যখন জোট সরকার ক্ষমতায় - জামাতিরা মন্ত্রী - তখন জামাত নিয়ে নানান গবেষনা করা হয়েছে। ভয়াবহ সব তথ্য দেখে আমরা ভয় পেয়েছি। তার মধ্যে একটা ছিলো অধ্যাপক আবুল বারাকাতের মৌলবাদের অর্থনীতি নিয়ে। মারাত্বক সব তথ্য দেওয়া হয়েছিলো তাতে। এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে জামাত নামে কোন গোষ্ঠীর অস্তিত্বই নাই।
অধ্যাপক আবুল বারাকাতের গবেষনাপত্রের থেকে বিশেষ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:-
১) মৌলবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো “একটা অর্থনীতির ভিতরে আরেকটা অর্থনীতি”।"
২) এই অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশের প্রচলিত অর্থণীতিকে প্রতিস্থাপন করে মৌলবাদী মতাদর্শের আলোকে একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা।
৩) মৌলবাদের অর্থনীতি এনজিও থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা পর্যন্ত চালু করেছে।
৪) এই অর্থনীতির মোট পরিমান প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫) এই ২০০ মিলিয়ন ডলারে থেকে যা লাভ হয় তার ১০% ব্যয় করা হয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। যা বর্তমান অবস্থায় ৫ লক্ষ রাজনৈতিক কর্মীর বেতন ভাতার জন্যে যথেষ্ঠ।
৬) এরা সরকার এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন পদগুলিতে তাদের অনুসারীদের বসিয়ে তাদের মতো করে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো তৈরী করে।
৭) মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রনে আছে উন্নয়ন বাজেটের ৬% এবং রপ্তানী আয়ের ৪% ।
৮) দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল ৪%-৫% সেখানে মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৭.৫%-৯%।
- এখন অধ্যাপক আবুল বারাকাত সরকারের লোক - একটা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং সরকারের নীতিনিধারনের সাথে জড়িত। আমরা জানি রাজনীতির মুল নিয়ামক হচ্ছে অর্থনীতি। মৌলবাদীরা একটা সমান্তরাল অর্থনীতি তৈরী করে দেশে নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। কিন্তু এই মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে মৌলবাদের অর্থনীতিকে ডিসমেন্টাল করার কোন পদক্ষেপ দৃশ্যত গ্রহন করেছে কি?
এ ছাড়াও দেখি মৌলবাদী বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের মিডিয়া একটা সংহত অবস্থানে আছে। যদিও এরা বানিজ্যিক কারনে এখন তাদের নিজেদের এজেন্ডা থেকে সরিয়ে রেখেছে - কিন্তু প্রতিকুল পরিবেশে এই মিডিয়াগুলোই বিষাক্ত ছোবল দেবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে। দু;খজনক হলেও সত্য - মুক্তবুদ্ধির লোকজনই জামাতি মিডিয়াকে শক্তিশালী ও গ্রহনযোগ্য করে তুলছে তাতে নিয়মিত অংশগ্রহনের মাধ্যমে - এমনকি মন্ত্রীকেও দেখা যাচ্ছে - জামাতি টিভির জন্মদিনের কেক কাটতে।
উপরে বিষয়গুলো বলার কারন হলো - জামাতে শক্তি কতটুকু তার বলার পটভূমিকা তৈরী করা। দীর্ঘ চল্লিশ বছরে জামাতে ধীরে ধীরে তাদের অবস্থ্ন তৈরী করেছে। এরা সবচেয়ে বেশী যে স্কীলটা অর্জন করতে পেরেছে তা হলো - কিভাবে টিকে থাকতে হবে।
এই সরকার আসার পর পর এরা একটা শক্তির মহড়া দিয়েছিলো রাজশাহীতে এবং তা পুরো ব্যর্থ হয়েছে। এখন এরা টিকে থাকার জন্যে ডিফেন্সিভ মুডে আছে। কিন্তু জামাতের রাজনৈতিক উইং ছাড়া বাকীগুল সবই সক্রিয়। এরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে ফুল টাইম রাজনৈতিক কর্মী পুষছে। তাদের বেতন ভাতা দিয়ে রেখেছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্টানে ছাত্রলীগের সাথে সহবস্থানের নীতিতে এরা কাজ করছে।
এইটা পরিষ্কার যে - জামাত গত চল্লিশ বছর যে পরিমান ইনভেস্ট করেছে - রিটার্ন তার তুলনায় তুচ্ছ - কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের সকল মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মতো শক্তি এরা অর্জন করতে পেরেছে - এইটাই ওদের সাফল্য। এই সাফল্যের পিছেন জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের অবদান অনেক। এই দুই জেনারেল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লুকিয়ে এবং বিকৃত করে ওদের জন্যে জমি তৈরী করেছে এবং ফসলটা উঠিয়েছে জামাত। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের টার্গেট করে বিকৃত ইতিহাসের পাঠ দিয়ে এরা দল ভারী করেছে। যার ফলে আগামী একটা প্রজন্ম ওদের টিকে থাকা সহজ হয়েছে।
