বাংলাদেশের ডাকটিকিট
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আজ থেকে ঠিক ৩৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশে প্রথম
পূর্ণাঙ্গ ডাকটিকিটের সেট প্রকাশিত হয়।
কোনো দেশের অভ্যন্তরে বা নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে চিঠি পাঠানোর জন্য ডাক মাশুল হিসেবে চিঠির খামের ওপর নির্দিষ্ট মূল্যের যে টিকিট ব্যবহার করা হয় তাকেই ডাকটিকিট বলা হয়। একটি দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ডাকটিকিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকটিকিট একটি দেশের পরিচয় বহন করে। ডাকটিকিটে যেহেতু ডাকটিকিট প্রকাশকারী দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয় তাই ডাকটিকিটের মাধ্যমে সে দেশ সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের সেটটি প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তার কিছুদিন পর ১০ এপ্রিল একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠন করার পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে প্রচারের জন্য নিজ দেশের নামে ডাকটিকিট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অবশেষে বহুল প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের ডাকটিকিটের প্রথম সেটটি প্রকাশ করা হয়। সে সময় প্রবল যুদ্ধ চলছিল বলে বাংলাদেশ থেকে ডাকটিকিটগুলো অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতা ও লন্ডনের বাংলাদেশ মিশন থেকে বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট হিসেবে ৮টি ডাকটিকিটের একটি সেট অবমুক্ত করা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে ডাকটিকিট প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানি ডাকটিকিটের ওপর 'বাংলাদেশ' কথাটি হাতে লিখে বা রাবার সিল মেরে সেই ডাকটিকিটগুলো ব্যবহার করা হত।
বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের ডিজাইনার ছিলেন বিমান মলি্লক। তিনি ব্রিটিশ পোস্টমাস্টার জেনারেল জন স্টোনহাউসের সহায়তায় ৮টি ডাকটিকিটের ডিজাইন তৈরি করেন। এ ডাকটিকিটগুলো প্রকাশে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৯ জুলাই ডাকটিকিটগুলো প্রকাশের পর তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয় এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সমর্থনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাংলাদেশ ডাকবিভাগ পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করে। বিজয়ের পর প্রথম ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন উপলক্ষে 'শহীদ মিনার'-এর ছবি সংবলিত ২০ঢ়. মূল্যমানের প্রথম স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৩৯ বছরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বৈচিত্র্যময় অসংখ্য ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে যা পৃথিবীব্যাপী ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের কাছে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ সাধারণত ২ ধরনের ডাকটিকিট প্রকাশ করে থাকে। যথা : ডেফিনিটিভ বা সাধারণ ডাকটিকিট (এই ডাকটিকিটগুলো খুবই সাধারণ মানের, আকারে ছোট এবং বারবার ছাপানো যায়) এবং কমেমুরেটিভ বা স্মারক ডাকটিকিট (এই ডাকটিকিটগুলো কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ঘটনা, দেশের বৈচিত্র্যময় বিষয়সমূহ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ স্মরণে প্রকাশিত হয় এবং দেখতে আকর্ষণীয়)। এছাড়া সংগ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য বড় আকারে স্যুভেনির শিটও প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম ডেফিনিটিভ ডাকটিকিটের সেটটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালের ৩০ এপ্রিল। এই সেটে বিভিন্ন মূল্যমানের ১৩টি ডাকটিকিট ছিল। এছাড়াও ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর Universal Postal Union-এর শতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রথম স্যুভেনির শিটটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ত্রিকোণাকৃতির ডাকটিকিটটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালের ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ডাকটিকিট প্রদর্শনী 'বাংলাপেঙ্ '৮৪ উপলক্ষে। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সব ডাকটিকিট বিদেশ থেকে ছাপিয়ে আনা হত। পরবর্তীতে গাজীপুরে স্থাপিত দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ১৯৮৯-এর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত ডাকটিকিটসমূহ ছাপানো হচ্ছে। ২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রথমবারের মতো চ্যারিটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বাংলাদেশের সবচাইতে দুষ্পাপ্য এবং মূল্যবান ডাকটিকিটটি হলো ১৯৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ২০০ বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ছিদ্রবিহীন স্যুভেনির শিটটি। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ডাক বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশীয় ফুল, ফল, পশুপাখি নিয়ে আকর্ষণীয় ডাকটিকিট প্রকাশ করে যাচ্ছে। ২০১০ সালে ইতোমধ্যে ডাক বিভাগ ২১টি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ১৯৭১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশ ডাকবিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ডাকটিকিটের সংখ্যা প্রায় ১০০০। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিষয় ও আকৃতির ডাকটিকিট প্রকাশ এবং তার প্রচারণার মাধ্যমে দেশের সব বয়সের মানুষের মধ্যে ডাকটিকিট সংগ্রহের মতো আকর্ষণীয় শখটিকে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।
***********************
বাংলাদেশের ডাকটিকিটের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন_মো. আবু আল হাসান
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন