somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধী বিচার সম্পর্কে কয়েকটা প্রয়োজনীয় কথা।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিষয়টা এখন একটা গনদাবী। দীর্ঘ ৩২ বছর পর আবারো যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার বিষয়ে সবাই আমরা আশাবাদী।

১৯৯৬ সালে একবার এমনই একটা আশার সঞ্চার হয়েছিলো। আমরা যারা মাঠে ছিলাম - সরল বিশ্বাসে আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম। বিজয়ের বিষয়ে আমরা ছিলাম আত্নবিশ্বাসী। আমাদের বিজয়টাকে সরল বিশ্বাসে তুলে দিয়েছিলাম একটা দলের হাতে। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। কিন্তু এতে করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টা শেষ হয়ে যায়নি।

নতুন ভাবে নতুন উদ্যোমে শুরু হয়েছে দাবী। জন্ম নিয়েছে ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি, প্রজন্ম ৭১ আর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের মতো সংগঠন আর অবেশেষ আস্থার প্রতীক হিসাবে এসেছে "সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম"।

এবার সবাই আগের চেয়ে অনেক বেশী সংঘঠিত। অনেকবেশী দৃঢ়। কিন্তু এতেও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যুদ্ধাপরাধীর বিচারটা এখনই শুরু হতে হবে। তা ছাড়া দ্রুত বিচারের নামে কিছু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে কিছু দিনের জন্যে কারাগারের ভরে রেখে হয়তো একটা প্রহসন হতে পারে - বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার।

যুদ্ধাপরাধীর বিচারের আন্দোলনটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এখন দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাদীদের বিচারের জন্যে অনেক সংগঠন সক্রিয়। এরা গত বছরও একটা বিরাট জনসচেতনতা অভিযান চালিয়েছে ল্যাটিন আমেরিকায় - ধারনা করা হয় যে এখন অনেক যুদ্ধাপরাধী লুকিয়ে আছে আর্জেনটিনায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য। শুধু ঢাকা শহরেই এই অপরাধ হয়নি - দেশের প্রতিটি গ্রামে - আনাচে কানাচে যুদ্ধাপরাধী ছড়িয়ে আছে। সুতরাং যতদিন একটাও অপরাধী বিচারের বাইরে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালাতে হবে।

(২)

যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলনের কর্মীদের কিছু বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার। বিষয়গুলো হলো -

১) কেন আমরা এই বিচার চাইছি?
২) কোন ধরনের বিচার চাইছি?
৩) কার কাছে বিচার চাইছি?

সবগুলো বিষয় সংক্ষেপে বলা যায় এই ভাবে - একটা আধুনিক সমৃদ্ধ প্রগতিশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। তাই এখানে এমন কোন মতাদর্শের মানুষ চাইনা যারা বারবার আমাদের পিছনে টেনে নেবে। পরাজিতরা যদি পরাজয় মেনে নেয় - তখন বিষয়টা সহজ হয়। কিন্তু ৭১ এর পরাজিতরা পরাজয় মেনে নেয়নি। এরা ৭৫ এর পর সংগঠিত হয়েছে। আঘাত করছে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদের অর্জনকে। বিজয়ীদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এরা চাইছে একটা বিভ্রান্ত প্রজন্ম তৈরী হউক। এরা চাইছে আমাদের নতুন প্রজন্ম ভুলে যাক আমাদের পূর্ব পুরুষের আত্নত্যাগের মহিমা আর আত্নত্যাগের অর্জনকে।

একটা প্রগতিশীল আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টার প্রক্রিয়া রাষ্ট্রের শত্রু এই যুদ্ধাপরাধীরা মুরত রোডব্লক হিসাবে কাজ করে। এটা বারবার প্রমান করতে চাইবে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনদান ছিলো ভুল। তাতে একদল তরুন বিভ্রান্ত হবে - দাদের সংগঠিত করে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এই অপরাধীরা। তাই সামনে আগানোর জন্যে পথের বাঁধা এই জঞ্জাল পরিষ্কার করা জরুরী।

