মুক্তিযুদ্ধা আলী আমানকে লাথি দিয়ে যে সংগঠনটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে তার নাম "জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদে"। সংগঠনটির পিছনে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার আলবদর নামক পাকিস্তানী আর্মির সহকারী বাহিনীর সংগঠন জামায়াত।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের জাতীয় সন্মেলনের পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়ঃ-
১) পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী ক্রমশ জোড়ালো হচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধাদের বিভ্রান্ত করা আর দেশের মানুষকে বোকা বানানোর প্রচেষ্টা হিসাবে গত ২৬ জানুয়ারি এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথমে এ/১১ শ্যামলী হাউজিং, আদাবরে একটি বাড়িতে এর প্রধান কার্যালয় ছিল। গত মাসে সেটি ১১৬/২ নয়া পল্টনে স্থানান্তর করা হয়। পল্টন থানা জামায়াতের সাবেক আমির সিরাজুল হকের পল্টন মানব শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের একটি কক্ষ সাবলেট (ভাড়াটের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া) নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সিরাজুল হকও এই সংগঠনের উপদেষ্টা।
২) সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
৩) "জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদে"র প্রধান তিন নেতা মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে যে পরিচয় দিয়েছে - তা ভুয়া প্রমানিত হয়েছে।
৩.ক) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের গঠনতন্ত্রে সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম উদ্দীনের মুক্তিযুদ্ধকালীন দায়িত্ব হিসেবে লেখা আছে ‘৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ক্যাম্প কমান্ডার’। ‘আপনি তো ৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন’। ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব·) আবু ওসমান চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি জানান, কল্যাণীতে তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল না। কাজেই কেউ সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কমান্ডার বললে সেটা মিথ্যা বলা হবে। সেখানে ৮ নম্বর সেক্টরের প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিল। এর বাইরে কল্যাণীতে তাঁরা কিছু বাড়ি ভাড়া করেছিলেন। সেখানে এই সেক্টরের কর্মকর্তাদের পরিবার থাকত।
৩.খ) মোসলেম উদ্দীন জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি পাবনা শহরে। পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল লতিফ সেলিম জানান যে, তিনি মোসলেম উদ্দীন নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে চেনেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এই নামে পাবনার কোনো বড় মুক্তিযোদ্ধা থাকলে আমরা তো জানতাম।’ পাবনায় বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট-বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ও বর্তমানে জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম বিশুও জানিয়েছেন, পাবনায় ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম উদ্দীন নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা কামন্ডার নেই।
৪) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রবের মুক্তিযুদ্ধকালীন দায়িত্ব হিসেবে দলীয় গঠনতন্ত্রে ‘ক্যাম্প কমান্ডার’ লেখা আছে। ওই সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব·) সি আর দত্ত বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রব নামে তাঁর অধীনে কোনো কমান্ডার ছিল না; এমনকি কৈলাসটিলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্যাম্পও ছিল না।
৫) সংগঠনটির আরেক সহসভাপতি ফজলুল হকের মুক্তিযুদ্ধকালীন দায়িত্ব হিসেবে লেখা আছে ‘এফ এফ সাব সেক্টর কমান্ডার এবং থানা কমান্ডার’। প্রকৃত ইতিহাস হলো নোয়াখালী এলাকার সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব·) জাফর ইমাম। জনাব জাফর ইমাম জানান, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীর সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলাম আমি নিজে। আর বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) নোয়াখালী কমান্ডার ছিলেন বেলায়েত। তিনিও আমার অধীনে যুদ্ধ করেছেন। এখন কেউ যদি নিজেকে সাব সেক্টর কমান্ডার দাবি করেন, তাহলে বুঝতে হবে সে লোকটা ভুয়া। তিনি স্বাধীনতার বিরুদ্ধশক্তির কমান্ডার হতে পারেন। এর বিরুদ্ধে আমরা পুলিশের সহায়তা নেব।’
৫.ক) লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হুমায়ুন কবীর তোফায়েলও প্রথম আলোকে বলেছেন, ফজলুল হক নামে লক্ষ্মীপুরে কোনো কমান্ডার ছিলেন না।
৬) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের গঠনতন্ত্রে মোট ৪২ জনের নাম আছে, যাঁদের পরিচয় দেওয়া আছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। এর মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে ১৪ জনের নাম আছে। তাঁদের একজন কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও কিশোরগঞ্জ ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজের শিক্ষক মুসাদ্দেক ভূঁইয়া। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্রে তাঁর পরিচয় ১১ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ আছে। তবে জানতে চাইলে তিনি কোন সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন, তা বলতে পারেননি। তিনি জানান, ‘তখন তো নবম-দশম শ্রেণীতে পড়তাম; মুক্তিযুদ্ধের পর আবার ছাত্রজীবন, পরে ’৭৭ সালে অন্য রাজনীতিতে (জামায়াত) যুক্ত হয়ে গেলাম। তখন আর এ বিষয়ে খোঁজখবর নেইনি।’ তিনি দাবি করেন, ভৈরবের কাছে নরসিংদীর বেলাব থানার নারায়ণপুরে একটি ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ভৈরব, নারায়ণপুর, কালিকাপ্রসাদ এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তবে তাঁর কাছে কোনো অস্ত্র থাকত না। তবে ভৈরব মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন শাহজাহান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মুসাদ্দেক ভূঁইয়া নামে ভৈরবে কোনো মুক্তিযোদ্ধা কখনোই ছিল না। আর নারায়ণপুর বেলাব থানায় হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় এ জায়গাটি তাঁদের অধীনে ছিল এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল না। কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার মো· আসাদুল্লাহ্ জানান, জামায়াতের নেতা মুসাদ্দেক হোসেনের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কখনোই ছিল না।
(কৃতজ্ঞতা - দৈনিক প্রথম আলো)
ছবি - ১৯৭১ সালে আলবদরের সমাবেশে বত্তৃতা দিচ্ছে আলবদর কমান্ডার মুজাহিদ (সৌজন্যে - ডেইলি স্টার)
জামায়াতের "জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদে"র একটি ক্লাসিক ভন্ডামীর উদাহরন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।