১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল।
ভোরে ঢাকার সোবাহান বাগ এবং ধানমন্ডির অধিবাসীরা জানলো কিছু একটা হয়েছে..গোলাগুলি আর সামরিক যানের হুংকারে তাদের ঘুম ভেঙেছে।
তারপর রেডিওতে ঘোষনা...আমি মেজর ডালিম বলছি...
মানুষ জানলো জাতির পিতা এবং তার পরিবারবর্গ সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নির্মম ভাবে নিহত হয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশী রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে এরশাদ - কিন্তু শেখ মুজিবকে কে মরতে হলো।
শেখ মুজিবের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল পাকিষ্তান ভেঙে বাঙালী জাতির একটা ঠিকানা তৈরী করা।
১৯৭২ সাল থেকেই প্রতিবিপ্লবী এবং পরাজিত শত্রুরা ধীরে ধীরে সংগটিত হচ্ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পালিয়ে থাকা ঘাতক/দালালরা ধর্মের নামে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সফল হয়েছে। যার একটা উদাহরন হলো - ৭৫ এর নির্মম হত্যাকান্ডের আগে অনেক মুসলিম দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে একটা যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশকে পুর্নগঠনে বাধা সুষ্টি করতে সফল ভাবে সংগঠিত হয়েছে জাসদ। দেশে এরা আর বিদেশে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে সম্পূর্ন বিপর্যস্থ করে তুলেছিলো। সেই সময় শেখ মুজিবের অনেক পদক্ষেপ ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে যারা জনমত বিষিয়ে তুলেছিলো তাদের অনেককে পরে আমরা জিয়া এবং এরশাদের মন্ত্রীসভায় দেখি।
যা হোক। সেই দিন থেকে তিন দিন পর্যণ্ত সারাদেশে কারফিউ জারি করে শেখ মুজিবের মৃতদেহকে গোপালগঞ্জে পাঠানো হয়। অন্যদিকে দেখেছি জিয়ার মৃতদেহকে ৪০ দিনের শোকসহ ঢাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন স্থানে মাজার বানানো হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতার টিভিতে শেখ মুজিব ছিল সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। ১৯৯১ সাল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবকে নিয়ে কিছু আলোচনা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে টিভিতে শেখ মুজিব রেডিও টিভিতে প্রচারিত হতে শুরু করে।
আজ রাজাকারাও বলছে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি!
দীর্ঘ ২৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার সময় যে কথাগুলো প্রচারিত হয় - তা হলো -
১) শেখ মুজিব মরার পর কেহ ইন্নালিল্লাহ পড়েনি ( এখন একজন বললো কুকুর বিড়ালও কাদেনি)।
২) শেখ মুজিবের ছেলেরা ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেছে।
৩) শেখ মুজিবের ছেলেরা বিশ্বদ্যালয়ের মেয়েদের উঠিয়ে এনেছে।
ইত্যাদি...
একটা দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার পর তিনদিন কারফিউ দিয়ে প্যানিক তৈরী করে যদি কেহ বলে কই মানিষতো কাঁদরো না..এর চেয়ে নির্বোধের মতো প্রশ্ন করা মনে হয় সম্ভব নয়। দীর্ঘ ২০ বছরের নিষেধাজ্ঞার পরও আজ শেখ মুজির তার ভুমিকায় ভাস্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসের মহানায়ক হিসাবে তার ভুমিকায় একফোঁটা কালিমা লেপন সম্ভব হয়নি বলেই আজ রাষ্ট্রপ্রধান টুঙ্গীপাড়া যাচ্ছেন..রাজাকাররা তার গুনরর্কীতন শুরু করেছে। এটা হলো বাস্তবতা।
শেখ মুজিব মারা যাওয়া পর যারা ক্ষমতায় এসেছে এবং ধারাবাহিকভাবে থেকে সবাই ধীরে ধীরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে নষ্ট করেছে। তারা যখন শেখ মুজিবের বাড়ি ফিরিয়ে দিলো তখন তার ব্যাংক একাউন্ড ফেরত চাওয়া হরে তার হদিস সরকার দিতে পারেনি। শেখ মুজিবের ছেলেদের ডাকাতির একটা প্রমান ২০ বছরের কেহ দিতে পারেনি।
সুতরাং এখনও যারা ইতিহাস নিয়ে দ্বিধান্বিত...যারা মনে করছেন শেখ মুজিবকে হত্যা করাটা ছিল ..তারা আসলে বাস্তবতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা কাল্পনিক জগতে বাস করেছেন।
সেই জগতটা যারা তৈরী করেছিল তাদের দিন শেষ। গত ১২ বছর যাবত একটা বিচারের সুরাহার করতে যারা বাধা সৃষ্টি করেছে তারা শুধু নিজেদের পাপের বোঝাটাই বাড়িয়েছে।
আশা করি দ্রুতই বাংলাদেশ খুনীদের বিচারের শেষ দেখবে এবং ৩২ বছরের টেনে নেওয়া পাপের বোঝা টানা থেকে মুক্তিপাবে।
(বি: দ্র: যারা জানতে চায় তাদের জন্য ইতিহাস আর যারা বিভ্রান্ত থাকতে চায় তাদের জন্যে প্রপাগান্ডা - দুইটাই যথেষ্ঠ পরিমানে ছড়িয়ে আছে - এখন যার যা পছন্দ)
১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড - কিছু মীথ ও বাস্তবতা!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।