শুধু মাত্র গুটি কয়েক যুদ্ধাপরাধীর সাজার মধ্য দিয়ে এই বিচারের দাবী যেন হারিয়ে না যায়। আমরা মুলত চাইছি - যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মতাদর্শের বিচার। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য হবে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মতাদর্শের পুরোপুরি নির্মলের দাবী করা।

সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা বিচার চাইছি রাষ্ট্রের কাছে। কারন হলো এরা রাষ্ট্রের শত্রু। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগকে এই উদ্যেগ নিতে হবে। নির্বাহী বিভাগের প্রধান পদে রাজনৈতিক দলের নেতারে বসে থাকবেন - সুতরাং দায়টা তাদেরই। কিন্তু কোনভাবেই আমরা কোন রাজনৈতিক দলের কাছে বিচার চাইছি না।

সুতরাং প্রাথমিক ও জরুরী কাজটা হলো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ থেকে নির্মূল করা।


কয়েকজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে নিজেদের আত্নতৃপ্তির মধ্যে ঠেলে দেওয়াটা হবে ভুল। যুদ্ধাপরারীরা শুধু ব্যক্তি বিশেষ না - এরা কয়েকটা সংগঠনের অংশও বটে। সাংগঠনিক ভাবে এরা সক্রিয় থেকে একদল মানুষকে ইতোমধ্যে বিভ্রান্ত করার সুযোগও পেয়েছে। এরা রাজনীতির চোরাগলি দিয়ে প্রধান সড়কে এসে পৌছেছে। এবার জনগন এদের প্রত্যাখ্যান করলেও এদের সংগঠন সক্রিয়। শুধু কয়েকটা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারে করে এদের সংগঠন চালাতে দেওয়া অর্থ হলো এদের সামস্ঠিক সংঘবদ্ধ অপরাধকে মেনে নেওয়া। ৭১ এ এরা কিন্তু একক ভাবে অপরাধ করেনি - কোন না কোন সংগঠনের অধীনে থেকে কাজগুলো করেছে। সুতরাং সংগঠনগুলোও যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে মুক্তি পেতে পারে না।

সুতরাং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন কাজটা হলো - যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত সকল সংগঠন যেমন মুসলীমলীগ. জামায়াত, শিবির, নেজামে ইসলাম ইত্যাদির কার্যক্রম নামে বা বেনামে চালানো বাংলাদেশের সীমানায় নিষিদ্ধ করা জরুরী।

তারপর যে বিষয়টা আসে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে একটা নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করার উপর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

একটা জাতীর আশা আকাংখার জন্ম হয় তাদের মহান অর্জনগুলোর ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সংরক্ষন ও অবিকৃত প্রচার জরুরী। এখানে বিষয়টা এসে যায় - একদল চিহ্নিত অপরাধীর বিচারের মাধ্যমে হয়তো সাময়িক বিজয় অর্জন হবে - কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিজয়কে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে - ভাঙ্গা বেড়া মেরামত না করেই শিয়ালের বিরুদ্ধে অভিযানের মতো।

তাই তৃতীয় জরুরী বিষয়টা হলো - মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন ও বিকৃত বন্ধের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়কে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া এবং "মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংরক্ষন" আইন করা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধাদের সমন্বয়ে একটা কমিশন করে এই কাজটা করা যেতে পারে। যাতে ৩০ লক্ষ শহীদ আর স্বাধীনতার ঘোষনা ধরনের বিষয় নিয়ে ইচ্ছাকৃত বিতর্ক সৃস্টিকারীদের জন্যে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তথ্য বিকৃতির বিরুদ্ধে এই ধরনের আইন আছে যার আলোকে এই আইন করা যেতে পারে।


আশা করি উপরের আলোচনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের মতাদর্শ নির্মূলের আন্দোলন হবে দীর্ঘ মেয়াদী। এই আন্দোলনের সাময়িক বিজয় বা সাময়িক পরাজয় নিয়ে আনন্দিত বা হতাশ হবার কোন সুযোগ নেই। লক্ষ্য থাকবে দীর্ঘ মেয়াদী ও সুস্পস্ঠ।

অবশ্যই বিজয় আমাদেরই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৫
১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×