somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বছরে এই দিনটিতে ফুল কিনতে কখনও ভুল হয় না।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ অর্ধযুগ ধরে প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। এই কথার দিয়ে আমি কোন ভাবেই প্রমান করতে চাচ্ছিনা যে আমি একজন দারুন রোমান্টিক মানুষ ছিলাম। বরঞ্চ অনেকটা কাঠখোট্টা টাইপের মানুষই ছিলাম - এখনও মনে হয় তাই আছি।

এই বিষয়ে কিছু ঘটনা মনে পড়ছে - একটু বলি তাহলে আমার রোমান্টিক প্রেমকাহিনীর কিছুটা হয়তো আপনারা ধরতে পারবেন। যেমন - অনেক কষ্টে আমার উনি হয়তো বাসা থেকে লুকিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এলো - বসে আছি রমনা পার্কে। পাশ দিয়ে একটা মিছিল গেল বা কোন মন্ত্রীর গাড়ী গেল - সাথে সাথে আমার গল্পের বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়ে চল এযেত স্বৈরাচারের প্রসংগে। মোদ্দাকথা প্রেমের সংলাপের চেয়ে - স্বৈরাচার নিপাত যাক শ্লোগানটাই মনে হতো আমার বেশী প্রিয়। আজও সেই প্রসংগ তোলে খোঁচা দিতে ভোলে না আমার সহধর্মিনী। তবে চেষ্টা যে করিনি মাঝে মধ্যে কঠিন সংলাপ দিতে তা নয় কিন্ত। একবার টেলিফোনে রবি ঠাকুরের অমিতের মতো করে কি যে বলতে শুরু করেছিলাম। তখন ও অন্য পাশ থেকে বললো - ঘটনা কি, টিভির বাংলা সিনেমা মনে হয় এখন তোমার প্রিয় অনুষ্ঠান হয়ে গেছে? এই পকথা শুনে এমন চিপসে গিয়েছিলাম - পরে কোন দিনই রোমান্টিক ডায়লগ দেবার চেষ্টাও করিনি।

যাই হোক - যে গল্পটা বলার জন্যে শুরু করেছিলাম। একজন কাঠখোট্টা মানুষ আমি - কিন্তু বছরের একটা বিশেষ দিনে আমার গিন্নীকে ফুল উপহার দিতে ভুল হয়না - এইটা একটা অত্যাচর্য বিষয় হিসাবে আমাকেও অবাক করে দেয়। বিয়ের আগের রোমান্টিকতার বিষয়ে বলেছি। এখনও তার থেকে বদলাইনি। এই যেমন - গত বছর মেরেজ ডে'তে কাজ থেকে ফিরে দেখি গিন্নী বেশ সুন্দর শাড়ী পড়ে টেবিলে ফুল সাজিয়ে রেখেছে। আমি ফুল আর শাড়ীর বিষয়ে কোন কথা না বলেই - টেবিলে রাখা কাচ্চি বিরিয়ানীর সুগন্ধের প্রশংসা করতে শুরু করি। তারপরে কাহিনী না হয় নাই শুনলেন। নিজের জন্ম দিনের কথাতো কখনই মনে থাকে না - এমন কি গিন্নীর জন্ম দিনও ভুলে যাই। কিন্তু অবাক করা বিষয় ছেলের জন্মদিন কখনও ভুলিনা।

সেই আমি গত ৯ বছর যাবত একটা বিশেষ দিনে আমার সহধর্মিনীকে ফুল কিনে দিতে ভুল করিনি।

ঘটনাটা ১৯৯৭ সালের। তখন মাত্র নতুন এসেছি। কাজ পাওয়া খুবই কঠিন। একটা এজেন্সীর মাধ্যমে অস্থায়ী ভাবে কিছু কাজ করি। জানুয়ারী মাসে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফের ঝড়ের কারনে বেশ কিছু দিন কাজ করতে পারিনি। তাউ বাড়ী ভাড়াও দিতে পারিনি। এই অবস্থায় বিকল্প ছিল - সরকারী সহায়তা (সোসাল) চাওয়া। কিন্তু আমরা ঠিক করেছিরাম কখনও সরকারী সাহায্য নেব না। তাই বাড়ী ভাড়ার জন্যে ১৫ দিনের সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তখনও পুরো অর্থ যোগড় করা যায়নি। আমার শরীরও ভাল হচ্ছে না। তাহরে হয়তো অতিরিক্ত খেটে একটা সমাধান করা যেত।

