somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার" এর মত ছবি সেন্সর থেকে ছাড়া পাইলো কেমন?(১৮+)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অবশেষে অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে মুক্তি পেল মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী'র থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি।ছবিটি নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশাও সীমাহীন।সময়ের আলোচিত এবং প্রতিভাবান তারকাদের নিয়ে নির্মিত ছবি সুতরাং প্রত্যাশা থাকাটাই স্বাভাবিক।কিন্তু ছবিটি কি পারছে দর্শকদের সেই প্রত্যাশা মেটাতে?অবশ্য একটা ছবি সব শ্রেনীর দর্শকদের সন্তুষ্ট করবে তা ভাবাটাও অন্যায়।কিন্তু ছবিটি একটি বিশেষ শ্রেনীর দর্শকদের যে উপায়ে সন্তুষ্ট করছে তা নিয়ে কিছু কথা থেকেই যায়।

ছবিটিতে ঘর থেকে বের হওয়া একটা মেয়ে একা এই রাজধানীতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় তা ভালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।কিন্তু তা করতে গিয়ে পরিচালক যৌনতাকে যেভাবে হাতিয়ার করেছেন তা কখনোই সমর্থনযোগ্য না।এই সমাজে মেয়েরা নানাভাবে যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে তা সত্য।কিন্তু সেটাকে তো মার্জিতভাবেও উপস্থাপন করা যেত তাইনা? মার্জিত ভাবে উপস্থাপনের একটা উদাহরণ দেয়া যাক।কিছুদিন আগে "সোনা বন্ধু তুই আমারে ভোঁতা দা'দিয়া কাইট্যালা,পিরিতের কাঁথা দিয়া যাইত্যা ধইরা মাইর‌্যালা"গানটা শুনেছিলাম।গানটা নিঃসন্দেহে অশ্লীলতার ইঙ্গিত বহন করে।অথচ "আর কতো রাত একা থাকব" গানটাও কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যায় সেই একই ইঙ্গিতবাহী।কিন্তু মার্জিত উপস্থাপন দুইটা গানকে দুই মেরুতে নিয়ে গেছে।সুতরাং ফারুকী সাহেব যেভাবে অশ্লীলতাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন তা মানতে কষ্ট হয় বৈকি!

একটা সময় ছিল যখন রুচিশীল মানুষ সিনেমা হলে যাওয়া ভুলেই গিয়েছিল।কিন্তু সেই পথ থেকে বের হয়ে যখন দেশে ভালো ভালো রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এবং বলাকা, মধুমিতা, স্টার সিনেপ্লেক্স এর মতো হলগুলোর সৌজন্যে মানুষ আবার হলে যেতে আরম্ভ করেছে তখন ফারুকী সাহেব নতুন বোতলে করে কি সেই পুরনো জিনিসই নিয়ে এলেননা?তিনি কি আবার ভালো কিছুর আশায় থাকা দর্শকদের বিব্রত করলেননা?

যাদের ছেলে-মেয়ে আছে তারা বলুনতো ছেলে-মেয়ে নিয়ে যখন টিভি দেখেন তখন কনডমের বিজ্ঞাপন শুরু হলে বিব্রত হন কিনা?বা ছেলে-মেয়েরাও বাবা-মা'র সামনে ওই সময়ে বিব্রত হয় কিনা?আমার মনে হয় অবশ্যই হন।আচ্ছা তাহলে যারা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি মুক্তির প্রথম দিনে স্বপরিবারে দেখতে গিয়েছিলেন তারা যখন দেখলেন একটা গান গেয়েই স্টার হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে নায়ক বনে যাওয়া তপু সাহেব তিশার ইঙ্গিতপূর্ণ ফোন পেয়ে কনডম কিনছেন।তারপর যখন তিশা তার মন বদল করে তখন আবার সেই কনডম কিক করে আকাশে ছুড়ে মারছেন।সেই সময়ে ওই বাবা-মা তাদের সন্তানের সামনে কেমন বিব্রত হয়েছিলেন?বা ছেলে-মেয়েরা কেমন বোধ করেছিল বাবা-মায়ের সামনে!

