অনেক দিন আগে থেকেই জামায়াত/শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করে আসছি। আজ পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জামায়াত/শিবির নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টা খুবই গুরুত্পূর্ন। কারন একটা দেশের জন্মের শত্রুকে গনতন্ত্রের নামে অবাধে কর্মকান্ড চালাতে দেওয়া মানেই হচ্ছে দুধ-কলা দিয়ে সাপ পোষার মতো - যখনই সুযোগ আসবে - তখনই এরা মরনছোবল বসাবে দেশের অস্তিত্বের উপর।
দাবী জানাই দ্রুতই জামায়াত/শিবিরসহ সকল মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনক এবং গোষ্ঠীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ডসহ সকল কর্মকান্ড বন্ধ করে আইন করার আইন প্রনয়ন করা হউক।
এবার আসা যাক - কেন জামায়াত/শিবির এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতে হবে?
১) জামায়াত/শিবির (পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসংঘ স্বাধীনতার পর সামরিক শাসকের ছত্রছায়ায় শিবির নাম নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করে) কে মুলত ২য় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান নাৎসী পার্টির তুলনা করা যায় - যারা গনহত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের কাজে সম্পৃক্ত ছিলো। ফলে জার্মানীতে নাজীরা নিষিদ্ধ আজও। বাংলাদেশের জন্মের সক্রিয় বিরোধীতাকারী সংগঠন জামায়াত/শিবির।
২) জামায়াত/শিবির রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের বিরোধীতা করেই বসে ছিলো না - শান্তি কমিটি. রাজাকার, আলবদর আল শামস নামক সহযোগী বাহিনী বাহিনীয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে গনহত্যা, ধর্ষন, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে এবং নিজেরাও অংশ গ্রহন করেছে। সুতরাং একটা মানবতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত/শিবির নিষিদ্ধ।
৩) বাংলাদেশের জন্মের পরও এরা বাংলাদেশকে স্বীকার করেনি - বিদেশে সংগঠিত হয়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারনা চালিয়েছে যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকৃতি না পায়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের শত্রু জামায়াত/শিবির।
৪) এরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসলামের নামে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাঁধা সৃষ্টি করেছে - ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ধর্মপ্রান মুসলমানরা দুই বছর হজ্জে যেতে পারেনি। জনগনের শত্রু জামায়াত/শিবির।
৫) ১৯৭৫ সালে দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হলে দেশে সামরিক শাসন জারী হয় - সেই সামরিক শাসকদের সাথে আঁতাত জামায়াতের পূর্নবাসন হয় ( যদিও স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জামায়াত/ছাত্রসংঘ নিষিদ্ধ সংগঠন ছিলো।) সামরিক স্বৈরশাসকের দোসর জামায়াত/শিবির।
৬) সামরিক শাসক - তার তৈরী দল এবং পরের আরেকটা সামরিক শাসকের অধীন দেশ থাকাকালীন জামায়াত ধর্মের নামে অর্থিক সংগঠনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরী করে সাধারন মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির তৈরী করে। জনগনের সাথে প্রতারনা এবং চক্রান্তকারী দল জামায়াত/শিবির।
৭) জামায়াত/শিবির যদিও দীর্ঘ সময় গনতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করেছে- কিন্তু এরা গনতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রমান করতে পারেনি। এরা কারো না কারো লেজুরবৃত্তি করে রাজনীতিতে ভারসাম্য সৃষ্টির শক্তি হিসাবে ক্ষমতার ভাগাভাগি করলেও কখনই জনগনের পক্ষে দাড়ায়নি। গনতন্ত্রের নামে লেবাসধারী ফ্যাসিস্ট দল জামায়াত/শিবির।
৮) দীর্ঘদিন স্বাধীন দেশে কর্মকান্ড চালালেও এরা মুক্তিযুদ্ধকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে রাজী ছিলো না। বিগত ১/১১ সরকারের সময়ে এরা বাধ্য হয় নিজেদের গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা লিখতে। অন্যদিকে জামায়াত/শিবির তাদের মেধা আর শ্রমের একটা বড় অংশ ব্যয় করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কাজে। আর বিকৃত ইতিহাস প্রচার করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করারই এদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনের শত্রু জামায়াত শিবির।
৯) জামায়াত কখনই মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেনি - এরা বিশ্বাস করে ১৯৭১ সালে এই দেশে গৃহযুদ্ধ হয়েছিলো এবং ভারত নিজের স্বার্থে এসে বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধ করেছে। এরা ইতিহাস বিকৃতকারী।
১০) জামায়াত/শিবির যদিও ছদ্মবেশ হিসাবে গনতন্ত্রের মুখোশ পড়ে আছে - কিন্তু এই সংগঠনের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের গোপন নেটওয়ার্ক - যা দেশে বিদেশে জালের তো ছড়িয়ে আছে। এরা জানে কোন না কোন সময় মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে এরা জনগনের মুখোমুখি হতেই হবে আর তখন তাদের আসল চেহারা বেড়িয়ে আসবে। মুলত গনতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে জামায়াত/শিবির একটা মৌলবাদী জংগী সংগঠন হিসাবে তৈরী হচ্ছে।
