসো। তবেই জোটার সম্ভাবনা জাগবে, তবু জেনে রাখা ভালো, ওই টাকার থলী নয়ে তোমার মতো দাঁড়িয়ে আছে আরও গাদা গাদা। সুতরাং ওতে শতভাগ জুটছেনা। লবিং বলে একটা ব্যাপার এইখানে শক্ত আগাছার মতো পেঁচিয়ে আছে। পরিচিত লোক লাগে, তোষামোদ লাগে।

এইসব ভাবতে ভাবতে কোনো কোনো প্রগতিশীল বন্ধুর কথাও মাথায় চলে আসে, কাজের অভাব মানে? বণিক সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চায়ের দোকান দিয়ে বসোনা। হ্যাঁ, হিসেব করে দেখেছি দীর্ঘ পড়ালেখার পাট চুকিয়ে লাখ দশেক টাকা খরচ করে দুর্নিতির ধজাধারিদের আখড়ায় শামিল হবার চেয়ে ওই চায়ের দোকান দিয়ে ফেলাই ভালো। কাজের লোকের অভাব হলেও চায়ের দোকানে, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেশ উদ্ধার করার লোকের তো অভাব নেই এখানে!

সুতরাং, আদতেই চাকুরি নিয়ে আমি ভাবছিনা। স্বর্ণজ্জল ক্যারিয়ারের কথা আমি ভাবছিনা। একাডেমিক পড়ালেখা নিয়ে একদিন আমার তুমুল ফ্যাসিনেশন ছিলো। কোটি কোটি মেধাবীদের ভিড়ে আমি হয়তো অযোগ্য ছিলাম, সেই ফ্যাসিনেশন পুরণের সুযোগ আমাকে দেওয়া হয়নি। তবে আদতে সুযোগ আমি করে নিয়েছি আমার মতো। উইজডম জিনিসটা শেষতক অর্জন করা না গেলেও তার সুবাস পাওয়া যায়। সে মাদকতা মানুষকে টেনে নিয়ে যাবে এক অজ্ঞাত কিন্তু সার্থক জগতের দিকে। হয়তো আমি আছি সেই জগতের সন্ধানে। সঙ্গি অল্পকটা বস্তু। স্রষ্টায় অগাধ বিশ্বাস আর ভালবাসা। সাধ্যমতো চারপাশে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি, নিজে দুহাত ভরে নিতে চেষ্টা করি। আমার কাছে কোনোদিন মনে হয়নি, ভালবাসা আর ঘৃণা একটা মুদ্রার দুপিঠের মতো। আমার কাছে ভালবাসা সম্পুর্ণ আলাদা একটা মুদ্রা। ঘৃণা অপর একটা। আমি ভাগ্যবান, আমার কাছে প্রথম মুদ্রাটা আছে।

তাহলে কিসের কথা ভাবছি আমি? কর্মময় একটি জীবনই আমি পার করতে চাই। কিন্তু সে জীবনটা চাই আমার বিশ্বাসের সাথে তাল মিলিয়ে কাটাতে। প্রচলিত বিশ্বাসে আমার জন্মগত এলার্জি। চিরদিনই কানে কানে কেউ বলে এসেছে, ভাঙ্গো। এইসব ভাঙ্গো। প্রতিটা বয়সেই আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আফসোস রাখিনি। এই তারুণ্যে এসেও ঠিক তাই করবো, যেটা আমার বিশ্বাস আমাকে করতে বলে। কে কি বলেছে জীবন নিয়ে, খোঁজ রাখার চেয়ে আবিষ্কার করা জরুরি যে, বুকের ভিতরেও দুটো অদৃশ্য কান আছে মানুষের। কারণ সেই কান দিয়েই শোনা সম্ভব, জীবন কি চায় তোমার থেকে, তুমি কোন পথে যাবে!

বিছানায় বসেই আমি আরেকবার জানালার বাইরে তাকালাম। ওই দুঃসহ স্বপ্নটা ঠিক কি বলে আমাকে? অস্থির না হয়ে অপেক্ষা করতে বলে? দরজাহীন ঘরটিতে কি একসময় ফুটে উঠবে উন্মুক্ত দ্বার? পরবর্তি কর্মযজ্ঞের জন্য আমি তৈরী হই। নিজেকে তৈরী করার জন্যই আমরা রোজ বিছানা থেকে নামি। নামতে হয়।
------------------------------

এনামুল রেজার গল্প
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×