অবশেষে অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে মুক্তি পেল মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী'র থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি।ছবিটি নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশাও সীমাহীন।সময়ের আলোচিত এবং প্রতিভাবান তারকাদের নিয়ে নির্মিত ছবি সুতরাং প্রত্যাশা থাকাটাই স্বাভাবিক।কিন্তু ছবিটি কি পারছে দর্শকদের সেই প্রত্যাশা মেটাতে?অবশ্য একটা ছবি সব শ্রেনীর দর্শকদের সন্তুষ্ট করবে তা ভাবাটাও অন্যায়।কিন্তু ছবিটি একটি বিশেষ শ্রেনীর দর্শকদের যে উপায়ে সন্তুষ্ট করছে তা নিয়ে কিছু কথা থেকেই যায়।
ছবিটিতে ঘর থেকে বের হওয়া একটা মেয়ে একা এই রাজধানীতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় তা ভালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।কিন্তু তা করতে গিয়ে পরিচালক যৌনতাকে যেভাবে হাতিয়ার করেছেন তা কখনোই সমর্থনযোগ্য না।এই সমাজে মেয়েরা নানাভাবে যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে তা সত্য।কিন্তু সেটাকে তো মার্জিতভাবেও উপস্থাপন করা যেত তাইনা? মার্জিত ভাবে উপস্থাপনের একটা উদাহরণ দেয়া যাক।কিছুদিন আগে "সোনা বন্ধু তুই আমারে ভোঁতা দা'দিয়া কাইট্যালা,পিরিতের কাঁথা দিয়া যাইত্যা ধইরা মাইর্যালা"গানটা শুনেছিলাম।গানটা নিঃসন্দেহে অশ্লীলতার ইঙ্গিত বহন করে।অথচ "আর কতো রাত একা থাকব" গানটাও কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যায় সেই একই ইঙ্গিতবাহী।কিন্তু মার্জিত উপস্থাপন দুইটা গানকে দুই মেরুতে নিয়ে গেছে।সুতরাং ফারুকী সাহেব যেভাবে অশ্লীলতাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন তা মানতে কষ্ট হয় বৈকি!
একটা সময় ছিল যখন রুচিশীল মানুষ সিনেমা হলে যাওয়া ভুলেই গিয়েছিল।কিন্তু সেই পথ থেকে বের হয়ে যখন দেশে ভালো ভালো রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এবং বলাকা, মধুমিতা, স্টার সিনেপ্লেক্স এর মতো হলগুলোর সৌজন্যে মানুষ আবার হলে যেতে আরম্ভ করেছে তখন ফারুকী সাহেব নতুন বোতলে করে কি সেই পুরনো জিনিসই নিয়ে এলেননা?তিনি কি আবার ভালো কিছুর আশায় থাকা দর্শকদের বিব্রত করলেননা?
যাদের ছেলে-মেয়ে আছে তারা বলুনতো ছেলে-মেয়ে নিয়ে যখন টিভি দেখেন তখন কনডমের বিজ্ঞাপন শুরু হলে বিব্রত হন কিনা?বা ছেলে-মেয়েরাও বাবা-মা'র সামনে ওই সময়ে বিব্রত হয় কিনা?আমার মনে হয় অবশ্যই হন।আচ্ছা তাহলে যারা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি মুক্তির প্রথম দিনে স্বপরিবারে দেখতে গিয়েছিলেন তারা যখন দেখলেন একটা গান গেয়েই স্টার হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে নায়ক বনে যাওয়া তপু সাহেব তিশার ইঙ্গিতপূর্ণ ফোন পেয়ে কনডম কিনছেন।তারপর যখন তিশা তার মন বদল করে তখন আবার সেই কনডম কিক করে আকাশে ছুড়ে মারছেন।সেই সময়ে ওই বাবা-মা তাদের সন্তানের সামনে কেমন বিব্রত হয়েছিলেন?বা ছেলে-মেয়েরা কেমন বোধ করেছিল বাবা-মায়ের সামনে!
