নাসিরউদ্দিন হোজ্জার গল্পটা আশা করি সবার মনে আছে। তারপরও আবার বলি। হোজ্জা ১ কিলো গোস্ত কিনে স্ত্রীকে রান্না করতে দিয়ে বাইরে গেল। এরমধ্যে গোস্ত রান্না শেষে লোভ সামলাতে না পেরে স্ত্রী পুরো গোস্তটাই খেয়ে ফেললো।
হোজ্জা ফিরে আসলে স্ত্রী মুখ কালো করে বললো - রান্না গোস্ত বিড়াল খেয়ে ফেলেছে।
হোজ্জা বলে কথা - সে বিড়ালটাকে ধরে এনে ওজন করে দেখলো বিড়ালে ওজন এক কিলো।
তখন স্ত্রীকে হোজ্জা প্রশ্ন করলো - এই ১ কিলো যদি বিড়ালের ওজন হয় তবে গোস্ত গেল কই? আর এই ১ কিলো যদি গোস্তের ওজন হয় তবে বিড়ালের ওজন গেল কই?
(২)
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে জামায়াত পেয়েছে ৩২ লাখ ৯ হাজার ২২ ভোট।
জামায়াত ৩৯ টা আসনে প্রতিদ্বীতা করে ২টা জয়ী হয়েছে। যা সর্বমোট ভোটের ৪.৬%। জামায়াত দেখাতে চাইছে এই ৪.৬% ভোট আসলে জামাতের ভোট ব্যাংক।
এখানে একটা বিরাট গোঁজামিল আছে। গোজামিলটা ব্যবহার করছে জামায়াত ওদের সমর্থকদের সান্তনার টনিক হিসাবে। জামাতীদের ভন্ডামীর আরেকটা ক্লাসিক উদারহন হিসাবে এই বিষয়টা মনে রাখা যেতে পারে - এরা কিভাবে এদের সমর্থকদের বোকা বানায়। জামায়াত এই অংকটা দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের থেকে নিয়মিত দান আর চাঁদা পেতে চাইবে অবশ্যই।
৩৯টা আসনের মধ্যে ৩৬টা আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী ছিলো না। তাই সেই আসনগুলোতে প্রাপ্তভোট যখন জামায়াত নিজের দিকে টেনে নেয় - তখন বিএনপির সমর্থকদের জামাতী হিসাবে গননা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির সমর্থকরা বিএনপি জামায়াত প্রার্থী ভিন্ন থাকলে জামায়াতে ভোট দেবে না।
বিএনপির ২৫৯ প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছে ২ কোটি ২৬ লক্ষ যার অর্থ প্রতিটি প্রার্থী গড়ে পেয়েছেন ৮৭ হাজার। (এর মধ্যে জামায়াতের ভোট অবশ্যই আছে)
আর জামায়াতের ৩৯ জন প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছে ৩২ লক্ষ ৯ হাজার অর্থাৎ প্রতিটি প্রার্থী পেয়েছে গড়ে ৮২ হাজার। এখানেও বিএনপির সমর্থকদের ভোট আছে।
দেখা যাচ্ছে জামায়াত প্রার্থীরা গড়ে ৫ হাজার ভোট কম পেয়েছে - যা অবশ্যই বিএনপির সমর্থকদের ভোট। এইখানে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে বিএনপির সমর্থকদের একটা অংশ জামায়াতকে ভোট দেয়নি। (অভিনন্দন রইল সেই সকল বিএনপি সর্থকদের জন্যে যারা যুদ্ধাপরাধীদের ভোট দেয়নি)।
আর মুজাহিদের ভোট বেশী ভোট পাওয়ার যে সান্তনামুলক বানী দিয়ে বিবিসির সাথে যে কথা বলেছে - তা আসলে ভুয়া। আমার বিশ্বাস জামায়াত একা নির্বাচন করলে এদের অধিকাংশের জামানত বাজেয়াপ্ত হতো।
এখন হোজ্জার মতো প্রশ্ন করা যায় - জামায়াত যদি তাদের প্রাপ্ত সব ভোটই জামায়াতের হয় - তবে বিএনপির সমর্থকদের জামায়াতের প্রার্থীকে যে ভোট দিয়েছে তা গেল কই? নাকি জামায়াতের আসনে চারদলীয় জোট ছিলো না? জামায়াত বিএনপির সমর্থকদের জোটগত কৌশলী ভোটকে নিজেদের ভোট দেখিয়ে নিজেদের সমর্থক বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে বিএনপির সমর্থকদের সাথে বেইমানী করছে।
তাই বলছি - জামায়াতের প্রকৃত ভোট আসলে কত আর হয়তো কখনই জানা হবে না। যদি না আওয়ামীলীগ বিরাট ভুল করে। আর আগামী পাঁচ বছর পর জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে কিনা - তাই ভাবছি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



