ভোরের কাগজ প্রতিবেদন।
আবদুল কাদের মোল্লা জামাতে ইসলামীর বর্তমান প্রচার সম্পাদক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার মিরপুর এলাকার স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ‘জল্লাদ’ ও ‘কসাই’ কাদের নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম বৃহৎ গণকবর আবিষ্কৃত হয় মিরপুরের শিয়ালবাড়ীতে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরসহ সমগ্র মিরপুর এলাকায় হাজার হাজার বাঙালি হত্যার প্রধান নায়ক ছিলেন কাদের মোল্লা। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুর" হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময় থেকেই কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মিরপুরে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ আরম্ভ হয়।
মিরপুরের ১১ নম্বর বি ব্লক, তালতলা নিবাসী মোঃ ফজর আলী (পিতা: মোঃ মানিক সর্দার) গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার ছোট ভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র শহীদ পল্লবকে (টুনটুনি) কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর স্থানীয় দালাল ও স্বাধীনতাবিরোধীরা হত্যা করেছে। মার্চের প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদ পল্লব স্থানীয় বাঙালি ও অবাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব কারণে স্বাধীনতাবিরোধীদের হত্যা পরিকল্পনায় তার নাম যোগ হয়। ’৭১-এর ২৯ মার্চ স্বাধীনতাবিরোধীরা পল্লবের অবস্থান জানতে পেরে নবাবপুর থেকে তাকে জোরপূর্বক ধরে মিরপুরে কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে আসে। পরে কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সহযোগীরা পল্লবকে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশন শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং একইভাবে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে গাছের সঙ্গে বেঁধে পল্লবের দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় ২ দিন। এরপর ঘাতকরা তার হাতের আঙুলগুলো কেটে ফেলেছিল। তারপর আবদুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আখতার ও অন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পল্লবকে গুলি করার জন্য। প্রতিটি গুলির জন্য কাদের মোল্লা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিলেন। এপ্রিলের ৫ তারিখ ঘাতক আখতার গাছে ঝোলানো পল্লবের বুকে পরপর ৫টি গুলি করে। পল্লবকে গুলি করে হত্যার পরও কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা তার লাশ দুদিন গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য। এরপর ঘাতকরা পল্লবের লাশ মিরপুর ১২ নং সেকশনে কালাপানি ঝিলের পাশে আরো ৭ জনের লাশের সঙ্গে মাটিচাপা দেয়।
১৯৭১ সালে মিরপুরে কাদের মোল্লার দুষ্কর্মের অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ শহিদুর রহমান চৌধুরী (পিতা মৃত আবদুর রহমান চৌধুরী) জানিয়েছেন, ’৭১ সালের অক্টোবর মাসে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকাররা মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে মহিলা কবি মেহের"ন্নেসাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখে সেই বাড়ির সিরাজ নামক এক ব্যক্তি তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন, তিনি এখনো একইরকম আছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুর" হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ মিরপুর ১২ নং সেকশনের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের গেটের সামনে ৭ মার্চ ’৭১-কে সামনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতার একটি সভা হয়। সেই সভায় অংশগ্রহণকারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা ‘নারায়ে তকবির’ স্লোগান দিয়ে তলোয়ার, দা ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র হাতে সভার ওপর হামলা চালিয়ে বহু সংখ্যক মানুষকে আহত করে। এই তথ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ শহিদুর রহমান।
সাক্ষ্যদানকারীরা আরো জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে কাদের মোল্লা মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এবং মিরপুর ১২ নং সেকশনে বসবাসকারী অবাঙালিদের নিয়ে নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেছিলেন। এদের সহযোগিতায় কাদের মোল্লা মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নিরীহ, নিরপরাধ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে শিয়ালবাড়ী, রূপনগর, বালুঘাট প্রভৃতি স্থানে ধরে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
তথ্যসূত্র : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সম্পাদনা : শাহরিয়ার কবির
জল্লাদ কাদের মোল্লা : মিরপুরে হাজারো বাঙালি হত্যার হোতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।