জামায়াত ভোটের রাজনীতির সমীকরনে একটা বড় দলের মিত্র হয়ে নিজেদের আড়াল করা চেষ্টা করছে এবং শিবির জোটের নামে বড় দলের নানান কর্মকান্ডকে সফল করতে নিজেদের শক্তি নিয়োগ করছে বলেই এখন জামায়াত/শিবির নিষিদ্ধ করতে গেলে একদল লোক বিতর্ক তৈরী করবে। তাদের প্রথম পয়েন্ট হবে - গনতন্ত্র, তার পরের পয়েন্ট হবে ধর্ম। ইত্যাদি।
বাংলাদেশে গনতন্ত্র বিকাশে জামায়াতের উপস্থিতি যতটা উপকারী তার চেয়ে ক্ষতির কারন বেশী হবে যা বলাই বাহুল্য। কারন এরা গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেনা - ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা হলো গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা একটা পিলার - তাকে তারা মানে না। তাই আমরা যেমন দেখি - আমেরিকায় কেকেকে, জার্মানীতে নাজীসহ পৃথিবীর প্রায় সকল গনতান্ত্রিক দেশে এক বা একাধিক সংগঠন/দল নিষিদ্ধ তালিকায় আছে - কারন গনতন্ত্রের মুল চেতনার সাথে সেই সংগঠনগুলো নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না - এরা গনতন্ত্রিক অধিকার চর্চা করে মৌলবাদ, জংগীবাদ বা ফ্যাসিজম বিস্তার করে - যা অনেকটা আগাছার মতো। ভাল কৃষক যেমন বেশী ফসল পাবার জন্যে আগাছাকে ক্ষেত থেকে মুলসহ ফেলে - তেমনি যারা গনতান্ত্রিক সমাজকে বিকশিত দেখতে চান - তাদের জন্যের জন্যেও গনতন্ত্রের ভিতরে বেড়ে উঠা বিষফোঁড়াসম জামায়াত/শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে এক হওয়া জরুরী।
আর বাকী থাকে ধর্ম। জামায়াত ১৯৭১ সালে যে কুকর্ম করেছে - যেমন নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যা, ধর্ষন, লুট এবং অগ্নিসংযোগ সবই ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধ করা আছে। ইসলাম রক্ষার নামে পাকিস্তান নামক একটা ভুখন্ডের অখন্ডতা রক্ষার কোন ধর্মীয় বিধান কোথা থেকে তারা পেয়েছে - তা একমাত্র আল্লাই জানেন। পাকিস্তানকে ইসলামের সাথে এক করে এরা মুলত শিরকই করেছে বলে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি। তারপর স্বাধীন দেশে এসে স্বজন হারানো - নির্যাতিত মানুষের হাহাকার আর বেদনাকে এরা ব্যংগ করেছে - এতো বড় গনহত্যার অংশ নিয়ে যে মহা অন্যায় করেছে তার জন্যে সামান্য অনুশোচনাও দেখানোর মতো বিনয় এদের নাই। বরঞ্চ ৭১ কে ভুলে যেতে এরা মানুষকে ছবক দিয়েছে। ক্ষমা চাওয়ারতো প্রশ্নই উঠে না। রাজনীতিতে এরা যত বেশী মুনাফেকির আশ্রয় নিয়েছে - তার তুলনা কোথাও পাওয়া যাবে না। ক্ষমতা আর রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্যে এরা সব দলের সাথেই জোট করেছে - নারী নেতৃত্ব হারাম ফতোয়া দিয়ে আবার নারী নেতৃত্বের কাছে মাথা নত করেছে। অর্থনীতিতে এরা সুদকে ধর্মের নামে জায়েজ করে দিয়েছে। মিডিয়াতে এরা নিজেদের বানিজ্য বিস্তারের আর দশটা মিডিয়াকেই অনুসরন করছে। মুলত জামায়াতের নেতারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের বিলাশবহুল জীবন যাপন নিশ্চিত করেছে। এরা ধর্মের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্টার করার জন্যে ধর্ম শিক্ষার বিষয়ে সোচ্চার হলেও নিজেদের ছেলেমেয়েদের পশ্চিমে পাঠিয়ে শিক্ষিত করে আনছে - যাতে মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া মানুষের নেতা হতে পারে। জামায়াতের ধর্ম নিয়ে হিপোক্রেসির বর্ননা দিয়ে শেষ করা যাবে না। সুতরাং যারা মনে করছেন - জামায়াত বাংলাদেশের ইসলামের সোল এজেন্ট এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্যে জামায়াতের উপস্থিতি প্রয়োজন - তারা ভুল করছেন। বরঞ জামায়াতের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক মুনাফেকি বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মুসলমানের জন্যে একরাশ লজ্জা বহন করে নিয়ে এসেছে - জামায়াতের সেই সকল ঘৃন্য কর্মকান্ড ইসলামবিদ্ধেষীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সহজলভ্য অস্ত্র হিসাবে পেয়ে গেছে।
সুতরাং যত দ্রুত স্বাধীনতার শত্রু, গনতন্ত্রের শত্রু এবং ইসলামের শত্রু জামায়াত শিবিরের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হবে - বাংলাদেশের জন্যে ততই মংগল। তবে একটা কথা স্মরন রাখা জরুরী - রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে একক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন - কারন বিরোধী পক্ষের ভোটের সমীকরনে জামায়াত একটা দ্রষ্টব্য হয়ে আছে। এই কাজের জন্যে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে - সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল সংগঠনও এবং গোষ্ঠীকে এই দাবীতে সোচ্চার হওয়া জরুরী।
একটা পোস্ট দিয়েছিলাম - সেখানে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। পোস্টটা যারা পড়তে চান তারা এখানে ক্লিক করুন। Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



