somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জল্লাদ কাদের মোল্লা : মিরপুরে হাজারো বাঙালি হত্যার হোতা

১০ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরের কাগজ প্রতিবেদন।

আবদুল কাদের মোল্লা জামাতে ইসলামীর বর্তমান প্রচার সম্পাদক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার মিরপুর এলাকার স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ‘জল্লাদ’ ও ‘কসাই’ কাদের নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম বৃহৎ গণকবর আবিষ্কৃত হয় মিরপুরের শিয়ালবাড়ীতে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরসহ সমগ্র মিরপুর এলাকায় হাজার হাজার বাঙালি হত্যার প্রধান নায়ক ছিলেন কাদের মোল্লা। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুর" হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময় থেকেই কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মিরপুরে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ আরম্ভ হয়।
মিরপুরের ১১ নম্বর বি ব্লক, তালতলা নিবাসী মোঃ ফজর আলী (পিতা: মোঃ মানিক সর্দার) গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার ছোট ভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র শহীদ পল্লবকে (টুনটুনি) কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর স্থানীয় দালাল ও স্বাধীনতাবিরোধীরা হত্যা করেছে। মার্চের প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদ পল্লব স্থানীয় বাঙালি ও অবাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব কারণে স্বাধীনতাবিরোধীদের হত্যা পরিকল্পনায় তার নাম যোগ হয়। ’৭১-এর ২৯ মার্চ স্বাধীনতাবিরোধীরা পল্লবের অবস্থান জানতে পেরে নবাবপুর থেকে তাকে জোরপূর্বক ধরে মিরপুরে কাদের মোল্লার কাছে নিয়ে আসে। পরে কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সহযোগীরা পল্লবকে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশন শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং একইভাবে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে গাছের সঙ্গে বেঁধে পল্লবের দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় ২ দিন। এরপর ঘাতকরা তার হাতের আঙুলগুলো কেটে ফেলেছিল। তারপর আবদুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আখতার ও অন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পল্লবকে গুলি করার জন্য। প্রতিটি গুলির জন্য কাদের মোল্লা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিলেন। এপ্রিলের ৫ তারিখ ঘাতক আখতার গাছে ঝোলানো পল্লবের বুকে পরপর ৫টি গুলি করে। পল্লবকে গুলি করে হত্যার পরও কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা তার লাশ দুদিন গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য। এরপর ঘাতকরা পল্লবের লাশ মিরপুর ১২ নং সেকশনে কালাপানি ঝিলের পাশে আরো ৭ জনের লাশের সঙ্গে মাটিচাপা দেয়।
১৯৭১ সালে মিরপুরে কাদের মোল্লার দুষ্কর্মের অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ শহিদুর রহমান চৌধুরী (পিতা মৃত আবদুর রহমান চৌধুরী) জানিয়েছেন, ’৭১ সালের অক্টোবর মাসে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকাররা মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে মহিলা কবি মেহের"ন্নেসাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখে সেই বাড়ির সিরাজ নামক এক ব্যক্তি তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন, তিনি এখনো একইরকম আছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুর" হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ মিরপুর ১২ নং সেকশনের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের গেটের সামনে ৭ মার্চ ’৭১-কে সামনে রেখে স্বাধীনতাকামী জনতার একটি সভা হয়। সেই সভায় অংশগ্রহণকারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা ‘নারায়ে তকবির’ স্লোগান দিয়ে তলোয়ার, দা ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র হাতে সভার ওপর হামলা চালিয়ে বহু সংখ্যক মানুষকে আহত করে। এই তথ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ শহিদুর রহমান।
সাক্ষ্যদানকারীরা আরো জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে কাদের মোল্লা মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এবং মিরপুর ১২ নং সেকশনে বসবাসকারী অবাঙালিদের নিয়ে নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেছিলেন। এদের সহযোগিতায় কাদের মোল্লা মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নিরীহ, নিরপরাধ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে শিয়ালবাড়ী, রূপনগর, বালুঘাট প্রভৃতি স্থানে ধরে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
তথ্যসূত্র : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সম্পাদনা : শাহরিয়ার কবির
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×