বাংলা ছবিতে ইংরেজী গান তার লিরিকস হচ্ছে "বেবি আই ওয়ান্না ফাক ইউ", আর এই গান শুনে তিশার সেই বিখ্যাত ডায়ালগ "আপনার শুধু গান শুনলেই হয়ে যায়?নপুংশক!"তাছাড়া অনেকবার আকারে ইঙ্গিতে বলেও যখন তিশাকে রাজী করাতে পারলনা তখন তপু সাহেব বুকডন দিচ্ছেন।আর তার সাথে সাথে ন্যান্সি-হাবিবের সেই গান "ভিতর বলে দূরে থাকুক, বাহির বলে কাছে আসুক না!"।মারহাবা মারহাবা।ক্লাশ ফাইভের একটা ছেলেও যেন অশ্লীল ইঙ্গিতগুলো বুঝতে পারে তেমনই সহজবোধ্য করে পরিচালক ছবিটি বানিয়েছেন।তাকে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হবে বোধকরি।
ক'বছর আগে "মাতৃত্ব" নামক একটা ছবিতে মৌসুমী বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবার সময়ে স্তনবৃন্ত বের করেছিলেন বলে তা নিয়ে কত কিছু হল।অথচ মাতৃত্ব ছবিটির থীম ছিল অসম্ভব সুন্দর এবং ওই একটি ছাড়া আর কোন আপত্তিকর দৃশ্য বা সংলাপ ছিলনা।কিন্তু পুরো ছবি জুড়ে এমন অশ্লীল ইঙ্গিত বহনকারী থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি সেন্সর থেকে ছাড়া পেল বিনা বাধায়।কেমন কেমন যেন একটু খটকা লাগেই!
আমি সবাই কে বলবনা।ওদের বলে আর কী হবে!ওরা তো অভিনয় জগতে বা বয়সের দিক থেকে আবুল হায়াতের তুলনায় বাচ্চাই।তাই শুধু আবুল হায়াত সাহেবকে একটা অনুরোধ করতে চাই।জানি তিনি ব্লগ পড়বেননা।তবু পাঠকদের মধ্যে কেউ যদি তাকে কোনভাবে জানিয়ে দিতে পারেন তবে কৃ্তার্থ হব।হায়াত সাহেব আপনাকে সবাই "অসাধারন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং শক্তিশালী" অভিনেতাদের তালিকায় বেশ উপরেই স্থান দেয়।আপনি কি এই ছবিটি স্ক্রিপ্ট পড়ে করেছিলেন?নাকি ফারুকী নাম শুনেই লাফিয়ে পড়েছিলেন?আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ, আপনি একদিন বিপাশা-তৌকির,নাতাশা-শাহেদ এবং বিপাশা-তৌকিরের ছেলে আরীব না কি যেন নাম ওদেরকে নিয়ে ছবিটা দেখবেন।প্লিজ।আপনি ব্যস্ত মানুষ তাই পুরোটা না পারলে শুধু আপনার অভিনয় করা অংশগুলো দেখুন।দেখবেন যখন আপনার ছোট্ট নাতি তার বাবা-মায়ের সামনেই আপনাকে জিজ্ঞেস করবে দাদু "একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে কি চায়?" তখন বুঝবেন বুনো ওলে গলা কতটুকু চুলকায়।আপনি এই ছবির মাধ্যমে দর্শকদের যা দিয়েছেন তাকে আমি বুনো ওল ছাড়া আর কিছু বলে আখ্যায়িত করতে পারলাম না।দুঃখিত।
সারওয়ার ভাই বা ফারুকী সাহেব যাই হোকনা কেন তিনিএকজন গুনী পরিচালক।সুতরাং তিনি এইসব ছবি না বানিয়ে দুটো ভালো ছবি করুক।তাকে অবশ্যই সবাই মনে রাখবে।অথচ তিনি লিটনের ফ্ল্যাট থেকে শুরু করলেন, আমরা মেনে নিয়েছি।ফার্স্ট ডেট দেখেও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি, ভেবেছি ভুলতো মানুষই করে।কিন্তু মানুষ এতবার ভুল করতে পারেনা।সুতরাং ফারুকী সাহেবের উচিৎ এইসব ভদ্রতার মুখোশ পরিয়ে অশ্লীলতা নিয়ে এসে দর্শককে বোকা না বানিয়ে ভালো ছবি করা।
অবশেষে ছবিটি যাদের কাছে ভালো লেগেছে তাদের কাছে মার্জনা প্রার্থনা করছি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




