somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীত ও জঙ্গীবাদের বিস্তার - অধ্যাপক আবুল বারাকাতের দৃষ্টিতে

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের জন্মের পরপরই মুক্তিযুদ্ধের ধারাটা বাধাগ্রস্থ হলো শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। চলে আসে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি - এরা সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে থাকে। একদিকে ধর্মীয় আবরন তৈরী আর অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবে একটা ভিত্তি তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা চলছিলো মোটামুটি গোপনে এবং বিষয়টা তেমন আলোচনায় আসেনি। এর কারন হিসাবে বলা যায় - বিশ্বব্যাপী ভু-রাজনৈতিক অবস্থাও তাদের পক্ষে কাজ করেছিল। সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে পুজিঁর যুদ্ধে পুজিঁবাদী শক্তির সাথে মৌলবাদের একটা আঁতাতে যেমনি ওসামা বিন লাদেনের জন্ম হয়েছে - তেমনি বাংলাদেশে মৌলবাদের বিকাশ হয়েছে - কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী নাগরিকত্ব লাভ করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ভিতরে মৌলবাদের নিজস্ব একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যে কতটুকু গভীর হয়ে মূলধারার ভিতরে চলছে তা প্রথম উপস্থাপন করেন মেধাবী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত। অধ্যাপক বারাকাত গবেষনাপত্রে আমরা জানতে পারি - একটা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মৌলবাদীদের কর্মযজ্ঞ চলছে। তার ফলাফল দেখি মৌলবাদীদের জঙ্গীত্ব ও জঙ্গী কর্মকান্ড চালানোর পিছনে মৌলবাদের ব্যঙ্কিং ব্যবস্থা কিভাবে সহায়তা করেছে। এদের প্রভাব এতো বেশী হয়েছে যে - খাদ্য রপ্তানীর নামে এরা মাদক পাচার করে দেশের রপ্তানীকে বিরাট ক্ষতির মুখে ফেললেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এখানে অধ্যাপক আবুল বারাকাতের গবেষনাপত্রের থেকে বিশেষ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:-

১) মৌলবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো “একটা অর্থনীতির ভিতরে আরেকটা অর্থনীতি”।"

২) এই অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশের প্রচলিত অর্থণীতিকে প্রতিস্থাপন করে মৌলবাদী মতাদর্শের আলোকে একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা।

৩) মৌলবাদের অর্থনীতি এনজিও থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা পর্যন্ত চালু করেছে।

৪) এই অর্থনীতির মোট পরিমান প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৫) এই ২০০ মিলিয়ন ডলারে থেকে যা লাভ হয় তার ১০% ব্যয় করা হয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। যা বর্তমান অবস্থায় ৫ লক্ষ রাজনৈতিক কর্মীর বেতন ভাতার জন্যে যথেষ্ঠ।

৬) এরা সরকার এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন পদগুলিতে তাদের অনুসারীদের বসিয়ে তাদের মতো করে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো তৈরী করে।

৭) মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রনে আছে উন্নয়ন বাজেটের ৬% এবং রপ্তানী আয়ের ৪% ।

৮) দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল ৪%-৫% সেখানে মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৭.৫%-৯%।

অধ্যাপক বারাকাত পবেষনাপত্রের এক পর্যায়ে মৌলবাদের অর্থনীতির সাথে জঙ্গীবাদের সম্পর্ক দেখিয়েছে এই ভাবে -

জেএমবি মূলত মৌলবাদী মেইনস্ট্রীমেরই একটা শাখা হিসাবে সুস্টি হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা মৌলবাদের অর্থিক প্রতিষ্টান থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা পেয়েছে। এদের নেতাদের সবাই মূল ধারার মৌলবাদী দলের সাথে সম্পর্কিত ছিল। পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে -

“পাঁচজন জেএমবি নেতা চট্রগামের গ্রেফতার হয় - যারা জামাতের রাজনীতির সাথেও জড়িত”। ( দৈনিক প্রথম আলো সেপ্টেম্বর ২১, ২০০৫)

“জেএমবির ১৬০,০০০ টাকা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন" (৩১ এ আগস্ট ২০০৫ এর ডেইল স্টার)

৩৪টি মৌলবাদী এনজিও বছরে ২০০ কোটি টাকা বাইরের অনুদান পায়। (৩১, আগস্ট ২০০৫, ডেইলি স্টার)

জামাতে সাথে জঙ্গীদের সম্পর্ক প্রমানিত। (২২ সেপ্টেম্বর ২০০৫, ডেইলি স্টার)

১০০০ এর বেশী জঙ্গী মুক্তি পেয়েছে - যাদের ৪০% জামাতে ইসলামী কর্মি। (২৬শে সেপ্টেম্বর ২০০৫)

নভেম্বর ২৬ এর বোমা হামলার কয়েকদিন আগে সরকার করাচী ভিত্তিক এক এজিওর বাংলাদেশ শাখার প্রায় ২০ মিলিয়ন টাকার ফান্ড অবমুক্ত করে সরকার। (ডেইলি স্টার, ডিসেম্বর ৫, ২০০৫)

বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্রতাকে ব্যবহার করে মৌলবাদীরা যে সমান্তরাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে তা কোনভাবেই সামগ্রিক মঙ্গল বয়ে আনবে না। মৌলবাদের অর্থনীতি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মৌলবাদীরা একদল সমর্থক তৈরী করবে তার সাথে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের সংঘাত অনিবার্য।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের পুর্নবাসন ও ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দূর্নীতি আর অব্যবস্থার সুযোগই শুধু নিচ্ছে না - পচনশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সমর্থন দিয়ে তার বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃনা জন্মানোর চেষ্ঠা চালাচ্ছে। তবে তাদের দুর্ভাগ্য হলো - রাজনৈতিক ব্যবস্থার এই পচন তাদেরও মুক্তি দেয়নি। এদের নেতাদের একটা বিরাট অংশ দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।

( নোট: গতকাল দেখলাম এক ব্লগার আবুল বারাকাতকে জামাতের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। এই ধরনের কথা বলার পিছনে মূল কারন হলো উনার মৌলবাদের উপর গবেষনা। মজার বিষয় হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতার করার সুবাদে জামাতের নেতারা অপরাধ করেছে তার জন্যে একবারও ক্ষমা না চেয়ে যখন ওদের সমর্থকদের মুখ দিয়ে অন্যের ক্ষমার কথা বলায় - সেটা একটা তীব্র কৌতুকের সৃস্টি করে।)

অধ্যাপক আবুল বারাকাতের মৌলবাদের অর্থনীতি পড়ুন -
এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৫৩
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×