somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুস্মৃতি : স্থাপত্যের গল্প

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১৫ সালের শেষ দিকে ভর্তি হই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে।
স্থাপত্য নিয়ে লিখব লিখব ভেবেও লেখা হচ্ছে না কিছুই। এই এক জায়গায় নিজেকে সুবিখ্যাত স্থপতি লুডউইগ মিয়েস ভান দার রো র প্রকৃত অনুসারী মনে হয়। তিনি বলেছিলেন, Don’t talk. Build. এমন টাই ঘটছে গত দেড় বছরের ছাত্র জীবনে। বানিয়েই গেছি শুধু, ডিজাইন করেই যাচ্ছি, ভালবাসার বিষয়টা নিয়ে লেখা হয় নি তেমন কিছুই। সাথে যুক্ত হয়েছে স্থাপত্য জীবনের অমানুষিক পরিশ্রম। যারা স্থাপত্য পড়েন নি, জানবেন না এই পরিশ্রম কেমন। শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞানের মেল বন্ধন যে শাখায় এসে এক সাথে ঘটেছে, তাঁর পড়ালেখায় একটু বেশি ই পরিশ্রমের হবে, সন্দেহ কী? কিন্তু শরীর কিংবা মন কখনো কি চায় এই প্রতিকূলতা সহ্য করতে? তাই স্থাপত্য কে প্রস্থর হৃদয় কিন্তু রূপসী এক প্রিয়তমা মনে হয়। নির্দয় কাঠিন্য দিয়ে বার বার পর্যুদস্ত করে, কিন্তু এক অদ্ভুত তীব্র বন্য ভালবাসায় ছাড়া অসম্ভব তাকে।
স্থাপত্যের সংজ্ঞা দিতে আমার ইচ্ছে করে না। স্থাপত্য বলা মাত্র বেশির ভাগ মানুষ বুঝে নেন, আমরা বিল্ডিং ডিজাইন করি- আর আমরা যে দালান কোঠা নয়, আমরা স্থান (স্পেস ) ডিজাইন করি তার মর্মার্থ অনেকেই বোঝেন না। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই স্থাপত্য নিয়ে বাংলাদেশে সচেতনতা আর চর্চা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে হারে জ্ঞানের পরিধি বাড়ে নি সাধারণ মানুষের।তাই আমাদের কাজ মানুষের মনে এখনো দালান কোঠা ডিজাইন করবার ধারণাতেই সীমাবদ্ধ। প্রকৃত পক্ষে স্থাপত্যের পরিধি যে কতটা গভীর আর কতটা সমৃদ্ধ, তাঁর হিসেব কষতে গেলে একই কাতারে এসে দাঁড় করাতে হবে শিল্প, সাহিত্য বিজ্ঞান সহ জগতের যাবতীয় সমস্ত পার্থিব অপার্থিব জ্ঞান কে। স্থাপত্য দালান কোঠা বানায় না, স্থাপত্যে স্পেস কিংবা শুন্য স্থানকে ডিজাইন করে তাঁকে নান্দনিক ও ব্যবহারযোগ্যতার উপযোগী করে তোলা হয়। আর এই স্পেস ডিজাইনেই এসে পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান এসে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
এতসব জ্ঞান গম্যির কথা লেখার পরে আমার নিজেরই মাথায় ঢোকে না কিছু। নিজের গল্পই শুরু করা যাক।
আশৈশব আমার প্রধানতম সখ ছিল একটি। বই পড়া। চার পাঁচ বছর বয়েসে সেই সখের সাথে বাবা মা র আগ্রহে সংগীত ও যুক্ত হয়েছিল, পিতা শিক্ষক, মাতা গায়িকা, তাই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠে আমার আকর্ষণ আর আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাড়িয়েছিল একমাত্র শিল্প আর সাহিত্য। একজন কিশোরের কাছে যে সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক, তার কিছুই করা হয় নি কখনো। বাইরে বেড়ানো, ছুটো ছুটি, পাড়ার মাঠে খেলা, গ্রামে চলে যাওয়া-কিছুই না। আমার ছিল চার দেয়ালের ঘর আর গাদা গাদা বই। এই ছোট্ট কিন্তু অসংখ্য জানলার পৃথিবী থেকে কোনদিন বের হতে ইচ্ছে করত না। তখনো ইন্টারনেট আসে নি সেভাবে, মোবাইল ফোন কম্পিউটার অর্থবানের বিলাসিতার বস্তু। তাই আমাদের শৈশবে ছিল বই। আহা, সেদিন গেছে!
বয়েস যখন সাত, তখন চিকিৎসা জনিত কারনে কোলকাতায় গিয়ে থাকতে হয় প্রায় দু মাস। যে খানে থাকতাম, তাঁর নিচ তলায় তাকতেন এক খ্রীশ্চান বাঙালী শিল্পী, ঢাকা ছেড়ে কোলকাতায় চলে এসেছিলেন ৭১ এ, আর ফেরেন নি কখনো। ছোট্ট খাট্ট আমাকে রঙ তুলি দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হত তাঁর কাছে। ছবি আঁকা যে খুব ভালভাবে শিখেছিলাম, তা নয় কিন্তু। কিন্তু তিনি তাঁর চেয়েও বড় এক উপকার করেছিলেন আমার, আমার প্রৌঢ় শিক্ষক। গল্পের ছলে তিনি আমায় প্রতিদিন শেখাতেন ছবি আঁকার ব্যাকরণ গুলো, কম্পোজিশন, আলো ছায়া কিংবা পারস্পেকটিভের খেলা বুঝাতেন অসামান্য দক্ষতায়। আমার বিরক্তি লাগত না। একদম ছোট থেকেই ঢাউস ঢাউস বই পড়ে অকাল পক্ক হওয়ার দুর্নাম পেয়েছিলাম, তাই সাত বছরের আমিও সে সব কঠিন তত্ত্ব কথা শুনতাম মুগ্ধ হয়ে। কখনো কখনো গল্পে উঠে আসত লিওর্নাদো দ্য ভিঞ্চি, ভ্যান গঘ, মাইকেলেঞ্জেলোদের কথা, কেমন করে লিওর্নাদো দা ভিঞ্চি এক মহা জ্বালাতন কারী প্রহরীর মুখের আদলে তাঁর বিখ্যাত ‘লাস্ট সাপার’ ছবির জুদাসের মুখ এঁকেছিলেন, কেমন করে পাগলাটে ভ্যান গঘের ছবি পছন্দ করে নি তাঁর সময়ের কেওই, কেমন করে মাইকেলেঞ্জেলো রাতের পর রাত চিত হয়ে শুয়ে শেষ করতেন তাঁর ফ্রেস্কোগুলো। আর এ ভাবেই সাহিত্য সংগীতের পরে শিল্পের আরেক পৃথিবীর দরজা হাট করে খুলে গেছিল আমার সামনে, ভালবেসে ফেলেছিলাম ছবি আঁকাকে। তবে এ সবই বড্ডো ক্ষণস্থায়ী। দু মাস পরেই সব কিছু শেষ হয়ে গেল, আবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে, আধ ভর্তি স্কেচ বুক আর মাথা ভর্তি এক গাদা নতুন স্বপ্ন নিয়ে ফিরে এলাম স্বদেশে।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×