এর মধ্যে এলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী - ভ্যালেন্টাইন ডে। তখনও কানাডার উত্তর - দক্ষিন বুঝে উঠতে পারিনি ( পুরাতন ঢাকায় নতুন মানুষ সম্পর্কে এই বাক্যটা ব্যবহূত হয়)। ভোরবেলা গিন্নী ডেকে উঠিয়ে বললো - সে একটা কাজে যাচ্ছে। ১০ ঘন্টার কাজ। সুতরাং ফিরতে রাত হবে। আমি যে ঠিক মতো খেয়েদেয়ে সারাদিন বিশ্রাম নিই। বোধ হয় গিন্নীর কথা শুনে হা হয়ে ছিলাম কিছুক্ষন। আমি নিজেই যেখানে ঠিকমতো সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি - ও কিভাবে কাজ যোগাড় করে বোর ৬টায় বের হয়ে যাচ্ছে।

যাই হোক - দিনভর প্রচন্ড দুঃচিন্তায় কাটালাম। রাত নয়টায় প্রিয় গিন্নী এসে হাজির। মুখ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ঠান্ডায় নীল হয়ে গেছে ঠোট।

জিজ্ঞাসা করলাম - কি ঘটনা?

ও শুধু বললো - আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দাও। আমি ওয়াশ রুমে গেলাম।

চা শেষ করে একসাথে খেতে বসলাম - তখন শুনলাম আসল ঘটনা। চাকুরী জন্যে এম্প্লমেন্ট নিউজ দেখে ফোন করেছিলো এক কোম্পনীতে। আজ ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে - তাই ফুল বিক্রীর জন্যে ওরা একদিনের জন্যে লোক নিচ্ছে। ও সকালে যাওয়ার পর ওদের গাড়ী করে শহরের বাইরে একটা পার্কের কাছে নামিয়ে দেয় ফুলসহ। প্রচন্ড ঠান্ডায় দাড়িয়ে ওরা দুইজন সারাদিন ফুল বিক্রী করেছে। সমস্যা হয়েছে মুলত পায়ে - কারন বুট না থাকায় বরফ গলা পানিতে ভিজে ঠান্ডায় পা জমেই গিয়েছিলো।

একটা বালতিতে গরম পানি এনে দিলাম - বলরাম সেটাতে পা ঢুবিয়ে বসতে। কোন কথা না বলে তাকিয়ে থাকলাম ওর মুখ এদিকে কিছুক্ষন। তারপর বললাম - পাগলামী করতে গেলে কেন?

ও বললো - সংসারটা আমারও। তুমি কস্ট করবে - আর আমি বসে বসে দেখবো। তা কি হয়।

কথায় কথায় ও আমার দিকে একটা প্যাকেট আর খাম এগিয়ে দিলো। খামে কি আছে জানতাম। কৌতুহল দমন না করেই প্যাকেটটা খোললাম। দেখি একটা সুন্দর সার্ট।

ও বললো - শার্ট পছন্দ হয়েছে? এটা আমার পক্ষ থেকে ভ্যালেন্টাইন গিফট। প্রথম আয় থেকে প্রথম গিফট।

আমি কিছু বলতে চেস্টা হয়তো করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। গলায় কি যে আটকে গিয়েছিলো।

এরপর যখনই ১৪ ই ফেফ্রুয়ারী আসে -শত ব্যস্ততার মধ্যেও কে যে বলে দেয় - আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। একজনের জন্যে ফুল নিতে হবে। অবাক হবার মতো ঘটনা - গত ৯ বছরে ভুল হয়নি - এবারও হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:৪৩
৩৪টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×