somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭৫ - ৮২ - বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে থেকে নিজেদের মুক্ত করুন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশটা স্বাধীন হলো - স্বাধীন দেশের বিজয়ীরা পরাজিতদের ক্ষমা করে দেবে - এইটাই স্বাভাবিক। মক্কা বিজয় থেকে সাম্প্রতিক দক্ষিক আফ্রিকার ঘটনার দিকে নজর দিলো বুঝা যাবে শেখ মুজিবুর রহমান কতটা সঠিক ছিলো। শুধু মাত্র সুনির্দিষ্ট অপরাধে অপরাধীরা শাস্তি পাবে। তাই হচ্ছিলো ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যণ্ত। দেশে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছিলো। কিন্তু এক সামরিক শাসক শাসক এসে ইতিহাসের চাকাটাকে উল্টো দিকে ঘুড়াতে শুরু করলো। নিহত হলেন মুক্তিযুদ্ধের মুল নেতা আর আর তার সহযোগী চার নেতা। দেম ত্যাগ করতে হলো মুক্তিযুদ্ধ কাদের সিদ্দিকীকে। জেলে পাঠানো হলো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনীতিবিদদের। বলাই বাহুল্য - সেই রাজনীতিবিদরা আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলো।

চললো সামরিক শাসন। গোপনে জেল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা হলো। বিদেশে পালিয়ে থাকা যুদ্ধপরাধীদের দেশে আসার সুযোগ করে দেওয়া হলো। সামরিক শাসনের কঠিন বেড়াজালের ভিতরেও চললো এক সেনাপ্রধানের রাষ্ট্রপ্রধান হবার জন্যে সরকারী সুযোগ সুবিধায় মিটিং আর রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমের ( একমাত্র টিভি আর রেডিও চ্যানেল ছিলো সরকারী কড়া নিয়ন্ত্রনে) প্রপাগান্ডা। মুক্তিযুদ্ধের মুল ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে তৈরী হলো মুক্তিযুদ্ধের রূপকথা। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকার সুযোগে ওয়অজ মাহফিলে মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীরা আবার সংগঠিত হতে লাগলো।

এই কালো অধ্যায় চললো ১৯৭৮ পর্যন্ত। তারপর সেনাপ্রধান জিয়া সরকারী চাকুরীতে থেকেই প্রথম করলো গনভোট নামক প্রহসন - যাতে সে পেল ৯৮ ভাগ হ্যাঁ ভোট - তারপর সামরিক বাহিনীতে বসেই করলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন - ফলাফল অনুমেয়। এদিকে মৌলবাদী আর যুদ্ধপরাধীদের জন্যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হলো সংবিধান সংশোধ করে - যাতে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করা যায় - যা মুল সংবিধানে নিষিদ্ধ ছিলো।

একসময় জিয়াউর রহমানের শাসনের দুঃখজনক অবসান হলো। আসলো আরেকটা সামরিক শাসন। সেখানেও দেখা গেল মৌলবাদের প্রভাব। এক বিশ্ববেহায়া - যার লুচ্চামির ইতিহাস সর্বসাধারনের কাছে পরিষ্কার - সে ধর্মকে ব্যবহার করলো ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। মজা বিষয় হলো যুদ্ধাপরাধ আর ৭৫ এর নির্মম হ্ত্যাকান্ডের বিষয়ে সেও পূবসুরী জিয়ার পদাক্ক অনুসর করলো।

১৯৯৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যণ্ত মুলত দেশের মানুষ একটা রূপকথা শুনতে থাকলো। সেই রূপকথার নায়করা হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে - সেই হানাদারা যে পাকিস্তানী ছিলো তা সতর্কতার সাথে উহ্য রাখা হতো। বাংলাদেশ টেলিভিশন আর রেডিওতে "রাজাকার" শব্দটার উচ্চারন নিষিদ্ধ ছিলো। পাঠ্য বই থেকে রাজাকা আর পাকিস্থনী সেনাবাহিনী কথাগুলো সরিয়ে ফেলা হলো। একটা প্রজন্ম এই বায়বীয় ইতিহাস পড়ে রূপকথায় বিশ্বাস করে ফেললো। এরা জানলো না কি ভয়াবহ সময় ছিলো ১৯৭১ আর কত ভয়ঙ্কর ছিলৌ পাকিস্থানী সেনারা। এরা আরো জানতে পারলো না - বাংলাদেশের একদল মানুষ সেই বর্বরতার পক্ষে ছিলো। এরা পাকিস্থানীদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধকরা মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বাড়ী চিনিয়ে দিতো - এরা আমাদের মা বোনদের পাকিদে ক্যাম্পে পাঠাতো ভোগের জন্যে। এই কর্মকান্ডের জন্যে এরা এখনও লজ্জিত না। ধর্মকে আড়াল করে এরা রাজনীতির নামে নিজেদের ভোগ বিলাস করে আর কোমলমতি কিশোর তরুরদের ধর্মরক্ষার নামে মৌলবাদী আর জঙ্গীতে পরিনত করে - যদিও এরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের ইয়োরোপ আমেরিকায় পাঠিয়ে পড়াশুনা করিয়ে নেতা হিসাবে তৈরী করে।

হুমায়ুন আহমেদ নব্বই সালের দিকে "তুই রাজাকার" শব্দটি একটা নাটকে যুক্ত করে - যা জনপ্রিয়তার ভয়ে টিভি কর্তৃপক্ষ প্রচার করতে বাধ্য হয়। তখন নাটকে দেখানো হতো মুক্তিযুদ্ধরা পাকিদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে হৈ হৈ করছে - যা মুরত "জয়বাংলা" শ্লোগনাটাকে আড়াল করা হতো। এই রকমের ইতিহাস বিকৃতি আর রূপকথা তৈরী করে পাকিস্তানী আর রাজাকারদের আড়াল করা হয়েছে। এই কাজটা চলেছে ১৯৮২ পর্যন্ত।

(২)

এখন মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর, টিভি চ্যানেল, বইপত্র আর ইন্টারনেটে প্রচুর তথ্যপ্রমান পাওয়া যায়। আমাদের উচিত রাজনীতিবিদ আর সামরিকদের প্রচারিত রূপকথা বাদ দিয়ে সঠিক ইতিহাস জানি - যার ধারাবাহিতা আর সূত্র আছে। আসুন সবাই রাজনীতির কুটচাল থেকে নিজেদের সরিয়ে দেশের স্বার্থে - ভবিষ্যত আধুনিক আর প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বার্থে সঠিক ইতিহাস জানি আর ইতিহাসের খল নায়কদের সঠিক অবস্থানে পাঠাই। একটা সুন্দর আর আধুনিক বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী আর মৌলবাদীদের স্থান নেই। দেশটা সবার (শুধু রাজাকার বাদে) - সেই সুবাদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচাচের ব্যর্থতার দায় সবার উপর বর্তায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের মাথা উচু রাখার জণ্যে সবাইকে এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার। কারন - সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না আর ভবিষ্যত প্রজন্ম ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক ইতিহাস জানবে আর ন্যয়ের পক্ষাবলম্বের ব্যর্থতার জন্যে আমাদেরকে কাপুরুষ প্রজন্ম হিসাবে ঘৃনা করবে।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩৬
১৯টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×