বাংলা ছবিতে ইংরেজী গান তার লিরিকস হচ্ছে "বেবি আই ওয়ান্না ফাক ইউ", আর এই গান শুনে তিশার সেই বিখ্যাত ডায়ালগ "আপনার শুধু গান শুনলেই হয়ে যায়?নপুংশক!"তাছাড়া অনেকবার আকারে ইঙ্গিতে বলেও যখন তিশাকে রাজী করাতে পারলনা তখন তপু সাহেব বুকডন দিচ্ছেন।আর তার সাথে সাথে ন্যান্সি-হাবিবের সেই গান "ভিতর বলে দূরে থাকুক, বাহির বলে কাছে আসুক না!"।মারহাবা মারহাবা।ক্লাশ ফাইভের একটা ছেলেও যেন অশ্লীল ইঙ্গিতগুলো বুঝতে পারে তেমনই সহজবোধ্য করে পরিচালক ছবিটি বানিয়েছেন।তাকে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হবে বোধকরি।

ক'বছর আগে "মাতৃত্ব" নামক একটা ছবিতে মৌসুমী বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবার সময়ে স্তনবৃন্ত বের করেছিলেন বলে তা নিয়ে কত কিছু হল।অথচ মাতৃত্ব ছবিটির থীম ছিল অসম্ভব সুন্দর এবং ওই একটি ছাড়া আর কোন আপত্তিকর দৃশ্য বা সংলাপ ছিলনা।কিন্তু পুরো ছবি জুড়ে এমন অশ্লীল ইঙ্গিত বহনকারী থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি সেন্সর থেকে ছাড়া পেল বিনা বাধায়।কেমন কেমন যেন একটু খটকা লাগেই!

আমি সবাই কে বলবনা।ওদের বলে আর কী হবে!ওরা তো অভিনয় জগতে বা বয়সের দিক থেকে আবুল হায়াতের তুলনায় বাচ্চাই।তাই শুধু আবুল হায়াত সাহেবকে একটা অনুরোধ করতে চাই।জানি তিনি ব্লগ পড়বেননা।তবু পাঠকদের মধ্যে কেউ যদি তাকে কোনভাবে জানিয়ে দিতে পারেন তবে কৃ্তার্থ হব।হায়াত সাহেব আপনাকে সবাই "অসাধারন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং শক্তিশালী" অভিনেতাদের তালিকায় বেশ উপরেই স্থান দেয়।আপনি কি এই ছবিটি স্ক্রিপ্ট পড়ে করেছিলেন?নাকি ফারুকী নাম শুনেই লাফিয়ে পড়েছিলেন?আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ, আপনি একদিন বিপাশা-তৌকির,নাতাশা-শাহেদ এবং বিপাশা-তৌকিরের ছেলে আরীব না কি যেন নাম ওদেরকে নিয়ে ছবিটা দেখবেন।প্লিজ।আপনি ব্যস্ত মানুষ তাই পুরোটা না পারলে শুধু আপনার অভিনয় করা অংশগুলো দেখুন।দেখবেন যখন আপনার ছোট্ট নাতি তার বাবা-মায়ের সামনেই আপনাকে জিজ্ঞেস করবে দাদু "একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে কি চায়?" তখন বুঝবেন বুনো ওলে গলা কতটুকু চুলকায়।আপনি এই ছবির মাধ্যমে দর্শকদের যা দিয়েছেন তাকে আমি বুনো ওল ছাড়া আর কিছু বলে আখ্যায়িত করতে পারলাম না।দুঃখিত।

সারওয়ার ভাই বা ফারুকী সাহেব যাই হোকনা কেন তিনিএকজন গুনী পরিচালক।সুতরাং তিনি এইসব ছবি না বানিয়ে দুটো ভালো ছবি করুক।তাকে অবশ্যই সবাই মনে রাখবে।অথচ তিনি লিটনের ফ্ল্যাট থেকে শুরু করলেন, আমরা মেনে নিয়েছি।ফার্স্ট ডেট দেখেও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি, ভেবেছি ভুলতো মানুষই করে।কিন্তু মানুষ এতবার ভুল করতে পারেনা।সুতরাং ফারুকী সাহেবের উচিৎ এইসব ভদ্রতার মুখোশ পরিয়ে অশ্লীলতা নিয়ে এসে দর্শককে বোকা না বানিয়ে ভালো ছবি করা।

অবশেষে ছবিটি যাদের কাছে ভালো লেগেছে তাদের কাছে মার্জনা প্রার্থনা করছি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৪১
১৩৪টি মন্তব্য ১৩৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×