প্রশ্ন হলো জামাত কি এতোটা শক্তি রাখে যা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি বদলে দিতে পারবে? এরা কি কখনও একক ভাবে ক্ষমতায় গিয়ে দেশে তাদের মতার্দশ চালু করতে পারবে।
উত্তরটা আপাতত হবে - না। কারন নির্বাচনে জয়ী হয়ে এদের পক্ষে আপাতত ক্ষমতায় যাওয়া হবে না। কিন্তু এদের যে সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক আছে তা যে কোন সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রসংগে একটা উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। হরকতুল জেহাদ নামের যে সংগঠন বাংলাদেশে একসময় ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলো - তার জন্ম বংগবন্ধুর বাড়ীর কাছেই গহরডাংগা মাদ্রাসায়। সেখানকার মুসলমানরা সংখ্যা লঘু এবং কখনই নির্বাচনে তাদের মনে মতো লোককে বিতিয়ে আনতে পারে না। গোপালগঞ্জের সেই অংশ একদল মানুষ প্রচন্ডভাবে আওয়ামীবিদ্বেষী - এক সময় এরা মুসলিমলীগ করতো। পরে কেউ বিএনপি বা জাতীয়পার্টি করে। তাদের মধ্যে একদল পারিবারিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার হয়ে একটা মিলিট্যন্ট দল গঠন করে। এই হরকতুল জেহাদ হয়তো গোপালগঞ্জেই সীমাবন্ধ থাকতো যদিনা জোট সরকারের সময় রাস্ট্রীয় ভাবে এদের প্যাট্রনাইজড করা হতো। তৎকালীন সরকারের উপরের মহলে প্রত্যক্ষ সহায়তায় এরা ২১ আগষ্টের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটনাতে পেরেছে।
সেই বিবেচনায় জামাতও হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ একটা শক্তি। আর তা হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় ইন্ধন আসতে পারে উত্তরপাড়ার কোন অংশ থেকে - কোন একটা রাজনৈতিক শক্তি থেকে বা সিভিল সোসাইটি থেকে। জামাতে হরকতুর জেহাদের চেয়ে শতগুন বেশী শক্তি রাখে - আর এরা যদি হরকতুল জেহাদের পথে যায় - তার পরিনাম হবে ভায়বহ - পকিস্তানের দিকে তাকালে যার কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। বাইরে শক্তির ইন্ধন ছাড়াও একটা মৌলবাদী দলের সতস্যদের হতাশার কারনেও এরা জংগী হয়ে উঠতে পারে - যার উদাহরন হলো বাংলা ভাইগোষ্ঠী। বাংলাভাইএর জেএমবি মুলত জামাতের থেকে বেড়িয়ে আসা একটা অংশ - যারা জামাতের ফ্লিপ-ফ্লপ নীতিকে পছন্দ করেনি।
এখন তাহলে করনীয় কি?
এখন মুলত বাংলাদেশের রাজনীতিকে দিনের সাথে তুলনা করলে - এরা অপেক্ষা করছে রাতের আধাঁরের - রাতের আঁধারে কাল-সাপ বেড়িয়ে আসবে তার অপেক্ষা না করে - যেহেতু সাপের গর্তগুলো পরিচিত - দিনেই এদের বের করে আনা দরকার - মেরে না ফেললেও এদের বিষদাঁত ভেংগে ফেলা জরুরী। তাই -
১) জামাতের অর্থনৈতিক মেরুদন্ডটাকে ভেংগে দেওয়া হলো জরুরী। ইসলামী ব্যাংকের নামে ধাপ্পাবাজি বন্ধ করে - ইসলাম নিয়ে ব্যাংকে নাম বাতিল করা।
২) জামাতের প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা পদ্ধতি ও নিয়োগ পদ্ধতি রিভিউও করে তা সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা।
৩) শিবিরে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া।
৪) শহরে শিবিরের যে সকল মেস আছে তা তদারকীতে আনা।
৪) জামাতের মিডিয়া - বিশেষ করে দিগন্ত টিভি জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্যতা কমানোর জন্যে মিডিয়া কর্মী, অভিনেতা - অভিনেত্রী এবং বুদ্ধিজীবিদের সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিন্ন করা। বিজ্ঞাপন দাতাদেরও এই মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা। দর্শকদেরও দিগন্ত টিভি বর্জন করা।
৫) সামান্য পয়সার জন্যে নয়া দিগন্তের মতো পত্রিকায় লেখার লোভ সামলানো জরুরী।
তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভুমিকা এবং তাদের সৃষ্ট আলবদর, রাজাকার, আল শামসের ভুমিকা জনগনের কাছে সুষ্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা। এবং জনমনে জামাতকে তাদের ৭১ এ হিংস্র চেহারটা দেখানো।
বাংলাদেশে আজকে যারা মহাজোট সরকারে কারনে একটা সাময়িক স্থিতি অবস্থা দেখে জামাতকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন - তাদের জেগেউঠা জরুরী। সময়ের এক ফোঁড় হয়তো অসময়ে হাজার ফোড়েঁও কাজ করবে না। কখনই ভুলে যাওয়া যাবে না যে জামাত-শিবির বাংলাদেশের জন্মের শত্রু এবং ৭১ এর কর্মকান্ডের জন্যে সামান্যও দু:খিত হয়নি আর জামাতের মিত্ররা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির আড়ালে বাংলাদেশে মুসলিমলীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখন তৎপর।
( পোস্টট লেখা হয়েছে একজন লন্ডন থেকে সক্রিয় জামাত কর্মীর জিজ্ঞাসার জবাবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



